হুমায়ূন আহমেদের লেখা লিলুয়া বাতাস খন্ড-৪

মা না-কি কোনাে এক ধর্মের বইয়ে পড়েছেন।

নীলা ফুপু বললেন, তােকে টাকা দিচ্ছি, তুই হােটেল থেকে গােশত পরােটা খেয়ে আয়।

লিলুয়া বাতাস

আমি বললাম, ইন রিটার্ন তােমার জন্যে কী করতে হবে সেটা বলাে। কিছুই করতে হবে না। দশ টাকায় তাের নাশতা হবে না ? হবে। বসে থাক, আমি খাওয়া শেষ করে তােকে টাকা এনে দিচ্ছি।

নীলা ফুপু অকারণে টাকা খরচ করার মেয়ে না । আমাকে নাশতা খাওয়ানাের জন্যে তার কোনাে ব্যাকুলতা থাকার কথাও না। রহস্য কিছু আছে। আমি সেই রহস্যের অপেক্ষা করছি। | বাবলু, এই নে তাের নাশতার টাকা। আর এই খামটা নে। জরুরি একটা চিঠি আছে, মুকুল ভাইয়ের হাতে দিবি । পারবি না ?

পারব।

মুকুল ভাই কিন্তু এগারােটার পর বাসায় থাকেন না। এগারােটার মধ্যে যাবি। আর শােন, চিঠিটা খুবই জরুরি। অন্য কারাে হাতে যেন না পড়ে।

চিঠিতে কী লেখা? আছে কিছু ব্যক্তিগত বিষয়। তুই বুঝবি না।

নাশতা খেতে খেতে আমি ফুপুর চিঠি খুলে ফেললাম। অনেক কায়দা করতে হলাে। চায়ের গরম কাপের সঙ্গে খামের মুখ চেপে ধরা। ব্লেড দিয়ে ঘষা। তারপরেও সমস্যা হলাে— খামের মুখ সামান্য ছিড়ে গেল । এবং খামের গায়ে মাংসের ঝােল লেগে গেল।

এত ঝামেলা করে উদ্ধার করা নীলা ফুপুর চিঠিটা এরকম—

লিলুয়া বাতাস খন্ড-৪

মুকুল ভাই,

আপনি কি ঐ দিনের ঘটনা কাউকে বলেছেন? অবশ্যই বলেছেন। না বললে রিয়া কী করে এমন একটা কথা বলল ? রাগে-দুঃখে আমি অনেকক্ষণ কেঁদেছি। আমি অনেকবার মােবাইলে আপনাকে ধরার চেষ্টা করেছি। রিং হয়, কিন্তু আপনি ধরেন না। আমার ধারণা আমার নাম্বার দেখেই আপনি ধরেন না।

এখন রিয়া আমাকে কী বলেছে সেটা শুনুন। রিয়া টেলিফোন করে বলল, সােমবার শুটিং শেষ করে তুই গুলশানের কোনাে রেস্ট হাউসে গিয়েছিলি ? আমি বললাম, রেস্ট হাউসে কেন যাব ?  বাসায় চলে এসেছি। তখন রিয়া বলল, আচ্ছা শােন, তাের কি সবুজ রঙ খুব পছন্দ ? আমি বললাম, কী আবােল-তাবােল কথা বলছিস! সবুজ রঙের কথা আসল কেন ? তখন রিয়া বলল, না, তাের আন্ডার গার্মেন্টসের কালার সবুজ— এই জন্যই রঙের কথা আসল।

আচ্ছা মুকুল ভাই, আমার আন্ডার গার্মেন্টসের কালার রিয়া কীভাবে জানল ? আপনি কি সবাইকে সবকিছু বলে দিচ্ছেন ?

চিঠিতে আমি সব কথা বলতে পারছি না। আপনাকে আমার আরাে কথা বলার আছে। দয়া করে আমি যখন টেলিফোন করব তখন টেলিফোন ধরবেন। আপনি আমাকে আপনার বাসায় যেতে নিষেধ করেছেন বলে আমি যাই না। নিষেধ না করলে সরাসরি আপনার বাসায় চলে যেতাম।

মুকুল ভাই, আমাদের Next Lot-এর শুটিংয়ের ডেট কি হয়েছে ? আমাকে কেউ কিছু জানায় না। এই লটে আপনি | কি আমার ক্যারেক্টারটার দিকে একটু নজর দিবেন ? গত

এপিসােডে আমি শুধু একবার গ্লাসে দুধ নিয়ে ঢুকেছি। কোনাে ডায়ালগ নাই। ডায়ালগ না থাকলে অভিনয়টা করব কীভাবে?

মুকুল ভাই, আপনি আমার ওপরে রাগ করবেন না । যদি উল্টাপাল্টা কিছু বলে থাকি তার জন্যে ক্ষমা করবেন।

আপনার স্নেহধন্যা

নীলা।

লিলুয়া বাতাস খন্ড-৪

মুকুল ভাই বিশাল এক ইজিচেয়ারে কাত হয়ে আছেন। তার মাথার নিচে বালিশ। ইজিচেয়ারের হাতলে একটা গ্লাসে খুব সম্ভব অরেঞ্জ জুস। মাছি ভনভন করছে। মুকুল ভাইকে দেখে মনে হচ্ছে তিনি রাতে ঘুমান নি। চোখ লাল ।

চোখের নিচে কালি। মুখভর্তি খোঁচা খোঁচা দাড়ি। তাঁর চেহারা পরিচিত কোনাে মহাপুরুষের মতাে। এখন নামটা মাথায় আসছে না। পরে নিশ্চয়ই আসবে।

তিনি হাই তুলতে তুলতে নীলা ফুপুর চিঠি পড়লেন। হাই তুলতে তুলতে বললেন, খামটা কি আগে ভােলা হয়েছে ?

আমি বললাম, ভােলা হয়েছে কি-না জানি না। আমাকে যেমন দিয়েছে আমি নিয়ে এসেছি।

নীলা তােমার কে হয় ? ফুপু । আপন ? জি।

ভেরি গুড। একটা কাজ করে দাও। ঘরে কোনাে লােকজন নেই, এক প্যাকেট সিগারেট এনে দাও। বেনসন। দেশীটা আনবে। সতুর টাকা প্যাকেট নিবে। সঙ্গে একটা ম্যাচ আনবে। পারবে না ?

জি পারব।

মুকুল ভাই মানিব্যাগ হাতাহাতি করতে লাগলেন। একশ’ টাকার নােট খুঁজছেন। মানিব্যাগে একশ’ টাকার নােট নেই, সবই পাঁচশ টাকার নােট। মনে হয় তিনি আমাকে পাঁচশ’ টাকার নােট দিতে ভরসা পাচ্ছেন না।

তােমার নাম যেন কী ? বাবলু।

পাঁচশ’ টাকার একটা নােট দিলাম। দুই প্যাকেট সিগারেট আর দুইটা ম্যাচ আনবে। দেরি করবে না। যাবে আর আসবে। সকাল থেকে সিগারেট খাই নি। ফুসফুস জ্যাম হয়ে আছে।

 

Read More

হুমায়ূন আহমেদের লেখা লিলুয়া বাতাস খন্ড-৫

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *