হুমায়ূন আহমেদের লেখা হিমুর হাতে কয়েকটি নীলপদ্ম খন্ড-২৫

তোমার কথা শুনবে কারণ ওর নীলপদ্মগুলি তোমার কাছেহিমুর হাতে কয়েকটি নীলপদ্ম

তুমি আবার আগে বশ্যই তাসাল লিম্বা করে যায়। 

ফয়াসাল মুন সিম্বা করে আশঙ্গ সখ করব না। 

মারিয়া বলল, বসুন। 

তার চোখমুখ কঠি, বু মনে হল সেই কাঠিন্যের আড়ালে চাপা হাসি ঝিকমিক করছে। সে সুন্দর একটা শাড়ি পরেছে। চাপা রঙের শাড়ি। রঙটা এমন যে মনে হচ্ছে ঘরে চাপাফুলের গন্ধ পাচ্ছি। গলায় লাল পাথর। চুণী নিশ্চয় না। চুণী এত বড় হয় না। 

‘রকিং চেয়ারে আরাম করে বসে দোখেতে খেতে কথা বলুন। বাবা আপনাকে আমার কাছে পাঠিয়েছেন, তাই তাে? 

আমি দোল খেতে খেতে বললাম, হ্যা।। 

বাবার ধারণা, আমার ন খুব অশান্ত। সেই অশান্ত মন শান্ত করার সােনার কাঠি আপনার কাছে। তাই না? 

হিমুর হাতে কয়েকটি নীলপদ্ম খন্ড-২৫

I love you-ও তাে হতে পারে।’ ‘সংকেতের ব্যাখ্যা সবাই তার নিজের মত করে করে, আমিও তাই করলাম। আপনার আটটা তারার অনেক মানে করা যায়, যেমন – 

I want you. I miss you. 

I lost you. আমি আমার ছন্দমত একটা বেছে নিলাম। 

‘মারিয়া, তােমার এই ঘরে কি সিগারেট খাওয়া যায়? ‘যায় না, কিন্তু আপনি খেতে পারেন। 

আমি সিগারেট ধরাতে ধরাতে বললাম, তুমি কি তােমার বাবার নীলপদ্ম থিওরির কথা জান? 

মারিয়া এইবার হেসে ফেলল। কিশােরীর সহজ স্বচ্ছ হাসি। হাসতে হাসতে বলল, আজগুবি থিওরি। আজগুবি বং হাস্যকর। 

হাস্যকর বলছ কেন?” ‘হাস্যকর এই জন্য বলছি যে, বাবার থিওরি অনুসারে আমার পাচটি নীলপদ্ম এখন আপনার কাছে। কিন্তু আমি আপনার প্রতি কোন আকর্ষবােধ করছি না। আপনাকে দেখে কোন রকম আবেগ, রােমাঞ্চ কিছুই হচ্ছে না। বরং কিশােরী বয়সে যে পাগলামিটা করেছিলাম তার জন্য রাগ লাগছে। বাবার থিওরি ঠিক থাকলে কিশােরী বয়সে পাগলামির জন্যে এখন রাগ লাগত না। 

‘এখন পাগলামি মনে হচ্ছে? 

‘অবশ্যই মনে হচ্ছে। হিমু ভাই, আমি সেই সময় কি সব পাগলামি করেছি। একটু শুনুন। চা খাবেন? 

হিমুর হাতে কয়েকটি নীলপদ্ম খন্ড-২৫

‘এ রকম অদ্ভুত ধারণার কারণ জানেন? 

‘না। 

‘খান একটু। আমি খাচ্ছি, আমার সঙ্গে খান। বসে থাকুন, আমি চা নিয়ে 

কারণটা আপনাকে বলি – অ্যাকসিডেন্টের পর বাবা মানসিক দিক থেকে পুরােপুরি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন। তখন আপনি তাকে কিছু কথা বলেন। তাতে তার মন শান্ত হয়। সেই থেকেই বাবার ধারণা হয়েছে মন শান্ত করার মত কথা আপনি বলতে পারেন। ভাকথা, বাবাকে আপনি কি বলেছিলেন? 

