সেই অ্যাস্ট্রলজি থেকে জন্ম নিয়েছে আধুনিক অ্যাস্ট্রনমি। এক সময় আলকেমিও ছিল আধিভৌতিক। সেই আলকেমি থেকে আমরা পেয়েছি আধুনিক রসায়নবিদ্যা।
জামিল সাহেব বললেন, মিস্টার এভারেস্ট, এই নিয়ে আমি আপনার সঙ্গে
তর্ক করতে চাচ্ছি না। আমি একটা কাজ করছি। যদি কখনাে সুযােগ হয় পরে কথা হবে।
তুমি নিশ্চিন্ত ? নিশ্চিন্ত। আসাদুল্লাহ সাহেব আগ্রহ নিয়ে বললেন, প্রেম সম্পর্কে তােমার ধারণাটা কি বল
‘জি আচ্ছা, স্যার। আমি আসাদুল্লাহ সাহেবের ঘরে ঢুকে পড়লাম।।
এই ঘর আগের মতই আছে। একটুও বদলায়নি। খাটে শুয়ে থাকা মানুষটা শুধু বদলেছে। ভরাট স্বাস্থ্যের সেই মানুষ নেই। রােগাভােগা একজন মানুষ। মাথাভর্তি চুল ছিল, চুল কমে গেছে। চোখের তীব্র জ্যোতিও ম্লান। নিজের তৈরি বেহেশতে জীবনযাপন করতে করতে তিনি সম্ভবত ক্লান্ত।
হিমুর হাতে কয়েকটি নীলপদ্ম খন্ড-২৪
আসাদুল্লাহ সাহেব বললেন, কেমন আছ হিমু? ‘ভাল। ‘তােমাকে দেখে আমার ভাল লাগছে। ‘আপনাকে দেখে আমার তেমন ভাল লাগছে না। মনে হচ্ছে আপনি ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন।
‘স্বর্গে বাস করা ক্লান্তিকর ব্যাপার হিমু। আমি আসলেই ক্লান্ত। সময় কাটছে ।।
সময় কাটছে না কেন?” ‘কিভাবে সময় কাটাব সেটা বুঝতে পারছি না। এখন বই পড়তে পারি না।
বই পড়তে পারেন না? ‘না। বই পড়তে ভাল লাগে না, গান শুনতে ভাল লাগে না, শুয়ে থাকতে ভাল। লাগে না। যা ভাল লাগে না, তা করি না। বই পড়ি না, গান শুনি না। কিন্তু শুয়ে থাকতে ভাল না লাগলেও শুয়ে থাকতে হচ্ছে। আই হ্যাভ নাে চয়েস। তুমি দাড়িয়ে আছ কেন হিমু, বােস। আমার বিছানায় বােস। | আমি বসলাম। আসাদুল্লাহ সাহেব মুখ টিপে খানিকক্ষণ মিট মিট করে হাসলেন। কেন হাসলেন ঠিক বােঝা গেল না। হঠাৎ মুখ থেকে হাসি মুছে ফেলে গম্ভীর গলায় বললেন – এখন আমি কি করছি জান?
‘জ্বি না, জানি না। আপনি বলুন, আমি খুব আগ্রহ নিয়ে শুনছি। ‘আমি যা করছি তা হচ্ছে মানসিক গবেষণা ‘সেটা কি?
হিমুর হাতে কয়েকটি নীলপদ্ম খন্ড-২৪
‘মনে মনে গবেষণা। কোন একটা বিষয় নিয়ে জটিল সব চিন্তা করছি কিন্তু সবই মনে মনে। আমার সাম্প্রতিক গবেষণার বিষয় হল – নারী-পুরুষ সম্পর্ক।
আমি হাসতে হাসতে বললাম, আমি তাে এইসব নিয়ে গবেষণা করছি না। কাজেই বলতে পারছি না। আপনি বরং বলুন গবেষণা করে কি পেয়েছেন।
‘শুনতে চাও?” ‘হা চাই।।
আসাদুল্লাহ সাহেব বুকের নিচে বালিশ দিয়ে একটু উচু হলেন। কথা বলা শুরু করলেন শান্ত ভঙ্গিতে এবং খুব উৎসাহের সঙ্গে।
‘হিমু শােন, গবেষণা না – একজন শয্যাশায়ী মানুষের ব্যক্তিগত চিন্তা। চিন্তাও ঠিক না – ফ্যান্টাসি। আমার মনে হয় কি জান? সৃষ্টিকর্তা বা প্রকৃতি প্রতিটি ছেলেমেয়েকে পাঁচটি অদৃশ্য নীলপদ্ম দিয়ে পৃথিবীতে পাঠান। এই নীলপদ্মগুলি হল – প্রেম–ভালবাসা। যেমন ধর তুমি। তােমাকে পাচটি নীলপদ্ম দিয়ে পাঠানাে হয়েছে। এখন পর্যন্ত তুমি কাউকে পাওনি যাকে পদ্ম দিতে ইচ্ছে করেছে।
কাজেই তুমি কারাের প্রেমে পড়নি। আবার ধর, একটা সতেরাে বছরের তরুণীর সঙ্গে তােমার পরিচয় হল। মেয়েটির তােমাকে এতই ভাল লাগলাে যে, সে কোনদিকে না তাকিয়ে ভবিষ্যৎ চিন্তা না করে তার সবকটি নীলপদ্ম তােমাকে দিয়ে দিল। তুমি পদ্মগুলি নিলে কিন্তু তাকে গ্রহণ করলে না। পরে এই মেয়েটি কিন্তু আর কারাে প্রেমে পড়তে পারবে না। সে হয়ত এক সময় বিয়ে করবে, তার স্বামীর সঙ্গে ঘর সংসার করবে কিন্তু স্বামীর প্রতি প্রেম তার থাকবে না।
হিমুর হাতে কয়েকটি নীলপদ্ম খন্ড-২৪
আমি বললাম, আর আমার কি হবে? আমার নিজের পাঁচটি নীলপদ্ম ছিল, তার সঙ্গে আরাে পাচটি যুক্ত হয়ে পদ্মের সংখ্যা বেড়ে গেল না?”
‘খা, বাড়ল। ‘তাহলে আমি কি ইচ্ছা করলে এখন কাউকে পাচটির জায়গায় দশটি পদ্ম দিতে
পারি? ‘তা পার না। অন্যের পদ্ম দেয়া যাবে না। তােমাকে যে পাচটি দেয়া হয়েছে শুধু সেই পাচটি দেয়া যাবে।
‘পাচটি কেন বলেছেন? পাচের চেয়ে বেশি নয় কেন?
পাচ হচ্ছে একটা ম্যাজিক সংখ্যা। এই জন্যেই বলছি পাঁচ। আমাদের ইন্দ্রিয় পাচটি। বেশিরভাগ ফুলের পাপড়ি থাকে পাচটি। পাচ হচ্ছে একটি মৌলিক সংখ্যা তবে পাচের ব্যাপারটা আমার কল্পনা, পঁচের জায়গায় সাতও হতে পারে। আমার হাইপােথেসিস তােমার কাছে কেমন লাগছে?
‘হ্যা প্রেম। হিমু, তুমি কখনাে কোন মেয়ের প্রেমে পড়েছ? ‘না।। ‘মেয়েরা তােমার প্রেমে পড়েছে?
আসাদুল্লাহ সাহেব হাসলেন। পুরানো দিনের সেই চমৎকায় আসি। আমি চমক
অকাল আমি দিন–রাত্র এটা নিয়েই ভারি। আমার কাছে মনে হয় পৃথিবীর বেলিয়াস আনুষ নীলপদ্ম নিয়ে ঘুরে দােয়ায়, সেয়ার মানুষ পায় না।
হিমুর হাতে কয়েকটি নীলপদ্ম খন্ড-২৪
“অলকে হত্র নিতে চায় না। ‘লাহু মুত পারি। অলােক পাল মুদ্রা করুত চুায় না। আবার এখনীপ্ত হতে পার, পদুখুলি দেয়া হয় স্কুল মানুষকে। দয়া স্কুল সে পাই সুলাই সুঝল না। এই হচ্ছে আমার নীলপদ্ম বিশ্বায়। তোমাকে বললাম, তুমি তা। নন্দন জায়গায় ঘুরে জােড়াও, অনেকের সঙ্গে মেশ, আমায় হিন্দুলিটা পরীক্ষা করে।
‘জি আচ্ছ। তরে আমার কি মনে হয় জানে? আমার মনে হয়, কিছু কিছু রহস্যময় আপার সম্পর্কে কাল থিরি না নেয়াই ভাল। জিৱি বা হুইস্পাথেসিস সুস্য নষ্ট করে। থাকুক না কিছু বহুসা। সন্ধ্যাবেলা সূর্য খে, সকালে খঠে। কত রহস্যময় একটা ব্যাপার। কিন্তু পৃথিবীর স্মৃহিক গতির দুনি এটা হঞ্জুে জানার পর আন্ত রহস্য থাকে না।
‘আমি আমার নীলপদ ঘিরি মারিয়াকে দেখে দেখেই তরি করেছি। মারিয়া জার জীবনের প্রথম প্রেমপৱটি (মাক্ষ লাখ। খুব অল্প বয়সে লেখে। কাজেই আমার থিরি অনুযায়ী তার বণ্টী নীলপদ্ম সোমার কাছে।
“চিঠি লেখার ব্যাপারটি আপনি জানেন!
জানি। আমার মেম্বের অন আমার চুক্তি ছিল, সে ক্লার ঈীবনের প্রথম প্রেমপত্রটি আমাকে দেখিয়ে লিখবে। মারিয়া চুক্তি রক্ষা করছে। আমাকে চিঠিটি দেখিয়েছে, তবে আমি যেন বুঝতে না পারি সে জন্য ছেলেমানুখী এক সাংস্কৃতিক সত্য বাহান্থ কােছ।
হিমুর হাতে কয়েকটি নীলপদ্ম খন্ড-২৪
আপনি সেই সামুকেতিক চিঠিন অর্থ সঙ্গে সন্দে বুঝে ক্ষেলেছেন ? ‘মশাই। সুর প্লান করেছি বৃক্ষতে পারেনি। ‘আধিয়া সেই চিঠি ফাক লিখেছিল সু–কি আপনাকে বলেছে?
না। ‘এবে আমি অনুমান করছি। আমার অনুমানশক্তি খারাপ না। হিম শােন, আমার অল্পেটা পড়াশােনার জান ল্যে চাল যাচ্ছে। আমি নিক্কেই জোর করে পাঠিয়ে নিচ্ছি। মলের মে শক্তি মানুষকে চালিত কার আমার মেয়েটার মনের মেই শক্তি নষ্ট হয়ে গেছে। এক্ষে সেই শক্তি ফেলে দেয়া আমার পক্ষে সন্ত্র হচ্ছে না। কাজটা আমি জামাক নিয় করতে চাই। এই জানাই তোমাক এত ব্যস্থ হয়ে খুঁজছি।’
‘মনের শক্তি অানাের কাজটা আপনি করতে পারছেন না কেন ? ‘আমার উপর মেয়েটির যে বিশ্বাস ছিল সেই বিশ্বাস নষ্ট হয়ে গেছে।
‘ত্তি। কাল এক ধরনের বাধ্য। এক ধরনেয় অন্ধকার। কোন বিষয় সম্পর্কে পঞ্চাশ সেই বিষয়টি সম্পর্কে আমাদের দূরত্ব তৈরি করিয়ে দেয়।
‘বুঝতে পারছি না।‘
যেমন ধরুন, আপনার নীলপদ্ম শিরি। এটা জানার পর থেকে আমার কি হৰে আনন? কান মেয়ের সঙ্গে লেখা মুলে আমি প্রস্থ, স্বচ্ছ, এই মেলেটিকে কি নীলপ দেয়া যায় ! দেয়া গেলে কা দেয়া যায় মেয়েটি তার নিজের নীলপদ্রপুলি কি করছে?
হিমুর হাতে কয়েকটি নীলপদ্ম খন্ড-২৪
কটকে দিয়ে ফেলেছে? ‘আমার হাইপোথেসিম তুমি এক সিরিয়াসলি নি কেন? কোমাকে তাে জ্বাই আসাদুল্লাহ, সহ আকিটা সিগারেট ধরালেন। সিগারেট লম্বা টান দিয়ে অললেন – তুমি কি লক্ষ্য করে মারিয়ার মার নামে এক দালা নিল পলিশ
আসাদুল্লাহ সাহেব হাত বাড়িয়ে সিগারেট নিলেন। সিরটি ধরিয়ে চিন্তিত মুখে টানতে লাগলেন। আমি বললাম, আপনি ক্লান্ত হয়ে পড়ছেন। অদ্ধি আমি জ্বাসি।
আসাদুল্লাহ সাম্বে বলল, তোমার কি মারিয়ার সঙ্গে দেখা হয়েছে। ‘ছি না।
মাহিয়া বাসায় আছি। নিজের বস্তু বসে আছে। শাল্লা সাগই দেয়া কার। না। কথা বলে না। এমনকি স্বামীর সঙ্গে না।
‘লক্ষ্য করেছি। নেল পলিশের এই এক্সপেরিমেন্ট অনেকদিন ধরেই করা হচ্ছে। মারিয়ার মা ঐ প্রলােকের শ্রমে পড়েছে। তারা শিগশিৱই বিয়ে করায়। আর্মি সব জেলথ কিছু বলছি না। মারিয়া এতে আহুত জুয়াই। জীবনে সে বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছে।
আমাকে কি করতে বলল। ‘এতে জীবনের জটিলঙ্কার অংশটার কথা বুছিয়ে বল। “
Read More