পাবেন।‘ | আমি ঝিম ধরে বসে রইলাম । আমার ভাগ্য ভাল, বাবার ডাক পেলাম । খাদেম আমার কানে কানে ফিস ফিস করে বলল, বাবার হুজরাখানা থেকে বের হবার সময় বাবার দিকে পিঠ দিয়ে বের হবেন না। এতে বাবার প্রতি অসম্মান হয়। আপনার এতে বিরাট ক্ষতি হবে।
বৰিাদের দুজৱাখানা অন্ধকার ধরণের হয়। ধূপ–টুপ জ্বলে | ধূপের ধােয়ায় দর বােকাই থাকে । দরজা জানালা থাকে বন্ধ । ভক্তকে এক ধরণের আদিভৌতিক পরিবেশে ফেলে দিয়ে হকচকিয়ে দেয়া হয়। এটাই নিয়ম। ময়লা বাবার ক্ষেত্রে এই নিয়মের সামান্য ব্যতিক্রম দেখা গেল। তার হুজরাখানায়। লর জা জানালা সবই খােলা। প্রচুর বাতাস। বাবা খালি গায়ে বসে আছেন।
‘বাহ ভাল নাম । সুন্দর নাম–পিতা রেখেছেন?
“ভাল অতি ভাল। গন্ধ কি এখনাে নাকে লাগছে বাবা?”
এখনাে লাগছে।‘
“সহ্য হয়ে যাবে। সব খারাপ জিনিসই মানুষের সহ্য হয়ে যায় । আপনার কি অসুখ বিসুখ আছে?
“এত চট করে না বলবেন না। মানুষের অনেক অসুখ আছে যা ধরা যায়। । জ্বর হয় না, মাথা বিষ করে না। তারপরেও অসুখ থাকে। ভয়ংকর অসুখ। এই যে আমি ময়লা মেখে বসে আছি এটা অসুখ না?”
‘জ্বি অসুখ।
‘মনের ভেতরে আমরা যখন ময়লা নিয়ে বসে থাকি তখন সেটা অসুখ না, কারণ সেই ময়লা দেখা যায় না, সেই ময়লার দুর্গন্ধ নাই। তাই না বাবা?”
হিমুর দ্বিতীয় প্রহর খন্ড-২৩
বাইরের ময়লা পরিষ্কার করা যায়। এখন আমি যদি গরম পানি দিয়া গােসল দেই। শরীরে সাবান দিয়া ডুলা দেই ময়লা দূর হবে। হবে না?”
‘মনের ময়লা দূর করার জন্যে গােসলও নাই, সাবানও নাই।” “ঠিক বলেছেন।‘
আপনি মানুষের মনের কথা তল মেখে বসে থাকি বলে লোকে
“আপনি আমার কাছে কি জন্যে এসেছেন—বলেন।”
শুনেছি আপনার আধ্যাত্বিক ক্ষমতা আছে। আপনি মানুষের মন ধরতে পারেন। সত্যি পারেন কিনা দেখতে এসেছি।‘
‘পরীক্ষা করতে এসেছেন?” ‘পরীক্ষা না । কৌতূহল।
“শুনেন বাবা আমার কোন ক্ষমতা নাই। ময়লা মেখে বসে থাকি বলে নানান কথা ভাবে। কেউ কেউ কি করে জানেন? আমার গা থেকে মাল যায় । তাবিজ করে গলায় পরে–এতে নাকি তাদের রােগ আরােগ্য হয়—ডাক্তার কবিরাজ গেল তল মা বলে কত দিল। হি হি হি।
ময়লী বাবা আবারাে অপ্রকৃতস্থর মত হাসিতে শুরু করলেন। আমি এক নিশ্বাস ফেললাম, শুধু শুধু পরিশ্রম করেছি। মানসিক দিক দিয়ে অপ্ৰকন্তু এতে মানুষ। এর কাছ থেকে বেশী কিছু আশা করা ঠিক না। জ্ঞানগর্ভ কিছু কথা | বলে। কিংবা সাধারণ কথাই বলে—পরিবেশের কারণে সেই সাধারণত জ্ঞানগর্ভ কথা বলে মনে হয়।
হিমুর দ্বিতীয় প্রহর খন্ড-২৩
‘মলা নিবেন বাবা?‘
- াপন বিদ্যা যে বিদ্যার চর্চা শুধুই অপ্রকৃতস্থ মানুষের মধ্যেই সীমাবদ্ধ? ময়লা–বাবাকে প্রশ্ন কলে কি জবাব পাওয়া যাবে? মনে হয় না। আমি উঠে দাড়ালাম । ময়লা–বাবা বললেন, বাবা কি চলে যাচ্ছেন?
আমি বললাম, হ্যা। “পরীক্ষায় কি আমি পাশ করেছি” “মনে হয় করেছেন। বুঝতে পারছি না।
বুঝেছেন বাবা। আমি নিজেও বুঝতে পারি না। খুব কষ্টে আছি। দুর্গন্ধ কি এখনো পাচ্ছেন বাবা?
“জ্বি না।” “সুগন্ধ একটা পাচ্ছেন না? সুগন্ধ পাবার কথা । অনেকেই পায়।‘
আমি অত্যন্ত বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করলাম–সুগন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। আমার প্রিয় একটা ফুলের গন্ধ। বেলী ফুলের গন্ধ। গন্ধে কোন অস্পষ্টতা নেই–নির্মল গন্ধ। এটা কি কোন ম্যাজিক? আড়কের শিশি গােপনে ঢেলে দেয়া হয়েছে?
“গন্ধ পাচ্ছেন না বাবা?” “জি পাচ্ছি। ভাল । এখন বলেন দেখি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছি?“।
ময়লা বাবা আবার চশমার ফাক দিয়ে তাকাচ্ছেন। ম্যাজিশিয়ান ভাল কোন খেলা দেখানাের পর যে ভঙ্গিতে দর্শকের বিস্ময় উপভােগ করে–অবিকল সেই ভঙ্গি । আমি বললাম, আমার ধারণা আপনার কিছু ক্ষমতা আছে।
“কিছু মক্ষমতাতাে সবারই আছে। আপনারাে আছে।‘ “আমি যদি ঢাকা শহরে আপনাকে নিয়ে যেতে চাই আপনি যাবেন?
হিমুর দ্বিতীয় প্রহর খন্ড-২৩
“ঢাকা শহর থেকে কষ্ট করে এসেছেন—কিছু ময়লা নিয়ে যান। সপ্তধাতব বচে ময়লা ভরবেন। কোমরে কাল ঘুনশি দিয়ে মঙ্গলবার সন্ধ্যাবেলা শরীরে ধারণ করবেন—এতে উপকার হবে।‘
“কি উপকার হবে?” রাতে বিরাতে যে ভয় পান সেই ভয় কমতে পারে।‘
আমি মনে মনে খানিকটা চমকালাম । পাগলা বাবা কি থট রিডিং করছেন? আমার ভয় পাবার ব্যাপারটা তিনি ধরতে পেরেছেন? নাকি কাকতলীয় ভাবে। কাছাকাছি চলে এসেছেন। বিস্তৃত ফ্লাদ পাতা হয়েছে। আমি সেই ফাদে পা। দিয়েছি–তিনি সেই ফঁাদ এখন গুটিয়ে আনবেন।
‘ভয়ের কথা কেন বলছেন? আমিতাে ভয় পাই না।‘ রাতে কোন দিন ভয় পান নাই বাবা?” “জি না।’ “উনারেতে একবার দেখলেন। ভয়তাে পাওনের কথা।‘ “কাকে দেখেছি?” ‘সেটাতাে বলব না। তার হাতে লাঠি ছিল, ছিল না?
আমি মােটামুটি ভাবে নিশ্চত হলাম ময়লা বাবা থট রিডিং জানেন। কোন একটি বিশেষ প্রক্রিয়ায় তিনি আমার মনের কথা পড়তে পারছেন। এটি কি কোন
না কেন?” ‘অসুবিধা আছে। আপনি বুঝবেন না।‘ ‘তাহলে আজ উঠি।‘
“আচ্ছা যান । আপনারে যে খেলা দেখালাম তার জন্যে নজরানা দিবেন না? একশ টাকার নােটটা রেখে যান।”
“শুনেছিলাম আপনি টাকা পয়সা নেন না।” “সবার কাছ থেকে নেই না। আপনার কাছ থেকে নিব।”
‘সেটা বলব না। সবেরে সব কিছু বলতে নাই । আচ্ছা এখন যান। একদিনে অনেক কথা বলে ফেলেছি—আর না।‘
হিমুর দ্বিতীয় প্রহর খন্ড-২৩
আমি যদি কাউকে সঙ্গে করে নিয়ে আসি, তাকে কি আপনি আপনার খেলা। দেখাবেনঃ
ময়লা বাবা আবারাে অপ্রকৃতস্থর হাসি হাসতে শুরু করলেন। আমি একশ নার নােটটা তার পায়ের কাছে রেখে চলে এলাম। ময়লা বাবার না নিয়ে মিসির আলি সাহেবের
উনাকে সঙ্গে করে নিয়ে আসা যেত । সেটা বােধ হয় সম্ভব হবে না। মিসির আE টাইপের মানুষ সহজে কৌতুহলী হন না। এরা নিড়ালের চারপাশে শক্ত সে মানুষদের কৌতুহলী করতে হলে পাঁচিল ভেঙ্গে ভেতরে ঢুকতে হয় সেই সময় বােধ হয় আমার নেই।
তন্তু একটা চেষ্টাতাে চালাতে হবে। ময়লী বাবার ক্ষমতাকে ফুলিয়ে মা বলে দেখা যেতে পারে। লাভ হবে বলে মনে হয় না। অনেক সময় নিয়ে rিe” আলি সাহেবের সঙ্গে কথা বলতে হবে। তিনি বিভ্রান্ত হবার মানুষ না, তন চেষ্টা করে দেখতে ক্ষতি কি?
আমি জবাব দিচ্ছি না চুপ করে আছি । দ্বিতীয়বার কে?‘ বললে জবাৰ বে। মিসির আলি দ্বিতীয়বার কে বলবেন কিনা বুঝতে পারছি না। আগের বার। হলেন নি–সরাসরি দরজা খুলেছেন। আজ আমি মিসির আলি সাহেবের অন্যে
ন উপহার নিয়ে এসেছি। এক পট ব্রাজিলিয়ান কফি। ইভাপােরােটড মিডের একটা কোটা এবং এক বাক্স সুগার কিউবস। কফি বানিয়ে চায়ের চামচ গোেল মেপে চিনি দিতে হবে না। সুগার কিউব ফেলে দিলেই হবে। একটা সুগার কিউব মানে এক চামচ চিনি । দুটা মানে ল‘ চামচ।
উপহার আনার পেছনের ইতিহাসটা বলা যাক। শতাব্দী ষ্টোরে আমি গিয়েছিলাম টেলিফোন করতে। এম্নিতে শতাব্দী ষ্টোরের লােকজনদের ব্যবহার খুব ভাল শুধু টেলিফোন করতে গেলে খারাপ ব্যবহার করে। টেলিফোন নষ্ট মালিকের নিষেধ আছে, চাবি নেই নানান টালবাহানা কৰে । শেষ পর্যন্ত দেয়া তবে টেলিফোন শেষ হওয়া মাত্র বলে পাচটা টাকা দেন। লাল চাও । আজও তাই হল । আমি হাতের মুঠা থেকে পাঁচশ টাকার একটা নােট বের ললাম ।
হিমুর দ্বিতীয় প্রহর খন্ড-২৩
ভাংতি ।লেন।”
“ভাংতি নেই । আর শুনুন আপনাকে টাকা ফেরত দিতে হবে না। এখন যে কলটা কারেছি সেটা পাচশ টাকা দামের ল । আমার বান্ধবীর সঙ্গে কথা বলেছি ওর নাম রূপা। আরেকটা কথা শুনুন ভাই—আমি যতবার আপনাদের একান থেকে রূপার সঙ্গে কথা বলব ততবারই আপনাদের পাঁচশ করে টাকা দেব । তবে অন্য কলে আগের মত পাঁচ টাকা । ভাই যাই?“।
বলে আমি হন হন করে পথে চলে এসেছি— দোকানের এক কর্মচারী এসে আমাকে ধরল । শতাব্দী ষ্টোরের মালিক ডেকেছেন। আমাকে যেতেই হবে না গেলে তার চাকরি থাকবে না।
আমি মালিকের সঙ্গে দেখা করার জন্যে ফিরে গেলাম। নিতান্ত অল্প বয়েসি। একটা ছেলে। গােলাপী রঙের হাওয়াই শার্ট পরে বসে আছে। সুন্দর চেহারা । ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের মালিক হিসেবে তাকে মানাচ্ছে না। তাকে সবচে মানাতো। যদি টিভির সেটের সামনে বসে ক্রিকেট খেলা দেখতে এবং কোন ব্যাটসম্যান। ছক্কা মারলে লাফিয়ে উঠতাে।
নন্দ দাশের কবিতার মতই অসাধারণ । বানিয়ে নিয়ে আসি। ‘আসুন আমার সঙ্গে।
Read More