হুমায়ূন আহমেদের লেখা হিমুর হাতে কয়েকটি নীলপদ্ম খন্ড-১২

সম্ভাবনা আছে। সেও আমাকে পছন্দ করে। তাকে একদিন জিজ্ঞেস করেছিলাম, মানুষ মারতে কেমন লাগে কস?

হিমুর হাতে কয়েকটি নীলপদ্ম | সে খুব স্বাভাবিক ভঙ্গিতে হাই তুলতে তুলতে বলল, ভালমন্দ কোরকম লাগে না। 

বটি দিয়ে লাকাটতে যেমন লাগে তেমন ‘চ’ একটা শব্দ? ঠিক সেই রকম না, ভাইজান। মরণের সময় মানুষ চিল্লাফাল্লা কইরা বড় 

ত্যক্ত করেলাউ তাে আর চিল্লাফাল্লা করে না। 

| তা তাে বটেই। চিল্লাফাল্লার জন্যে খারাপ লাগে ? 

‘জি না, খারাপ লাগে নাচিল্লাফাল্লাটা করবমৃত্যু বলে কথামৃত্যু কোন সহজ ব্যাপার নাঠিক বললাম না

‘অবশ্যই ঠিক। | কুদ্স মিয়া উদাস ভঙ্গিতে বলল, আফনেরে কেউ ডিস্টার্ব করলে নাম-ঠিকানা 

দিয়ে। 

‘নামঠিকানা দিলে কি করবে? ‘কচ ট্রিটমেন্ট? কচ করে লাউ-এর মত কেটে ফেলবে

‘সেইটা আমার বিষয়, আমি দেখব। আফনের কাম নাম-ঠিকানা দেওনআচ্ছা, মনে থাকল। 

আরেকটা ঠিকানা দিতেছি – ধরেন কোন বিপদে পড়ছেনপুলিশ আফনেরে খুঁজতেছে। আশ্রয় দরকারদানাপানি দরকার – এই ঠিকানায় উপস্থিত হইয়া বলবেন, আমার নাম হিমুব্যবস্থা হবেআমি এডভান্স আফনের কথা বইল্যা রাখছি। বলছি হিমু ভাই আমার ওস্তাদ। 

হিমুর হাতে কয়েকটি নীলপদ্ম খন্ড-১২

* আমি হিমু” এই কথাটা কাকে বলতে হবে

‘দরজায় তিনটা টোকা দিয়া একটু থামবেন আবার তিনটা টোকা দেবেন, আবার থামবেন, আবার তিন টোকা … এই হইল সিগনা– তখন যে দরজা খুলব তারে বলবেন।। 

দরজা কে খুলবে ? ‘আমার মেয়ে মানুষ দরজা খুলবনাম জয়গুন। চেহারা বড় বেশি বিটিমনে 

আকৃষ্ট হবে না। 

মারিয়াকে কি পাওয়া যাবে? 

মনে হয় নামারিয়া টাইপ মেয়েদের কখনােই আসলে পাওয়া যায় নাআবার ভুল করলাম – কোন মেয়েকেই আসলে পাওয়া যায় নাতারা অভিনয় করে সঙ্গে আছে এই পর্যন্তই। অভিনয় শুধু যে অতি প্রিয়জনদের সঙ্গে করে তা না, নিজের সঙ্গেও করেনিজেরা সেটা বুঝতে পারে না। 

আমি ফুপার বাসার দিকে রওনা হলাম মন ময়ে যেন দুপুরে ঠিক খাবার সময় উপস্থিত হতে পারি। দুমাস খরচ দেয়া হয়নি বলে মেসে মিল বন্ধ হয়ে গেছেদুবেলা খাবার জন্যে নিত্য নতুন ফন্দি-ফিকির বের করতে হচ্ছেদুপুরের খাবারটা ফুপার ওখানে সেরে রাতে যাব মেডিকেল কলেজে আসগর সাহেবকে দেখতেআসগর সাহেবের অবস্থা খুবই খারাপ। তিনি কিছুই খেতে পারেনা। তাকে দেয়া হাসপাতালের খাবারটা খেয়ে নিলে রাত পর্যন্ত নিশ্চিন্ত। খুব বেশি সমস্যা হলে কানা কুদুসের মেয়েছেলে দুটা বােতামবিহীন নায়িকা জয়গুন তাে আছেই।

হিমুর হাতে কয়েকটি নীলপদ্ম খন্ড-১২

 ‘খুব মােটাগাটা?‘। 

‘গিয়া একবার দেইখ্যা আইসেন – এন সুন্দর, দেখলে মনে হয় গলা টিপ্যা মাইরা ফেলি। 

‘গলা টিপে মেরে ফেলতে ইচ্ছা করে কেন?” 

‘এইসব মেয়েছেলে সবের সাথেই রংঢং করেআফনে একটা বিশিষ্ট ভদ্রলােক – বিপদে পইড়া তার এইখানে আশ্রয় নিছেতা হারামি মেয়েছেলে করব কি জানেন? আফনের সাথে দুনিয়ার গফ করব। কাপড়-চোপড় থাকব আউলাইচ্ছা 

আজ বৃহস্পতিবার হাফ অফিসফুপাদের বাসায় গিয়ে দেখি সবাই টেবিলে খেতে বসেছেসবার সঙ্গে ফুপাও আছেনতার মুখ সব সময় গম্ভীর থাকেআজ আরাে গম্ভীতার চিঠি পেয়েই আমি এসেছি, তারপরেও তিনি এমন ঙ্গি করলেন যেন আমাকে দেখে তার ব্রহ্মতালু জ্বলে যাচ্ছে। 

শুধু বাদল চেয়ার ছেড়ে লাফিয়ে উঠলবিকট চিৎকার দিল, আরে হিমু দা, তুমি! তুমি কোথেকে? | ফুপু বিরক্ত গলায় বললেন, তাের ভাব দেখে মনে হচ্ছে সে আকাশ থেকে নেমে এসেছেখাওয়া ছেড়ে উঠে দাড়িয়েছিস কেন? বােস। 

বাদল বসল নাঘােরলাগা চোখে তাকিয়ে রইলআমি গম্ভীর গলায় বললাম তারপর, সব খবর ভাল? মনে হচ্ছে তুই ছুটিতে দেশে এসে আটকা পড়েছিস

‘হ্যা, হিমু দা‘সবাই এমচুপচাপ কেন

হিমুর হাতে কয়েকটি নীলপদ্ম খন্ড-১২

কেউ কিছু বলল না, শুধু বাদল বলল, এত দিন পর তােমাকে দেখছি – কি যে ভাল লাগছে ! তুমি হাত ধুয়ে খেতে বসমা, হিমু দাকে প্লেট দাও। আর একটা ডিম ভেজে দাওহিমু দা ডিমভাজা খুব পছন্দ করেফার্মের ডিম না মা, দেশি মুরগির ডিম। 

ফুপু বিরক্ত গলায় বললেন, খামাকা কথা বলবি না বাদলকথা বলে মাথা ধরিয়ে দিচ্ছিস। ভাত খাঘরে পাচ-ছ’ পদ তরকারি, এর মধ্যে আবার ডিম ভাজতে হবে? কাজের লােক নেই, কিচ্ছু নেই। 

কইরা ছিড়ছেএমন হারামি মেয়ে। 

নতুন হিমু-ধর্মে কুন্দুসের সেই হারামি মেয়েটা কি ঢুকবে? তার সঙ্গে এখনাে পরিচয় হয়নিএকদিন পরিচয় করে আসতে হবে। একটা ধর্ম শুরু করলে সেখানে রূপবতী মহিলা (যাদেব্লাউজের দুটা বােম ইচ্ছা করে হেঁড়া) না থাকলে অন্যরা 

বাদল বলল, আমি ভেজে নিয়ে আছিহিমু দা, তুমি হাত ধুয় টেবিলে বস। 

আমি হাত ধুয়ে টেবিলে বসলাম। বাদল তার মাবাবার অগ্নিদৃষ্টি উপেক্ষা করে। সত্যি সত্যি ডিম ভাজতে গেল। 

কাপে ডিম ফেটছে। চামচের শব্দ আসছে| আমি টেবিলে বসতে বসতে ফুপার দিকে তাকিয়ে বললাম, বাদলের সমস্যাটা কি? আপনি যে আমাকে চিঠি দিয়েছেন, বাদলের জন্যেই তাে দিয়েছেন। কি করছে সে? চিকিৎসা করতে হলে রােগটা ভালমজানা দরকার। 

ফুপা বললেন, হারামজাদা দেশদরদী হয়েছেঅসহযােগের কারণে দেশ ধ্বংস হচ্ছে এই চিন্তায় হারামজাদার মাথা শট সার্কিট হয়ে গেছে। সে অনেক চিন্তাভাবনা করে সমস্যা থেকে বাঁচার বুদ্ধি বের করেছে। 

হিমুর হাতে কয়েকটি নীলপদ্ম খন্ড-১২

আমি আনন্দিত গলায় বললাম, এটা তাে ভাল। দেশের সব চিন্তাশীল মানুষই। এই সময় দেশ ঠিক করার পদ্ধতি নিয়ে ভাবছেনমানব বন্ধন-ফন্ধকি সব যেন করছেন। হাত ধরাধরি করে শুকনা মুখে দাড়িয়ে থাকা। বাদলের পদ্ধতিটা কি

ফুপা বললেন, গাধার পদ্ধতি তাে গাধার মতই। 

কি রকম সেটা? রাজপথে চার পায়ে হামাগুড়ি দেবে? হামাগুড়ি দিতে দিতে সচিবালয়ের দিকে যাবে ?

| ‘সেটা করলেও তাে ভাছিল – গাধাটা ঠিক করেছে জিরাে পয়েন্টে গিয়ে রাজনীতিবিদদের শুভবুদ্ধি জাগ্রত করার জন্যে সে গায়ে কেরােসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেবে। 

‘তাই নাকি? 

‘যাবেকুবটা দুশ তেত্রিশ টাকা দিয়ে একটিকেরােসিন কিনে এনেছে। তার ঘরে সাজানাে আছেতুই এখন এই যন্ত্রণা থেকে আমাকে বাঁচিয়ে দিয়ে যা। 

‘কেরােসিন কেনা হয়ে গেছে

হ্যা, হয়ে গেছে। ‘দেখি কি করা যায়। 

আমি খাওয়া শুরু করলাম। বাদল ডিম ভেজে হাসিমুখে উপস্থিত হল। আমি বললাম, কি রে, তুই নাকি গায়ে আগুন দিচ্ছিস? | বাদল উজ্জ্বল মুখে বলল, হ্যা, হিমু দাআইডিয়াটা পেয়েছি বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদেকাছে। আত্মাহুতি। পত্রপত্রিকায় নিউজটা ছাপা হলে রাজনীতিবিদরা একটা ধাক্কা খাবেন। দুই নেত্রীই বুঝবেন – পরিস্থিতি সামাল দিতে হবে। তাঁরা তখন আলােচনায় বসবেন। 

 

Read More

হুমায়ূন আহমেদের লেখা হিমুর হাতে কয়েকটি নীলপদ্ম খন্ড-১৩

 

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *