কথা মনে পড়ল । তাঁর বিখ্যাত বাণীমালায় কাঁটা সংক্রান্ত বাণীও ছিল।
“কি যে আনন্দ আমার হচ্ছে ভাই। একটু পর পরেই চোখে পানি এসে যাচ্ছে।‘
তিনি চোখ মুছতে লাগলেন। চোখ মনে হয় অনেকক্ষণ ধরেই মুছছেন। চোখ লাল হয়ে আছে। আমি বললাম, আপনার মেয়ে কোথায়? এত বড় উৎসব বাসা খালি কেন?
“মেয়ে খুব কান্নাকাটি করছিল । আমার কান্না দেখেই কাঁদছিল। শেষে তার মামাতাে ভাইবােনরা এসে নিয়ে গেছে। আমাকেও নিতে চাচ্ছিল আমি যাইনি।”
যান নি কেন?”
ইয়াসমিন একা থাকবে। তাছাড়া মেয়ের বিয়ে নিয়ে তার সঙ্গে একটু কথাবার্তাও বলব। আমার দায়িত্ব এখন শেষ।‘
‘উনার দায়িত্বওতাে শেষ । মেয়েকে আর চোখে চোখে রাখতে হবে না। উনি আবার মেয়ের শ্বশুর বাড়িতে গিয়ে উপস্থিত হবেন নাতাে? জীবিত শাশুড়িকেই জামাইরা দেখতে পারেন না–উনি হলেন ভুত শাশুড়ি।
আশরাফুজ্জামান সাহেব করুণ গলায় বললেন, আমার স্ত্রী সম্পর্কে এই জাতীয় বাক্য ব্যবহার করবেন না ভাই। আমি খুব মনে কষ্ট পাই।
“আচ্ছা যান আর করব না।‘
হিমুর দ্বিতীয় প্রহর খন্ড-২১
কাটা কণ্টক, শলা, তরুনখ, সূচী চোচ। বাবা হিমালয় শৈশবে কইমাছের ঝােল খাইতে গিয়া একবার তােমার গলায় কইমাছের কাটা বিধিল । তুমি বড়ই অস্থির হইলে । মাছের কাঁটার যন্ত্রণা তেমন অসহনীয় নয় তলে–বড়ই অস্বস্থিকর। কণ্টক নীরবেই থাকে তবে সে প্রতিনিয়তই সে ত্যর অস্তিত্ব স্মরণ করাইয়া দেয়। কণ্টকের এই স্বভাব তােমাকে জানাইবার জন্যই আমি তোমার গলার কাঁটা তুলিবার কোন ব্যবস্থা ‘ভাই আর রাতটা আপনি আমার সাল থেকে যান এনে গল্প ।
“আমি প্রাঙ্গলে আপনি আপনার স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলবেন কি ভাবে।
এর সঙ্গেতাে সারাক্ষণ কথা বলি না। কথাবার্তা সামান্যই হয়। এর বলতে কষ্ট হয়।
“হিমু সাহেব। তাই আমার অনুরোধটা রাখুন। থাকুন আমার সঙ্গে। লিমা। ধােয়া চাদর দিয়ে নিচ্ছি।
‘চাদর ফাদার কিছু লাগবে না। একটা বিড়াল লাগবে। আপনার বাসায় বিড়াল আছে।
না বিড়াল লাগবে কেন?” ‘আমার গলায় কাঁটা ফুটেছে। বিড়ালের পা ধরলে নাকি গলার কাঁটা চলে যায়।
” এইসব কথা একদম বিশ্বাস করবেন না। এইসব হচ্ছে কুসংস্কার। গত লবণ পানি নিয়ে গার্গল করেন গলার কাঁটা চলে যাবে। আমি গরম পানি এ নিচ্ছে। গলার কাটার খুব ভাল হােমিওপ্যাথি অষুধ আছে। কাল সকালে আমি আপনাকে জোগাড় করে লেব—অ্যাকোনাইট এস”
“আপনি তাহলে হােমিওপ্যাথিও জানেন?‘।
হিমুর দ্বিতীয় প্রহর খন্ড-২১
ছােট বাচ্চা মানুষ করেছি হােমিওপ্যাথিতাে জানতেই হবে। বই পড়ে পড়ে। শিখেছি, আরােহিত জ্ঞান। আপনার যদি দীর্ঘদিনের কোন ব্যধি থাকে—বলবেন। চিকিৎসা করব। তখন বুঝতে পারবেন যে আমি আসলে একজন ভাল। চিকিত্সক।
‘ভয় পাওয়া রােগ সারাতে পারবেন? ভয় পাওয়া রােগ? আপনি ভয় পান?
একবার পেয়েছিলাম। সেই ভয়টা মনে গেঁথে ক্রনিক হয়ে গেছে। কিংবা এমন ও হতে পারে–পাগল হয়ে যাচ্ছি।‘
এই দুটি রােগেরই হােমিওপ্যাথিতে খুব ভাল চিকিৎসা আছে। ভূত–প্রেত দেখতে পেলে–স্ট্রামােনিয়াম ৬, আর যদি মনে হয় পাগল হয়ে যাচ্ছেন তাহলে খেতে হবে প্ল্যাটিনা ৩০, দু‘টাই মানসিক অসুখ।’
“মনে হচ্ছে হােমিওপ্যাথিতে মানসিক রােগের ভাল চিকিৎসা আছে।‘ | “অবশ্যই আছে। যেমন ধরুন কেউ যদি মনে করে সব বিষয়ে তার টনটনে। জ্ঞান তাকে দিতে হবে কফিয়া ৬, অনবরত কথা বলা রােগের জন্যে–ল্যাকেসিস। ৬, লােকের সঙ্গ বিরক্তি এলে নাক্সভমিকা ৩, উদাসিন ভাব, অ্যাসিড ফস–৩, সুন করার ইচ্ছা জাগলে– হায়ােসায়েমাস ৩, আত্মহত্যা করার ইচ্ছা–অরাম সেট ৩০, কথা বলার সময় কান্না পেলে–পালস ৬, অতিরিক্ত ধর্মচিন্তা– নাক্সভমিকা।
“অতিরিক্ত কথা বলার ইচ্ছা কমে কোন অষুধে বললেনঃ
ল্যাকেসিস ৬” “ঘরে আছে না? *জি আছে। গলার কাটার অষুধটা নেই। এইটা আছে । “আপনারতাে মনে হয় ল্যাকেসিস ৬ অষুধটা নিয়মিত খাওয়া উচিত।
হিমুর দ্বিতীয় প্রহর খন্ড-২১
হিম সাহেব আমি কিন্তু কথা কম বলি । কথা বলার মানুষই পাই না। কথা। লেব কি করে? আমার মেয়েতাে আমার সঙ্গে কথা বলে না । যখন ছােট ছিল। ভন কুলত । এখন যতই দিন যাচ্ছে ততই সে দূরে সরে যাচ্ছে। কথা কম বলা
বাগেরও ভাল হােমিওপ্যাথি চিকিৎসা আছে—অ্যাসিড ফস ৬, উদাসিন ভাবের
নাে অ্যাসিড ফস ৩, আর কথা কম বলা রােগের জন্যে অ্যাসিড ফস ৬. কিন্তু আমার অষুধ খাবে না। ওর ধারণা হােমিওপ্যাথি হল চিনির দালা। কোন একটা বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবার আগে পরীক্ষা করে দেখতে হয়। পরীক্ষা না করেই কেউ যদি বলে চিনির দলা। সেটা কি ঠিক?
“জ্বি না ঠিক না।
আমাদের নিয়ম হচ্ছে পরীক্ষা ছাড়াই সিদ্ধান্ত। খারাপ না?” খুবই খারাপ।” ‘আমি কথা বেশী বলায় বিরক্ত হবেন না। অনেকদিন পর আপনাকে পেয়েছি বলে এত কথা বলছি। আপনিতাে আর সাধারণ মানুষের মত না যে–আপনার সঙ্গে মেপে মেপে কথা বলতে হবে।‘
“আমি সাধারণ মানুষের মত না?”
“অবশ্যই না । ঐ দিন আপনি আমার কন্যার বাড়ি ফেরা সম্পর্কে যে সময়। বলে গিয়ে ছিলেন, সে ঠিক সেই সময় ফিরেছে। আমি খুবই বিস্মিত হয়েছিলাম । এজ এ মেটার অব ফেট আমার বিষ্ময় ভাব এখনাে যায় নি । প্রচও আধ্যাত্বিক ক্ষমতা সম্পন্ন মানুষতাে আর আজকাল পাওয়া যায় না। যাদের এই ক্ষমতা আছে।
হিমুর দ্বিতীয় প্রহর খন্ড-২১
তারা তা প্রকাশ করেন না। তার আড়ালে থাকতেই পছন্দ করেন। আপনার সঙ্গে নিশ্চয়ই অনেকের যােগাযােগ আছে। আপনি যদি দয়া করে এমন লােকের সঙ্গে আমার পরিচয় করিয়ে দেন তাহলে খুব খুশী হব। আছে এমন কেউ?” | “আছে একজন—ময়লা বাবা । গায়ে ময়লা মেখে বসে থাকেন।’
ময়লা মেখে বসে থাকেন কেন?” বলতে পারব না । জিজ্ঞেস করিনি।‘ ‘জিজ্ঞেস করেন নি কেন?
“জিজ্ঞেস করিনি কারণ তার সঙ্গে আমার দেখা হয় নি। তার ঠিকানা | জোগাড় করেছি। একদিন যাব।’
“হিমু সাহেব ভাই যেদিন যাবেন অবশ্যই আমাকে নিয়ে যাবেন। উনার ক্ষমতা কেমন?
আজো চিঠি দেয়। টেলিফোন করে। সুন্দরী মেয়েদের সঙ্গে আজেবাজে ধরণের কখো মানুষ খুব সহজে বিশ্বাস করে। বিয়ে ভেঙ্গে যায়। আমার মেয়ে এতে খুন পায়। আমি তেমন পাই না, কারণ আমার স্ত্রী আগেই আমাকে জানিয়ে দেন আমার মেয়ের ভেতর থাকে না বলে সে খুব কষ্ট পায়। বিয়ে হচ্ছে না এই জন্যে। কষ্ট না, অপমানের কষ্ট।‘ কষ্ট হবারই কথা।
হিমুর দ্বিতীয় প্রহর খন্ড-২১
তারপর সে ঠিক করল কোনদিন বিয়েই করবে না। কঠিন ভাবে আমাদের। সবাইকে বলল—তার বিয়ে নিয়ে আর একটি কথাও যেন না বলা হয়। আমার মেয়ে আবার খুব কঠিন ধরণের–একবার যা বলবে তাই। এর কোন নড়চড় হবে না। আমরা বিয়ে নিয়ে কথাবার্তা দীর্ঘদিন বলিনি।
এতদিন পর হঠাৎ আবার লােকায় অনেছি ভাল ক্ষমতা। মনের কথা হড়বড় করে বলে । আপনার মনে কোন খারাপ নয়। কিল উনার সঙ্গে দেখা না । হড়বড় করে বলে দেবেন ‘অশান পড়বেন অপঞ্জায়।”
উনার নাম নি বললেন, ময়লা বাবা | ‘ড়ি ময়লা বাবা। “কি ধরণের ময়লা গায়ে মাখেন?
‘এক ততীয়াংশ নর্দমার পানির সঙ্গে এক তৃতীয়াংশ ডাস্টবিনের ময়লা ঘমাংশ টাটকা , স আরাে কিছু হাজিলাজি দিয়ে সেমি সলিড মিকশ্চার তৈরী করে তেলের মত গায়ে মেখে ফেলেন।
সতি।‘ “ভাই আমি রসিকতা করছি। সত্যি কি–না এখনাে জানি না। দেখা জানব। ময়লার ফর্মুলা নিয়ে আসব। ইচ্ছা করলে আপনিও গায়ে আয়। পারেন।‘
হিমুর দ্বিতীয় প্রহর খন্ড-২১
‘ একজন মানুষ যে অন্য একজনকে কি পরিমান বিরক্ত করতে পারে আe আশরাফুজ্জামান সাহেবের সঙ্গে রাত কাটিয়ে এই তথ্য জেনে গেলাম ।
‘ আমি পা গুটিয়ে বিছানায় বসে আছি। তিনি বসে আছেন আমার সামনে একটা বেতের চেয়ারে। তিনি নন স্টপ কথা বলে যাচ্ছেন। ঢাকা–চিটাগা। আন্তনগর ট্রেনও কিছু ষ্টেশনে থামে। উনি কোন ষ্টেশনাই ধরছেন না। ছুটে চলছে তুফান মেইল। তার সব গল্পই তার কন্যা এবং ভূত –স্ত্রী প্রসঙ্গে । আমি মনে যাচ্ছি মন দিয়েই শুনছি।
অন্যের কথা মন দিয়ে শােনার বিদ্যা আমার ভালই। আয়ত্ত হয়েছে। | ‘বুঝলেন হিমু ভাই, আজ আমি একজন মুক্ত মানুষ। এ ফ্রী ম্যান। মানে এখনাে ফ্রী না তবে হয়ে যাচ্ছি। যেদিন আমার মেয়ে শ্বশুর বাড়ির দিকে রওনা হবে, সেদিনই আমি হব একজন স্বাধীন মানুষ। মেয়েটা সুন্দর হওয়ায় নানান সমস্যা হচ্ছিল। কলেজে উঠার পর থেকে শুধু বিয়ের সম্বন্ধ আসে। শুধু সম্বন্ধ। এলে ক্ষতি ছিল না। তারা নানান ভাবে চাপাচাপি
Read More