হুমায়ূন আহমেদের লেখা হিমুর হাতে কয়েকটি নীলপদ্ম খন্ড-১৩

ফুপা তিক্ত গলায় বললেন, দুই নেত্রীর বােঝার হলে আগেই বুত। এই পর্যন্ত তাে মানুষ কম মরেনি। তুই তাে প্রথম না ।। 

আমি বললাম, এইখানে আপনি একটা ভুল করছেন ফুপবাদল প্রথম তাে।

হিমুর হাতে কয়েকটি নীলপদ্ম বটেইএম্নিতেই মানুষ মরছে পুলিশের গুলিতে, বােমাবাজিতে কিন্তু আত্মাহুতি তাে এখনাে হয়নি। বাদলই হল প্রথমপত্রিকায় ঠিকমত জানিয়ে দিলে এরা ফটোগ্রাফার নিয়ে থাকবেসিএনএন-কে খবর দিলে ক্যামেরা চলে আসবেবিবিসি, ভয়েস অব আমেরিকা সবাই নিউজ কাভার করবে। এতে একটা চাপ তৈরি হবে তাে বটেই। | ফুপাফুপু দুজনেই হতভম্ব হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইলেনআমি তাদের হতভম্ব দৃষ্টি উপক্ষো করে বাদলকে বললাম, বাদল, তাের আইডিয়া আমার পছন্দ হয়েছে। 

‘সত্যি পছন্দ হয়েছে হিমু দা?” 

‘অবশ্যই পছন্দ হয়েছেদেশমাতৃকার জন্যে জীবনদান সহজ ব্যাপার তাে নাতবে শােন, কেরােসিন ঢালার সঙ্গে সঙ্গে আগুন দিবি। কেরােসিন হচ্ছে ভলাটাইল উদ্বায়ীসঙ্গে সঙ্গে আগুন না দিলে উড়ে চলে যাবে আগুন আর ধরবে না। আর একটা ব্যাপার বলা দরকার – শুধু একটা শার্ট গায়ে দিয়ে আগুন ধরালে লাভ হবে নালােকজন থাবা-টাবা দিয়ে নিভিয়ে ফেলবেতুই আলুপােড়া হনুমান হয়ে যাবি কিন্তু মরবি নাতােকে যা করতে হবে তা হল কেরােসিন ঢালার আগে দুটা গেঞ্জি, দুটা শার্ট পরতে হবে। 

হিমুর হাতে কয়েকটি নীলপদ্ম খন্ড-১৩

বাদল কৃতজ্ঞ গলায় বলল, থ্যাংক ব্যু হিমু দা। তােমার সঙ্গে দেখা না হলে তাে বিরাট ঝামেলায় পড়তাম। 

‘এখন বল্ আত্মাহুতির তারিখ কবে ঠিক করেছিস?” 

‘আমি কিছু ঠিক করিনি। তুমি বলে দাও। তুমি যেদিন বলবে সেদিন। | ‘দেরি করা ঠিক হবে নাতুই দেরি করলি আর দেশ অটোমেটিক্যালি ঠিক হয়ে গেল, আমি সে ক্ষমতা নিয়ে নিল – এটা কি ঠিক হবে?” 

না, ঠিক হবে না। হিমু দা, আগামী কাল বা পরশু?” 

ফুপাফুপু দুজনেই খাওয়া বন্ধ করে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। ফুপু যে দৃষ্টি নিক্ষেপ করছেসেই দৃষ্টির নিক নেম হল অগ্নিদৃষ্টিদুশ তেত্রিশ টাকা দামের কেরােসিটিনের সবটুক আগুন এখন তার দুই চোখেআমি তার অগ্নিদৃষ্টি সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে গম্ভীর গলায় বাদলকে বললাম, যা করার দু-একদিনের মধ্যেই করতে হবেহাতে আমাদের সময় অল্পএর মধ্যেই তাের নিজের কাজ সব গুছিয়ে ফেলতে হবে। 

‘আমার আবার কাজ কি? | ‘আত্মীয়স্বজন সবার বাড়িতে গিয়ে তাদের কাছ থেকে বিদায় নেয়াপা ছুঁয়ে সালাম করাসবার দোয়া নেয়া। এসএসসি পরীক্ষার আগে ছেলেমেয়েরা যা করেবাড়ি বাড়ি গিয়ে দোয়া ভিক্ষা। 

এইসব ফরমালিটিজ আমার ভালাগে না হিমু দা। 

হিমুর হাতে কয়েকটি নীলপদ্ম খন্ড-১৩

‘ভাল না লাগলেও করতে হবে। আত্মীয়স্বজনদের একটা সাধ-আলাদ তাে আছে। তাের চিন্তার কারণ নেই। আমি সঙ্গে যাব। 

‘তুমি সঙ্গে গেলে যাব।’ 

আমি ফুপার দিকে তাকিয়ে বললাম, বাদলের জন্যে অ্যাভান্স কুলখানি করলে কেমন হয় ফুপা ? সবাইকে খবদিয়ে একটা কুলখানি করে ফেললাম। ওনলি ওয়াআইটেম – কাচ্চি বিরিয়ানি। বাদল নিজে উপস্থিত থেকে সবাইকে খাওয়াল। নিজের কুলখানি নিজে খাওয়াও একটা আনন্দের ব্যাপার। 

ফুপা এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। ভয়ংকর কিছু করে ফেলবেকি-না কে জানে। কই মাছেঝােলের বাটি আমার দিকে ছুঁড়ে ফেললে বিশ্রী ব্যাপার হবে। আমি বাটি নিজের দিকে টেনে নিলাম| বিকেলে বাদলকে নিয়েই বের হলাম। দু-একজন আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে দেখা করে হাসপাতালে আসগর সাহেবকে দেখতে যাব। বাদলকে অত্যন্ত প্রফুল্ল দেখাচ্ছে। বড় কিছু করতে পারার আনন্দে সে ঝলমল করছে। 

‘বাদল! 

‘কি আশ্চর্য! তােমার একটা জিনিস তুমি আমার কাছে দিয়েছ আর আমি সেটা ফেলে দেব? তুমি আমাকে কি ভাব? | ‘সাংকেতিক চিঠি তুই এত চট করে ধরে ফেললি কি করে বল তাে? এই ব্যাপারটা কিছুতেই আমার মাথায় ঢােকে না। 

হিমুর হাতে কয়েকটি নীলপদ্ম খন্ড-১৩

বাদল আনন্দিত গলায় বলল, খুব সােজা। আমি তােমাকে বললাম, যে চিঠি দিয়েছে তার নাম কি? তুমি বললে – মারিয়াকাজেই চিঠির শেষে তার নাম থাকবে। চিঠির শেষে লেখা ছিল NBSJB. (অর্থাৎ M-এর জায়গায় মেয়েটা লিখেছে N, A-র জায়গায় লিখেছে B, যেখানেই হবার কথা সেখানে লিখেছে ৪) মেয়েটা করেছে কি জান – যে অক্ষটা লেখাকথা সেটা না লিখে তার পরেরটা লিখেছে। এখন বুঝতে পারছ? 

‘পারছি। ‘চিঠিতে সে কি লিখেছিল তুমি জানতে চাওনি। বলব কি লিখেছে? ‘না। বাদল, একটা কথা শােন, তাের এত বুদ্ধি কিন্তু তুই একটা সহজ জিনিস বুঝতে পাছিস না।। 

‘সহজ জিনিসটা কি? ‘আজ থাক, আরেকদিন বলব। 

‘তাের কাছে টাকা আছে?” ‘একশ বিয়াল্লিশ টাকা আছে। ‘তাহলে চল আমাকে শিক কাবাব আর নানরুটি কিনে দে। ‘কেন ? 

‘একজনকে শিক কাবাব আর নারুটির দাওয়াত দিয়েছি। টাকার অভাবে কিনতে পারছি না। 

‘কাকে দাওয়াত দিয়েছ?” 

‘একটা কুকুরকে। কাওরান বাজারে থাকে। পা খােড়া। আমার সঙ্গে খুব। খাতির| অন্য কেউ হলে আমার কথায় বিস্মিত হত। বাদল হল না। পশুপাখি, কীটপতঙ্গ এদের সঙ্গে আমার ভাব তাে থাকবেই। আমি তাে সাধারণ কেউ না। 

‘হিমু দা!’ ‘বল‘তােমার একটা জিনিস আমার কাছে আছে। তুমি এটা নিয়ে নিও। মরে গেলে তুমি পাবে না। 

‘আমার কি আছে তাের কাছে? 

হিমুর হাতে কয়েকটি নীলপদ্ম খন্ড-১৩

‘ঐ যে পাঁচ বছর আগে একটা সাংকেতিক চিঠি দিয়েছিলে। মারিয়া নামের একটা মেয়ে তােমাকে লিখেছিল। 

‘ঐ চিঠি এখনাে রেখে দিয়েছিস? 

শিক কাবাব এবং নানরুটি কিনে এনেছি। কুকুরটাকে পাওয়া গেছে। সে আমাকে দেখেই ছুটে এসেছে। বাদলের দিকে প্রথমে সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকাল। আমি বললাম – তাের খাবার এনেছি, তুই আরাম করে খা। এ হচ্ছে বাদল। অসাধারণ বুদ্ধিমান একটা ছেলে। | কুকুরটা বাদলের দিকে তাকিয়ে ছােট্ট করে দুবার ঘেউ ঘেউ করে খেতে শুরু করল।

আমি বললাম, মাংসটা আগে খা। নানরুটি খেয়ে পেট ভরালে পরে আর মাংস খেতে পারবি না। 

কুকুরটা নানরুটি ফেলে মাংস খাওয়া শুরু করল। বাদল বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে বলল, ও কি তােমার কথা বােঝে? | আমি হাই তুলতে তুলতে বললাম, আমার ধারণা নিম্নশ্রেণীর পশুপাখি মানুষের কথা বােঝে। অতি উচ্চশ্রেণীর প্রাণী মানুষই শুধু একে অন্যের কথা বােঝে না। বেগম খালেদা জিয়া কি বলছেতা শেখ হাসিনা বুতে পারছেন না। আবার শেখ হাসিনা কি বলছেতা বেগম খালেদা জিয়া বুঝতে পারছেন না। আমরা দেশের মানুষ কি বলছি সেটা আবার তারা বুঝতে পারছেনা। তাঁরা কি বলছেতাও আমাদের কাছে পরিষ্কার না। 

বাদল বলল, কেন? 

আমি ছােট্ট নিম্ফোস ফেলে বললাম, এই প্রশ্নের জবাব আমি জানি না। আসাদুল্লাহ সাহেব হয়ত জানেন। 

‘আসাদুল্লাহ সাহেব কে? ‘যে মেয়েটি আমাকে চিঠি লিখেছিল তার বাবা। আসাদুল্লাহ সাহেব পৃথিবীর সব প্রশ্নের জবাব জানেন। | কুকুরটা খেয়ে যাচ্ছে। মাঝখানে একবার খাওয়া বন্ধ করে আমার দিকে তাকিয়ে বিরক্তির ভঙ্গিতে লেজ নাড়ল। যেন বলল – এত খাবার তােমাকে কে আনতে বলেছে? আমি সামান্য পথের নেডি

 

Read More

হুমায়ূন আহমেদের লেখা হিমুর হাতে কয়েকটি নীলপদ্ম খন্ড-১৪

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *