হুমায়ূন আহমেদের লেখা হিমুর দ্বিতীয় প্রহর খন্ড-২৩

পাবেন| আমি ঝিম ধরে বসে রইলাম আমার ভাগ্য ভাল, বাবার ডাক পেলাম খাদেম আমার কানে কানে ফিস ফিস করে বলল, বাবার হুজরাখানা থেকে বের হবার সময় বাবার দিকে পিঠ দিয়ে বের হবেন নাএতে বাবার প্রতি অসম্মান হয়আপনার এতে বিরাট ক্ষতি হবে

হিমুর দ্বিতীয় প্রহর  

 বৰিাদের দুজৱাখানা অন্ধকার ধরণের হয়ধূপটুপ জ্বলে | ধূপের ধােয়ায় দর বােকাই থাকে দরজা জানালা থাকে বন্ধ ভক্তকে এক ধরণের আদিভৌতিক পরিবেশে ফেলে দিয়ে হকচকিয়ে দেয়া হয়এটাই নিয়মময়লা বাবার ক্ষেত্রে এই নিয়মের সামান্য ব্যতিক্রম দেখা গেলতার হুজরাখানায়লর জা জানালা সবই খােলাপ্রচুর বাতাসবাবা খালি গায়ে বসে আছেন। 

বাহ ভাল নাম সুন্দর নামপিতা রেখেছেন

ভাল অতি ভালগন্ধ কি এখনাে নাকে লাগছে বাবা?” 

এখনাে লাগছে‘ 

সহ্য হয়ে যাবেসব খারাপ জিনিসই মানুষের সহ্য হয়ে যায় আপনার কি অসুখ বিসুখ আছে

এত চট করে না বলবেন নামানুষের অনেক অসুখ আছে যা ধরা যায়জ্বর হয় না, মাথা বিষ করে নাতারপরেও অসুখ থাকেভয়ংকর অসুখএই যে আমি ময়লা মেখে বসে আছি এটা অসুখ না?” 

‘জ্বি অসুখ। 

মনের ভেতরে আমরা যখন ময়লা নিয়ে বসে থাকি তখন সেটা অসুখ না, কারণ সেই ময়লা দেখা যায় না, সেই ময়লার দুর্গন্ধ নাইতাই না বাবা?” 

হিমুর দ্বিতীয় প্রহর খন্ড-২৩

বাইরের ময়লা পরিষ্কার করা যায়এখন আমি যদি গরম পানি দিয়া গােসল দেইশরীরে সাবান দিয়া ডুলা দেই ময়লা দূর হবেহবে না?” 

মনের ময়লা দূর করার জন্যে গােসলও নাই, সাবানও নাই” ঠিক বলেছেন‘ 

আপনি মানুষের মনের কথা তল মেখে বসে থাকি বলে লোকে 

আপনি আমার কাছে কি জন্যে এসেছেনবলেন” 

শুনেছি আপনার আধ্যাত্বিক ক্ষমতা আছেআপনি মানুষের মন ধরতে পারেনসত্যি পারেন কিনা দেখতে এসেছি‘ 

পরীক্ষা করতে এসেছেন?পরীক্ষা না কৌতূহল। 

শুনেন বাবা আমার কোন ক্ষমতা নাইময়লা মেখে বসে থাকি বলে নানান কথা ভাবেকেউ কেউ কি করে জানেন? আমার গা থেকে মাল যায় তাবিজ করে গলায় পরেএতে নাকি তাদের রােগ আরােগ্য হয়ডাক্তার কবিরাজ গেল তল মা বলে কত দিল। হি হি হি। 

ময়লী বাবা আবারাে অপ্রকৃতস্থর মত হাসিতে শুরু করলেনআমি এক নিশ্বাস ফেললাম, শুধু শুধু পরিশ্রম করেছিমানসিক দিক দিয়ে অপ্ৰকন্তু এতে মানুষ। এর কাছ থেকে বেশী কিছু আশা করা ঠিক নাজ্ঞানগর্ভ কিছু কথা | বলেকিংবা সাধারণ কথাই বলেপরিবেশের কারণে সেই সাধারণত জ্ঞানগর্ভ কথা বলে মনে হয়। 

হিমুর দ্বিতীয় প্রহর খন্ড-২৩

মলা নিবেন বাবা?‘ 

  • াপন বিদ্যা যে বিদ্যার চর্চা শুধুই অপ্রকৃতস্থ মানুষের মধ্যেই সীমাবদ্ধ? ময়লাবাবাকে প্রশ্ন কলে কি জবাব পাওয়া যাবে? মনে হয় না। আমি উঠে দাড়ালাম ময়লাবাবা বললেন, বাবা কি চলে যাচ্ছেন

আমি বললাম, হ্যাপরীক্ষায় কি আমি পাশ করেছিমনে হয় করেছেনবুঝতে পারছি না। 

বুঝেছেন বাবাআমি নিজেও বুঝতে পারি নাখুব কষ্টে আছিদুর্গন্ধ কি এখনো পাচ্ছেন বাবা

জ্বি নাসুগন্ধ একটা পাচ্ছেন না? সুগন্ধ পাবার কথা অনেকেই পায়‘ 

আমি অত্যন্ত বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করলামসুগন্ধ পাওয়া যাচ্ছেআমার প্রিয় একটা ফুলের গন্ধবেলী ফুলের গন্ধগন্ধে কোন অস্পষ্টতা নেইনির্মল গন্ধএটা কি কোন ম্যাজিক? আড়কের শিশি গােপনে ঢেলে দেয়া হয়েছে

গন্ধ পাচ্ছেন না বাবা?জি পাচ্ছি। ভাল এখন বলেন দেখি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছি?। 

ময়লা বাবা আবার চশমার ফাক দিয়ে তাকাচ্ছেনম্যাজিশিয়ান ভাল কোন খেলা দেখানাের পর যে ভঙ্গিতে দর্শকের বিস্ময় উপভােগ করেঅবিকল সেই ভঙ্গি আমি বললাম, আমার ধারণা আপনার কিছু ক্ষমতা আছে। 

কিছু মক্ষমতাতাে সবারই আছেআপনারাে আছেআমি যদি ঢাকা শহরে আপনাকে নিয়ে যেতে চাই আপনি যাবেন?

হিমুর দ্বিতীয় প্রহর খন্ড-২৩

 ঢাকা শহর থেকে কষ্ট করে এসেছেনকিছু ময়লা নিয়ে যানসপ্তধাতব বচে ময়লা ভরবেনকোমরে কাল ঘুনশি দিয়ে মঙ্গলবার সন্ধ্যাবেলা শরীরে ধারণ করবেনএতে উপকার হবে‘ 

কি উপকার হবে?রাতে বিরাতে যে ভয় পান সেই ভয় কমতে পারে‘ 

আমি মনে মনে খানিকটা চমকালাম পাগলা বাবা কি থট রিডিং করছেন? আমার ভয় পাবার ব্যাপারটা তিনি ধরতে পেরেছেন? নাকি কাকতলীয় ভাবেকাছাকাছি চলে এসেছেনবিস্তৃত ফ্লাদ পাতা হয়েছেআমি সেই ফাদে পাদিয়েছিতিনি সেই ফঁাদ এখন গুটিয়ে আনবেন। 

ভয়ের কথা কেন বলছেন? আমিতাে ভয় পাই নারাতে কোন দিন ভয় পান নাই বাবা?জি না।’ উনারেতে একবার দেখলেনভয়তাে পাওনের কথাকাকে দেখেছি?সেটাতাে বলব নাতার হাতে লাঠি ছিল, ছিল না

আমি মােটামুটি ভাবে নিশ্চত হলাম ময়লা বাবা থট রিডিং জানেনকোন একটি বিশেষ প্রক্রিয়ায় তিনি আমার মনের কথা পড়তে পারছেনএটি কি কোন 

না কেন?অসুবিধা আছেআপনি বুঝবেন নাতাহলে আজ উঠি‘ 

আচ্ছা যান আপনারে যে খেলা দেখালাম তার জন্যে নজরানা দিবেন না? একশ টাকার নােটটা রেখে যান” 

শুনেছিলাম আপনি টাকা পয়সা নেন নাসবার কাছ থেকে নেই নাআপনার কাছ থেকে নিব” 

সেটা বলব নাসবেরে সব কিছু বলতে নাই আচ্ছা এখন যানএকদিনে অনেক কথা বলে ফেলেছিআর না‘ 

হিমুর দ্বিতীয় প্রহর খন্ড-২৩

আমি যদি কাউকে সঙ্গে করে নিয়ে আসি, তাকে কি আপনি আপনার খেলাদেখাবেনঃ 

ময়লা বাবা আবারাে অপ্রকৃতস্থর হাসি হাসতে শুরু করলেনআমি একশ নার নােটটা তার পায়ের কাছে রেখে চলে এলামময়লা বাবার না নিয়ে মিসির আলি সাহেবের 

 উনাকে সঙ্গে করে নিয়ে আসা যেত সেটা বােধ হয় সম্ভব হবে নামিসির আE টাইপের মানুষ সহজে কৌতুহলী হন নাএরা নিড়ালের চারপাশে শক্ত সে মানুষদের কৌতুহলী করতে হলে পাঁচিল ভেঙ্গে ভেতরে ঢুকতে হয় সেই সময় বােধ হয় আমার নেই

তন্তু একটা চেষ্টাতাে চালাতে হবেময়লী বাবার ক্ষমতাকে ফুলিয়ে মা বলে দেখা যেতে পারে। লাভ হবে বলে মনে হয় নাঅনেক সময় নিয়ে rিeআলি সাহেবের সঙ্গে কথা বলতে হবেতিনি বিভ্রান্ত হবার মানুষ না, তন চেষ্টা করে দেখতে ক্ষতি কি

আমি জবাব দিচ্ছি না চুপ করে আছি দ্বিতীয়বার কে?বললে জবাৰ বেমিসির আলি দ্বিতীয়বার কে বলবেন কিনা বুঝতে পারছি নাআগের বারহলেন নিসরাসরি দরজা খুলেছেনআজ আমি মিসির আলি সাহেবের অন্যে 

উপহার নিয়ে এসেছিএক পট ব্রাজিলিয়ান কফিইভাপােরােটড মিডের একটা কোটা এবং এক বাক্স সুগার কিউবসকফি বানিয়ে চায়ের চামচ গোেল মেপে চিনি দিতে হবে নাসুগার কিউব ফেলে দিলেই হবেএকটা সুগার কিউব মানে এক চামচ চিনি দুটা মানে চামচ। 

উপহার আনার পেছনের ইতিহাসটা বলা যাকশতাব্দী ষ্টোরে আমি গিয়েছিলাম টেলিফোন করতেএম্নিতে শতাব্দী ষ্টোরের লােকজনদের ব্যবহার খুব ভাল শুধু টেলিফোন করতে গেলে খারাপ ব্যবহার করেটেলিফোন নষ্ট মালিকের নিষেধ আছে, চাবি নেই নানান টালবাহানা কৰে শেষ পর্যন্ত দেয়া তবে টেলিফোন শেষ হওয়া মাত্র বলে পাচটা টাকা দেনলাল চাও আজও তাই হল আমি হাতের মুঠা থেকে পাঁচশ টাকার একটা নােট বের ললাম । 

হিমুর দ্বিতীয় প্রহর খন্ড-২৩

 ভাংতি ।লেন” 

ভাংতি নেই আর শুনুন আপনাকে টাকা ফেরত দিতে হবে নাএখন যে কলটা কারেছি সেটা পাচশ টাকা দামের । আমার বান্ধবীর সঙ্গে কথা বলেছি ওর নাম রূপাআরেকটা কথা শুনুন ভাইআমি যতবার আপনাদের একান থেকে রূপার সঙ্গে কথা বলব ততবারই আপনাদের পাঁচশ করে টাকা দেব তবে অন্য কলে আগের মত পাঁচ টাকা ভাই যাই?। 

বলে আমি হন হন করে পথে চলে এসেছিদোকানের এক কর্মচারী এসে আমাকে ধরল শতাব্দী ষ্টোরের মালিক ডেকেছেনআমাকে যেতেই হবে না গেলে তার চাকরি থাকবে না। 

আমি মালিকের সঙ্গে দেখা করার জন্যে ফিরে গেলামনিতান্ত অল্প বয়েসিএকটা ছেলেগােলাপী রঙের হাওয়াই শার্ট পরে বসে আছেসুন্দর চেহারা ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের মালিক হিসেবে তাকে মানাচ্ছে নাতাকে সবচে মানাতোযদি টিভির সেটের সামনে বসে ক্রিকেট খেলা দেখতে এবং কোন ব্যাটসম্যানছক্কা মারলে লাফিয়ে উঠতাে। 

 নন্দ দাশের কবিতার মতই অসাধারণ । বানিয়ে নিয়ে আসি। আসুন আমার সঙ্গে

 

Read More

হুমায়ূন আহমেদের লেখা হিমুর দ্বিতীয় প্রহর খন্ড-২৪

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *