নিশ্চয়ই তিসি আরে এমন কোন ছবি দেখেছে সেখানে নায়ক এইভাবে চেয়ারে বসে পা নাচায়, ঠোঁটে থাকে সিগারেট। সে হাতে লাইটার নিয়ে জগলিং করে। লাইটার দিয়ে সিগারেট ধরানাের দৃশ্যটিও ইন্টারেষ্টিং হবার কথা। আমি সেই দৃশ্য দেখার জন্যে আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছি।
বডি বিল্ডার শুটকার দিকে তাকিয়ে বলল, মনা ভাই, ধইরা আনছি। মনা ভাই পা নাচানাে বন্ধ করে আমাকে দেখলেন ইন্টারগেশন পর্ব শুরু হল।
কি নাম? “হিমু।
এখানে কার কাছে? ‘তামান্নার কাছে।” তামান্না কে হয়? কিছু হয় না। ‘কিছু হয় না তাহলে এসেছেন কেন?”
এখনাে কিছু হয় না তবে ভবিষ্যতে হতে পারে।” ‘তার মানে কি? ‘তামান্নার সঙ্গে আমার বিয়ের কথা চলছে।
মনা তাই সঙ্গে সঙ্গে পা নাচানাে বন্ধ করল । লাইটার দিয়ে সিগারেট ধরাল। সে মনে হয় খানিকটা হকচকিয়ে গিয়েছে। হকচকিয়ে যাবার কারণ সিগারেট রানাের দৃশ্য তেমন জমল না ।
‘প্রেমের বিয়ে না এরেনজড ম্যারেজ?” এরেনজড ম্যারেজ। কথাবার্তা হচ্ছে। কথাবার্তা কি পাকা হয়ে গেছে। ‘এখনাে পাকেনি। বিয়ে পাকতে একটু সময় লাগে ? ‘স্টেইট কথা জিজ্ঞেস করছি, স্টেইট জবাব দেবেন। “ড়ি আচ্ছা।
হিমুর রূপালী রাত্রি শেষ খন্ড
মনা ভাই বডি বিল্ডারকে চোখের ইশারায় কাছে ভাকল। তার সঙ্গে কানে কানে কিছু কথা হল। বডি বিল্ডার অতি দ্রুত চলে গেল। সে ফিরে না আসা পর্যন্ত কর্মকান্ড স্থগিত। মনাই আবারাে লইটার নিয়ে লােফালুফি করছেন। আমি দেখছি ইতিমধ্যে আরো কিছু উৎসাহী দর্শক উপস্থিত হয়েছে। মজাদার কিছু দেখার আগ্রহে দর্শকরা চক চক করছে। এই ফ্লাটবাড়িতে মনা ভাই এর কারণে প্রায়ই মনে হয় মজাদার কিছু হয়
বডি বিল্ডার ফেরত এল এবং আনন্দিত গলায় জানাল যে, তামান্নার মা হিমু নামে কাউকে চেনে না এবং তার মেয়ের কোন বিয়ের কথা হচ্ছে না। | মনা তাই এর চোখ আনন্দে ঝলসে উঠল। সে মুখে সুরুয়া টানার মত শব্দ করল। বুঝতে পারছি আমার কাটা খাল দিয়ে হাঙ্গর ঢুকে পড়েছে। হাঙ্গরের হাত থেকে শুধুমাত্র তামান্নাই আমাকে বাঁচাতে পারে। আমি গলা খাকারি দিয়ে বললাম, মনা ভাই, আমার বিচার যা করার তামান্না এলে করবেন । আপাতত দড়ি দিয়ে আমাকে বেঁধে রাখুন। যাতে আমি পালিয়ে যেতে না পারি।
দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখব।’ ‘জ্বি সেটাই ভাল হবে। শুধু একটা রিকোয়েষ্ট । কাউকে দিয়ে এক জগ ঠান্ডা পানি আনিয়ে দিন।মনা ভাই বলল, ‘তুমি জামাই মানুষ পানি খাবে? তােমার জন্যে সরবতের ব্যবস্থা করি। ঠান্ডা সরবত।’
আমি বিনীত ভঙ্গিতে বললাম, ‘জ্বি আচ্ছা। চারদিকে হাসাহাসি পড়ে গেল।
হিমুর রূপালী রাত্রি শেষ খন্ড
আমি ছাড়া পেলাম রাত এগারােটায়। তামান্না তার এক অসুস্থ বান্ধবীকে দেখতে গিয়ে ফিরতে দেরি করেছে। যে কারণে আমার রিলিজ অর্ডারেও দেরি হল। তামান্না আমাকে রিকশায় তুলে দিল এবং গম্ভীর ভঙ্গিতে বলল, আপনি দয়া করে আর কখনাে এ বাড়িতে আসবেন না। আপনার সঙ্গে আমার বিয়ের কথা হচ্ছে এইসব ভুলে যান। আপনার সঙ্গে আমার কোন বিয়ের কথা হচ্ছে না।
আমি বললাম, ‘তামান্না, রিকশা ভাড়া দিয়ে দাও। আমার কাছে একটাও পয়সা নেই।
তামান্না বলল, ‘রিকশা ভাড়া দিয়ে দিচ্ছি। দয়া করে আমাকে তুমি করে ডাকবেন না।”
ঘরে ঢুকে চিঠি পেলাম। দু’টা চিঠি। ফাতেমা খালার ম্যানেজার লিখেছেন এবং ব্যাঙাচি লিখেছে। প্রথম পড়লাম ম্যানেজারের চিঠি।
হিমু সাহেব,
গত তিন দিনে আমি চারবার আপনার খোজ করেছি। আপনি কোথায় আছেন কেউ বলতে পারছে না। আপনাদের মেসের ম্যানেজার বলল, হঠাৎ উধাও হয়ে যাওয়া নাকি আপনার পুরানাে রোগ। গত বছর একনাগাড়ে তিন মাস আপনার কোন খােজ ছিল না।
আমি খুবই চিন্তিত বােধ কছি। কারণ ম্যাডামের সিঙ্গাপুরে যাওয়া অত্যন্ত জরুরী। তিনি আপনার সঙ্গে কথা না বলে যেতে পারছেন না। সিঙ্গাপুর এয়ার লাইনসের টিকিট কাটা আছে, কিন্তু আপনার কারণে কনফার্ম করা যাচ্ছে না।
যাই হােক, এই চিঠি আপনার হাতে যেদিন আসবে দয়া করে সেদিনই মাড়ামের সঙ্গে যােগাযােগ করবেন।
হিমুর রূপালী রাত্রি শেষ খন্ড
বিনীত
রকিবুল ইসলাম। ব্যাঙাচির চিঠিটার অর্ধেক বল পয়েন্টে লেখা। কয়েক লাইন বল পয়েন্টের কালি ফুরিয়ে যাওয়ায় বিনা কালিতে লেখা। তারপর লেখা পেনসিলে ।
পােও,
আমার উপর রাগ নিশ্চয়ই করেছিস। দোস্ত কি করব বল-~ থানায় যেতে সাহসে কুলায়নি। তবে তার জন্যে কোরান মজিদ খতম দিয়েছি। জুমাবারে ইমাম সাহেবকে বলে স্পেশাল দোয়া করিয়ে দিয়েছি। তুই যে হাজতে আছিস সেই কথা বলিনি। শুধু বলেছি বিপদগ্রস্ত মমিন মুসলমান। হাজতে আছিস শুনলে মুছল্লিদের কেউ কেউ অন্য কিছু ভেবে বসতে পারে : বিপদগ্রস্ত মমিন মুসলমানের জন্যে দোয়াতে কেউ আপত্তি করবে না।
যাই হােক, এখন আসল খবর হল তাের ইয়াকুব সাহেবের সন্ধান বের করেছি। তার পিতার নাম সুলেমান — তার ঠিকানা, (এইখানে কয়েক লাইন বিনা কালিতে লেখা)।
তোকে বাসা চিনিয়ে দেব। ভলােক মাই ডিয়ার টাইপের। অতিরিক্ত কথা বলেন। পেশায় জ্যোতিষী। মন্ত্রতন্ত্র জানল। কবিরাজী চিকিৎসাও করেন। তিনি বলেছেন ইউনানী শাস্ত্রে মেদ তুড়ি কোন ব্যাপার না। তাের সাথে আলােচনা করে উনাকে দিয়ে চিকিৎসা করাব কিনা সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব।
দোস্ত এখন বল তাের খোঁজখবর না নেয়ার জন্যে তুই রাগ করিস নাই। বাল্যবন্ধুর অপরাধ নিজ গুণে ক্ষমা করে দে।
ইতি তাের বাল্যবন্ধু
আরিফুল আলম জোয়ার্দার।
হিমুর রূপালী রাত্রি শেষ খন্ড
ফাতেমা খালার সঙ্গে টেলিফোনে আলাপ করলাম। ফাতেমা খালা বিস্মিত হয়ে বললেন, ‘তুই কোথেকে? এতদিন ছিলি কোথায়?
‘এতদিন না খালা, মাত্র তিন দিন ।
‘তাের জন্যে আমার সব অটকা পড়ে আছে। হােটেল রিজার্ভেশন করিয়ে ছিলাম লাষ্ট মােমেন্টে তাও ক্যানসেল করালাম।
এখন আবার রিজার্ভেশন করাও। ইয়াকুবের সন্ধান পাওয়া গেছে?”
হ্যা, পাওয়া গেছে। ‘আসল নােক তাে? ফলস না?”
না ফলস না। তাের খালুকে চিনতে পারল? ‘এখনাে তার সঙ্গে কথা হয়নি।’
কথা না বলে তাল করেছিস। আগবাড়িয়ে খবর্দর তুই কিছু জিজ্ঞেস করবি । আগে ভাব দিবি। প্রকার হলে রােজ যাবি। তাকে ইন ফিডেন্সে নিয়ে নিবি। পারবি না?
‘লােকটা দেখতে কেমন? ‘এখনাে দেখিনি। শুধু সন্ধান েের করেছি।
‘আমি জানতাম তুই পারবি। গতকলই তামান্নাকে বলছিলাম যদি কেউ ইয়াকুবের খোঁজ-খবর করতে পারে হিমুই পারবে। ভাল কথা, লােকটা কি
করে? কজি কবিরাজ মানে কি?
অসুখ-বিসুখ হলে কবিরাজি মতে চিকিৎসা করে। তােমার গ্যাসের জন্যে এখন আর সিঙ্গাপুরে যেতে হবে না। তাকে বললেই বাসক পাতার রস, তুলসি পাতার রস, হিলিঞ্চা গাছের শিকড়-ফিকড় মিশিয়ে এমন জিনিস বানিয়ে দেবে যে এক ডােজ খােলেই গ্যাস হজম।
‘তুই বুঝতে পারছিস না হিমু। আমার অবস্থা ভয়াবহ। এমন গ্যাস হচ্ছে যে মাঝে মাঝে ভয় হয়, গ্যাস বেলুনের মত উপরে উঠে যাই কিনা। সিঙ্গাপুরে যে যাচ্ছি শখ করে তাে যাচ্ছি না।’
যাচ্ছ কবে?
‘যত তাড়াতাড়ি যাওয়া যায় ততই ভাল। কাল তাে পারব না, দেখি পরশু যেতে পারি কিনা। এর মধ্যে তুই বাসায় এসে বিশ হাজার টাকা নিয়ে যা। তাের কি ব্যাংক একাউন্ট আছে?
Read More