লে. উত্তর দাও।
আমি মিসির আলি সাহেবের সঙ্গে রান্নাঘরে ঢুকলাম। রান্নাঘরটা আমার
তল। মনে হচ্ছে রান্নাঘরটাই আসলে তার লাইব্রেরী। তিনটা উচু বেতের।
শেলফ ভতি বই। রান্না করতে করতে হাত বাড়ালেই বই পাওয়া যায় । ঘরে একটা ইজিচেয়ার ও আছে। ইজিচেয়ারের পায়ের কাছে মুকুট রেস্ট। ঝাই যাচ্ছে যুট রেটে পা রেখে আরাম করে বই পড়ার ব্যবস্থা ।
মিসির আলি চুলা ধরাতে ধরাতে বললেন, রান্নাঘরে এত বই পত্র দেখে আপনি কি অবাক হচ্ছেন?
*জি না । আমি কোন কিছুতেই অবাক হই না ।
- আসলে কি হয় জানেন? হয়ত চা খাবার ইচ্ছা হল । চুলায় কেতলি । সসালাম। পানি ফুটাতে অনেক সময় লাগছে। চুপচাপ অপেক্ষা করতে খুব
বাপ লাগে। তখন বই পড়া শুরু করি। চুলায় কেতলী বসিয়ে আমি একশ পৃষ্ঠা। পড়তে পড়তে পানি ফুটে যায়। এই থেকে আপনি আমার বই পড়ার স্পীড সম্পর্কে একটা ধারণা পাবেন।‘
হিমুর দ্বিতীয় প্রহর খন্ড-২৪
আমরা কফির পেয়ালা হাতে নিয়ে বসার ঘরে এসে বসলাম । মিসির আলি বললেন, আপনার গলায় কি মাছের কাঁটা ফুটেছে? লক্ষ্য করলাম অকারণে ‘টো না রের মালিল্ল আমাকে অতি বসল। নয়ি কায়ি মেয়ে বললাম, অসাধারণ। জীবনানন্দ দাশের কনি সে বলল, কোন কবিতা? আমি, আলুক্তি করলাম—
পুরানাে পেঁচারা সুর কোটরের থেকে এসেছে বাহির হয়ে অন্ধকার দেখে মাঠের মুখের পরে, সুরজ ধানের নিচে=মাটির ভিতরে ইলননা চলে গেছে আঁটির ভিতর থেকে চ‘লে গেছে চায়।
শস্যের ক্ষেতের পাশে আজ রাতে আমাদের জেগেছে পিপাসা। মাতালী ষ্টোরের মালিক তার এক কর্মচারীকে ডেকে বলল, উনাকে ভাল করি এক টিন দাও. ইভাপােরেটেড দুধের একটা টিন, সুগার কিউর।
তনি এ বলে উহাল হণ করলাম । তারপর হালটা বলল, থেকে দােকানে উনি এলে প্রথম জিজ্ঞেস করবে উনার কি লাগবে । যা নিবে। কােন বিল করতে পারবে না । উনি ঢোকা মাত্র আমার ঘরে নিয়ে মা
সালে । সেখানে টেলিফোন আছে । উনি যত ইচ্ছা টেলিফোন করতে পারবেন। | ব্যবসায়ী মানুষ (তার বয়স যত অল্পই হােক) এমন ফ্রী পাস দেয় না। আমি বিস্মিত হয়ে তাকালাম। ছেলেটা বলল, আমি আপনাকে চিনি। আপনি চিত। দােকানের লােক না আপনাকে চিনতে পারে নি ওদের অপরাধ ক্ষমা করালেন। এখন বলুন আপনি কোথায় যাবেন। ড্রাইভার আপনাকে নামিয়ে দিয়ে আসবে।
হিমুর দ্বিতীয় প্রহর খন্ড-২৪
আমি কড়া নেড়ে অপেক্ষা করছি কখন মিসির আলি সাহেব দরজা। খুলেন। দ্বিতীয়বার কড়া নাড়তে ইচ্ছা করছে না। সাধারণ মানুষের বাসা হলে। কড়া নাড়তাম, এই বাসায় থাকেন মিসির আলি । কিংবদন্তী পুরুষ । প্রথম কড়া নাড়ার শব্দেই তার বুঝে যাবার কথা, কে এসেছে, কেন এসেছে।
দরজা খুলল। মিসির আলি সাহৃে বললেন, কে? হিমু সাহেব? “জি স্যার। “মাথা কামিয়েছেন । আপনাকে ঋষি ঋষি লাগছে।‘
আমি ঋষি সুলভ হাসি হাসলাম। তিনি সহজ গলায় বললেন, আজ এত সকাল সকাল এসেছেন ব্যাপার কি? রাত মােটে ন‘টা বাজে। হাতে কি?‘
“আপনার জন্যে সামান্য উপহার । কফি, দুধ, চিনি।‘ মিসির আলি সাহেবের চোখে হাসি ঝিলিক দিয়ে উঠল । আমি বললাম, স্যার আপনার রাতের খাওয়া কি হয়ে গেছে?
“হ্যা হয়েছে।’ তাহলে আমাকে রান্নাঘরে যাবার অনুমতি দিন আমি আপনার জন্যে কফি।
আমি বললাম, জ্বি।
শুধু শুধু কষ্ট করছেন কেন? কাটা তােলার ব্যবস্থা করেন = মেডিকেল কলেজের ইমাৰ্জন্সিতে গেলেই ওরা চিমটা দিয়ে কাটা তুলে ফেলবে। | ‘আমি কাটার যন্ত্রণা সহ্য করার চেষ্টা করছি। মানুষতাে ক্যানসারের মত ব্যধিও শরীরে নিয়ে বাস করে আমি সামান্য কাটা নিয়ে পারব না? _ মিসির আলি হাসলেন। ছেলেমানুষী যুক্তি শুনে বয়স্করা যে ভঙ্গিতে হাসে সেই ভঙ্গির হাসি । দেখতে ভাল লাগে ।
হিমুর দ্বিতীয় প্রহর খন্ড-২৪
“হিমু সাহেব। ‘জি স্যার। “আমি আপনার ভয় পাবার ব্যাপারটা নিয়ে ভেবেছি।‘
রহস্যের সমাধান হয়েছে। ‘ভয়ের কার্য কারণ সম্পর্কে একটা ব্যাখ্যা দাড় করিয়েছি। এইটিই সঠিক ব্যাখ্যা কিনা তা প্রমাণ সাপেক্ষ। ব্যাখ্যা শুনতে চান?
বলুন। মিসির আলি কফির কাপ নামিয়ে সিগারেট ধরালেন। সামান্য হাসলেন । সেই হাসি অতি দ্রত মুছে ফেললেন। কথা বলতে শুরু করলেন শান্ত গলায় । যেন তিনি নিজের সঙ্গেই কথা বলছেন। অন্য কারাের সঙ্গে নয়। যেন তিনি যুক্তি দিয়ে নিজেকেই বুঝানাের চেষ্টা করছেন— জন হয়ত এই ভয়ের বীজ কোন এক সময় বীজের
মুবি ক্লান্ত ছিলাম, শীষু অবসন্ন ছিল বলছেন কেন? আপনার কাছ থেকে শুনেই বলছি। সারারাত আপনি হেঁটেছেন। জোছনা তারপর ঢুকলেন গলিতে। দীর্ঘ সময় কোন একটি বিশেষ জিনিশ দেখায় ক্লান্তি আসে। শামু অলস হয়।
“ঠিক আছে বলুন। আপনাকে দেখে কুকুররা সব দাড়িয়ে গেল । একটি এগিয়ে এল সামনে ভরে আসে। এটা একটা
ও পানিতে ডুবে মৃত্যুর ক উদ্ধার করা হল । সে বেছে স্বাভাবিক ভাবে বড় যাবে না। মস্তিষ্কের স্মৃতি যদি হঠাৎ সেই মুতি বের তাই না?‘
“জ্বি।‘
হিমু সাহের, আমার ধারণী যে ভয়ের কথা আপনি বলছেন শৈশবেই আপনার ভেতর বাসা বেঁধেছে। কেউ একজন হয়ত এই আপনার ভেতর পুতে রেখেছিল যাতে পরীত কোন এল , অনুরোদগম হয়। তীব্র ভয় আপনাকে আচ্ছন্ন করে। | অতি শৈশবের তীব্র ভয় অনেক অনেক কাল পরে ফিরে আসে। ৱিকারিং ফেনােমেনা।
হিমুর দ্বিতীয় প্রহর খন্ড-২৪
মনে করুন তিন বছরের কোন শিশু পানিতে কাছাকাছি চলে গেল। তাকে শেষ মুহূর্তে পানি থেকে উদ্ধার করা হল। গেল। পানিতে ডুবার ভয়ংকর সুতি তার থাকবে না। সে স্বাভাবিক হবে। কিন্তু ভামের এই অংশটি কিন্তু তার মাথা থেকে যাবে না। মাতি লাইব্রেরীতে সেই স্মৃতি জমা থাকবে। কোন কারণে যদি হঠাৎ সেই । হয়ে আসে তাহলে তার সময় চেতনা প্রচি ঐ নাড়া খাবি । সে ভেবেই পালন ব্যাপারটা কি? আপনি কি শৈশবে কখনাে পানিতে ডুবেছেন?
“হ্যা চৌবাচ্চায় ডুবে গিয়েছিলাম।”
ঘটনাটা বলনাতো? ‘ ঘটনা আমার মনে নেই। ববির ডায়েরী পড়ে জেনেছি। আমার আমাকে নিয়ে অনেক পরীক্ষা নীরিক্ষা করতেন। মৃত্যু ভয় কি এটা আমার বঝানাের জন্যে তিনি একটা ভয়ংকর পরীক্ষা করেছিলেন। চৌবাচ্চায় পানি = করে আমাকে ডুবিয়ে দিয়েছিলেন। তাঁর হাতে ছিল স্টপ ওয়াচ । তিনি স্টপওয়াচ দেখে পচাতুর সেকেণ্ড আমাকে পানিতে ডুবিয়ে রেখেছিলেন।‘ | ‘আপনার বাবা কি মানসিক ভাবে অসুস্থ ছিলেন?”
‘এক সময় আমার মনে হত তিনি মানসিক রােগী। এখন তা মনে হয় না ।। বাবার কথা থাক। আপনি আমার সম্পর্কে বলুন। আমি মানসিক রােগী কিনা। সেটা জানা আমার পক্ষে জরুরী। | অতি শৈশবের একটা তীব্র ভয় আপনার ভেতর বাসা বেধে ছিল। আমার ধারণা সেই ভয়ের সঙ্গে আরাে ভয় যুক্ত হয়েছে। মস্তিষ্কের মেমােরি সেলে ভয়ের ফাইল ভারী হয়েছে। এক সময় আপনি সেই ভয় থেকে মুক্তি পেতে চেষ্টা করেছেন। তখনই ভয়টা মূর্তিমান হয়ে আপনার সামনে দাড়িয়েছে। সে চাচ্ছে না। আপনি তাকে অস্বীকার করুন।
হিমুর দ্বিতীয় প্রহর খন্ড-২৪
“স্যার আপনি কি বলতে চাচ্ছেন—ঐ রাতে আমি যা দেখেছি সবই আমার।
করদের দলপতি আবার ঐ ভয়ংকর মূর্তি যখন এল তখন তুকররা তার দিকে ফিরল। দলপতি এগিয়ে গেল সামনে।
দেখুন হিমু সাহেব কুকুররা যা করেছে তা হচ্ছে কুকুরদের জন্যে অত্যন্ত । স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড। তারা উদ্ভট কিছু করেনি। অথচ তাদের এই স্বাভাবিক ককাণ্ডই আপনার কাছে খুব অস্বাভাবিক মনে হচ্ছিল। কারণ আপনি নিজে স্বাভাবিক ছিলেন না। আপনার মধ্যে এক ধরণের ঘোর কাজ করা শুরু করেছে। শৈশবের সমস্ত ভয় বাক্স ভেঙ্গে বের হয়ে আসা শুরু করেছে।
তারপর? “আপনি শুনলেন লাঠি ঠক ঠক করে কে যেন আসছে। আপনি যদি। স্বাভাবিক থাকতেন তাহলে কিন্তু লাঠির ঠক ঠক শব্দ শুনে ভয়ে অস্থির হভেন না। লাঠি ঠক ঠক করে কেউ আসতেই পারে। আপনি খুবই অস্বাভাবিক অবস্থায় ছিলেন বলেই এই কাণ্ডটা ঘটেছে । আপনার মস্তিষ্ক অসম্ভব উত্তেজিত। সে বিচিত্র খেলা শুরু করেছে। আপনার স্বাভাবিক দৃষ্টি সে এলােমেলাে করতে শুনতে করেছে। আপনি মানুষটা দেখলেন । চাদর গায়ে একজন মানুষ যার চোখ নেই, মুখ নেই । ঠিক না?
‘জি।”
“আমার ধারণা আপনি অ্যাসিডে ঝলসে যাওয়া একন অন্ধকে দেখেছেন। অন্ধ বলেই সে লাঠি হাতে হাটা চলা করে। আপনাকে দেখে সে দাড়িয়ে পড়ল । লাঠি উচু করল আপনার দিকে। একজন অন্ধের পক্ষে আপনার উপস্থিতি বুঝাতে পারা কোন ব্যাপার না। অন্ধদের অন্যান্য ইন্দ্রীয় খুব তীক্ষ থাকে ।
হিমুর দ্বিতীয় প্রহর খন্ড-২৪
অবশ্যি অন্ধ হয়ে একজন কুষ্ঠ রােগীও হতে পারে। কুষ্ঠরােগীও এমন বিকৃত হতে পারে । আমি নিজে কয়েকনিকে দেখেছি। | আমি বললাম, স্যার একটা কথা, আমি দেখেছি মানুষটা যখন ফিরে যাচ্ছিল
তখন তাকে খুব লম্বা দেখাচ্ছিল।
“আপনি যা দেখেছেন তা আর কিছুই না লাইট এণ্ড শেডের একটা ব্যাপার। গলিতে একটা মানুষকে দাড় করিয়ে আপনি বিভিন্ন জায়গা থেকে আলাে তার।
না। বেশীর ভাগই সত্যি। তবে সেই সত্যটাকে কল্পনা ঢেকে রেখেছে।‘ বুঝতে পারছি না।‘ “আমি বুঝানাের চেষ্টা করছি। ঐ রাতে আপনি ছিলেন খুব ক্লান্ত । আপনার
গেল শুন্য নাম্বার থালার খাবার কোন ইদুর স্পর্শ করত না। অথচ একই lusion‘ ম্যাজিসিয়ানরা খাবার।
গার বলে পরীক্ষাটা হতে পারেন । দেখবেন আলে৷ কেত এর সেই আলাে ফেলার নে) তার বড় হচ্ছে আল 2 আর কত লম্বা মনে হচ্ছে। একে বলে ‘tifill illusion wutical illusion এর সাহায্যে আনেক ভিত্তি মজার খেলা দেখে
* পলাে ব্যাপারটা আপনার কাছে এত সহজ মনে হচ্ছে।
“জি মনে হচ্ছে। পৃথিবীর সমস্ত জটিল সূত্রগুলির মূল কথা আপনি যে আপনার মাথার ভেতর শুনলেন কে বলছে ফিরে যাও ব্যাখ্যাও খুব সহজ ব্যাখ্যা। আপনার অবচেতন মন আপনাকে বলছিল। আমি কি আপনার সব ব্যাখ্যা গ্রহণ করে নেব না নিজে পরী।
লির মূল কথা খুব সহজ।
বয়াও, ফিরে যাও তার । আপনাকে ফিরে যেতে
Read more