এসে অতি যত্নে মালিকের মার নিয়ে বসাল। টেলিফোনের চাবি খুলে দিল। আমি বসতে বসতেই কফি চলে এল, সিগারেট চলে এল। পীর ফকিররা যে কত আরামে জীবন যাপন করেন তা বুঝতে পারছি। শতাব্দী ষ্টোরের মালিক উপস্থিত নেই, কিন্তু আমার কোন সমস্যা।
‘হ্যালাে এটা কি রূপাদের বাড়ি?” ‘কে তথ্য বলছেন? আমার নাম হিমু। কুপা বাড়িতে নেই। বান্ধবীর বাসায় গেছে।‘
এত সকালে বান্ধবীর বাড়িতে যাবে কি ভাবে। এখনাে ন‘টা বাজেনি। রুপাতাে আটটার আগে ঘুম থেকেই উঠে না।‘
বলেছিতাে এ বাসায় নেই। “আপনিতো মিথ্যা বলছেন। আপনার গলা শুনেই বুঝতে পারছি আপনি একজন দায়িত্বশীল বয়স্ক মানুষ—আপনি দিনের শুরু করেছেন মিথ্যা দিয়ে। এটাকি ঠিক হচ্ছে? আপনি চাচ্ছেন না, রূপা আমার সঙ্গে কথা বলুক– সেটা। বললেই হয়– শুধু শুধু মিথ্যা বলার প্রয়ােজন ছিল না।‘
আমি ফুপুর বাসায় টেলিফোন করলাম। ফুপুকে পাওয়া গেল। তিনি রাগে চিড়বিড় করে জ্বলছে ।
কে হিমু ! আমারতাে সর্বনাশ হয়ে গেছে শুনেছিস কিছু? না, কি হয়েছে?
রশীদ হারামজাদাটাকে বাসায় রেখে গিয়েছিলাম, সে টিভি, ভিসিআর সব নিয়ে হাওয়া হয়ে গেছে । আমার আলমীরাও খুলেছে। সেখান থেকে কি নিয়েছে এখনাে বুঝতে পারছি না।’
‘মনে হয় গয়না টয়না নিয়েছে।
হিমুর দ্বিতীয় প্রহর খন্ড-২৭
“না গয়ানা নিতে পারবে না। সব গয়না ব্যাংকের লকারে। ক্যাশ টাকা নিয়েছে। তাের সুপার একটা বােতল ও নিয়েছে। খুব দামী জিনিশ না—নিশ ছিল । তাের ফুপী হায় হায় করছে।‘
এই দেখ যুলু সব খারাপ দিকের একটা ভাল দিকও আছে। রশীদ তােমার চুনুশল একটা জিনিসও নিয়ে গেছে।‘
“কাজলামী করিস না— পয়সা দিয়ে একটা জিনিশ কেনা।” । “ফ্রীজে তােমাদের জন্যে চিতল মাছের পেটি রান্না করা ছিল না? হ্যা ছিল । তুই জানলি কি করে?” সে এক বিরাট ইতিহাস। পরে বলব, এখন বল কক্সবাজারে কেমন। কাটল।”
“ভালই কাটছিল মাঝখানে সাদেক গিয়ে উপস্থিত হল। “মামলা বিষয়ক সাদেক?”
“হ্যা। দেখ না যন্ত্রণা তাকে ঠাট্টা করে কিনা কি বলেছি— সে সত্যি সত্যি মামলা টামলা করে বিশ্রী অবস্থা করেছে। বেয়াই বেয়ানের কাছে লজ্জায় মুগ্ন দেখাতে পারি না। ছিঃ ছিঃ।
“তােমার বেয়াই বেয়ান কেমন হয়েছে?”
