বলতে পারছি না।‘
“আমাদের মনের একটা অংশ রহস্যময়তায় আচ্ছন্ন। আমরা অনেক কি জানি— তারপরেও অনেক কিছু জানি না । বিজ্ঞান বলছে— * Outor. Ing, nothing can be created” তারপরেও আমরা জানি শূন্য থেকে
অনন্ত নক্ষত্রবীথি তৈরী হয়েছে। যা একদিন হয়তােবা শুন্যেই মিলিয়ে গত ভাবলে ভয়াবহ লাগে বলে ভাবি না।‘
“স্যার আপনার খিচুড়ি খুব ভাল হয়েছে।‘
ধন্যবাদ । হিমু সাহেব। “ছি স্যার‘।
“আপনি যদি মনে করেন ঐ জিনিশটার মুখােমুখি হওয়া ঠিক হবে না। তাহলে স্বাল দিন।
এই কথা কেন বলছেন?”
বুঝতে পারছি না কেন বলছি। আমার লজিক বলছে– আপনার উচিত ভয়ের মুখােমুখি হওয়া আবার এই মুহূর্তে কেন জানি মন সায় দিচ্ছে না। মনে। হচ্ছে মস্ত কোন বিপদ আপনার সামনে।।
আমি হাসিমুখে বললাম, এরকম মনে হচ্ছে কারণ আপনি আমার প্রতি এক ধরণের মায়া অনুভব করছেন। যখন কেউ কারাে প্রতি মমতাবােধ করাতে থাকে তখনই সে লজিক থেকে সরে আসতে থাকে। মায়া, মমতা, ভালবাসা যুক্তির বাইরের ব্যাপার।
“ভাল বলেছেন।‘
হিমুর দ্বিতীয় প্রহর শেষ খন্ড
“এটা আমার কথা না। আমার বাবার কথা। বাবার বাণী। তিনি তার। বিখ্যাত বাণীগুচ্ছ তাঁর পুত্রের জন্যে লিখে রেখে গেছেন।‘
‘আমি কি সেগুলি পড়ে দেখতে পারি?‘। “হ্যা পারেন। আমি বাবার খাতাটা নিয়ে এসেছি। আপনাকে দিয়ে যাব। খানিকটা রসিকতা তারা পৃথিবীর মানুষদের ফেরত দেয়। তােমার নাম কলম ? ঘুমভেঙ্গে একটু হকচকিয়ে গেলাম। আমি কোথায় শুয়ে আছি? সব কিছু না অচেনা লাগছে। মনে হচ্ছে গহীন কোন অরণ্যে শুয়ে আছি।
চারদিকে সুনসান নীরবতা। খুব হাওয়া হচ্ছে–হাওয়ায় গাছের পাতা কাঁপছে। অসংখ্য পাতা এল। সঙ্গে কেঁপে উঠলে যে অস্বাভাবিক শব্দতরঙ্গ সৃষ্টি হয় সে রকম শব্দ । ব্যাপারটা কি? আমি ধড়মড় করে উঠে বসলাম। তাকালাম চারদিকে। না যা ভাবছিলাম তা আমি সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের একটা পরিচিত বেঞ্চিতেই শুয়েছিলাম । গাছের পাতার শব্দ বলে না ভাবছিলাম তা আসলে গাড়ি চলাচলের শব্দ । এতবড় ভ্রান্তি ও মানুষের হয়?
আকাশে চাঁদ থাকার কথা নাঃ কই চাঁদ দেখা যাচ্ছে না তাে। পাক অন্ধকার। পার্কের বাতি কখন জ্বলবে ঢাকা মিউনিসিপ্যালিটি পূর্ণিমার রাতে শহরের সব বাতি জ্বালায় না। চাইতাে আছে—সব বাতি জ্বলানাের দরকার কি? এরকম ভাব। | পূর্ণিমার প্রথম চাদ হলুদ বর্ণের থাকে। আকারেও সেই হলুদ চাদটাকে খুব বড় লাগে। যতই সময় যায় হলুদ রম্ভ ততই কমতে থাকে। এক সময় চাঁদটা ধবধবে শাদা হয়ে আবারো হলুদ হতে থাকে। দ্বিতীয়বার হলুদ হবার প্রক্রিয়া শুরু হয় মধ্যরাতের পর। আজ আমার যাত্রা মধ্যরাতে। আমি আবারাে চাদ দেখার চেষ্টা করলাম।
হিমুর দ্বিতীয় প্রহর শেষ খন্ড
“কি দেহেন?”
আমি চমকে প্রশ্নকর্তার দিকে তাকালাম। ঝুপড়ির মত জায়গায় মেয়েটা বসে আছে। নিশিকন্যাদের একজন। যে গাছের গুড়িতে সে হেলান দিয়ে আছে সেটা একটা কদম গাছ। আমার প্রিয় গাছের একটি। রুবিয়েসি পরিবারের পাছ। বৈজ্ঞানিক নাম–এনথােসেফালাস কাদম্বা । গাছটা দেখলেই গানের লাইন মনে পড়ে–বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল করেছ দান।
আমি মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বললাম, কি নাম? সে ‘গু’ করে থুথু ফেলে বলল, কদম। “আসলেই কি তার নাম কদম? না সে রসিকতা করছে, কদম গাছের নিচে বলেছে বলে নিজের নাম বলছে কদম। বিচিত্র কারণে এ ধরণের মেয়েরা রসিকতা করতে পছন্দ করে। পৃথিবী তাদের সঙ্গে রসিকতা করে বলেই বােধহয়,
“যখন নারিকেল গাছের গুরিতে হেলান দিয়ে বস তখন তােমার নাম কি হয়? নারকেল?
” মেয়েটি খিলখিল করে হেসে উঠল। এখন আর তাকে নিশিকন্যাদের একজন বলে মনে হচ্ছে না। পনেরো ষােল বছরের কিশােরীর মত লাগছে যে সন্ধ্যাবেলা একা একা বনে বেড়াতে এসেছে। হাসি খুব অদ্ভুত জিনিশ। হাসি মানুষের সব গ্লানি উড়িয়ে নিয়ে যায় ।
অামার নাম=হরা। ‘দুরার চেয়েতাে একদম নামটাই ভাল।‘ “আচ্ছা যান, অঙ্কনের জন্যে কলম।‘
একেক জনের জন্যে একেক নাম? ভাল তাে। ‘আফনের ভাল লাগলেই আমার ভাল ।
মেয়েটা গাছের নীচ থেকে উঠে এসে আমার পাশে বেঞ্চীতে বসে হাই তুলল। মেয়েটার মুখ পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে না, তারপরেও মনে হচ্ছে দেখতে মায়া কাড়া। কৈশােরের মায়া মেয়েটি এখনাে ধরে আছে। বেশীদিন ধরে রাখতে পারবে না। কদম শাড়ি পরে আছে। শাড়ির আঁচলে বাদাম। সে বাদাম ভেঙ্গে। ভেঙ্গে মুখে দিচ্ছে।
হিমুর দ্বিতীয় প্রহর শেষ খন্ড
“এটু পরে পরে আসমানের দিকে চাইয়া কি দেহেন?” “চাঁদ উঠেছে কিনা দেখি । ‘চাঁদের খোজ নিতাছেন ক্যান? ‘আফনে কি চাদ সওদাগর?”
কদম আবারাে খিলখিল করে হাসল । আমি মেয়েটির কথার পিতে কথা বলার ক্ষমতা দেখে মুক্ত হলাম ।
রাগ হইছেন?” রাগ হব কেন?‘ ‘এই যে আফনেরে নিয়া তামশা করতেছি।‘
না রাগ হই নি। “আমার ভিজিট পঞ্চাশ টেকা।‘
পঞ্চাশ টাকা ভিজিট?”
“ভিজিট দেবার সামর্থ আমার নেই। এই দেখ পাঞ্জাবীর পকেট পর্যন্ত নেই।‘ “পঞ্চাশ টেকা আপনের কাছে বেশী লাগতেছে?
না। পঞ্চাশ টাকা বরং কম মনে হচ্ছে। রমণীর মন সহস্র বৎসরের সখা সাধনার ধন।‘ “আপনের কাছে আসলেই টেকা নাই।”
Read More