‘আমি এত সুন্দর মেয়ে আমার জীবনে দেখিনি। “তাই নাকি?” “হ্যা, যতই দেখছি – ততই অবাক হচ্ছি। ‘তাের মনে হচ্ছে না দাতগুলি বেশি উচু ?” ‘তােমার দাতের দিকে তাকাবার দরকার কি?
‘তাও তাে বটে। দাতের দিকে তাকাব কেন? হাতি হলে দাতের দিকে। তাকানাের একটা ব্যাপার চলে আসত। গজদন্ত বিরাট ব্যাপার। মানদন্ত তেমন। কোন ব্যাপার না। মানবদন্তের জন্ম হয় ডেলটস্টের তুলে ফেলার জন্যে।
‘তােমার কথা কিছু বুঝতে পারছি না। ‘বােঝার দরকার আছে?’ ‘না, দরকার নেই।
জয়গুন মগে করে কপি নিয়ে এসেছে। এক এক মগে এক এক পােয়া করে চিনি দিয়ে বাঁধানাে ঘন এক সিরাপ জাতীয় বস্তু। আমি মুখে দিয়ে বললাম, অপূর্ব! আমি যা করি বাদলও তাই করে। কাজেই বাদলও চোখ বড় বড় করে বলল — অপূর্ব।
জয়গুনের সুন্দর মুখ আনন্দে ভরে গেল। সে বলল, ছবি দেখবেন ভাইজান? ‘যা দেখব। ভাল একটা কিছু দাও। ‘পুরানাে ছবি দেখবেন? দিদার আছে – দিলীপ কুমারের ছবি। ‘দিলীপ কুমারের ছবি দেখা যেতে পারে। ‘বেলেক এন্ড হােয়াইট। ‘শাদা-কালাের কোন অসুবিধা নেই – তারপর জয়গুন, কুদুসের কোন খবর জান?
হিমুর হাতে কয়েকটি নীলপদ্ম খন্ড-২০
‘জি না। মেলা দিন কোন খােজ নাই। বুঝছেন ভাইজান, মানুষটার জন্যে অত অস্থির থাকি — হে বুঝে না। কোন দিন কোন বিপদে পড়ে! বিপদের কি কোন ম বাপ আছে? সব কিছুর মা-বাপ আছে। বিপদের মা-বাপ নাই। তারে কে বুঝাইবে কন? আফনেরে খুব মানে। যখন আসে তখনই আফনের কথা কয়। ভাইজান!
‘বল। ‘আফনে তার জন্যে এটু দোয়া করবেন ভাইজান।।
‘আমার দেয়াতে কোন লাভ হবে না জয়গুন। সে ভয়ংকর সব পাপ করে বেড়াচ্ছে। সেই পাপের শাস্তি তাে হবেই।
‘তাের গায়ে কেরােসিন ঢালার ব্যাপারটা মনে হয় তাড়াতাড়ি সেরে ফেলা দরকার। আর দেরি করা যায় না।
‘কেন?
‘দেশ ঠিক হয়ে যাচ্ছে। সব স্বাভাবিক হয়ে যাচ্ছে। যা করার তার আগেই করতে হবে।
‘দেশ ঠিক হয়ে যাচ্ছে কে বলল? ‘মাঝে মাঝে আমি ভবিষ্যৎ দেখতে পাই।
বাদল কিছু বলল না। আমার কথা সে শুনতে পায়নি। তার সমস্ত ইন্দ্রিয় এখন দিলীপ কুমারের কর্মকাণ্ডে নিবেদিত। আমি বিছানায় লম্বা হয়ে শুয়ে পড়লাম। ঘুম ঘুম পাচ্ছে। খানিকক্ষণ ঘুমিয়ে নেয়া যেতে পারে। হিন্দী আমি বুঝি না। ছবির। কথাবার্তা কিছুই বুঝতে পারছি না। বাদল এবং জয়গুনের ভাবভঙ্গি দেখে মনে হচ্ছে – ছবি দেখার জন্য হলেও হিন্দী শেখার দরকার ছিল। আমি শুনেছি হিন্দী খুব নাকি মিষ্টি ভাষা। আমার মনে হয় না। লেডিস টয়লেটের হিন্দী হচ্ছে – “দেবীও কি হাগন কঠি” অর্থাৎ “দেবীদের হাগাঘর”। যে ভাষায় মেয়েদের বাথরুমের এত কুৎসিত নাম সেই ভাষা মিষ্টি হবার কোন কারণ নেই। আমি পাশ ফিরে ঘুমিয়ে পড়লাম।
হিমুর হাতে কয়েকটি নীলপদ্ম খন্ড-২০
অনেকদিন পর বাবাকে স্বপ্নে দেখলাম। তিনি খুব চিন্তিত মুখে আমার বিছানায় বসে আছেন। গায়ে খদ্দরের চাদর। হাত দুটা কোলের উপরে ফেলে রাখা। চোখে চশমা। চশমার মােটা কাচের ভেতর থেকে তাঁর জ্বলজ্বলে চোখ দেখা যাচ্ছে। আমি বাবাকে দেখে ধড়মড় করে উঠে বসলাম।।
বাবা বললেন, কেমন আছিস হিমু? আমি সঙ্গে সঙ্গে বললাম, খুব ভাল আছি বাবা।। বাবা নিচু গলায় বললেন, তুই তাে সব গণ্ডগােল করে ফেলেছিস। এত শখ ছিল তুই মহাপুরুষ হবি। এত ট্রেনিং দিলাম …
‘ট্রেনিং দিয়ে কি আর মহাপুরুষ হওয়া যায় বাবা?”
‘ট্রেনিং দিয়ে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হতে পারলে মহাপুরুষ হওয়া যাবে না কেন? অবশ্যই যায়। ট্রেনিং ঠিকমত দিতে পারলে ..
‘তাহলে মনে হয় তােমার ট্রেনিং-এ গণ্ডগােল ছিল।
‘উই, ট্রেনিং–এ কোন গণ্ডগােল নেই। তুই নিয়ম-কানুন মানছিস না।। মহাপুরুষের প্রথম শর্ত হল – কোন ব্যক্তিবিশেষের উপর মায়া করবি না। মায়া হবে সার্বজনীন। মায়াটাকে ছড়িয়ে দিবি।
‘তাই তাে করছি। ‘মােটেই তা করছিস না। তুই জড়িয়ে পড়ছিস। মারিয়াটা কে? ‘মারিয়া হচ্ছে মরিয়ম। ‘তুই এই মেয়ের সঙ্গে এমন জড়ালি কেন?
‘জড়াইনি তাে বাবা। আমি ওর সাংকেতিক চিঠির জবাব পর্যন্ত দেইনি। ও চিঠি দেবার পর ওর বাসায় যাওয়া পর্যন্ত ছেড়ে দিয়েছি।
‘এটাই কি প্রমাণ করে না তুই জড়িয়ে পড়েছিস? মেয়েটার মুখােমুখি হতে ভয় পাচ্ছিস।
‘তুমি কি তার বাসায় যেতে বলছ?”
হিমুর হাতে কয়েকটি নীলপদ্ম খন্ড-২০
আসলে দেখছি আমার অবচেতন মনের কারণে। আমার অবচেতন মন চাচ্ছে আমি মারিয়ার সঙ্গে দেখা করি। সেই চাওয়াটা প্রবল হয়েছে বলেই সে তােমাকে তৈরি করে স্বপ্নে আমার কাছে নিয়ে এসেছে। তুমি আমাকে মারিয়ার বাসায় যেতে বলছ। তুমি আমার অবচেতন মনেরই একটা ছায়া। এর বেশি কিছু না।
‘তা হতে পারে।‘ ‘আমার অবচেতন মন যা চাচ্ছে, তাই তােমাকে দিয়ে বলিয়ে নিচ্ছে। ‘ই। যুক্তির কথা। ‘মহাপুরুষরা কি যুক্তিবাদী হন বাবা? ‘তাঁদের ভেতর যুক্তি থাকে কিন্তু তাঁরা যুক্তি দিয়ে পরিচালিত হন না। “কেন?” ‘কারণ যুক্তি শেষ কথা না। শেষ কথা হচ্ছে চেতনা, Conscience.’ ‘চেতনা কি যুক্তির বাইরে?
‘যুক্তি চেতনার একটা অংশ কিন্তু খুব ক্ষুদ্র অংশ। ভাল কথা, মারিয়া মেয়েটা দেখতে কেমন? । ‘খুব সুন্দর। আমি এত সুন্দর মেয়ে আমার জীবনে দেখিনি।
‘চুল কি কোঁকড়ানাে, না প্লেইন? ‘চুল কোঁকড়ানাে।
‘তাের মার চুলও ছিল কোঁকড়ানাে। সে অবশ্যি দেখতে শ্যামলা ছিল। যাই হক, মারিয়া মেয়েটা লম্বা কেমন?
‘গজ ফিতা দিয়ে তাে আপিনি তবে লম্বা আছে। ‘মুখের শেপ কেমন? গােল না লম্বাটে ? ‘লম্বাটে। ‘চোখ কেমন? ‘চোখ খুব সুন্দর।
‘চোখ কি খুব ভাল করে লক্ষ্য করেছিস? একটা মানুষের ভেতরটা দেখা যায়। চোখের দিকে তাকিয়ে। তুই কি চোখ খুব ভাল করে লক্ষ্য করেছিস?”
“আচ্ছা হিমু শােন – মেয়েটার ডান চোখ কি বাঁ চোখের চেয়ে সামান্য বড়? ‘হ্যা। তুমি জানলে কি করে ? ‘তাের মা’র চোখ এই রকম ছিল। আমি যখন তাকে ব্যাপারটা বললাম
Read More