হুমায়ূন আহমেদের লেখা হিমুর দ্বিতীয় প্রহর খন্ড-১৯

সব মানুষকেই একটি কা। অল্প কিছু মানুষই

হয়েছে-মাই গড। চিন্তাও করা যায় না।

হিমুর দ্বিতীয় প্রহর

আমি ফোপানির মত আওয়াজ করে নিজের প্রতিভায় নিজেই মুগ্ধ হয়ে গেলাম । আঁখিকে টেলিস্নোনে কিছুতেই পাওয়া যাচ্ছিল না এই অভিনয়টা সেই কারণেই দরকার হয়ে পড়েছিল।

আঁখি টেলিফোন ধরল। ভীত গলায় বলল, কে? “আমি হিমু। নীতুর বড় ভাই। “আমিতো নীতি বলে কাউকে চিনি না।”

“আমি নিজেও চিনি না। নীতুর গল্পটা তৈরী কব্রা ছাড়া উপায় ছিল না। কেউ তােমাকে টেলিফোন দিচ্ছিল না।’

“আপনি কে?

কথা বলতে দেখি। তাের যে কোন

“আচ্ছা তাহলে স্লিপিং ব্যাগের ভেতর চলে যা। বাবার সঙ্গে ঘুমিয়ে থাক ‘আমি আপনের লগে ঘুমামু।

সােলায়মান একটা হাত আমার গায়ে তুলে দিয়েছে। আমি চলে গেছি একটা অদ্ভুত অবস্থায়, ঘুমে চোখ জুড়িয়ে আসছে—অথচ ঘুম আসছে না। চোখ মেনে রাখতেও পারছি না, আবার চোখ বন্ধ ও করতে পারছি না। বিশ্রী অবস্থা।

“হ্যালাে আমি কি বাসায় আছে।’ “আপনি কে বলছেন?” “আমার নাম হিমু ‘হিমুটা কে?” “জ্বি আমি নীতুর বড় ভাই । নীতু হল আঁখির বান্ধবী।

তুমি আঁখির সঙ্গে কথা বলতে চাও কেন?”

নীতুকে গতকাল থেকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আঁখিদের বাসায় যাচ্ছি বলে ঘর থেকে বের হয়েছে আর ফিরে আসেনি। আমরা আঁখিদের বাসা। কোথায়, টেলিফোন নাম্বার কি কিছুই জানতাম না। অনেক কষ্টে টেলিফোন নাম্বার পেয়েছি। মা খুব কান্নাকাটি করছেন। ঘন ঘন ফিট হচ্ছেন….?

হিমুর দ্বিতীয় প্রহর খন্ড-১৯

‘কি সর্বনাশ। কিট হওয়ারইতাে কথা। শােন হিমু-নীতু নামে কেউ এ বাড়িতে আসেনি। নীতু কেন কোন মেয়েই আসে নি।

“আপনি একটু আঁখিকে দিন। আঁখির সঙ্গে কথা না বলা পর্যন্ত মা শান্ত হবেন না। মা কথা বলবেন।’

“তুমি ধর আমি আঁখিকে ডেকে দিচ্ছি। আজকালকার মেয়েদের কি যে।

“হিমু নামে এতাে আমি কাউকে চিনি না।’

“আমি বাদলের দূর সম্পর্কে ভাই। ঐ যে যার সঙ্গে তােমার বিয়ে হতে যাচ্ছিল তুমি পালিয়ে চলে গেলে বলে বিয়ে হয় নি।

“আপনি কি চান।’

“আমি কিছুই চাই না- বাদলের কারণে তােমাকে টেলিফোন করেছি। ও বােকা টাইপের তাে বিয়ে ভেঙ্গে যাওয়ায় নানান ধরণের পাগলামি করছে আমরা অস্থির হয়ে পড়েছি। তুমি ওকে বিয়ে না করার সিদ্ধান্ত নিয়ে খুব ভাল কাজ করে । বােকা স্বামীর সঙ্গে সংসার কল্লা ভয়াবহ ব্যাপার।’

“উনি বােকাঃ

‘বােকাতাে বটেই। ও হল বােকান্দর । বােকা যােগ বান্দর- বােকান্দর । সন্ধি করলে এই দাড়ায়। বােকা মানুষদের প্রতি বুদ্ধিমানদের কিছু দায়িত্ব আছে। তুমি বুদ্ধিমতী মেয়ে তুমি যদি এই দায়িত্ব পালন কর।

“আমি বুদ্ধিমতী আপনাকে কে বলল?”

শেষ মুহূর্তে তুমি বাদলকে বিয়ে করতে রাজি হওনি-এটি হচ্ছে তােমার বুদ্ধির প্রধান লক্ষণ। আঁখি শােন তুমি বাদলের পাগলামি কমাবার একটা ব্যবস্থা করে দাও।’

‘সরি আমি কিছু করতে পারব না।’

হিমুর দ্বিতীয় প্রহর খন্ড-১৯

“ও কি সব পাগলামি করছে শুনলে তােমার মায়া হবে। একটা শুধু বলি রাত বারটার পর ও তােমাদের বাসার সামনে হাটা হাটি করে। অন্য সময় করে

, কারণ অন্যসময় হাঁটাহাঁটি করলে তুমি দেখে ফেলবে। সেটা নাকি তার এন্যে খুব লজ্জার ব্যাপার হবে।’

‘শুনুন ভাল একটা মেয়ে দেখে আপনারা উনার বিয়ে দিয়ে দিন দেখবেন পাগলামি সেরে যাবে।

সেটাই করা হচ্ছে। মেয়ে পছন্দ করা হয়েছে । মেয়ে খুব সুন্দর। শুধু একটু তা না। মেয়ে গান মারটা লেটার এবং ষ্টার ইংরেজীতে লেটার পাওয়া না। খোজ নিলে দেখা যাবে শট – পাঁচ যুগট। হাই হিল পরলে অবশি। জানে-বেজিওতে বি গ্রেজের শিল্পী ভালইতাে।’

ভালতো বটেই। ছাত্রীও খুব ভাল-এস,এস,সিতে চারটা =ে পেয়েছে। চারটা লেটারের এটা আবার ইংরেজীতে। ইংরেজীতে সহজ না।’আকাল অনেকেই পাচ্ছে।

যারা পাচ্ছে-তাত্রিতাে আর এ িএম পাচ্ছে না। খোজ নিলেন – চেম্বারস ডিকশনারী পুরােটা মুখস্ত্র।’

হলে নন- আপনার কথা শেষ হয়েছেতাে আমি এখন রেখে দেন। আপনি কোন সাহায্য করতে পারবেন না, তাই না?” ফ্রি না মেয়েটার নাম কি?” কোন মেয়েটার নাম?’ যার সঙ্গে আপনার ভাইয়ের বিয়ে হচ্ছে।’ “তমি সাহায্য না করলেতাে বাদলের বিয়ে হবে না। আগে বাদলেন। থেকে আমি ভুতকে নামাতে হবে। ঘাড় খালি হলেই বাধন” ভুত চেপে র

“মেয়েটার নাম বাধন?”

খুব কমন নাম।”

কমনের ভেতরই লুকিয়ে থাকে আনকমন। আখি নামটাওতাে কমন। কিন্ত তুমি তাে আর কমন মেয়ে না।’

“আমি ও বমন টাইপের মেয়ে ।

‘অসম্ভব কমন টাইপের কোন মেয়ে বিয়ের দিন বিয়ে ভেঙ্গে দিয়ে প্রেমিকের কাছে চলে যায় না। কমন টাইপের মেয়ে প্রেমিকের কথা ভুলে গিয়ে। খুশি মনে বিয়ে করে ফেলে। ” শুনুন আপনি খুব অশালীন কথা বলছেন। আমি কোন প্রেমিকের কাছে। যাইনি। আমার কোন প্রেমিক নেই।’

“ও আচ্ছা। মা’র সঙ্গে রাগ করে চলে গিয়েছিলাম। ঘটনাটা শুনতে চান?

হিমুর দ্বিতীয় প্রহর খন্ড-১৯

srশ দেয়া হল । ধরুন আমার যদি কোন টেলিফোন আসে। আমাকে সে। লিফোন ধরতে দেয়া হবে না । দফায় দফায় নানান প্রশ্নের ভেতর দিয়ে যেতে তরে। “কে টেলিফোন করল?” “বান্ধবী?” “বান্ধবীর বাসা কোথায়?” “বাবা দিক করেন?” ধরুন আমি কোন বান্ধবীর সঙ্গে কথা বলছি-হুট করে একসময় মা করলে কি হাত থেকে রিসিভার নিয়ে কানে দিয়ে শুনবে আসলেই কোন মেয়ে কথা বলছে না কোন ছেলে কথা বলছে।

আমার গায়ে হলুদের দিন কি হল শুনন। আমি মাছ খেতে পারি না। গন্ধ লাগে । গাছের গন্ধে আমার কম্মাি এলে যায়। না তারপরেও খেতে হবে। গায়ে হলুদের মাছ না খেলে অমঙ্গল হয়। মাছ। খেলাম, তারপর বমি করে ঘর ভাসিয়ে দিলাম। তখন খুব রাগ উঠে গেল—আমি। নকশা নিয়ে পালিয়ে চলে গেলাম বান্ধবীর বাড়িতে। এই হচ্ছে ‘দটা।”

তোমার তাহলে কোন প্রেমিক নেই। | ‘অপরিচিত কোন ছেলের সঙ্গে আমার কথা বলার সুযােগ পর্যন্ত নেই— আর আমার থাকলে প্রেমিক। অথচ দেখুন আমার সব বান্ধবীরা প্রেম বিরল। প্রেমিকের সঙ্গে সিনেমা দেখছে, রেস্টুরেন্টে খেতে যাচ্ছে। জয়দেবপুরে শালবনে হটতে যাচ্ছে। আমার এক বান্ধবী নাম হল শম্পা। সে রেজিষ্ট্রি কালে বিয়ে করে ফেলেছে । দেখুন না, কি রকম রােমান্টিক । আমার জীবনের একমাত্র স্বপ্ন কি ছিল জানেন? একটা ছেলের সঙ্গে প্রেম হয়ে, তারপর গােপনে তাকে বিয়ে করব ।

‘সেটাতাে এখনাে করতে পার । তবে তােমার মা বাবা খুব কষ্ট পাবেন।

আমি চাই তারা কষ্ট পাক।’ “তাহলে একটা কাজ করলে হয়- তুমি বাদলকেই কোর্টে বিয়ে করে ফেল। কেউ কিছু জানবে না। তােমার বাবা-মা শুরুতে প্রচন্ড রাগ করবেন। তারপর যখন জানবেন তুমি তাদের পছন্দের পাত্রকেই বিয়ে করেছ, তখন রাগ পানি হয়ে যাবে। আইডিয়া তােমার কাছে কেমন লাগছে?

হিমুর দ্বিতীয় প্রহর খন্ড-১৯

আঁখি চুপ করে আছে। আঁখি পরিকল্পনা ধুম করে ফেলে দেয় নি। আমি গম্ভীর গলায় বললাম, তােমায় যা করতে হবে তা হচ্ছে- বাবা মা কে কঠিন একটা চিঠি লেখা = মা, আমি সারাজীবন তােমাদের কথা শুনেছি। আর না। এখন আমি আমার নিজের জীবন নিজেই বেছে নিলাম । বিদায় । বিদায়টা লিখবে প্রথমে ইংরেজী ক্যাপিটেল লেটার | বাংলা দায়।‘আপনি আমাকে থ্রি ফোর এর বাচ্চা ভাবছেন? | ঠাট্টা করছি। তবে তােমাকে যা অবশ্যই করতে হবে তা হচ্ছে- বাসর করতে হবে = অপরিচিত কোন জায়গায়।

“কোথায় সেটা?’। “আমার মেসেও হতে পারে । আমার অবশ্যি খুবই দরিদ্র অবস্থা। যাক এই সব ছেলেমানুষী আমার ভাল লাগছে না। “তাহলে থাক।’

না বললে হবে না, আপনাকে শুনতে হবে। আমাদের বাড়িতে খুব অদ্ভুত ব্যবস্থা । কখনােই কেউ আমার ইচ্ছায় কিছু করে না। কখনােই না। মনে। করুনা-ঈদের জন্যে শাড়ি কেনা হবে। আমার একটা হলুদ শাড়ি পছন্দ। আমি সেটা কিনতে পারব না। মা বলবে- হলুদ শাড়ি তােমাকে মানায় না। ছোটবেলায় গুলি শখ ছিল না শিখৰ । আমাকে শিখতে দেয়া হয় নি। নাচ শিখে কি হবে? আমার শখ ছিল সায়েন্স পাব- জোর করে আমাকে হিউম্যান রাজি হবে । আমার আছে পাশেই ফুপা। তিনি ও রণ হুংকার দিচ্ছেন। অপু বললেন, খবর কিছ। শুনেছিস হিমু!

“মা আপনার ভাই-বাদল, মিঃ রেইন । ও কি আমি . আইডিয়াটা খুবই মজার লাগছে কিন্তু তার কাছে লাগবে।’

হিমুর দ্বিতীয় প্রহর খন্ড-১৯

এ বিরাট গাধা। তুমি যা বলবে ওঁ তাতেই রাজি হবে। মানুষকে হুট করে গাধা বলবেন না।’ সলি আর বলব না।” বিয়েতে সাক্ষী লাগবে না?’ সাক্ষী নিয়ে তুমি চিন্তা করবে না। তুমি চলে এস। কোথায় চলে আসব।’মগবাজার কাজি অফিসে চলে আস। বাদল সেখানেই তোয়াসখানেই তােমার জন্যে অপেক্ষা কছে।’ঠয়ে তারপর তোমাকে” আপনি পাগলের মত কথা বলছেন কেন?

মি. রেইন শুধু শুধ, কাজি অফিসে বসে থাকবে কেন?” | বাদল সেখানে আছে কারণ আমি তাকে সেখানে পাঠিয়ে তারপর তেল টেলিফোন করেছি। আমি নিশ্চিত ছিলাম তােমার সঙ্গে কথা বললেই তমি প্রস্তাবে রাজি হবে।

‘হিম সাহেব শুনুন। নিজের উপর এত বিশ্বাস রাখবেন না। আমি আপ প্রতিটি কথায় তাল দিয়ে গেছি দেখার জন্যে যে আপনি কতদূর যেতে পাবেন।

“তুমি তাহলে কাজি অফিসে আসছ না?” অবশ্যই না। এবং আমি আপনার প্রতিটি মিথ্যা কথাও ধরে ফেলেছি। কোন কোন মিথ্যা ধরলে।” “এই যে আপনি বললেন, মিঃ রেইন মগবাজার কাজি অফিসে বসে আছে।’ কি ভাবে ধরলে।’

এখনো ধরিনি। তবে ধরব। মগবাজার কাজি অফিস আমাদের বাসা থেকে। দু’মিনিটের পথ । আমি এক্ষুণি সেখানে যাচ্ছি।”

“শুধু দেখার জন্যে বাদল সেখানে আছে কিনা?

‘হারামজাদটা ঐ বদ মেয়েটাকে কোর্ট ম্যানেজ করেছে। ওর চামড়া ছিলে তুলে মরিচ লাগিয়ে দেয়া দরকার।

কোর্ট ম্যালেঞ্জ করে ফেলেছে— বাদালের মত নিরীহ ছেলে।’ নিরীহ ছেলেকে আর নিরীহ আছে? ডাইনীর খপ্পড়ে পড়েছে না।”

পা বললেন, আমি তাে কল্পনাও করতে পারছি না। কি ইচ্ছা করছে জানিস হিম।

না। কি ইচ্ছা করছে । “ফায়ারিং স্কোয়াডে দাঁড় করিয়ে হারামজাদাটাকে গুলি করে মারতে।’

হিমুর দ্বিতীয় প্রহর খন্ড-১৯

ফুপু কঠিন চোখে ফুপার দিকে তাকিয়ে বললেন, এইসব আবার কি ধরনের কথা। নিজের ছেলের মৃত্যু কামনা।

আহা কথার কথা বলেছি। গাধাটার তাে দোষ নেই। ডাইনীর পাল্লায় পড়েছে না।

আমি বললাম, নিজের ছেলের বউকেও ডাইনী বলা ঠিক হচ্ছে না। দুজনই ছেলে মানুষ একটা ভুল করেছে… এখন উচিত ক্ষমা সুন্দর চোখে….

ফুপু গর্জন করে উঠলেন, হিমু তুই দালালী করবি না। খবদরি বললাম। এই বাড়ি চিরদিনের জন্যে ওদের জন্যে নিষিদ্ধ।

“বেচারারা বাসর রাতে পথে পথে ঘুরবে।’

কেউ যদি জায়গা না দেয় পথে পথে ঘুরা ছাড়া গতি কি। আমি বাদলকে নিয়ে তার মা’র বাড়িতে গিয়েছিল। তিনি মুখের উপর দরজা বন্ধ করে। দিয়েছেন।

‘তাতাে দিবেই বদের ঝাড় না? আমার ছেলের মুখের উপর দরজা বন্ধ করে এতবড় সাহস। আমি এই বাড়িতেই আমার ছেলের বাসর করব ।

‘এটা মন্দ না। লাইট ফাইট নিয়ে আসি।’ ‘লাইট-ফচাইট কেন?” “আলােক সজ্জা করতে হবে না?”

“আলােক সজ্জাতাে পরের ব্যাপার-বাসর ঘর সাজাতে হবে। ফুল আনতে। হবে। এত রাতে ফুল পাবি?”

“পাব না মানে? ফুপু মাথার আইস ব্যাগ ফেলে দিয়ে উঠে বসলেন।

ফুপার চোখ চক চক করছে। মনে হয় ছেলের বিবাহ উপলক্ষে আজ তিনি। বােতল খুলবেন । তার সঙ্গির অভাব হবে না। মােফাজল এবং জহিরুল বাড়ির সামনেই ঘােরাঘুরি করছে। সিগন্যাল পেলেই চলে আসবে।

খট করে শব্দ হল । আঁখি টেলিফোন রেখে দিল । আমি মনে মনে হাসলাম। বাদলকে আমি আসলেই কাজি অফিসে পাঠিয়ে দিয়েছি। সে একা না সঙ্গে দুজন।

 

Read More

হুমায়ূন আহমেদের লেখা হিমুর দ্বিতীয় প্রহর খন্ড-২০

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *