হুমায়ূন আহমেদের লেখা লিলুয়া বাতাস খন্ড–২০

তুমি ড্রিংকসের সঙ্গে কখনাে খেয়েছ ? 

দু’একবার পাল্লায় পড়ে খেয়েছি। জিন এন্ড লাইম। এক ধরনের ককটেল । জিন সামান্যই থাকে।

লিলুয়া বাতাস 

খেতে কেমন ? 

শরবতের মতাে একটু তিতা ভাব আছে। তাের কি খেতে ইচ্ছা করছে না। কি ? 

খবরদার! এইসব জিনিসের ধারে কাছে যাবি না। তুই গাধা আছিস গাধাই থাকবি। ঘােড়া হতে যাবি না । 

ফুপু, গাধা নিয়ে একটা জোক আছে। তােমাকে বলি ? খুবই মজার। 

ফুপু চোখ সরু করে তাকিয়ে আছেন। জোক শােনার ব্যাপারে তার ভালােই আগ্রহ আছে। তবে বেশিরভাগ জোকই তিনি ধরতে পারেন না। সবাই যখন হাসে তখন তিনি করুণ মুখ করে সবার দিকে তাকান। মাঝে মাঝে বাধ্য হয়ে হাসেন। হাসার পর তার মুখ আরাে করুণ হয়ে যায় । 

আমি জোক শুরু করলাম— ফুপু শােন। একবার এক ছেলে স্কুল থেকে বাসায় ফিরে মা’কে বলছে, মা, আজ আমাদের স্কুল টিচার আমার খুব প্রশংসা করেছেন। ছেলের মা বললেন, উনি কী বলেছেন? ছেলে বলল, স্যার আমাদের সবার দিকে তাকিয়ে বললেন, তােমরা সবাই গাধা। তারপর তিনি আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, আর এই রঙুটা সবচে’ বড় গাধা! 

লিলুয়া বাতাস খন্ড–২০

ফুপু হাসতে শুরু করেছেন। তার হাসি বিখ্যাত। বেশিরভাগ সময়ই হাসতে হাসতে তাঁর হেঁচকি উঠে যায়। তিনি বিষম খান। একবার তাে খাট থেকে মাটিতে পড়ে ভালাে ব্যথাও পেয়েছিলেন। 

ফুপু হাসছেন। তার হাসির মিটারের কাঁটা লাফিয়ে লাফিয়ে উপরের দিকে উঠছে। আমি তাকে হাসন্ত অবস্থায় রেখে তার জন্যে চা আনতে গেলাম। আমি নিশ্চিত ফিরে এসে দেখব তার হাসি তখনাে বন্ধ হয় নি। হাসির সঙ্গে হেঁচকি যুক্ত হয়েছে। 

সে রকম দেখা গেল না। ফুপু আগের অবস্থায় ফিরে গেছেন। বসে আছেন খাটে। গায়ে চাদর । ঘরের বাতি নিভিয়ে দিয়েছেন। তবে বাথরুমের বাতি জ্বলছে। বাথরুমের দরজা সামান্য খােলা বলে বাথরুমের আলাে এসেছে। ঘর সিগারেটের ধোঁয়ায় ভর্তি। চা বানিয়ে আনার অতি অল্প সময়ে তিনি কয়েকটা সিগারেট খেয়ে ফেলেছেন বলে আমার ধারণা।

ফুপু চায়ের কাপ হাতে নিতে নিতে বললেন, চন্দনা মেয়েটা কী যে বিপদে পড়েছে! মেয়েটার ভালাে বিয়ে ঠিক হয়েছিল । ছেলে মেরিন ইঞ্জিনিয়ার। ইউরােপিয়ানদের মতাে চেহারা। লম্বা, ফর্সা, খাড়া নাক । একদিন চন্দনার সঙ্গে শুটিং-এ এসেছিল দেখেছি। সেই বিয়ে বাতিল। 

কেন ? চন্দনার একটা বাজে ভিডিও বাজারে রিলিজ হয়েছে। 

তার মানে কী? 

ফপ হাতের সিগারেট ফেলে দিয়ে নতুন সিগারেট ধরাতে ধরাতে বললেন, চন্দনা একজনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ মেলামেশা করেছিল সেই ভিডিও গােপনে করা হয়েছে। তারপর ছেড়ে দিয়েছে ইন্টারনেটে। সেখান থেকে নিয়ে ভিডিও কোম্পানি সিডি বের করে বাজারে ছেড়ে দিয়েছে। সিডির নাম— নাইট কুইন চন্দনা। তবে কভারে তারা চন্দনার একটা নরম্যাল ছবি দিয়েছে। শাড়ি পরা ছবি। এই ছবি দেখলে বােঝাই যাবে না ভেতরে কী আছে। 

লিলুয়া বাতাস খন্ড–২০

আমার ক্ষীণ সন্দেহ হলাে এরকম একটা সিডি ফুপুকে নিয়েও বের হয়েছে। তাঁর নিঘুম রাত কাটানাে, ঘুমের ওষুধ কিনতে চাওয়ার পেছনে আর কোনাে কারণ থাকার কথা না। আমি সাহস করে বলে ফেললাম, ফুপু, তােমারও কি সিডি বের হয়েছে ? 

ফুপু কঠিন চোখে আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে ভাঙা গলায় বললেন, তােকে কে বলেছে ? জহির ? 

আমি বললাম, আমাকে কেউ বলে নি। আমি অনুমান করেছি। 

থাপ্পড় দিয়ে দাঁত ফেলে দেব, আমার সঙ্গে মিথ্যা কথা ? অবশ্যই তােকে জহির বলেছে । সে না বললে তুই জানবি কীভাবে? জহির ভিডিওর দোকানের মালিক হয়ে বসেছে। আজেবাজে ভিডিও বিক্রি করে পয়সা কামাচ্ছে। ছােটলােক কোথাকার! 

ফুপু হাউমাউ কান্না শুরু করলেন। তার কান্নাও হাসির মতাে বিখ্যাত।। একবার শুরু হলে থামে না। চলতেই থাকে। তাকে এই অবস্থায় রেখে ঘর থেকে বের হলাম। কিছুক্ষণ ছাদে হাঁটলাম। এই বাড়ির ছাদ বিপজ্জনক ছাদ। রেলিং দেয়া হয় নি । বর্ষায় শ্যাওলা পড়ে ছাদ পিচ্ছিল হয়ে থাকে। এমন একটা পিচ্ছিল ছাদের ধার ঘেঁসে একজনই হাঁটতে পারে, তার নাম জহির। জহির ভাই 

 

Read More

হুমায়ূন আহমেদের লেখা লিলুয়া বাতাস শেষ খন্ড

 

 

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *