কি ভাবে কাটাব বুঝতে পারছি না। বিষ খেয়ে মরে গেলে কেমন হয় বলল
“মন্দ হয় না।
মেয়েটা কষ্ট পাবে। মেয়েটা ভাববে তার উপর রাগ করে বিষ খেয়েছি। “তাকে সুন্দর করে গুছিয়ে একটা চিঠি লিখে যাবেন। ভালমত সৰ ক করবেন। তাহলেই হবে। তারপরেও কষ্ট পাবে। সেই কষ্ট দীর্ঘস্থায়ী হলে
দীর্ঘস্থায়ী হবে না কেন?‘ “আপনার মেয়ে তার সংসার নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়বে। তার সংসারে ছেলেপুলে আসবে। কারাে হাম হবে, কারাের হবে কাশি। ওদের বড় করা, স্তনে ভর্তি করানাে, হােমওয়ার্ক করানাে, ঈদে নতুন জামা কেনা, অনেক ঝামেলা ।। দোকানের পর দোকান দেখা হবে ফ্রকের ডিজাইন পছন্দ হবে না। এত সমস্যাস। মধ্যে কে আর বাবার মৃত্যু নিয়ে মাথা ঘামাবে।‘
আশরাফুজ্জামান সাহেব হেসে ফেললেন। সহজ স্বাভাবিক হাসি। মনে হচ্ছে তার মন থেকে কষ্টবােধ পুরােপুরি চলে গেছে।
না।‘
ট্রেন লেট ছিল।
আমরা যাবার পনেরো মিনিট পর ট্রেন ছাড়ল । চলন্ত ট্রেনের জানালা থেকে প্রায় পুরো শরীর বের করে আশরাফুজ্জামান সাহেব আমার দিকে হাত নাড়ছেন। তার মুখ ভর্তি হাসি, কিন্তু গাল আবারাে ভিজে গেছে। ভেজা গালে ষ্টেশনের সরকারী ল্যাম্পের আলাে পড়েছে। মনে হচ্ছে চাদের আলাে।
“আপনি মানুষটা খুব মজার। “মজার মানুষ হিসেবে আপনাকে মজার একটা সাজেশন দেব?‘
হিমুর দ্বিতীয় প্রহর খন্ড-২৬
‘চলুন আমরা কমলাপুর রেল ষ্টেশনে চলে যাই। আপনি তুর্ণা নিশিথায় চেপে বসুন। অন্ধকার থাকতে থাকতে চিটাগাং রেল ষ্টেশনে নামবেন। নেমেই দেখবেন আপনার মেয়ে এবং মেয়ে জামাই দাঁড়িয়ে আছে। মেয়ের চোখ ভতি। জল । সে ছুটে এসে আপনাকে জড়িয়ে ধরবে।‘
আশরাফুজ্জামান শব্দ করে হাসলেন। আমি বললাম, হাসছেন কেন? “আপনার উদ্ভট কথাবার্তা শুনে হাসছি।‘ “পৃথিবীটা ভয়ংকর উদ্ভট। কাজেই উদ্ভট কাকারখানা—মাঝে মধ্যে করা হয়।‘
“ তাই ।
আমি বিছানা থেকে নামলাম। দু কাপ চাদের বলা পালে লাগানো ‘গলাম। নার প্রয়ে নতুন একটা দিনের জন্যে নিজেকে প্রস্তুত করা । আজনে নিন। আমার হন্যে একটা বিশেষ দিন। সূর্য ডুবার আগ পর্যন্ত আমি পরিচিত সবার হজ কথা বলব। দিনটা খুব আনন্দে কাটাব। সন্ধ্যার পর নীঘির পানিতে গোসল করে নিজেকে পবিত্র করব তারপর চাদের আলােয় তার সঙ্গে আমার দেখা , হাতে মুখে পানি দিতে দিতে দ্রুত চিন্তা করলাম কাদের সঙ্গে আমি। পরই মনে হয়–রাতটা র মতই দিনের আলোয় কথা বলব—
মম ভাঙ্গতেই প্রথম যে কথাটা আমার মনে হল তা হচ্ছে– আজ ও ভােরের আলােয় পূর্ণিমার কথা মনে হয় না। সূর্য ডুবার পরই মনে হত কেমন হবে? শুক্লপক্ষ না কৃপক্ষ? আমি অন্যান্যদের মতই দিলেন। চালের পক্ষ নিয়ে ভাবি না। কিন্তু আজ অন্য ব্যাপার। আজ রাতের চাঁদে। আমার এপয়েন্টমেন্ট আছে।
হিমুর দ্বিতীয় প্রহর খন্ড-২৬
আজ মধ্যরাতে আমি সেই বিশেষ গলিটার সাদা দাভাব । লাঠি হাতের ঐ মানুষটার মুখােমুখি হব। মিসির আলির ধারণা আর কিছুই না সাধারণ রােগগ্রস্ত একন মানুষ। কিংবা এক অন্ধ । চালে আলােয় লাঠি হাতে যে বের হয়ে আসে। চাদের আলাে তাকে স্পর্শ করে না।
আমার ধারণা তা না । আমার ধারণী সে অন্য কিছু। তার জন্য এই ভবনে না, অন্য কোন ভুবনে। যে ভুবনের সঙ্গে আমাদের কোন যােগাযােগ নেই । জন্ম আলোতে নয়— আদি অন্ধকারে।
জানালার কাছে একটা কাক এসে বসেছে। মাথা ঘুরিয়ে সে আমাকে দেখছে। তার চোখে রাজ্যের কৌতুহল । আমি দিনের শুরু করলাম কাকের সঙ্গে।
আজ তার সঙ্গে কথা বলব প্রেমিকের মত । তাকে নিয়ে চন্দ্রিমা উদ্যানে কিছুক্ষণ হাঁটাহাটিও করা যেতে পারে। একগাদা ফুল কিনে তার বাড়িতে উপস্থিত হল। রক্তের মাত্র লাল রায় গােলাপ ।
সুপা–ফুপু তারা কি কক্সবাজার থেকে ফিরেছেন? না ফিরে থাকলে টেলিফোনে কথা। বলতে হবে। কক্সবাজারে কোন হােটেলে উঠেছেন ত্রাওতাে জানিনা। বড় বড় হােটেল সব কটায় টেলিফোন করে দেখা যেতে পারে।
“হ্যালাে মিষ্টার , হাউ আর ইউ?”
তার পানির অনুবাদ আমি মনে মনে করে নিলাম। সে বলছে, ভাল আছি । তুমি আজ এত ভােরে উঠেছ কেন? কাথা গায়ে শুয়ে থাক। মানব সম্প্রদায়ে তােমার জন্ম। তুমি মহাসুখিজনদের একজন। খাবারের সন্ধানে হলি থেকে তোমাকে উড়তে হয় না।
আমি বললাম, মানুষ হয়ে জন্মানাের অনেক দুঃখ আছেরে পাখি। অনেক মিসির আলি। কিছুক্ষণ গল্পগুজব করব । দুপুরের খাওয়াটা তার সঙ্গে খেতে পারি। তাঁকে আজ রাতের এপয়েন্টমেন্টের কথাটা বলা যেতে পারে.....
হিমুর দ্বিতীয় প্রহর খন্ড-২৬
আচাচ্ছা দিঘী কোথায় পাব? ঢাকা শহরে সুন্দর দিঘী আছে না । কাকের চোখের মত টলটলে পানি ।
“স্যার চা আনছি।‘
আমি চায়ের কাপ নিয়ে বসলাম। এক কাপ চা জানালার পাশে রেখে দিলাম— মিঃ ক্রো যদি খেতে চান খাবেন।
আশ্চির্য কাকটা ঠোট ডুবাচ্ছে গরম চায়ে। কক কক করে কি যেন বলল । ধন্যবাদ দিল বলে মনে হচ্ছে। পশু পাখির ভাষাটা জানা থাকলে খুব ভাল হত। মজার মজার তথ্য অনেক কিছু জানা যেত । পশু পাখির ভাষা জানাটা খুব কি অসম্ভব? আমাদের এক নবী ছিলেন না যিনি পশুপাখির কথা বুঝতেন?
হযরত সুলাইমান আলায়হেস সালাম। তিনি পাখিদের কথা বলতেন। কোরান শরীফে আছে– পিপড়েরা তার সঙ্গে কথা বলেছে। একটা পাখিও তার সঙ্গে কথা বলছিল, পাখির নাম হুদ হুদ । সুরা সাদে তার সুন্দর বর্ণনা আছে।
‘দুঃখের চেয়ে সুখ বেশী। “জানি না । আমার মনে হয় না।‘
“আমার মনে হয় এই যে তুমি এখন উঠবে। এক কাপ গরম চা খাবে। একটা সিগারেট ধরাবে—এই আনন্দ আমরা কোথায় পাব । আমাদের ওতাে মাঝে মাঝে চা খেতে ইচ্ছে করে।
তাই বুঝি? করেছি, যা আপনার ই আছে, এবং আছে গট করে শব্দ হল। ভদ্রলোক টেলিফোন নামিয়ে রাখলেন । তিনি এমন । বেন তা হচ্ছে, টেলিফোনের প্লাগ খুলে রাখবেন। এবং হয়তােবা মেয়েকে আdাও পাঠিয়ে দেবেন। ভদ্রলােকের প্রচুর মিথ্যা কথা আলে সারাদিনে বলতে যে মিথ্যা দিয়ে যিনি দিনের শুরু করেন, তাকে দিনের শেষে ও মিথ্যা বলতে দাম ন গলামি এসে ললি, “আমি এমন এসব তথ্য লাভ কলেনি মা জানা নেই। আর আমি সেবা থেকে অসিল খবর নিয়ে এসেছি। আE নানান, নলাম যে জাতির পল্ল | নকুলছ। তার সবই ছেলে এর বিরাট সিংহাসন ।”
হিমুর দ্বিতীয় প্রহর খন্ড-২৬
দুম দুদ গামি বলেছিল সেরার রাণীর কথা। কুইন অব সেবা— “বিলতি। | দুন দুল পানিটা দেখতে কেমন? কাক নয়তো? |
কাকটা চায়ের কাপ উল্টে ফেলেছে। তার ভাবভঙ্গিতে অপ্রস্তুত ভর তুলছি। কেমন অভিচোখে আমার দিকে তাকালেই যেন বলার চেষ্টা তলত Sir I am sorry, extremely sorry. I have broken the cup
না Brokeri the cup হবে না, কাপ ভাঙ্গেনি শুধু উল্টে যেতে চায়ের কাপ উল্টেফেলার ইংরেজী কি হবে? রূপাকে জিজ্ঞেস করে জেনে ‘ হবে। শতাব্দী ষ্টোর থেকে কিছু টেলিফোন করে দিনের শুরুটা করা যাক।
শতাব্দী ষ্টোরের লােকজন আমাকে দেখে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। তিনজন এসে জিজ্ঞেস করল, স্যার কেমন আছেন? একজন
Read More