উত্তর দিকে – কাশিটা আসল দক্ষিণ দিক থেকে। মাথা ঘুরিয়ে হতভম্ব হয়ে গেলাম। দেখি – মনসুর।।
‘যে আমাকে সাত হাজার এক টাকা দিয়ে গিয়েছিল — সে।
ও আচ্ছা। ‘আমি গেলাম রেগে। এই লােকটা আমাকে কি যন্ত্রণায় ফেলেছে ভেবে দেখুন দেখি। আমি বললাম – তােমার ব্যাপারটা কি? কোথায় ছিলে তুমি? তুমি কি জান তুমি আমাকে কি যন্ত্রণায় ফেলেছ ? মনসুর চুপ করে রইল। মাথাও তােলে না। আমি বললাম, কথা বল না কেন? শেষে সে বলল, ভাইজান, আমি আসব ক্যামনে? আমার মৃত্যু হয়েছে। আপনে যেমন মনকষ্টে আছেন আমিও মনকষ্টে আছি। এত কষ্টের টাকা পরিবাররে পাঠাইতে পারি নাই।
আমি বললাম, তুমি ঠিকানা বল আমি পাঠিয়ে দিব। টাকার পরিমাণ আরাে বেড়েছে। পােস্টাপিসের পাসবইয়ে টাকা রেখে দিয়েছিলাম। বেড়ে ডবলের বেশি হবার কথা। আমি খােজ নেই নাই। তুমি ঠিকানাটা বল।
হিমুর হাতে কয়েকটি নীলপদ্ম খন্ড-১৯
মনসুর আবার মাথা নিচু করে ফেলল। আমি বললাম, কথা বল। চুপ করে আছ কেন? মনসুর বলল – ঠিকানা মনে নাই স্যার। পরিবারের নামও মনে নাই। – বলেই কান্না শুরু করল। তখন একজন নার্স ঢুকল – তাকিয়ে দেখি মনসুর নাই। আমি নার্সকে বললাম, সিস্টার, পানি খাব। তিনি আমাকে পানি খাইয়ে চলে গেলেন। আমি সারারাত জেগে থাকলাম মনসুরের জন্যে। তার আর দেখা পেলাম
এই হচ্ছে হিমু ভাই ঘটনা। | ‘এটা কোন ঘটনা না – এটা স্বপ্ন। স্বপ্ন দেখেছেন।।
‘জ্বি না ভাই সাহেব, স্বপ্ন না। স্পষ্ট চোখের সামনে দেখা। মনসুর আগের মতই। আছে, তার কোন পরিবর্তন হয় নাই। | ‘আসগর ভাই, মনসুর মরে ভূত হয়ে আপনার কাছে ছুটে এসেছে? আপনার কথা তার মনে আছে অথচ পরিবারের নাম-ঠিকানা ভুলে গেছে –– এটা কি হয়? হয় না। এই ধরনের ঘটনা স্বপ্নে ঘটে। আপনাকে ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়েছে – আপনি তার মধ্যে স্বপ্নের মত দেখেছেন।
‘স্বপ্ন না হিমু ভাই। “আচ্ছা ঠিক আছে, যান, স্বপ্ন না। ‘আমার মৃত্যুর পর আপনাকে কয়েকটা কাজ করতে হবে হিমু ভাই। ‘যা বলবেন করব। ‘কাজগুলি কি বলব?” ‘আপনি নিশ্চয়ই দু-একদিনের মধ্যে মারা যাচ্ছেন না। কিছু সময় তাে হাতে। আছে?
‘কি করে বলব ভাই সাহেব – হায়াত–মউত তাে আমাদের হাতে না।
হিমুর হাতে কয়েকটি নীলপদ্ম খন্ড-১৯
‘কিন্তু আপনি যেভাবে বলছেন তাতে মনে হওয়া স্বাভাবিক যে, মৃত্যু আপনার নিজের হাতে। শুনুন আসগর সাহেব, আপনাকে এখন মরলে চলবে না – আমাকে একটা চিঠি লিখে দিতে হবে। আপনার মুক্তার মত হাতের লেখায় আপনি আমার হয়ে একটা চিঠি লিখবেন। ‘কাকে লিখব?’
একটা মেয়েকে লিখবেন। তার নাম মারিয়া। খুব দামী কাগজে খুব সুন্দর কালিতে চিঠিটা লিখতে হবে।
‘অবশ্যই লিখব হিমু ভাই। আনন্দের সঙ্গে লিখব।
‘সমস্যা হল কি জানেন? অসহযােগের জন্য দোকানপাট সব বন্ধ। দামী কাগ যে কিনব সেই উপায় নেই। কাজেই অসহযােগ না কাটা পর্যন্ত যেভাবেই হােক আপনাকে বেঁচে থাকতে হবে। এটা মনে রাখবেন। আমাকে যদি চিঠিটা লিখে না দিয়ে যান তাহলে আমার একটা আফসােস থাকবে।
‘আপনার চিঠি আমি অবশ্যই লিখে দেব হিমু ভাই। ‘তাহলে আজ উঠি। ‘আরেকটু বসেন। ‘অসুস্থ মানুষের পাশে বসে থাকতে ভাল লাগে না।’ ।
হিমুর হাতে কয়েকটি নীলপদ্ম খন্ড-১৯
আসগর সাহেব নিচু গলায় বললেন, আমার শরীরটা অসুস্থ কিন্তু হিমু ভাই মনটা সুস্থ। আমার মনে কোন রােগ নাই।
আমি চমকে তাকালাম। মৃত্যু-লক্ষণ বলে একটা ব্যাপার আছে। মৃত্যুর আগে আগে এইসব লক্ষণ প্রকাশ পায়। মানুষ হঠাৎ করে উচ্চস্তরের দার্শনিক কথাবার্তা বলতে শুরু করে। তাদের চোখের জ্যোতি নিভে যায়। চোখে কোন প্রাণ থাকে না। শরীরের যে অংশ সবার আগে মারা যায় — তার নাম চোখ।
‘হিমু ভাই।’
‘ডাক চলাচল কি আছে? ‘কিছুই চলছে না – ডাক চলবে কি ভাবে ?
‘আমার আত্মীয়স্বজনদের একটু খবর দেয়া দরকার। ওদের দেখার জন্য যে মনটা ব্যস্ত তা না – অসুস্থ ছিলাম এই খবরটা তারা না পেলে মনে কষ্ট পাবে।
‘ডাক চলাচল শুরু হলেই খবর দিয়ে দেব। ‘মানুষ খুব কষ্ট করছে, তাই না হিমু ভাই? ‘বড় বড় নেতারা যদি ভুল করেন তাহলে সাধারণ মানুষ তাে কষ্ট করবেই।
‘আমরা যারা ছােট মানুষ আছি হিমু ভাই আমরাও ভুল করি। মানুষের জন্মই হয়েছে ভুল করার জন্য। তবে হিমু ভাই, ছােট মানুষের ভুল ছােট ছােট।
হিমুর হাতে কয়েকটি নীলপদ্ম খন্ড-১৯
তাতে তার নিজের কতি, আর কারাের ক্ষতি হয় না। বড় মানুষের ভুলগুলােও বড়। বড়। তাদের ভুলে সবার ক্ষতি হয়। আমরা ছােট মানুষরা নিজেদের মঙ্গল চাই। বড় মানুষরাও তাদের মঙ্গল চান। কিন্তু হিমু ভাই, তারা ভুলে যান, যেহেতু তারা বড় সেহেতু তাদের নিজেদের মঙ্গল দেখলে হবে না। তাদের দেখতে হবে সবার মঙ্গল। ঠিক বলেছি?
‘ঠিক বলেছেন। আমাকে এই সব ঠিক কথা বলে লাভ কি ? যাদের বলা । দরকার তাদের বললে তাে তারা শুনবেন না। | ‘একটা কি ব্যবস্থা করা যায় হিমু ভাই – আমি বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে। দুটা কথা বলব, শেখ হাসিনার সঙ্গে দুটা কথা বলব – এরশাদ সাহেবের সঙ্গে তাে কথা বলা যাবে না। উনি জেলে।। | কারাে সঙ্গেই কথা বলা যাবে না – নেতারা সবাই আসলে জেলে। নিজেদের তৈরি জেলখানায় তারা আটকা পড়ে আছেন। সেই জেলখানা পাহারা দিচ্ছে তাদেরই প্রিয় লােকজন। তারা তা জানেন না। তারা মনে করেন তারা স্বাধীন মুক্ত। বিহঙ্গ, আসগর সাহে!
‘জি হিমু ভাই। ‘উচ্চস্তরের চিন্তাভাবনা করে কোন লাভ নেই। আপনি ঘুমাবার চেষ্টা করেন। ‘দ্বি আচ্ছা। আপনাকে একটা কথা বলব হিমু ভাই, যদি মনে কিছু না করেন। ‘জি না, মনে কিছু করব না।
হিমুর হাতে কয়েকটি নীলপদ্ম খন্ড-১৯
আপনি যে চিঠিটা আমাকে দিয়ে লেখাবেন সেই চিঠির কাগজটা আমি কিনব। ‘সেটা হলে তাে খুবই ভাল হয়। আমার হাত একেবারে খালি। ‘বাংলাদেশের সবচে দামী কাগজটা আমি আপনার জন্যে কিনব হিমু ভাই। | ‘শুধু কাগজ কিনলে তাে হবে না – কলমও লাগবে, কালিও লাগবে। সবচে দামী কাগজে দুটাকা দামের বল পয়েন্টে লিখবেন তা তাে হয় না। দামী কাগজে লেখার জন্যে লাগে দামী কলম। | ‘খুবই খাঁটি কথা বলেছেন হিমু ভাই – কলম আর কালিও আমি কিনব। আমি যে আপনাকে কি পছন্দ করি আপনি জানেন না হিমু ভাই।।
‘জানব না কেন, জানি। ভালবাসা মুখ ফুটে বলতে হয় না। ভালবাসা টের পাওয়া যায়। আজ যাই আসগর সাহেব। দেশ স্বাভাবিক হােক। দোকানপাট খুলুক – আপনাকে সঙ্গে নিয়ে কাগজ–কলম কিনে আনব।
| ‘অবশ্যই। অবশ্যই।। | ‘আর ইতিমধ্যে যদি মনসুর এসে আপনাকে বিরক্ত করে তাহলে কষে ধমক লাগাবেন। মানুষ হয়ে ভূতদের হাংকিপাংকি সহ্য করা কোন কাজের কথা না।
ভুলে গেছে। নগরীর জন্ডিস হয়েছে। নগরী পড়ে আছে ঝিম মেরে। এই রােগের চিকিৎসা নেই – বিশ্রামই একমাত্র চিকিৎসা। নগরী বিশ্রাম নিচ্ছে। আগের হরতালগুলিতে মােটামুটি আনন্দ ছিল। লােকজন ভিডিও ক্যাসেটের দোকান থেকে ক্যাসেট নিয়ে যেত। স্বামীরা দুপুরে স্ত্রীদের সঙ্গে ঘুমানাের সুযােগ পেত। স্ত্রীরা আঁতকে উঠে বলত – এ কি! দিনে–দুপুরে দরজা লাগাচ্ছ কেন? বাড়ি ভর্তি ছেলেমেয়ে। স্বামী উদাস গলায় বলতাে, আজ হরতাল না?
হিমুর হাতে কয়েকটি নীলপদ্ম খন্ড-১৯
এখনকার অবস্থা সে রকম না, এখন অন্য রকম পরিবেশ। জন্ডিসে আক্রান্ত নগরী রােগ সামলে গা ঝাড়া দিয়ে উঠতে পারবে তাে – এটাই সবার জিজ্ঞাসা। নাকি নগরীর মৃত্যু হবে? মানুষের মত নগরীরও মৃত্যু হয়। | আমি হাঁটছি। আমার পাশে পাশে হাঁটছে বাদল। আমি বললাম – দীর্ঘ হরতালের কিছু কিছু উপকারিতা আছে। বল তাে কি কি?
‘রােড অ্যাক্সিডেন্ট হচ্ছে না। ‘গুড। হয়েছে – আর কি?? ‘পলিউশন কমেছে – গাড়ির ধোঁয়া, কার্বন মনক্সাইড কিচ্ছু নেই। ‘ভেরি গুড়।
‘লােকজন বেশি হাঁটাহাঁটি করছে, তাদের স্বাস্থ্য ভাল হচ্ছে। ডায়াবেটিস রােগীর সংখ্যা কমছে।
‘হয়েছে – আর কি?”
‘আরবদের কাছ থেকে আমাদের পেট্রোল কিনতে হচ্ছে না। কিছু ফরেন কারেন্সি বেঁচে যাচ্ছে।
‘আমরা পরিবারের সঙ্গে বেশি সময় কাটাতে পারছি। পারিবারিক বন্ধন দৃঢ়
‘পলিটিক্স নিয়ে সবাই আলােচনা করছি – আমাদের রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশ নিয়ে সবাই ভাবছি।
“আর কিছু আছে? “আর তাে কিছু মনে পড়ছে না।
‘আরাে অনেক আছে। ভেবে ভেবে সব পয়েন্ট বের কর, তারপর একটা লিফলেট ছাড়ব।।
‘তাতে লাভ কি ? ‘আছে, লাভ আছে।
‘তােমার ভাবভঙ্গি আমি কিছুই বুঝি না। তুমি কোন দলের লােক বল তাে? আওয়ামী লীগ, না বিএনপি?
আজ হরতালের কত দিন চলছে? মনে হচ্ছে সবাই দিন-তারিখের হিসেব রাখা
‘আওয়ামী লীগ যখন খারাপ কিছু করে তখন আমি আওয়ামী লীগকে সমর্থন করি। আর বিএনপি যখন খারাপ কিছু করে তখন বিএনপির সমর্থক।
হিমুর হাতে কয়েকটি নীলপদ্ম খন্ড-১৯
এর মানে কি? ‘ভাল কাজের সমর্থন সব সময়ই থাকে। খারাপ কাজগুলির সমর্থনের লােক পাওয়া যায় না। আমি সেই লােক। খারাপ কাজের জন্যেও সমর্থন লাগে। কারণ সব খারাপের মধ্যেও কিছু মঙ্গল থাকে।
‘আমরা যাচ্ছি কোথায় হিমু দা?” ‘একটা মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছি। ‘কে? মারিয়া ? “উহু, তার নাম জয়গুন। ‘জয়গুন কে? ‘তুই চিনবি না – খারাপ ধরনের মেয়ে। “ও আচ্ছা।
বাদল চমকাল না বা বিস্মিত হল না। সে আমার আদর্শ ভক্ত। দলপতির কোন সিদ্ধান্তের বিষয়ে কিছু বলবে না। বিস্মিত হবে না, চমকাবে না। অন্ধের মত অনুসরণ করবে। একদল মানুষ কি শুধু অনুসরণ করার জন্যেই জন্মায় ?
প্রথম তিনটা টোকা, তারপর একটা, তারপর আবার তিনটা। এরকম করতে থাকলে জয়গুন নামের অতি রূপবতী এক তরুণীর এসে দরজা খুলে দেবার কথা। যার শাড়ি থাকবে এলােমেলাে। যার ব্লাউজের দুটা বােতাম নেই – | বেশ কয়েকবার মাের্স কোডের ভঙ্গিতে তিন এক তিন এক শব্দ করার পর দরজা সামান্য খুলল। সামান্য ফাক দিয়ে দেখা যাচ্ছে না দরজা কে খুলেছে। কানা কুদুস বলে দিয়েছিল, দরজা খুলবে জয়গুন। সেই ভরসাতে আন্দাজের উপর বললাম – কেমন আছ জয়গুন?
ভেতর থেকে তীক্ষ কষ্ট ভেসে এল -আপনে কে?
হিমুর হাতে কয়েকটি নীলপদ্ম খন্ড-১৯
‘আমার নাম হিমু।
দরজা খুলে গেল। আমার সামনে জয়গুন দাড়িয়ে আছে। তার শাড়ি মােটেও এলােমেলাে নয়। তার ব্লাউজের বােতামও ঠিক আছে। খুব রূপবতী মেয়ে দেখব। বলে এসেছিলাম, দুধে আলতা রঙের একজনকে দেখছি – তাকে রূপবতী বলার কোন কারণ নেই। দাত উচু। যথেষ্ট মােটা। থপ থপ করে হাঁটছে। একেক জনের সৌন্দর্য একেক রকম। কুন্দুসের কাছে জয়গুন হল – হেলেন অব ট্রয়। জয়গুন মধুর। গলায় বলল, ও আপ্পা, ভিতরে আসেন।
‘আমি সঙ্গে করে আমার এক ফুপাতাে ভাইকে নিয়ে এসেছি। ওর নাম বাদল। ‘অবশ্যই আনবেন। ছােট ভাই, আস।
জয়গুন হাত ধরে বাদলকে ভেতরে নিয়ে গেল। বাদল সংকুচিত হয়ে রইল। আমি বেশ আগ্রহ নিয়ে জয়গুনের ঘর দেখছি। সাজানাে–গােছানাে ঘর। রঙিন টিভি আছে। ভিসিআর আছে। এই মুহূর্তে ভিসিআর–এ হিন্দী ছবি চলছে।।
হিমুর হাতে কয়েকটি নীলপদ্ম খন্ড-১৯
জয়গুন লজ্জিত ভঙ্গিতে বলল, সময় কাটে না, এই জন্যে বােজ তিনট চাইরটা কইরা ছবি দেখি। আপনেরা আরাম কইরা বসেন। এসি ছাড়ি?
‘এসি আছে?‘ ‘জি আছে। | ‘ঠাণ্ডা বাতাসে শইল্যে বাত হয়, এই জন্যে এসি ছাড়ি না। ফ্যান দিয়া কাম সারি।
‘আমাদের জন্যে এসি ছাড়বে – এতে তােমার আবার বাত হবে না তাে। “কি যে কন হিমু ভাইজান! অল্প সময়ে আর কি বাত হইব।
অল্প সময় তাে না – আমরা সন্ধ্যা পর্যন্ত থাকব। এসেছি যখন ঠাণ্ডায় ঠাণ্ডায় ভিসিআর-এ একটা ছবি দেখে যাই। অনেকদিন হিন্দী ছবি দেখা হয় না। তােমার অসুবিধা হবে?
‘কি যে কন ভাইজান! আফনে সারাজীবন থাকলেও অসুবিধা নাই। ‘তুমি একা থাক? ‘হ, একাই থাকি। ‘রান্না-বান্না কে করে?
‘কেউ করে না। হােটেল থাইক্যা খাওন আসে। কাকামের লােক রাখন আমার পুষায় না। খালি ভ্যান ভ্যান করে। আমার হােটেলের সাথে কনটাক।
‘ভাল ব্যবস্থা তাে।। ‘‘কপি খাইবেন? – কপি বানানির জিনিস আছে।। ‘হ্যা, ‘কপি খাওয়া যায়।
জয়গুন অতি ব্যস্ততার সঙ্গে ‘কপি’ আনতে গেল। আমি জয়গুনের বিছানায় পা তুলে উঠে বসতে বসতে বললাম – বাদল আয়, কোলবালিশে হেলান দিয়ে আরাম করে বােস। একটা হিন্দী ছবি দেখি। দুদিন পর গায়ে কেরােসিন ঢেলে মরে যাবি – হিন্দী ছবি দেখে মনটা ঠিকঠাক কর।
‘তুমি কি সত্যি সত্যি ছবি দেখবে? ‘অবশ্যই। ‘এই মেয়েটাকে তুমি চেন কিভাবে?” ‘আমি চিনি না – কানা কুদ্স চেনে। ‘কানা কুদ্স কে?
ভয়াবহ খুনী। মানুষ মারা তার কাছে কোন ব্যাপারই না। মশা মারার মতই সহজ।
হিমুর হাতে কয়েকটি নীলপদ্ম খন্ড-১৯
‘এই ভদ্রমহিলা কি ওনার স্ত্রী? ‘প্রায় সে রকমই। জয়গুন হচ্ছে কানা কুদুসের বনলতা সেন। ‘মহিলা কি সুন্দর দেখেছ হিমু দা?”
‘মৃত্যুর পরে আল্লাহ পাক শাস্তি দিলে দিব। এই দুনিয়ায় শাস্তি হইব এটা কেমন বিচার?” | ‘এটা হচ্ছে জনতার বিচার। আল্লাহ পাক কিছু কিছু শাস্তি জনতাকে দিয়ে দেবার ব্যবস্থা করেন। মানুষ ভুল করে – জনতা ভুল করে না। | জয়গুন ছবি চালিয়ে দিয়েছে। তার চোখ ভর্তি পানি। কানা কদুসের মত একটি। ভয়াবহ পাপীর জন্যে জয়গুনের মত একটি রূপবতী মেয়ে চোখের পানি ফেলছে – কোন মানে হয়? হয় নিশ্চয়ই – সেই মানে বােঝার ক্ষমতা আমাদের নেই।।
ছবি চলছে। আমি, বাদল এবং জয়গুন ছবি দেখছি। জয়গুন ছবি দেখছে গভীর আনন্দ ও বিস্ময় নিয়ে। আশ্চর্য! বাদলও তাই করছে। | শামসাদ বেগমের কিন্নর কষ্টের গান শুরু হল – ‘বাচপানকে দিন ভুলানা দেনা।
বাদলের চোখে পানি। দু‘দিন পর গায়ে আগুন লেগে যার মরার কথা সে ছবি দেখে ফুঁপিয়ে কাঁদছে – কোন মানে হয়?
বাদল।
Read More