হুমায়ূন আহমেদের লেখা হিমুর দ্বিতীয় প্রহর শেষ খন্ড

বলতে পারছি না‘ 

আমাদের মনের একটা অংশ রহস্যময়তায় আচ্ছন্নআমরা অনেক কি জানিতারপরেও অনেক কিছু জানি না বিজ্ঞান বলছে* Outor. Ing, nothing can be createdতারপরেও আমরা জানি শূন্য থেকে

 হিমুর দ্বিতীয় প্রহর  

অনন্ত নক্ষত্রবীথি তৈরী হয়েছেযা একদিন হয়তােবা শুন্যেই মিলিয়ে গত ভাবলে ভয়াবহ লাগে বলে ভাবি না‘ 

স্যার আপনার খিচুড়ি খুব ভাল হয়েছে‘ 

ধন্যবাদ হিমু সাহেবছি স্যার। 

আপনি যদি মনে করেন জিনিশটার মুখােমুখি হওয়া ঠিক হবে নাতাহলে স্বাল দিন। 

 এই কথা কেন বলছেন?” 

বুঝতে পারছি না কেন বলছিআমার লজিক বলছেআপনার উচিত ভয়ের মুখােমুখি হওয়া আবার এই মুহূর্তে কেন জানি মন সায় দিচ্ছে নামনেহচ্ছে মস্ত কোন বিপদ আপনার সামনে। 

আমি হাসিমুখে বললাম, এরকম মনে হচ্ছে কারণ আপনি আমার প্রতি এক ধরণের মায়া অনুভব করছেনযখন কেউ কারাে প্রতি মমতাবােধ করাতে থাকে তখনই সে লজিক থেকে সরে আসতে থাকেমায়া, মমতা, ভালবাসা যুক্তির বাইরের ব্যাপার। 

ভাল বলেছেন‘ 

হিমুর দ্বিতীয় প্রহর শেষ খন্ড

এটা আমার কথা নাআমার বাবার কথাবাবার বাণীতিনি তারবিখ্যাত বাণীগুচ্ছ তাঁর পুত্রের জন্যে লিখে রেখে গেছেন‘ 

আমি কি সেগুলি পড়ে দেখতে পারি?হ্যা পারেনআমি বাবার খাতাটা নিয়ে এসেছিআপনাকে দিয়ে যাব। খানিকটা রসিকতা তারা পৃথিবীর মানুষদের ফেরত দেয়। তােমার নাম কলম ? ঘুমভেঙ্গে একটু হকচকিয়ে গেলামআমি কোথায় শুয়ে আছি? সব কিছু না অচেনা লাগছেমনে হচ্ছে গহীন কোন অরণ্যে শুয়ে আছি

চারদিকে সুনসান নীরবতাখুব হাওয়া হচ্ছেহাওয়ায় গাছের পাতা কাঁপছেঅসংখ্য পাতা এলসঙ্গে কেঁপে উঠলে যে অস্বাভাবিক শব্দতরঙ্গ সৃষ্টি হয় সে রকম শব্দ ব্যাপারটা কি? আমি ধড়মড় করে উঠে বসলামতাকালাম চারদিকেনা যা ভাবছিলাম তা আমি সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের একটা পরিচিত বেঞ্চিতেই শুয়েছিলাম গাছের পাতার শব্দ বলে না ভাবছিলাম তা আসলে গাড়ি চলাচলের শব্দ এতবড় ভ্রান্তি ও মানুষের হয়?

 আকাশে চাঁদ থাকার কথা নাঃ কই চাঁদ দেখা যাচ্ছে না তােপাক অন্ধকারপার্কের বাতি কখন জ্বলবে ঢাকা মিউনিসিপ্যালিটি পূর্ণিমার রাতে শহরের সব বাতি জ্বালায় নাচাইতাে আছেসব বাতি জ্বলানাের দরকার কি? এরকম ভাব| পূর্ণিমার প্রথম চাদ হলুদ বর্ণের থাকেআকারেও সেই হলুদ চাদটাকে খুব বড় লাগেযতই সময় যায় হলুদ রম্ভ ততই কমতে থাকেএক সময় চাঁদটা ধবধবে শাদা হয়ে আবারো হলুদ হতে থাকেদ্বিতীয়বার হলুদ হবার প্রক্রিয়া শুরু হয় মধ্যরাতের পরআজ আমার যাত্রা মধ্যরাতেআমি আবারাে চাদ দেখার চেষ্টা করলাম। 

হিমুর দ্বিতীয় প্রহর শেষ খন্ড

কি দেহেন?” 

আমি চমকে প্রশ্নকর্তার দিকে তাকালামঝুপড়ির মত জায়গায় মেয়েটা বসে আছেনিশিকন্যাদের একজনযে গাছের গুড়িতে সে হেলান দিয়ে আছে সেটা একটা কদম গাছআমার প্রিয় গাছের একটিরুবিয়েসি পরিবারের পাছবৈজ্ঞানিক নামএনথােসেফালাস কাদম্বা গাছটা দেখলেই গানের লাইন মনে পড়েবাদল দিনের প্রথম কদম ফুল করেছ দান। 

আমি মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বললাম, কি নাম? সে গুকরে থুথু ফেলে বলল, কদমআসলেই কি তার নাম কদম? না সে রসিকতা করছে, কদম গাছের নিচে বলেছে বলে নিজের নাম বলছে কদমবিচিত্র কারণে ধরণের মেয়েরা রসিকতা করতে পছন্দ করেপৃথিবী তাদের সঙ্গে রসিকতা করে বলেই বােধহয়

যখন নারিকেল গাছের গুরিতে হেলান দিয়ে বস তখন তােমার নাম কি হয়? নারকেল

মেয়েটি খিলখিল করে হেসে উঠলএখন আর তাকে নিশিকন্যাদের একজন বলে মনে হচ্ছে নাপনেরো ষােল বছরের কিশােরীর মত লাগছে যে সন্ধ্যাবেলা একা একা বনে বেড়াতে এসেছেহাসি খুব অদ্ভুত জিনিশহাসি মানুষের সব গ্লানি উড়িয়ে নিয়ে যায় । 

অামার নাম=হরাদুরার চেয়েতাে একদম নামটাই ভালআচ্ছা যান, অঙ্কনের জন্যে কলম‘ 

একেক জনের জন্যে একেক নাম? ভাল তােআফনের ভাল লাগলেই আমার ভাল । 

মেয়েটা গাছের নীচ থেকে উঠে এসে আমার পাশে বেঞ্চীতে বসে হাই তুললমেয়েটার মুখ পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে না, তারপরেও মনে হচ্ছে দেখতে মায়া কাড়াকৈশােরের মায়া মেয়েটি এখনাে ধরে আছেবেশীদিন ধরে রাখতে পারবে নাকদম শাড়ি পরে আছেশাড়ির আঁচলে বাদামসে বাদাম ভেঙ্গেভেঙ্গে মুখে দিচ্ছে। 

হিমুর দ্বিতীয় প্রহর শেষ খন্ড

এটু পরে পরে আসমানের দিকে চাইয়া কি দেহেন?চাঁদ উঠেছে কিনা দেখি চাঁদের খোজ নিতাছেন ক্যান? আফনে কি চাদ সওদাগর?” 

কদম আবারাে খিলখিল করে হাসল আমি মেয়েটির কথার পিতে কথা বলার ক্ষমতা দেখে মুক্ত হলাম । 

রাগ হইছেন?রাগ হব কেন?এই যে আফনেরে নিয়া তামশা করতেছি‘ 

না রাগ হই নিআমার ভিজিট পঞ্চাশ টেকা‘ 

পঞ্চাশ টাকা ভিজিট?” 

ভিজিট দেবার সামর্থ আমার নেইএই দেখ পাঞ্জাবীর পকেট পর্যন্ত নেইপঞ্চাশ টেকা আপনের কাছে বেশী লাগতেছে

নাপঞ্চাশ টাকা বরং কম মনে হচ্ছেরমণীর মন সহস্র বৎসরের সখা সাধনার ধনআপনের কাছে আসলেই টেকা নাই” 

 

Read More

হুমায়ূন আহমেদের লেখা লিলুয়া বাতাস খন্ড-১

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *