হুমায়ূন আহমেদের লেখা লিলুয়া বাতাস খন্ড–১৯

নীলা ফুপুর চোখ লাল। মুখ ফোলা। তিনি গত দুদিন ধরে ঘরে আছেন। ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। রাতে মনে হয় ঘুমাচ্ছেনও না। কাল রাত তিনটার সময়ও দেখেছি তার ঘরে বাতি জ্বলছে। অসুখ-বিসুখ নিশ্চয়ই না। অসুখ হলে চাদর গায়ে বিছানায় শুয়ে থাকতেন। মাথা টিপে দেবার জন্যে কিংবা মাথায় পানি ঢালার জন্যে আমার ডাক পড়ত।

এখনাে ডাক পড়ছে না। বড় কোনাে ঘটনা হয়তাে ঘটেছে। নাটক থেকে বাদ পড়েছেন। কিংবা মুকুল ভাই আরাে কোনাে কাণ্ড ঘটিয়েছেন। সন্ধ্যাবেলায় আমি তাঁর ঘরে উঁকি দিলাম। তিনি চাদর গায়ে চোখ বন্ধ করে শুয়েছিলেন। আমাকে দেখে ধড়মড় করে উঠে বসলেন। ভাঙা গলায় বললেন, কী চাস ?

লিলুয়া বাতাস 

আমি বললাম, কিছু চাই না । তােমার গলা ভাঙল কীভাবে ? ফুপু বললেন, হুট হাট করে ঘরে ঢুকবি না। চলে যাব ? চেয়ারে বােস । 

আমি চেয়ারে বসলাম। ঘরে বাতি জ্বালানাে হয় নি। জানালা বন্ধ। ঘর অন্ধকার । ভ্যাপসা গরমে ফুপু গায়ে চাদর জড়িয়ে রেখেছেন। আমি বললাম, তােমার জ্বর না-কি ? 

জানি না। তুই একটা কাজ করে দে, আমাকে ঘুমের ওষুধ কিনে এনে দে। পঞ্চাশটা কিনবি, ইউনিকট্রিন। নাম মনে থাকবে ? 

লিলুয়া বাতাস খন্ড–১৯

আমি লিখে দিচ্ছি। একটা ফার্মেসি থেকে এতগুলি দিবে না। বিভিন্ন ফার্মেসিতে যাবি, ঘুরে ঘুরে কিনবি । পারবি না ? 

পারব। এতগুলাে ঘুমের ওষুধ দিয়ে কী করব জিজ্ঞেস করলি না ? খাবে। ঘুমের ওষুধ দিয়ে মানুষ আর কী করে ? 

এতগুলা ওষুধ একসঙ্গে খেলে আমার অবস্থা কী হবে বুঝতে পারছি ? একসঙ্গে খাবে ? অবশ্যই একসঙ্গে খাব। এ ছাড়া আমার কোনাে গতি নেই। ফুপু, বাতি জ্বালাব ? মুখ দেখতে পাচ্ছি না তাে! এইজন্যে কথা বলে আরাম পাচ্ছি না । 

গাধার মতাে কথা বলিস না। আর পা দোলাচ্ছিস কেন ? পা দোলাবি না। গাধা! 

আমি পা দোলানাে বন্ধ করলাম। অন্ধকার চোখে সয়ে গেছে। ফুপুর চেহারা দেখা যাচ্ছে। তাঁকে খুবই সুন্দর লাগছে। মানুষের চেহারার এই এক অদ্ভুত ব্যাপার। সব আলােয় সব মানুষকে একরকম দেখা যায় না। কাউকে দুপুরের খটখটা আলােয় ভালাে লাগে। কাউকে ভালাে লাগে সকালে, আবার কাউকে আধাে আলাে আধাে অন্ধকারে। 

বাবলু! বল শুনছি। তােকে পা দোলাতে নিষেধ করেছি, তুই তাে দুলিয়েই যাচ্ছিস । ফুপু আমি পা দোলাচ্ছি না। 

ড্রয়ার খুলে দেখ টাকা আছে, একশ’ টাকার একটা নােট নিয়ে যা । আমার জন্যে এক প্যাকেট সিগারেট আনবি।। 

তুমি সিগারেট খাও? হঠাৎ হঠাৎ খাই। আমাদের অভিনয়ের লাইনে অনেকেই খায় । চন্দনা বলে যে মেয়েটা আছে, মডেলিং করে, সে তাে চেইন স্মােকার। চন্দনাকে চিনেছিস ? 

চকলেটের অ্যাড করেছে। সুন্দর অ্যাড । বয়স কত শুনলে চমকে উঠবি— ত্রিশ। সে অবশ্যি মুখে বলে আঠারাে । মেকাপ ছাড়া চন্দনাকে দেখলে তাের ইচ্ছা করবে গালে থাপ্পড় মারতে । গিরগিটির শরীরের মতাে উঁচা-নিচা চামড়া । বিরাট বিরাট গর্ত। পেনকেক দিয়ে গর্ত ভরাট করতে হয়। 

লিলুয়া বাতাস খন্ড–১৯

পেনকেকটা কী ? 

পেনকেক কী তােকে বলতে পারব না। সিগারেট আনতে বলছি আন ! মালবরাে লাইট আনবি। 

এইটা কি তােমার ব্র্যান্ড ? আমার কোনাে ব্র্যান্ড-ফ্রেন্ড নেই। আমি তাে চন্দনার মতাে চেইন স্মােকার 

যে আমার ব্র্যান্ড লাগবে। যখন যেটা পাই খাই । মালবরােটা ভালাে। আমেরিকান সিগারেট। রােস্টেড টোবাকো ।। 

রােস্টেড টোবাকো কী জিনিস ? এতকিছু তােকে বলতে পারব না। 

আমি সিগারেট কিনে এনে দেখি ঘরে বাতি জ্বলছে। ফুপুর গায়ে চাদর নেই। তিনি হাত-মুখ ধুয়েছেন । মনে য় কাপড়ও বদলেছেন। তাকে দেখে মনে হচ্ছে তিনি বাইরে যাবার জন্যে তৈরি । তাঁর ভাঙা গলাও ঠিক হয়ে গেছে। তিনি সিগারেটের প্যাকটটা হাতে নিতে নিতে বললেন, আমার জন্যে কড়া করে এক কাপ চা নিয়ে আয়। সিগারেট শুধু শুধু খেয়ে আরাম পাওয়া যায় না। চায়ের সঙ্গে খেতে হয় কিংবা ড্রিংকসের সঙ্গে। 

 

Read More

হুমায়ূন আহমেদের লেখা লিলুয়া বাতাস খন্ড–২০

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *