‘হাইওয়েতে উঠাবেন। হাইওয়েতে কখনাে উঠিনি।
‘চলন আজ উঠা যাক। ময়মনসিংএর দিকে যাওয়া যাক। পথে ভুটাইপের একটা জঙ্গল পড়বে । গাড়ি পার্ক করে আমরা জঙ্গলে ঢুকে পড়তে পারি ।
‘ঙ্গলে ঢুকব কেন?”
‘ঢুকতে না চাইলে ঢুকবেন না। আমরা জঙ্গল পাশে ফেলে হােস করে চলে যাব।‘
“আপনার পায়ে স্যাণ্ডেল নেই। স্যান্ডেল কি ছিড়ে গেছে। “গাড়ি চালাতে চালাতে পায়ের দিকে তাকাবেন না। এম্নিতেই আপনি নাড়ি ড্রাইভার।
খুৰ আনাড়ি কি মনে হচ্ছে? না খুব আনাড়ি মানে হচ্ছে না।‘
‘আপনি কি জানেন হাসপাতাল থেকে আপনি চলে যাবার পর বেশ কয়েকবার আপনার কথা আমার মনে হয়েছে। আপনার এক আত্মীয়ের টেলিফোন নাম্বার ছিল । বােধ হয় আপনার ফুপা । তাকে একদিন টেলিফোন ও করলাম। তিনি বেশ খারাপ ব্যবহার করলেন।‘
ধমক দিলেন?”
“ধমক দেয়ার মতই। তিনি বললেন– আমাকে টেলিফোন করছেন কেন? হিমুর ব্যাপারে আমি কিছু জানি না । আর কখনাে টেলিফোন করে বিরক্ত করবেন। বলেই খট করে রিসিভার নামিয়ে রাখলেন।
আমি হাসলাম। ফারজানা বলল, হাসছেন কেন? “আপনার গাড়ি চালানাে খুব ভাল হচ্ছে এই জন্যে হাসছি।” “আমরা কি ময়মনসিংএর দিকে যাচ্ছি? “হ্যা। “যে জঙ্গলের কথা বলছেন সেখানে কি চা পাওয়া যাবে?”
হিমুর দ্বিতীয় প্রহর খন্ড-১৬
“অবশ্যই পাওয়া যাবে। পােষা জঙ্গল। সবই পাওয়া যায়। যখন মেডিকেল কলেজের ছাত্র ছিলেন তখন পিকনিক করতে আসেন নি।
“আমি পড়াশােনা দেশে করি নি। আমার এম ডি ডিগ্রী বাইরের।
বাংলাতাে খুব সুন্দর বলছেন।” ‘আমার মা ছিলেন বাঙালী। ছিলেন নকুলছেন কেন?”
ছিলেন বলছি কারণ তিনি এখন নেই। তার খুব সখ ছিল তার কােন দেশে ফিরে দেশের মানুষের সেবা করবে। আমি বাংলাদেশে কাজ ” এসেছি মার ইচ্ছা পুরনের জন্যে। আমি ভেবে রেখেছি এ দেশে পাঁচ বছর কাজ কর তারপর ফিরে যাব।’ | ‘ক’ বছর পার করেছেন?
তিন বছর কয়েক মাস । দাড়ান একজাক্ট ফিগার বলছি– তিনি বছর চান মাস।‘
বাংলাদেশে কাজ করতে কেমন লাগছে?” মাঝে মাঝে ভাল লাগে। মাঝে মাঝে খুবই বিরক্ত লাগে। এ দেশের কি
ব্যক্তিত ভাবা হয়। মেয়েমাত্রকেই অল্প বুদ্ধি ভাবা হয়। মেয়ে ডাক্তার বললেই সবাই ভাবে ধাত্রী। যারা বাচ্চা ডেলিভারী ছাড়া আর কিছু জানে না ।” ।
বাচ্চা ডেলিভারী ছাড়া আপনি আর কি জানেন?”
‘আমি একজন নিউরােলখ্রিস্ট । আমার কাজ কর্ম মানুষের মস্তিষ্ক নিয়ে। আপনার প্রতি আমার আগ্রহের এটাও একটা কারণ। যে কোন কারণেই হােক আপনি প্রচণ্ড ভয় পেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। জ্বরের ঘােরে আপনি প্রলাপ। বকতেন। সেই সব আমি শুনেছি। কিছু ম্যাগনেটিক ট্যাপে রেকর্ড করাও। আছে ‘রেকর্ড করেছেন?
হিমুর দ্বিতীয় প্রহর খন্ড-১৬
জি। রেকর্ড ও অরেছি। খুবই ইন্টারেস্টিং। আসলে আপনার উচিত একজন ভাল কোন সাইকিয়াট্রিস্টের সঙ্গে কথা বলা। বাংলাদেশে ভাল সাইকিয়াট্রিস্ট আছেন না?‘
আছেন একজন। একজন কেন? অনেকতাে থাকার কথা।‘ “একজনের নাম খুব শুনি। মিসির আলি সাহেব।
“উনার সঙ্গে একটা এপয়েন্টমেন্ট করুন। প্রয়ােজন মনে করলে আমিও। যাব।‘
“আপনার এত আগ্রহ কেন?”
‘আমার আগ্রহের কারণ আছে সেটা আপনাকে বলা যাবে না। ভাল কথা আপনার সেই বিখ্যাত জঙ্গল আর কতদূর?‘
‘এসে গেছি। মােড়টা পার হলেই জঙ্গল।‘ “জঙ্গলে আরেকদিন গেলে কেমন হয়? আজ ইচ্ছা করছে না।‘
খুব ভাল হয়। শুধু একটা কাজ করুন আমাকে নামিয়ে দিয়ে যান এসেছি যখন জঙ্গল দেখে যাই।‘
সত্যি নামতে চান? ‘হা চাই।‘ “ফিরবেন কি ভাবে?” “ফেরা কোন সমস্যা না । বাস পাওয়া যায়।‘
মক্কারজানা দ্বিতীয় প্রশ্ন করল না । আমাকে নামিয়ে দিয়ে গেল।
আমি শালবনে ঢুকে পড়লাম। পিকনিক পার্টি এড়িয়ে আনি ঢুকে পড়লাম। শভীর জঙ্গলে। জঙ্গল সম্পর্কে আমার বাবার দীর্ঘ উপদেশ আছে
“যখনই সময় পাইবে তখনই বনভূমিতে যাইবার চেষ্টা করিবে । বৃক্ষের সঙ্গে মানৱশ্রেণীর বন্ধন অতি প্রাচীন । আমার ধারণা আদি নিব এক পর্যায়ে বক্ষের সেহিত কথােপকথন করিত। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের এই ক্ষমতা নষ্ট হইয়াছে। তবে সাধনায় ফল হয় । মন কেন্দ্রীভূত করিতে যদি সক্ষম হও তবে বমের সহিত যােগাযােগ ও সক্ষম হইবে। বৃক্ষরাজি তােমাকে এমন অনেক জ্ঞান দিয়ে সক্ষম হইবে যে জ্ঞান এম্নিতে তুমি কখনাে পাইবে না।”
হিমুর দ্বিতীয় প্রহর খন্ড-১৬
কড়া রােদ উঠেছে । শালবন ছায়া হয় না। তবু মােটামুটি ছায়াময় একটি বক্ষ দেখে তার নীচে কুণ্ডুলী পাকিয়ে শুয়ে পড়লাম । শীতের রােদ আরামদায়ক ।। শুকনাে পাতার চাদরে শুয়ে আছি। নড়াচড়া করলেই শুকনাে পাতা মচমচ শব্দ করছে । যেন বলছে– নড়াচড়া করবে না। চুপচাপ শুয়ে থাক। শালগাছের যে। মূল হয় জানতাম না। পীতাভ ধরণের অনাকর্ষণীয় কিছু ফুল চোখে পাচ্ছি। শালের ফুলে কি গন্ধ হয়? এত উচুতে যে ছিড়ে গন্ধ শুকা সম্ভব না। প্রকৃতি নিশ্চয়ই এই ফুল মানুষের জন্যে বানায় নি। মানুষের জন্যে বানালে ফুল ফুটতে হাতের নাগালের ভেতর।।
‘ঘুমের ভেতর অদ্ভুত স্বপ্ন দেখলাম গাছ নিয়ে স্বপ্ন । গাছ আমার সঙ্গে কথা বলছে | তবে উল্টা পাল্টা কথা বলছে কিংবা মিথ্যা কথা বলছে। যেমন গাছটা বলল, হিমু তুমি কি জান এই পৃথিবীর সবচে প্রাচীন গাছটি বাংলাদেশে আছে। যার বয়স প্রায় ছ‘হাজার বছর।
আমি বললাম, মিথ্যা কথা বলছ কেন? বাংলাদেশ উঠে এসেছে সমুদ্র গর্ভ থেকে। এমন প্রাচীন গাছ এ দেশে থাকা সম্ভব নয়।
“তােমাদের বিজ্ঞানীরা কি সব জেনে ফেলেছেন?” “সব না জানলেও অনেক কিছুই জানেন। “গাছ যে একটি চিন্তাশীল জীবন তাকি বিজ্ঞানীরা জানেন? “অবশ্যই দানেন। জগদীশ চন্দ্র বসু বের করে গেছেন।‘
“তাহলে বল গাছের মস্তিষ্ক কোনটি। একটা গাছ তার চিন্তার কাজটি কি ভাবে করে।”
Read More