করে। ভয় পর্যন্ত দেখায় এমন অবস্থা। বিয়ে না দিলে মেয়ে উঠিয়ে নিয়ে চলে যাব এই জাতীয় কথাবার্তা পর্যন্ত বলে। শুধু যে ওরা চাপাচাপি করেছে তাই না, আমার আত্মীয় স্বজনরাও। চাপাচাপি করেছে। আমি একা মানুষ মেয়ে মানুষ করতে পারছি না এইসব উদ্ভট মুক্তি। যখন বিয়ে দিতে মন ঠিক করলাম তখন অন্য সমস্যা।
বিয়ের সব ঠিকঠাক হয়, ছেলে পছন্দ হয়, কথাবার্তা পাকা হয় তখন বিয়ে ভেঙ্গে যায়। ক‘বার এ রকম হল জানেন? পাঁচ বার । এর মধ্যে তিনবার বিয়ের কার্ড পর্যন্ত । ছাপা হয়ে গিয়েছিল । আপনাকে কার্ড দেখাব । সব যত্ন করে রেখে দিয়েছি।‘
‘বিয়ে ভেঙ্গে যায় কেন?‘ “দুষ্ট লােক কানভাঙ্গানি দেয়। আমার মেয়ের নামে আজে বাজে কথা বলে,
“ভালতাে বটেই। কি যে আনন্দ আমার হচ্ছে তা আপনাকে বলে বুঝাতে। পারব না।‘
“আপনার স্ত্রী? তিনিও কি আপনার মতই আনন্দিত?” “হ্যা সে ও খুশী। খুব খুশী। “আপনার সঙ্গে কী হয়েছে? ‘হি কথা হয়েছে।’
তিনি আবার বলেননিতাে যে এবারাে বিয়ে ভেঙ্গে যাবে?” | ‘না বলেনি। অবশ্যি সে ভবিষ্যতের কথা খুব আগে ভাগে বলতে পারে না। শেষ মুহূর্তে বলে । কে জানে এইবারও শেষ মুহূর্তে কিছু বলে কি–না।
‘শেষ মুহতে কিছু বলার সুযােগ না দিলেই হয় । বিয়ের কথাবার্তা পাকা হবে সঙ্গে সঙ্গে বিয়ে হয়ে যাবে। ধর তক্তা মার পেরেক অবস্থা। কেউ ভাঙ্গানি। দেবার সুযােগ পাবে না।‘
তাকি আর হয় । মেয়ের বিয়ে বলে কথা। এতাে আর চাইনীজ লেনোটে ডিনার খাওয়ার মত ঘটনা না যে রাত আটটায় ঠিক করা হবে রাত ন‘টায় খেতে যাওয়া হবে।
“তাও ঠিক।‘ “মেয়ের ছবি দেখাবেন?‘ “নিশ্চয়ই দেখব।‘ | ‘সব ছবি দেখতে সময় লাগবে। শত শত ছবি আমি তুলেছি। এক সময় ফটোগ্রাফির শখ ছিল । এখনাে আছে । নিয়ে আসব?”
হিমুর দ্বিতীয় প্রহর খন্ড-২২
সব মিলিয়ে পঁচিশটা এলবাম।‘
“চিশটা এলাম”
“জি একেক বছরের জন্যে একেকটা। আসুন এলবাম দৈখি । আমি মেয়েকে বলেছি মা শােন, এই বাড়ি থেকে তুই সব কিছু নিয়ে যা শুধু এলবামগুলি নিতে পারবি না।‘
আমরা এলবাম দেখা শুরু করলাম । ছবির উপর দিয়ে শুধু যে চোখ বুলিয়ে যাব সে উপায় নেই—প্রতিটি ছবি আশরাফুজ্জামান সাহেব ব্যাখ্যা করছেন ” “যে কটা পরা দেখছেন তার একটা সাইড ছােড়া আছে। মীরার গুব প্রিয়। ঐক। ছিড়ে গেছে তারপরেও পরবে। ধুতনীতে কাটা দাগ দেখতে পাচ্ছেন না বাথরুমে পা পিছলে পরে ব্যথা পেয়েছিল। রক্তারক্তি কাণ্ড। বাসায় গাদাফুল। ছিল। সেই সুলে কচলে দিয়ে রক্ত বন্ধ করেছি
আমরা ভাের চারটা পর্যন্ত সাতটা এলবাম শেষ করলাম। অষ্টম এলাম। হাতে নিয়ে বললাম, আশরাফুজ্জামান সাহেব কাপড় পরুনতাে ।
তিনি চমকে উঠে বললেন, কেন? আমি বললাম, আমার ধারণা আপনার কন্যার বিয়ে হয়ে গেছে। “কি বলছেন এসব “মাঝে মাঝে আমি ভবিষ্যৎ বলতে পারি।‘
আশরাফুজ্জামান সাহেব কিছুক্ষণ হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে থেকে নিশব্দে উঠে গিয়ে পাঞ্জাবী গায়ে দিলেন।
আমরা ভাের পাঁচটায় ধানমণ্ডিতে মেয়ের মামার বাড়িতে পৌছলাম। দেখা গেল আসলেই মীরার বিয়ে হয়ে গেছে। রাত দশটায় কাজি এনে বিয়ে পড়ানাে ময়লা বাবার আস্তানা কু ড্রাইল গ্রামে বুড়িগঙ্গা পার হয়ে নিশা। তেলােমিটার যেতে হয়। তারপর হর্ণন। কাচা রাস্তা ক্ষেতের আইল মন্ত্র। লিয়ে আরো পাচ কিলােমিটার।
হিমুর দ্বিতীয় প্রহর খন্ড-২২
মহাপুরুষদের দেখা পাওয়া সহজ ব্যাপার না। ” বাবা হিসেবে তার খ্যাতি এখনো বােধ হয় তেমন দুড্রাম নি । অল্প কিছু তে উঠোনে শুকনাে মুখে বসে আছে। উঠোনে চাটাই পাতা, বসার ব্যবস্থা । উঠান এবং টিনের বারান্দা সবই পরিস্কার পরিচ্ছন্ন। যে বাবা সারাগায়ে মসলা। আগে বসে থাকেন তার ঘর দেয়ার এমন ঝকঝকে কেন–এই প্রশ্ন সংগত কারণেই মনে আসে।
আমার পাশে একজন হাপানির রোগী । টেনে টেনে শ্বাস নিচ্ছে। দেখে মনে হয় সময় হয়ে এসেছে, চোখ মুখ উল্টে এক্ষুণী ভিরমি খাবে। আমি তাতে বিভ্রান্ত হলাম না। হাপানী রােগিকে যত সিরিয়াসই দেখাক এরা এত সহজে ভিরমি খায়
রােগি আমার দিকে চোখ ইশারা করে বললেন, বাবার কাছে আইছেন?
আমি বললাম, হ্যা।। “আপনার সমস্যা কি?”
‘সমস্যা কিছু না, ময়লা বাবাকে দেখতে এসেছি। আপনি রােগ সারাতে এসেছেন?”
“জ্বি।” ‘বাবার কাছে এই প্রথম এসেছেন?
আমি বললাম, মেয়ের বাবাকে না জানিয়ে বিয়ে ব্যাপারটা কি?
মেয়ের মামা আমাকে আড়ালে ডেকে নিয়ে বললেন, আপনি বাইরের মানুষ আপনাকে কি বলব, না বলেও পারছি না–মেয়ের বিয়ে ভেঙ্গে যেত তার বাবার কারণে। উনিই পাত্রপক্ষকে উড়াে চিঠি দিতেন। টেলিফোনে নিজের মেয়ের সম্পর্কে আজে বাজে কথা বলে বিয়ে ভাঙ্গতেন । বিয়ের পর মেয়ে তাকে ছেড়ে চলে যাবে এটা সহ্য করতে পারতেন না। উনি খানিকটা অসুস্থ। আমরা যা করেছুি উপায় না দেখেই করেছি।
আশরাফুজ্জামান সাহেব দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কাঁদছেন । আমি তাকে রেখে। নিঃশব্দে চলে এলাম। সকাল বেলায় হাঁটার অন্যরকম আনন্দ।
হিমুর দ্বিতীয় প্রহর খন্ড-২২
“আর কোন বাবার কাছে যান নি? বাংলাদেশেতাে বাবার অভাব নেই। কেরামতগণ্ডোর নেংটা বাবার কাছে গিয়েছিলাম।‘ “লাভ হয় নি?” বাবা আমার চিকিৎসা করেন নাই।” ইনি করবেন?”
দেখি আল্লাহপাকের কি ইচ্ছা। | রােগির হাপানির টান বৃদ্ধি পেল। আমি চোখ অন্যদিকে ফিরিয়ে নিলাম। মানুষের কষ্ট দেখাও কষ্টের। হাঁপানী রােগীর দিকে বেশীক্ষণ তাকিয়ে থাকলে। সুস্থ মানুষেরও নিঃশ্বাসের কষ্ট হয়। সাড়ে, মেয়েদের এক নি। চোখে সুরমা দেয়া মি, ময়লা–বাবা টাকা সলেই গা ভর্তি মালা।
মনে হচ্ছে ডাস্টবিন উপুর করে গায়ে ঢেলে লো ছে। উৎকট গন্ধে আমার বমি আসার উপক্রম হল। একি কাণ্ড। বিস্ময়কর পার হচ্ছে, বাবার চোখে সােনালী ফ্রেমের চশমী, এবং, তার মুখ হাসি হাসি । টতে তাকিয়ে টানা টানা গলায় সুর করে বললেন, কেমন আছেন লো?
আমি বললাম, ভাল৷ ‘দুর্গন্ধ সহ্য হচ্ছে না?” খে সুরমা দিয়েছেন, সেই
“কিছুক্ষণ বসে থাকেনসহ্য হয়ে যাবে। কিছুক্ষণ কষ্ট কলেন।”
গায়ে ময়লা মেখে বসে আছেন কেন?”
কি করব বলেন—নাম হয়েছে ময়লা–বাবা। নামের কারণে ময়লা মাখি । গ। মেখে বসে থাকলে ভাল হত। লােকে বলত গ–বাবা । হি হি হি।
তিনি হাসতে শুরু করলেন। এই হাসি স্বাভাবিক মানুষের হাসি না ।। অস্বাভাবিক হাসি । এবং খানিকটা ভয় ধরানাে হাসি।
হিমুর দ্বিতীয় প্রহর খন্ড-২২
“আপনার নাম কি গাে বাবা?‘
শাল এগারোটার মত বাজে। বাবার লেনা নেই। উঠোনে সড়ছে। গা চিড়বিড় করছে। তাদের সংখ্যা বাড়ছে। নাল পলতা চোখে পড়ছে। তারা ছেলেবের এক জায়গায় বসালে।
নয়। সবারই উঠোনে চাটাইয়ে বসাতে হচ্ছে হলে । মমােরিনের নাগ পেয়া। এই চোখে পড়ে নি চোরকা , চায় মেয়ে চেহারার একি খালেমাকে নীচু গলায় বললাম, সুনাল। পয়সা কি নেন?
খালেম বিন ক্রু মুখে বলল, বাবা টাকা পয়সা নেন না। ‘টাকা পয়সা না নিলে উনার চালে কি ভাবে? উনার কি ভাবে চলে সেটা নিয়ে আপনার চিন্তা করতে হবে না।‘
আপনাদের ওতাে খরচ পাতি আছে। এই যে চোখে সুরমা দিয়েছে, সমাওতো নগদ পয়সায় কিনতে হয় বা শান ভান্যে কিছু পয়সা সুদি এসেছি, কার কাছে দেব বলেন।
বাবাকে জিজ্ঞেস করবেন। উনি দর্শন নিবেন কখন? জানি না । যখন সময় হবে উনি একনি একজন করে ডাকবেন। “সিরিয়েলি ডাকবেন? যে আগে এসেছে সে আগে যাবে?
বাবার কাছে কোন সিরিয়েল নাই। যাকে ইচ্ছা বাবা তাকে আগে ডাকেন। অনেকে আসে বাবা ডাকেনও না।”
“আমার ডাকতাে তাহলে নাও পরতে পারে। অনেক দূর থেকে এসেছি ভাই সাহেব।”
‘বাবার কাছে নিকট–দূর কোন ব্যাপার না।‘
“তাতাে বটেই নিকট–দূর হল আমাদের মত সাধারণ মানুষের জন্যে । বাবাদের জন্যে না।‘
‘আপনি বেশি প্যাচাল পারতেছেন। প্যাচাল পারবেন না, বাবা প্যাচাল পছন্দ করেন না। নিম ধরে বসে থাকেন। ভাগ্য ভাল হলে ডাক
Read More