বেয়াই সাহেবতাে খুবই ভাল মানুষ । অসম্ভব রসিক। কথায় কথায় হাসছিলেন। তাের ফুপার সঙ্গে তার খুবই খাতির হয়েছে। চারজনে মিলে নরক
লজার করেছে।
“চারজন পেলে কোথায়? ফুপা আর তার বেয়াই দুজন হবে না?’ এদের সাথে দুই ছাগলাওতাে আছে— মুফাজ্জল আর জহিরুল।”
“ঠিক আছে স্যার শপ করছি। রূপাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করতে চাচ্ছিলাম। আমার মনে হয় আপনাকে জিজ্ঞেস করলেও হবে। আচ্ছা স্যার চায়ের কাপ উল্টে ফেলার ইংরেজী কি?”
হিমুর দ্বিতীয় প্রহর খন্ড-২৭
খারাপ ভেবেছিলাম তত দেয়া হয় । আমার পেটের ছেলে যে এত নির্লজ্জ হবে ভাবতেই পারি না।
এই দুইজন এখনাে ঝুলে আছে?‘ আছেতাে বটেই। তবে শােন ছেলে দুটাকে যত খারাপ ভেলে লাল না। | ‘ভাল কাজ কি করেছে?
নেতার মিয়া নিনেছ। আমি তাতে বুল সুশি হয়েছি। মাছ মান মামলা নিয়ে হৈ চৈ শুরু করল, এয়ারেট নাকি বের হয়ে গেল আমি অহা নাচি না। কি না কিছু বুঝতে পারছি জী হননি অসমৰ ঠাশ করে সাদেকের গালে এক চড় বসিয়ে দিল।‘ হয়েছি। সাদেক সবার হয়ে গেছে, এইসব । ছি না তখন মঞ্জিল এসে বল কি বলবি?‘
সত্যি করে বলতাে ওদের এই ভালবাসা দেখে আনন্দে তােমার মন ভরে কে না? কি কথা বলছ না কেন? তোমাদের যখন বিয়ে হয়েছিল—তুমি এবং ফুপা তােমরা কি একই কাণ্ড কল্লো নি?”
‘আমরা এত বেহায়া ছিলাম না।‘
অামাতাে ধারণা তােমরা এ ছিলে ।” “তাের ফুপা অনেক বেহায়াপনা করেছে। বুদ্ধি কম মানুষতাে বাদলে ঐ সব।’
না বাদ দেব না। তােমরা কি ধরণের বেহায়াপনা করেছ, তার একটা উদাহরণ দিতেই হবে। জাঃ ‘ওয়ান।‘
যুবই আকস্মিক ঘটনা, আমি খুব খুশি হয়েছি। উচিত শিক্ষা হয়েলে লােকের বাচ্চা। আমাকে মামলা শেখায় ।
“মফাজল আর জহিরুল মনে হচ্ছে তােমাদের পরিবারে এটি পেয়ে এটি পাওয়ার কি আছে। সঙ্গে সঙ্গে ‘বুরে মায়া পড়ে গেছে এটা বল।
* “আমাদের সর্বনাশ করল এই মায়া। আমরা বাস করি মায়ার ভেতর চেচিয়ে লুলি আমাদেরকে মান্না থেকে মুক্ত কর।‘
“মানের কথা বলবি না হিন্না। ডড খনি।‘
হিমুর দ্বিতীয় প্রহর খন্ড-২৭
জ্ঞানের কথা না ফুপু । আমার সহজ কথা হচ্ছে মায়া সর্বগ্রাসী। এই ত রশীদ তােমার এত বড় ক্ষতি করল তারপরেও সে যখন মিডিল ইষ্ট cotro ফিরবে, জায়নামাজ, তসবি এবং মিষ্টি তেতুল নিয়ে তোমার সঙ্গে দেখা করত। যাবে। তুমি কিন্তু খুশিই হবে। তুমি হাসি মুখে বলবে— কেমন আছিসরে।
‘তুই এত ভাল ছেলে হয়েছিস কেন বলতাে?” “আমি কি ভাল ছেলে?”
“অবশ্যই ভালছেলে। তুই আমার একটা কথা শােন— ভাল দেখে একটা। মেয়েকে বিয়ে কর। তারপর তুই বৌমাকে নিয়ে নানান ধরণের বেহায়াপনা। করবি আমরা সবাই দূর থেকে দেখে হাসব।”
‘ফুপু রাখি?‘ বলে আমি খট করে রিসিভার রেখে দিলাম। কারণ কথা বলতে বলতে ফুপু কেঁদেফেলেছেন, এটা আমি বুঝতে পারছি মাতৃশ্রেণীর মানুষের কান্নাভেজা গলার আহ্বান অগ্রাহ্য করার ক্ষমতা মানুষলে দেয়া হয় নি । সেই আহ্বান এই কারণেই শােনা ঠিক না। ঐ হারামজাদা কি মিডিল ইস্ট যাচ্ছে?‘
“তুই এতসব জানলি কি করে?‘ “জি আশ্চম আমি জানব না? আমি হচ্ছি হিমু।‘ ‘তুই ফাজিল বেশী হয়েছিস । তােকে ধরে চাপকানাে উচিত হাসছিস কেন?‘ বাদল এবং আঁখি এরা কেমন আছে?“।
ভালই আছে। কক্সবাজারে ওরা যে কাণ্ডটা করেছে—আমারতাে লজ্জায়। মাথা কাটা যাবার অবস্থা।
‘কি করেছে?
“আরে, দিনরাত চব্বিশ ঘন্টা হােটেলের দরজা বন্ধ করে বসা। আমরা। এতগুলি মানুষ এসেছি সেদিকে কোন লক্ষ্যই নেই। ডাইনিং হলে সবাই খেতে বলি ও নবর পাঠায় – অল্প জ্বর লাগছে। আসতে পারবে না। আবার যেন মিসির আলি বললেন, আপনার কি শরীর খারাপ? আমি বললাম, জ্বি না।
হিমুর দ্বিতীয় প্রহর খন্ড-২৭
‘দেখে মনে হচ্ছে খুব শরীর খারাপ । আপনি কি কোন কারণে টেনশান বােধ করছেন?” “স্যার আজ পূর্ণিমা।‘
“ও আচ্ছা আচ্ছা বুঝতে পারছি। আপনি তাহলে ভয়ের মুখােমুখি হতে যাচ্ছেন
“জ্বি স্যার।‘ “আপনি যদি চান আমি আপনার সঙ্গে থাকতে পারি।
না আমি চাচ্ছি না।‘
তবে একটা শর্ত আছে।‘
‘কি শর্ত?’।
আমি যদি কোনদিন ফিরে না আসি আপনি খাতার লেখাগুলি পড়বেন। আর যদি কাল ভােরে ফিরে আসি, আপনি খাতা না পড়েই আমাকে মেরে দেবেন।‘ এখানে আসবেন । এইসব “খুব জটিল শর্তাতাে না।’
না শর্ত আপনার জন্যে জটিল না। আমার জন্যে জটিল।‘ | মিসির আলি হাসলেন । নরম গলায় বললেন, ঠিক আছে।
আমি খাওয়া শেষ করে, খাতা তার হাতে দিয়ে বের হলাম। দুম পাচ্ছে। পার্কের বেঞ্চীতে শুয়ে লম্বা ঘুম দেব। যখন জেগে উঠল তখন যেন দেখি চাল উঠে গেছে।
দুপুরে খাওয়া দাওয়া করেছেন।‘ হি না।‘
“আমার সঙ্গে চারটা গান। খাবার অবশ্য খুবই সামান্য। খিচুরি তল ডিমভাজা। খাবেন?
“জি খাব।‘ “হাত মুখ ধুয়ে আসুন। আমি খাবার সাজাই।‘ ‘জনের মত যাবার কি আছে?”
“হ্যা আছে। খুবই আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে আজ সকালে ঘুম ভেঙ্গেই , হল— দে পুরে ক্ষুধার্ত অবস্থায় আপনি আমার এখানে আসবেন। টেলিপ্যাথি ব্যাপারের কোন গুরুত্ব আমি দেই না— তারপরেও দু‘জনেন । রান্না করেছি। কেন বলুনতাে?“
Read More