 ‘আমার মনে নেই। উদ্ভট কথাবার্তা তাে আমি সব সময়ই বলি। তাকেও মনে হয় উদ্ভকিছুই বলেছিলাম। 

‘আমাকেও তাহলে উদ্ভকিছু বলবেন? 

‘তােমাকে উদ্ভট কিছু বলব না। তুমি আমাকে যে চিঠি লিখেছিলে আমি তার জবাব লিখে এনেছি। সাংকেতিক ভাষায় লিখে এনেছি। 

মারিয়া হাত বাড়া। তার চোখে চাপা কৌতুক ঝকমক করছে। মনে হচ্ছে যে কোন মুহূর্তে সে খিলখিল করে হেসে ফেলবে। যেন সে অনেক কষ্টে হাসি থামাচ্ছে। 

‘সাংকেতিক চিঠিটায় কি লেখা পড়তে পারছ ? ‘পারছি। এখানে লেখা I hate you.’ 

হিমুর হাতে কয়েকটি নীলপদ্ম খন্ড-২৫

মারিয়া বের হয়ে গেল। আমি নিজের মনে দোল খেতে লাগলাম। দীর্ঘ পাচ বছরে মারিয়াঘরের কি কি পরিবর্তহয়েছে তা ধরার চেষ্টাও করছি। ধরতে পারছি না। একবার মনে হচ্ছে ঘরটা ঠিক আগের মত আছে, আবার মনে হচ্ছে একেবারেই আগের মত নেই। সবই বদলে গেছেমারিয়ার ছােটবেলাকার ছবিটা শুধু আছে। ছবি বদলায় না। 

মারিয়া ট্রেতে করে মগভর্তি দুমগ চা নিয়ে ঢুকল। কোন কারণে সে বােধহয় খুব হেসেছে। তার ঠোটে হাসি লেগে আছে। 

“হিমু ভাই, চা নিনআমি চা নিলাম। মারিয়া হাসতে হাসতে বলল, জামিল চাচার সঙ্গে কি আপনার দেখা হয়েছে? ‘নখ-শিল্পী?” 

 নখ শিল্পী। মা’র নখের শিল্পকর্ম তিনি কিছুক্ষণ আগে শেষ করেছেন। মা সেই শিল্পকর্ম দেখে বিস্ময়ে অভিভূত।। 

খুব সুন্দর হয়েছে? | ‘দেখে মনে হচ্ছে নখে ঘা হয়েছে – রক্ত ড়ছে। মাকে এই কথা বলায় মা খুব রাগ করল। মার রাগ দেখে আমার হাসি পেয়ে গেলমা যত রাগ করে আমি তত হাসি। হাসতে হাসতে চোখে পানি এসে গেছে। চায়ে চিনিটিনি সব ঠিক হয়েছে? 

হিমুর হাতে কয়েকটি নীলপদ্ম খন্ড-২৫

হয়েছে। দিকে তাকিয়ে রইলাম। 

‘হিমু ভাইবিল। 

বাবার নীলপদ্ম বিষয়ক হাস্যকর ছেলেমানুষী থিওরির কথা আমাকে বলবেন । 

‘আচ্ছা বলব না। 

‘প্রেম নিতান্তই জৈবিক একটা ব্যাপার – নীলপদ বলে একে মহিমান্বিত করার কিছু নেই। 

‘তাও স্বীকার করছি‘হিমু ভাই, আপনি এখন বিদেয় হােন – আপনার চা আশা করি শেষ হয়েছে। হ্যা, চা শেষ। 

‘আমাকে নিয়ে বাবার দুশ্চিন্তা করার কিছুই নেইবাবার কাছে শুনেছেনিশ্চয়ই আমি বাইরে ড়তে চলে যাচ্ছি। এখানকার কোন কিছু নিয়েই আর আমামাথাব্যথা নেবাবার সময় কাটছে না, সেটা তার ব্যাপার।

 

Read More

হুমায়ূন আহমেদের লেখা হিমুর হাতে কয়েকটি নীলপদ্ম শেষ খন্ড

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *