না নিজে পরীক্ষা করে
“সেটা আপনার ব্যাপার।’
‘আমার কেন জানি মনে হয় ঐ জিনিসটার মুখােমুখি দাড়ানাে মানে তো মৃত্যু। যে আমাকে ছাড়বে না।‘
‘তাহলেতাে আপনাকে অবশ্যই ঐ জিনিসটার মুখােমুখি হতে হবে। ‘আদি না হই।”
‘তাহলে সে আপনাকে খুঁজে বেড়াবে। আজ একটা গলিতে সে আছে । চলে আসবে রাজপথে । একটি গলি যেমন আপনার জন্যে নিষিদ্ধ হয়ে তেমনি শুরুতে একটা রাজপথ ও আপনার জন্যে নিষিদ্ধ হবে, তারপর অকে। একটা। তারপর এক সময় দেখবেন শহরের সমস্ত পথঘাট নিষিদ্ধ হয়ে গেল।। আপনাকে শেষ পর্যন্ত ঘরে আশ্রয় নিতে হবে। সেখানেও যে স্বস্তি পাবেন ।
–মাঝরাতে হঠাৎ মনে হবে দরজার বাইরে ঐ অশরীরি দাঁড়িয়ে, দরজা খুললেই সে ঢুকলে,.. আমি চুপ করে রইলাম ।
মিসির আলি হাসিমুখে বললেন, আপনার বাবা বেঁচে থাকলে তিনি আপনাকে কি উপদেশ দিতেন?
আমি দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বললাম, আপনি যে উপদেশ দিচ্ছেন সেই উপদেশই দিতেন। আচ্ছা স্যার আজ উঠি।
উঠবেন? আচ্ছা–কফির জন্যে ধন্যবাদ।‘
আপনার ধারণা ইদুর মানুষের মনের কথা বুঝত বলেই এটা করত। হতে পারে।‘ আপনি থট রিডিং এর ক্ষমতা আছে এমন কোন মানুষের দেখা পাননি?
হিমুর দ্বিতীয় প্রহর খন্ড-২৫
- পয়েছি। তবে পুরােপুরি নিশ্চিত হতে পারি নি। নিশ্চিত হতে ইচ্ছা করে নি। থাকুক না কিছু রহস্য।
‘স্যার যাই।‘ “আচ্ছা। মিসির আলি সাহেব আমাকে রাস্তা পর্যন্ত এগিয়ে দিলেন। আমি রাস্তায় নেমে দেখলাম সুন্দর জোছনা হয়েছে কোথায় যাওয়া যায়? কোথাও যেতে ইচ্ছা করছে না। পথে পথে হাঁটতেও ভাল লাগছে না। মনের নেশায় মাতাল ভূপর্যটকও কি এক সময় ক্লান্ত হয়ে বলেন হাটতে ভাল লাগছে না। পরম শ্রদ্ধেয়া সাধু যিনি প্রতি সন্ধ্যায় মুণ্ডিত মস্তকে বলদের নানান অজ্ঞানের কথা বলেন তিনিও কি এক সময় ক্লান্ত হয়ে বলেন, আর ভাল লাগছে।
মানুষের শরীর যন্ত্রে দুটি তার। একটিতে ক্রমাগতই বাজে–“ভাল লাগছে। ‘ভাল লাগছে” । অন্যটিতে বাজে “ভাল লাগছে না“, “ভাল লাগছে না” । ন‘টি তার এক সঙ্গেই বাজতে থাকে। একটি উচু স্বরে উদারায় অন্যটি মন্ত্র সপ্তকে। কারাে কারাে কোন একটি তার ছিড়ে যায়। আমার বেলায় কি হচ্ছে ? “ভাল লাগছে‘ তারটি কি ছিড়ে গেছে?
| ঘরে ফিরে যাব? চারদেয়ালে নিজেকে বন্দ করে ফেলব? সেই ইচ্ছাও করছে। । আমি আশরাফুজ্জামান সাহেবের সন্ধানে রওনা হলাম। তিনি কি কন্যার শ্বশুরবাড়িতে গিয়েছেন? মনে হয় না। অতি আদরের মানুষের অবহেলা সহ করার ক্ষমতা মানুষের নেই। মানুষ বড়ই অভিমানী প্রাণী।
হিমুর দ্বিতীয় প্রহর খন্ড-২৫
আশরাফুজ্জামান সাহেব বাসাতেই ছিলেন। আমাকে দেখে যন্ত্রের মত গলায় বললেন, কেমন আছেন?
আমি বললাম, ভাল আছি। আপনি কি করছেন? “কিছু করছি না। শুয়ে ছিলাম।‘
শরীর খারাপ?” “জ্বি না শরীর খারাপ না। শরীর ভাল । “খাওয়া দাওয়া করেছেন?” “জ্বি না। রান্না করিনি।‘ “আপনার কন্যার সঙ্গে যােগাযােগ হয়েছে ? “জ্বি না। ওরা চিটাগাং গেছে। ওর শ্বশুর বাড়ি চিটাগাং।
“থাকতে পারে। পুরােপুরি নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। তবে নিম্নশ্রেণীর প্রাণীদের এই ক্ষমতা সম্ভবত আছে । ডিউক ইউনিভার্সিটিতে একবার একটা। গবেষণা করা হয়েছিল । পঞ্চাশটা ইদুরকে দু‘টা থালায় করে খাবার দেয়া হত। একটা থালার নম্বর ১ এবং অন্যটার নম্বর কন্য। আবার দেবার সময় মনে মনে ভাবা হত। শূন্য নাম্বার বালার খাবার যে ইদর খাবে তাকে মেরে ফেলা হলে।
“যাবার আগে আপনার সঙ্গে দেখা করে যায়। নি?”
নার সন্যে লােক পাঠিয়েছিল, আর যেতে ইচ্ছে কাল “কোথায় নিয়ে যাবেন।‘
মানে কোথাও না । পরে পথে হাটব। হাছনা রাতে সাত অন্যরকম লাগে যাবেন? না রাতে পথে হাঁটতে “আশ্চর্যতাে।‘
য় নিলেও খুব আশ্চর্য হয়েছি। আজ সন্ধ্যা থেকে ‘দাল আদনকাল নলে। হয়েছিলাম । সে থাকলে অবশ্যই কথা বলতাে। সে নেই।‘
“আশরাফুজ্জামান সাহেব এমনওতো হতে পারে যে তিনি সোনকালেই ছিলেন না। আপনার অবচেতন মন তাকে তৈরী লরেছে। হতে পারে না আশরাফুজ্জামান সাহেব জবাব দিলেন না। মাথা নীচু করে হাঁটতে লাগলেন।
হিমুর দ্বিতীয় প্রহর খন্ড-২৫
“আশরাফুজ্জামান সাহেব। “তি। ‘ক্ষিধে লেগেছে?”
হাঁটতে আপনি আপনার মেয়ের গল্প করবেন, আমি এক তার সব গল্প শােনা হয় নি। যাবেন?
“আচ্ছা চলুন।‘
ভামনা পথে নামলাম । ঠিক করে ফেললাম তাকে নিয়ে প্রচার হাটৰ । ইটিতে তিনি ক্লান্ত হয়ে পড়বেন শরীর যতই অবসাদগ্রস্ত হবে না। হালকা হবে । ‘হিমু সাহেব। প্রচুর হাট। হাটতে “আসুন খাওয়া দাওয়া করি।’
“আপনি খান। আমার কিছু খেতে ইচ্ছে করছে না। আমি এখন বাসায় চলে মাল। আপনার সঙ্গে ঘুরতে ভাল লাগছে না। আপনাকে আমি পছুন্দ করতাম। কারণ আমার ধারণা ছিল আপনি আমার স্ত্রীর কথা বিশ্বাস করেন।
“আপনার স্ত্রীকে বিশ্বাস করি বা না করি—আপনাকেতাে করি। সেটাই কি যথেষ্ট নাঃ
আপনি বােধহয় ভাবছেন আমি মেয়ের উপর খুব রাগ করেছি। আসলে রাগ করি নি। কারণ রাগ করব কেন বলুন, আমিতাে আসলেই তার নিয়ে। ভেঙ্গেছি। উড়োচিঠি দিয়েছি, টেলিফোনে খবর দিয়েছি।‘
‘নিজের ইচ্ছায়তা করেন নি। আপনার স্ত্রী আপনাকে করতে বলেছেন আপনি কহেন।
‘খুবই সত্যি কথা, কিন্তু আমার মেয়ে বিশ্বাস করে না। তার মা‘র সঙ্গে যে। আমার কথাবার্তা হয় এটাও বিশ্বাস করে না।”
“অল্প বয়সে সবকিছু অবিশ্বাস করার একটা প্রবণতা দেখা যায় । বয়স। বাড়লে ঠিক হয়ে যাবে।‘
‘আমার মেয়ের কোন দোষ নেই। আমার আত্মীয় স্বজন ক্রমাগত তার। কানে মন্ত্রণালেয়। আমি যে কি ধরনের মন্দলােক এটা শুনতে শুনতে সেও বিশ্বাস। করে ফেলেছে।”
হিমুর দ্বিতীয় প্রহর খন্ড-২৫
‘আপনি মন্দলোক?”
ওদের কাছে মন্দলােক । মেয়ে অসুস্থ হলে ডাক্তারের কাছে নেই না। নিজে। নিজে হােমিওপ্যাথি করি । এইসব আর কি।
“ওরাতাে জানে না, আপনি যা করেন স্ত্রীর পরামর্শে করেন।‘ “জানে। ওদের বলেছি কিন্তু ওরা বিশ্বাস করে না। “মেয়ের বিয়ে হয়ে যাবার পর কি আপনার স্ত্রীর সঙ্গে আপনার কথা।
আশরাফুজ্জামান সাহেব হন হন করে এগুচ্ছেন। আমার খুব মায়া লাগছে । রাগ ভাঙ্গিয়ে প্রলােককে রাতের টেনে তুলে নেয়া যায় না? তুনি শিখায় তুলে দেব। সেই ট্রেন চিটাগাং পৌছায় ভােররাতে । আশরাফুজ্জাম|| সাহেব টেন থেকে নেমে দেখবেন ষ্টেশানে তাকে নিতে মেয়ে এবং মেয়ে জামাই দাড়িয়ে আছে। বাস্তবের সব গল্পের সুন্দর সুন্দর সমাপ্তি থাকলে ভাল হন। বাস্তবের গগুলি সমাপ্তি ভাল না। বাস্তবের অভিমানী বাবারা নিজেদের অভিমান এত সহজে ভাঙ্গে না। রূপকথার মত সমাপ্তি বাস্তবে হয় না।।
“আশরাফুজ্জামান সাহেব! এক সেকেণ্ডের জন্যে দাড়ানাতাে ।” আশরাফুজ্জামান সাহেব দাড়ালেন। আমি দৌড়ে তাকে ধরলাম। “চলুন আপনাকে বাসা পর্যন্ত এগিয়ে দি। “দরকার নেই। আমি বাসা চিনে যেতে পারবাে।‘
“আপনার জন্যে বলছি না। আমি আমার নিজের জন্যে বলছি। আমার। একটা সমস্যা হয়েছে আমি একা একা রাতে হাটতে পারি না। ভয় পাই। আশরাফুজ্জামান সাহেব শান্ত গলায় বললেন, চলুন যাই।।
আমরা হেটে হেটে ফিরছি কেউ কোন কথা বলছি না। আশরাফুজ্জামান। সাহেবের গাল চকচক করছে। তিনি কাঁদছেন। কান্নাভেজা গালে চাদের ছায়া পড়েছে ।
চোখের জলে চাদের ছায়া আমি এই প্রথম দেখছি। অদ্ভুততা! ভেজা গালে নেন আলাে নিয়ে কি কোন কবিতা লেখা হয়েছে? কোন গান “আশাফুজ্জামান সাহেব।‘
আচ্ছা হিমু সাহেব আজ কি কে আরো তিনদিন সবচে বড় কথা কি জানেন হিমু সাহেব? এখন বাজছে রাত বারোটা! তুর্ণা । নিশিথায় চলে গেছে।‘
হিমুর দ্বিতীয় প্রহর খন্ড-২৫
“আমার মনে হয়ে যায় নি। লেট করছে।” শুধু শুধু লেট করবে কেন?‘
লেট করবে কারণ এই ট্রেনে চেপে এক অভিমানী পিতা আজ রাতে তার কন্যার কাছে যাবেন। আমি নিশ্চিত অজি টিকা লেট। ‘আপনি নিশ্চিত?‘
হ্যা আমি নিশ্চিত। কারণ আমি হচ্ছি হিমু । পৃথিবীর রহস্যময়তা আমি জানি। ট্রেন যে অভি লেট হবে এই বিষয়ে আপনি বাজি ধরতে চান ‘হা চাই। বলুন কি বাজি? টন যদি সত্যি সত্যি লেট হয় তাহলে আপনি সেই ট্রেনে চেপে বসবেন।” ।
আশরাফুজ্জামান সাহেব চুপচাপ দাড়িয়ে আছেন। মনে হয় ঠিক বুঝে উঠতে সালদুন না কি করবেন । আমি বেবীটেক্সির সন্ধানে বের হলাম । দেরী করা যাবে।
অতি এত কমলাপুর রেল স্টেশনে পৌঁছতে হবে । আন্তনগর ট্রেন কাল কারাের জন্যে দাড়িয়ে থাকে না। মেয়ের উপর রাগ কমেছে?”
ওর উপর আমার কখনাে ব্লাগ ছিল না। আচ্ছা হিমু সাহেব। পূর্ণিমা
“জিনা। আজ পূর্ণিমা না। পূর্ণিমার জন্যে আপনাকে আলাে অপেক্ষা করতে হবে।”
Read More