সে কয়েক মুহুর্ত অপেক্ষা করলাে তারপর নােভাকে চুমু খেয়ে এক বস্ত্রে বের হয়ে গেল। আমি মােটেই পাত্তা দিলাম না। যাবে কোথায়? তাকে ফিরে আসতেই হবে।
আশ্চর্যের ব্যাপার সে ফিরে এল না। একদিন এবং একরাত কেটে গেল। আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ল। নােভা ক্রমাগত কাদছে, কিছুই খাচ্ছে না। আমি কিছুতেই তাকে শান্ত করতে পারছি না। সম্ভব অসম্ভব সব জায়গায় খোজ করলাম। কেউ কিছু বলতে পারে না। পুলিশে খবর দিলাম।
ফার্গো শহরে অসহায় মহিলাদের রক্ষা সমিতি বলে একটি সমিতি আছে। সেখানেও খোজ নিলাম। আমার প্রায় মাথা খারাপ হয়ে যাবার জোগাড় ।
দ্বিতীয় দিন পার হল। রাত এল। আমি ঠিক করলাম রাতের মধ্যে যদি কোন খোজ না পাই তাহলে দেশে খবর দেব।
রাত আটটায় একটা টেলিফোন এল। একজন মহিলা এ্যাটোনি আমাকে জানালেন যে আমার স্ত্রী গুলতেকিন আহমেদ আমার ব্যবহারে অতিষ্ঠ হয়েছেন। তিনি ডিভাের্সের মামলা করতে চান। | আমি বললাম, খুবই উত্তম কথা। সে আছে কোথায় ?
ও সে তার এক বান্ধবীর বাড়িতে আছে। সেই ঠিকানা তােমাকে দেয়া যাবে না। আমি কি মামলার বিষয়ে তােমার সঙ্গে কথা বলব?
ও মামলার বিষয়ে কথা বলার কিছুই নেই। আমাদের বিয়ের নিয়ম-কানুন খুব সহজ। এই নিয়মে আমার স্ত্রীকে স্বামী পরিত্যাগ করার অধিকার দেয়া আছে। এই অধিকার বলে সে যে কোন মুহূর্তে আমাকে ত্যাগ করতে পারে। তার জন্যে কোর্টে যাবার প্রয়ােজন নেই।
হোটেল গ্রেভার ইন খন্ড-১৭
ও তােমাদের দেশের নিয়ম-কানুন তােমাদের দেশের জন্যে। আমেরিকায় এই নিয়ম চলবে না।
তােমার বকবকানি শুনতে আমার মােটেই ভাল লাগছে না। তুমি কি দয়া করে আমার স্ত্রীর সঙ্গে আমার যােগাযােগ করিয়ে দেবে?
আমি তােমার অনুরােধের কথা তাকে বলতে পারি। যােগাযােগ করবার দায়িত্ব তার।
বেশ তাই কর।
আমি টেলিফোন নামিয়ে সারা রাত জেগে রইলাম—যদি গুলতেকিন টেলিফোন করে। সে টেলিফোন করল না। বিভীষিকাময় একটা রাত কাটল। ভােরবেলা সে এসে হাজির।
যেন কিছুই হয়নি এমন ভঙ্গিতে সে রান্নাঘরে ঢুকে চায়ের কেতলি বসিয়ে দিল। আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি। কিছুই বলছি না। সে খুবই স্বাভাবিক ভঙ্গিতে দু’কাপ চা বানিয়ে এক কাপ আমার সামনে রেখে বলল, তােমাকে আমি একটা শিক্ষা দিলাম। যাতে ভবিষ্যতে আমার সঙ্গে আর খারাপ ব্যবহার না কর । যদি কর আমি কিন্তু ফিরে আসব না।
আমি বললাম, আমেরিকা তােমাকে বদলে দিয়েছে। ৪ হঁ্যা দিয়েছে। এই বদলানোটা কি খারাপ? ৪ না। | না-বলার সৎ সাহস যে তােমার হয়েছে সে জন্যে তােমাকে ধন্যবাদ। তবে যে বিদ্রোহ এখানে আনি করতে পারলাম দেশে থাকলে তা কখনাে করতে পারতাম
দিনের পর দিন অপমান সহ্য করে পশু শ্রেণীর স্বামীর পায়ের কাছে পড়ে থাকতে হত।? আমি কি পশু শ্রেণীর কেউ?
হ্যা। নাও চা খাও। তােমার চেহারা এত খারাপ হয়েছে কেন? এই দুদিন কিছুই খাওনি বােধ হয় ?
বলতে বলতে পশু-শ্রেণীর একজন মানুষের প্রতি গাঢ় মমতায় তার চোখে জল এসে গেল।
সে কঁদতে কাঁদতে বলল, আমি জানি এর পরেও তুমি আমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করবে, তবুও আমি বারবার তােমার কাছেই ফিরে আসব । এই দুদিন আমি একবারও আমার মেয়ের কথা ভাবিনি। শুধু তােমার কথাই ভেবেছি।
আমি মনে মনে বললাম, ভালবেসে যদি সুখ নাহি তবে কেন মিছে এ ভালবাসা।
ভাগ্যিস রবীন্দ্রনাথ জন্মেছিলেন । না জন্মালে ভাব প্রকাশে আমাদের বড় অসুবিধা হত।
হোটেল গ্রেভার ইন খন্ড-১৭
ম্যারাথন কিস
চুমু প্রসঙ্গে আরেকটি গল্প বলি। গল্পের নায়ক আমার ছাত্র–বেন ওয়ালি। টিচিং অ্যাসিসটেন্ট হিসেবে আমি এদের প্রবলেম ক্লাস নেই। সপ্তাহে একদিন এক ঘন্টা থার্মোডিনামিক্সের অংক করাই এবং ছাত্রদের প্রশ্নের জবাব দেই।
প্রসঙ্গক্রমে বলে রাখি, আণ্ডার-গ্রাজুয়েটে যে সব আমেরিকান পড়তে আসে, তাদের প্রায় সবাই গাধা টাইপের। কোন প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলে হা করে তাকিয়ে থাকে। প্রবল বেগে মাথা চুলকায়। অংক করতে দিলে শুকনো গলায় বলে, আমার ক্যালকুলেটরে ব্যাটারী ডাউন হয়ে গেছে।
আণ্ডার-গ্রাজুয়েট পড়াশােনা এদের তেমন জরুরী নয়। খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকার জন্য হাইস্কুলের শিক্ষাই যথেষ্ট। এদের কাছে ইউনিভাসিটির ফুটবল টিম, বেসবল টিম পড়াশােনার চেয়ে অনেক জরুরী। মেয়েদের লক্ষ্য থাকে ভাল একজন স্বামী জোগাড় করার দিকে। এই কাজটি তাদের নিজেদেরই করতে হয় এবং এর জন্যে যে পরিমাণ কষ্ট এক একজন করে তা দেখলে চোখে পানি এসে যায়।
আমার সঙ্গে রুথ কোয়াণ্ডাল বলে এক আমেরিকান ছাত্রী পি-এইচ-ডি করত। এই মেয়েটি কোন স্বামী জোগাড় করতে পারেনি। ভবিষ্যতেও যে পারবে এমন সম্ভাবনাও নেই। মেয়েটি মেনাকপর্বতের মত। সে আমাকে দুঃখ করে বলেছিল, আমার যখন সতেরো-আঠারাে বছর বয়স ছিল তখন আমি এত মােটা ছিলাম না। চেহারাও ভালই ছিল। তখন থেকে চেষ্টা করছি একজন ভাল ছেলে জোগাড় করতে পারিনি। কত জনের সঙ্গে যে মিশেছি। ওদের ভুলিয়ে-ভালিয়ে রাখার জন্যে কত কিছু করতে হয়েছে। আগেকার অবস্থা তাে নেই, এখন ছেলেরা ডেটিং এর প্রথম রাতেই বিছানায় নিয়ে যেতে চায়। না করি না। না করলে যদি বিরক্ত হয়। আমাকে ছেড়ে অন্য কোন মেয়ের কাছে চলে যায়। এত কিছু করেও ছেলে জুটাতে পারলাম না। কেন পারলে না ?
ও পারলাম না, কারণ আমি অতিরিক্ত স্মার্ট। সারা জীবন ‘A’ পেয়ে এসেছি। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের সেবা ছাত্রীদের একজন। ছেলেরা এ রকম স্মার্ট মেয়ে পছন্দ করে না। তারা চায় পুতুপুতু ধরনের ভ্যাদা টাইপের মেয়ে। তুমি বিদেশী, আমাদেরজটিল সমস্যা বুঝতে পারবে না।
হোটেল গ্রেভার ইন খন্ড-১৭
আমি আসলেই বুঝতে পারি না। আমার মনে হয় এদের কোথায় যেন কী একটা হয়েছে। সবার মাথার ত্রুর একটা প্যাচ কেটে গেছে। উদাহরণ দেই। এটি আমার নিজের চোখে দেখা।
পুরােদমে ক্লাস হচ্ছে। দেখা গেল ক্লাস থেকে দুটি ছেলে এবং একটি মেয়ে বের হয়ে গেল। সবার চোখের সামনে এর সমস্ত কাপড় খুলে ফেলল। এই ভাবেই সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় একটা চক্কর দিয়ে ফেলল। এর নাম হচ্ছে স্টিকিং। এরকম করল কেন? এরকম করল কারণ এরা পৃথিবী জুড়ে যে আণবিক বােমা তৈরি হচ্ছে তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাল।
এদের এইসব পাগলামি সাধারণত ফাইন্যাল পরীক্ষার আগে আগে দেখা দেয়। আমার ছাত্র বেন ওয়ালির মাথাতে এ রকম পাগলামি ভর করল । স্প্রীং কোয়ার্টারের শেষে ফাইন্যালের ঠিক আগে আগে আমাকে এসে বলল সে একটা বিশেষ কারণে টার্ম ফাইন্যাল পেপারটা জমা দিতে পারছে না।
আমি বললাম, বিশেষ কারণটা কী? চুমুর দীর্ঘতম রেকর্ডটা ভাঙতে চাই। গিনিস বুকে নামটা যেন ওঠে।
আমি বেনের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম। বলে কি এই ছেলে?
অ্যামি বললাম, টর্ম ফাইনালের পরে চেষ্টা করলে কেমন হয়? তখন নিশ্চিন্তু মনে চালিয়ে যেতে পারবে। টার্ম ফাইন্যাল পেপার জমা না দিলে তো এই কোটায় কোন নম্বর পাবে না। | কেন বিবস মুখে চলে গেল। দুদিন পর পেপার জমা দিয়ে দিল। আমি ভাবলাম মাথা থেকে ভূত নেমে গেছে। কিছু জিজ্ঞেস করলাম না। যন্ত্রণা বাড়িয়ে লাভ নেই।
ভূত কিন্তু নামল না। আমেরিকানদের ঘাড়ের ভূত খুব সহজে নামে না। ভূতগুলিও আমেরিকানদের মতই পাগলা। কাজেই এক বৃহস্পতিবার রাতে অর্থাৎ উইক-এণ্ড শুরু হবার আগে আগে বেন রেকর্ড ভাঙার জন্য নেমে পড়ল। সঙ্গে স্বাস্থ্যবতী এক তরুণী—যার পােশাক খুবই উগ্র ধরনের। এই পােশাক না থাকলেই বরং উগ্রতটা কম মনে হত। | চুমুর ব্যাপারটা হচ্ছে মেমােরিয়াল ইউনিয়নের তিন তলায়। যথারীতি পােস্টার পড়েছে ম্যারাথন চুমু। দীর্ঘতম চুম্বনের বিশ্ব রেকর্ড স্থাপিত হতে যাচ্ছে … ইত্যাদি ইত্যাদি।
Read More