সাক্ষীও আছে । মােফাজ্জল এবং জহিরুল।
ওদের জন্যে সুন্দর একটা বাসর ঘরের ব্যবস্থা করতে হয়। সবচে ভাল হত রাতটা যদি তারা দুজনে গাছের নিচে কাটাতে পারত। সেটা সম্ভব না। গল্পে উপন্যাসে গৃহ বিতলিত তরুণ তরুণীর গাছ তলায় জীবন কাটানাের কথা পাওয়া যায় । বাস্তব গল্প উপন্যাসের মত নয়। | রাত দশটায় ফুপুর বাড়িতে উপস্থিত হলাম । ঘটনা কতদূর গড়িয়েছে জানা।
বাসায় গিয়ে দেখি বিরাট গ্যাঞ্জাম। পর মাথায় আইস ব্যাগ চেপে এরা।
“হিমু সাহেব।
আমার অবস্থাটা চিন্তা করুন। যাদের নামে মামলা করেছি তারা। ভয়ানীদের সঙ্গে মিলেমিশে মেয়ে এবং মেয়ের জামাই-এর সঙ্গে হানিমুনে চলে আছেন। তার সামনে। ই মনে হচ্ছে, অনেক দিনেরমা বললেন, বাড়ির সবাইকক্সবাজারের দিকে রওনা পাওয়া যাচ্ছিল না।এখন মাদক সাহের শুকনো মুখে ফুলে বলার ঘরে বসে আছেন। এ কাপ চা। নাশতার প্লেটে দু’পিস কেক। দেখেই মনে হচ্ছে তা ললি চাপড়া। আমাকে দেখে উকি হতাশ গলায় বললেন, না কোথায় গেছে জানেন?
আম না। যদিও সুনসান নীরবতা দেখে কিছুটা আঁচ ক আমি বললাম, না। গানছিলাম। বাল এবং আমি হানিমুন করতে কক্সবাজারে দিন। হয়েছে। তাদের সঙ্গে এ বাড়ির সবাইও রওনা হয়েছে। ফুপা সম্পতি।
এট। মাইক্রস কিনেছেন। মাইক্রবাস ব্যবহারের সুযােগ পাওয়া যাচ্ছিল সুযােগ হয়েছে। হানিমুনে স্বামী স্ত্রী একা থাকবে এটাই নিয়ম। এ বাড়িতে। নিয়মই উল্টোদিকে চলে ।
হিমুর দ্বিতীয় প্রহর খন্ড-২০
বাড়ির সবাই কোথায় আপনি জানেন না?’ “জি না।’ ‘ওরা সবাই কক্সবাজার চলে গেছে।’ও আচ্ছা।
কাজের ছেলেটাকে জিজ্ঞেস করে জানলাম । আমার বিশ্বাস হচ্ছিল না বলে। আপনাকে জিজ্ঞেস করেছি।’
“আপনি মনে হয় কিছুটা আপসেট হয়েছেন।’
“আপসেট হওয়া কি যুক্তিযুক্ত নয়ঃ আপনার ফুপুর ঠেলাঠেলিতে মামলার সমস্ত ব্যবস্থা করে চারজনকে আসামী দিয়ে মামলা দায়ের করে বাসায় এসে শুনি। সবাই কক্সবাজার।
মামলা দায়ের হয়েছে?’ | “অবশ্যই হয়েছে। পাঁচজন সাক্ষি জোগাড় করেছি। এর মধ্যে মারাত্মক আহত আছে দু’জন। দু’জনই হাসপাতালে চিকিৎসাধিন । আসামী করেছি। তিনজনকে মেয়ের বাবা, মেয়ের বড় মামা আর মেজো মামা। আজই ওয়ারেন্ট ইস্যু হবে।
ঐ পাটিও গেছে নাকি?’ *জি তারাও গিয়েছে। আমি এখান থেকে টেলিফোন করে জেনেছি। তারা আরেকটা মাইক্রবাস ভাড়া করেছে।
‘বাহ ভালতো।
সাদেক সাহেব রেগে গেলেন। হতভম্ব গলায় বললেন, ভালাে মানে? ভালতাে বলছেন কেন?
“কিছু ভেবে বলছি না, কথার কথা বলছি।’ ‘আমার অবস্থাটা আপনি চিন্তা করছেন?
“আসলে মামলার কথাতে নেচে উঠাটা আপনার ঠিক হয়নি। সবুর করা উচিত ছিল। সবুরে ফুট” ফলে বলে একটা কথা আছে। সবুর করলে আপনাকে এই ঝামেলায় যেতে হত না। চুট ফলতাে আপনি ও মাইনাসে করে হানিমুন পার্টিতে সামিল হতে পারতেন।
রসিকতা করছেন? রসিকতা করছি না।
দয়া করে রসিকতা করবেন না । রসিকতা আমার পছন্দ না। আমি সিরিয়াস ধরণের মানুষ।
চা খাবেন?”
না চা খাব না। আচ্ছা দিতে বলুন। আমার মাথা আউলা হয়ে গেছে এখন । করবটা কি বলুন তাে?”
“সাজেশান চাচ্ছেন?”
না সাজেশান চাচ্ছি না। আমি অন্যের সাজেশানে চলি না।’
না চলাই ভাল ফুপুর সাজেশান শুনে আপনার অবস্থাটা কি হয়েছে দেখুন । পুরােপুরি ফেঁসে গেছেন।
হিমুর দ্বিতীয় প্রহর খন্ড-২০
সাদেক সাহেব সিগারেট ধরালেন। বেচারাকে দেখে সত্যি সত্যি মায়া। লাগছে।
সাদেক সাহেব।” “জ্বি।’ “আপনি মন খারাপ করবেন না। আমি আছি আপনার সঙ্গে। “আপনি আমার সঙ্গে আছেন মানে কি?
“ওরা যা ইচ্ছা করুক। ওদের মিল মতের আমরা তােয়াক্কা করি না । হিঃ বিঃ ৭
‘আপনিতাে ভাই খুবই কৱিকৰ্মা মানুষ। ডায়নামিক পার্সেনিলিটি।’ | প্রশংসায় সাদেক সাহেব খুশি হলেন না। তিনি আরাে মিইয়ে গেলেন। বাসি কেক কচকচ করে খেয়ে ফেললেন।
ভাস। আঁখির বাবা এবং একে দিয়ে রোলারের ডলা
জানি। মর্ডান সেলুনে এক বছর কাম করছি। কলাবাগান। ভাল সেলুন ।। এসি ছিল। কারিগরও ছিল ভাল।’
‘নাপিতের দোকান থেকে কি চুরি করেছিলি?” ‘ক্ষর, কেঁচি, চিরুনী, দুইটা শ্যাম্পু এইসব টুকটাক…খারাপ কি? ছােট থেকে বড়। টুকটাক থেকে একদিন ধুরুম ধারুম হবে।
লে চুল কেটে দে।’
এ কক্সবাজার চলে যান।দু’পাটিই আপনার আইনের প্যাচে ফেলে আমরা আমাদের মত মামলা চালিয়ে যাব।”
“ আর রসিকতা করছেন?”
ই আমি মােটেই রসিকতা করছি না। আমি সিরিয়াস। আঁখি দই মামাকে আমরা হাজতে ঢুকিয়ে ছাড়ব। পুলিশকে দিয়ে সে দেওয়াব। কানে ধরে উঠবােস করাব।’
“হিমু সাহেব। আপনার কি মাথা খারাপ? আপনি উন্মাদ ‘আমি উন্মাদের মত কথা বলছি?” অবশ্যই বলছেন।
তাহলে আনেকটা সাজেশান দি। আপনি নিজেও কক্সবাজার চলে আসামী ফরিয়াদী দুই পার্টিকেই একসঙ্গে ট্যাকল করুন। দু’পাটি চোখের সামনে থাকবে। আপনি বিচক্ষণ আইনবিদ। আইলের পায় হালয়া টাইট করে দিন । ওরা বুঝুকি হাউ মেনি প্যাডি, হাউ মেনি রাইস।
হিমুর দ্বিতীয় প্রহর খন্ড-২০
নুন হিম সাহেব-আপনি আপনার মাথার চিকিৎসা করাবার ব্যবস্থা ইউ আর এ সিক পারসন। | আপনার চায়ের কথা বলা হয় নি। দাড়ান চায়ের কথা বলে এসে আপনার সঙ্গে জমিয়ে আডডা দেব। সাদেক সাহেব উঠে দাঁড়ালেন এবং আমাকে দ্বিতীয় বাক্য বলার সুযােগ না দিয়ে বের হয়ে গেলেন। সাহিত্যের ভাষায় যাকে বলে-ঝড়ের বেগে নিয়ন। ফুপুর কাজের ছেলে রশীদ আমার খুব যত্ন নিল।
আমাকে সে কিছুতেই যেতে দেবে না। রশীদের বয়স আঠারাে উনিশ। শরীরের বাড় হয়নি বলে এখনাে বালক বালক দেখায়। ফুপার বাড়িতে সে গত দু’বছর হল আছে। ফপর ধারণা রশীদের মত এক্সপার্ট কাজের ছেলে বাংলাদেশে দ্বিতীয়টা নেই। সে এতা। একশ’ না একাই তিনশ। কথাটা মনে হয় সত্যি।
রশীদ দাঁত বের করে বলল, আইজ আর কই ঘুরবেন। শুইয়া বিশ্রাম করেন। মাথা মালিশ কইরা দিমু। দুপুরে আফনের জন্যে বিরানী পাকামু।।
“বিরানী রানতে পারিস?”
“আমি পারি না এমন কাম, এই দুনিয়াতে পয়দা হয় নাই। সব কিসিমের কাম এই জীবনে করছি।’
বলিস কি?’
আমি হাত পা ছড়িয়ে বারান্দায় মােড়ায় বসলাম। রশীদ মহা উৎসাহে আমার চুল কাটতে বসল।
‘মাথা কামাইবেন ভাইজান?” “মাথা কামানাের দরকার আছে?” “শখ হইলে বলেন। মাথা কামানিটা হইল শখের বিষয়।
“মাথা কামাতে তাের যদি আরাম লাগে তাহলে কামিয়ে দে। সমস্যা কিছু নেই। আমার মাথায় চুল থাকাও যা না থাকাও তা।
রশীদ গম্ভীর মুখে বলল, লােকের ধারণা মাথা কামানি খুব সহজ। আসলে কিন্তু ভাইজান বড়ই কঠিন কাজ।
হিমুর দ্বিতীয় প্রহর খন্ড-২০
আমি গম্ভীর গলায় বললাম, জগতের যাবতীয় কঠিন কাজই আপাত দৃষ্টিতে। খুব সহজ মনে হয়। সহজ কাজকে মনে হয় কঠিন। যেমন ধর সত্য কথা বলা। মনে হয় না খুব সহজ, ইচ্ছা করলেই পারা যাবে। আসলে ভয়ংকর কঠিন। যে মানুষ এক মাস কোন মিথ্যা না বলে শুধুই সত্যি কথা বলবে ধরে নিতে হবে সে। একজন মহামানব।
“ভাইজান।’
“আমার ভাইজান আফনের মত অবস্থা। বেশীদিন কোন কামে মন টিকে না। চুরি ধারি কইরা বিদায় হই।’
“চুরি ধারি করিস?”
পরথম করি না। শেষ সময়ে করি। বিদায় যেদিন নিমু তার এক দিন আগে করি। ভাইজান আফনের চুল বড় হইছে চুল কাটবেন?”
নাপিতের কাজও জানিস?
“আপনার সঙ্গে আমার একটা পেরাইভেট কথা ছিল।’
বলে ফেল। ‘আফনের কাছে আমি একটা জিনিশ চাই ভাইজান- আফনে না বলতে পারবেন না।’
“কি জিনিশ চাস?”
সেইটা ভাইজান পরে বলতেছি। আগে আফনে ওয়াদা করেন দিবেন।” “তুই চাইলেই আমি দিতে পারব এটা ভাবলি কি করে?
“আফনে মুখ দিয়া একটা কথা বললেই সেইটা হয়- এইটা আমরা সবেই জানি।’
“তােকে বলেছে কে?
বলা লাগে না ভাইজান। বুঝা যায়। তারপরে বাদল ভাই বলছেন। বাদল ভাইয়ের বিবাহ গেছিল ভাইঙ্গা। বাদল ভাই আফনেরে বলল- সঙ্গে সঙ্গে সব
হিমুর দ্বিতীয় প্রহর খন্ড-২০
“তুই চাস কি?”
না আমার পা ছুষের ভক্তি ভরে তুমি কি জান যে মানুষের মনেও পরম করুণাময় কিছু কাটা বিশাইয় দেন। এটি কাটার নাম-মন্দ কাটা। তুমি যখনই কোন মন্দ কাজ করিরে তখনই
এই আটা তােমাকে স্মরণ করাইয়া লিৰে । তুমি অস্বস্তি বােধ করিতে থাকিবে। ব্যথা বােধ না অস্বস্তিবোধ।
সাধারণ মানুষদের জন্যে এইসব কাটার প্রয়োজন আছে। সিদ্ধ পুরুলের নো প্রয়োজন নাই। কাজেই কন্টকমুক্তির একটা চেষ্টা অবশ্যই তোমার মধ্যে থাকা উচিত। যেদিন নিজেকে সম্পূর্ণ কন্টকমুক্ত করিতে পারিবে সেইদিন তোমার মুক্তি। বাবা হিমালয় , প্রসঙ্গক্রমে তোমাকে একটা তথা বলি মহাপাখাওরাও কন্টকমুক্ত থাকে। এই অর্থে মহাপুরুষ এবং মহাপাষণ্ডের ভেতনের তেমন কোন প্রভেদ নাই।
বললাম মানুষকে ভক্তি। মাথা ম্যাসেজ করা হল। গা মালিশ করা ১নে রোষ্ট । অতি সুস্বাদুনো যাইতে পুব মন চায় ভাইজান। দেশে মন টিতে না । “আচ্ছা যা হবে।” রশীল মাথা কামানো বন্ধ করে তন্মনাং আমার পা ল। আমি সিদ্ধ পুরুদের মতই তার শ্রদ্ধা গ্রহণ করলাম। এ করতে ভাল লাগে না। মানুষের ভক্তি পেতে ভাল লাগে।
আমার মাথা কামানাে হল। মাথা ম্যাসেজ করা হল পরে হেভি গানাপিনা হল। খাসির বিরিয়ানী, মোরগীর নেই। রান্না। ভরপেট খাবার পরেও মনে হচ্ছে আরাে খাই ।।
রশীদ তুইতাে ভাল রান্না জানিস।’
চিটাগাং হােটেলে বাবুর্চির হেল্পার ছিলাম ভাইজান । বাবুর্চির কা মনা মিয়া। এক লম্বর বাবুচি ছিল। রন্ধনের কাজ সব শিখছি এতেভাল শিখেছিস। খুব ভাল শিখেছিস।’
লাইতে ভাইজান আফনেরে চিতল মাছের পেটি খাওয়ামু। এইটা জিনিশ।’
হিমুর দ্বিতীয় প্রহর খন্ড-২০
“কি রকম জিনিশ?
বাবুর্চির নাম-ওস্তাদ শিখছি ওস্তাদের কাছে।’
গলায় কাটা নিয়ে রাতে আশরাফুজ্জামান সাহেবের সঙ্গে দেখা করতে গেলাম। ভদ্রলােক মনে হচ্ছে কোন ঘােরের মধ্যে আছেন। আমার মুণ্ডিত মস্তক
তার নজরে এল না। তিনি হাসিমুখে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন।
‘ভাই সাহেব আমি আপনার জন্যেই অপেক্ষা করছিলাম। আমি জানতাম আজ আপনি আসবেন।”
“আজ কি বিশেষ কোন দিন?” “জি। আজ আমার মেয়ের পানচিনি হয়ে গেছে।’
একবার খাইলে মিত্যুর দিনও মনে পড়ব। আজরাইল যখন জান কল
জানা বিচের জন্যে আসব তখন মনে হইব-আহারে চিতল মাছের পেটি। ওস্তাদ মন আমারে হাতে ধইরা শিখাইছে । আমারে খুব পিয়ার করতাে।’
‘ওস্তাদের কাছ থেকে কি চুরি করলি।’
রশীদ চুপ করে রইল। আমি আর চাপাচাপি করলাম না। দুপুরে লম্বা ঘন দিলাম। রাতে থেলাম বিখ্যাত চিতল মাছের পেটি। সেই রান্না শিল্পকর্ম হিসেবে।
কতটা উত্তীন বলতে পারলাম না-কারণ শুরুতেই গলায় কাঁটা বিধে গেল।। মাছের কাটা খুবই তুচ্ছ ব্যাপার কিন্তু একে অগ্রাহ্য করা যায় না। প্রতিনিয়তই সে | জানান দিতে থাকে। আমি আছি। আমি আছি। আমি আছি। ঢোক গেলার । প্রয়ােজন নেই তারপরেও ক্রমাগত ঢোক গিলে যেতে হয়। কাটার প্রসঙ্গে আমার বাবার
Read More