চোখ জড়িয়ে গেল। আমি তলিয়ে গেলাম গভীর ঘুমে । কোনাে এক পর্যায়ে কেউ একজন সাবধানে আমার গায়ের চাদর তুলে নিয়ে চলে গেল। তাতেও আমাণ ঘুম ভাঙল না। সারারাত আমার গায়ে চাদের আলাের সঙ্গে পড়ল ঘন হিম। যখন ঘুম ভাঙল তখন আমার গায়ে আকাশ–পাতাল ভুরি। নিঃশ্বাস পর্যন্ত নিতে পারছি না। দিনের আলােয় রাতের ভয়টা থাকার কথা না, কিন্তু লক্ষ্য করলাম।
এই গালি খাইয়া আইছেন। আরেক দফা গলাত আঙ্গুল দিয়া বাম। “Fারেনা – শইল সিনক হইব। আরেকটা কথা কই ভাই জান, আমারে তাও । ভয়টা আছে। গুটিশুটি মেরে ছোট হয়ে আছে। তবে বকার। সবচে ভাল বুদ্ধি মজান কী? দরবীন্ত আমি হাসপাতালে ভরতি ল পরীক্ষা করে দেখুন। । ঘরে সেবা করার তে চার্জ।
– টিকটি মেনে ছোট হয়ে আছে। তবে সে ছােট হয়ে থাকে যেহেত সে একটা আশ্রয় পেয়েছে সে বাড়তে থাকবে। ” করে আমার শরীর কাঁপছে। চিকিৎসা শুরু হওয়া দরকার। সনছে। হাসপাতালে উন্নতি হয়ে যাওয়া। হাসপাতালে ভরতির নিয়মকানুন ৯, করতে হয় নাকি রােগীকে উপস্থিত হয়ে বলতে হয়—আমি হাসপাতা হবার জন্যে এসেছি আমার নােগ গুরুতর । বিশ্বাস না হলে পরীক্ষা করে চিকিত্সার চেয়ে আমার যেটা বেশি দরকার তা হচ্ছে সেবা। ঘরে সেনা কেউ নেই। হাসপাতালের নার্সরা নিশ্চয়ই সেৱাও করবেন । গভীর রাত লাইট হাতে নিয়ে বিছানায় বিছানায় যাবেন, রােগের প্রকোপ কেমন দেখ7 সাল, দয়া করে আমাকে ভরতি করিয়ে নিন।
হিমুর দ্বিতীয় প্রহর খন্ড-৩
‘ হাসপাতালে ভরতি হওয়া যতটা জটিল হবে ভেবেছিলাম দেখা গেল ল্যাপাটা মােটেই তত জটিল না। একজনকে দেখলাম দুটাকা করে কী এক টিকিট বিক্রি করছে। খুব কঠিন ধরনের চেহারা। সবাইকে ধমকাচ্ছে। তাতে বললাম, ভাই, আমার এই মুহূর্তে হাসপাতালে ভরত্তি হওয়া দরকার । কী বললে হবে একটু দয়া করে বলে দিন। ‘সে বিস্মিত হয়ে বলল, হাসপাতালে ভরতি হবেন।
আছে? যারা ব্যবস্থা করতে পারবেন। তাদের কাছে নিয়ে যাৰ — এইটুকু। “স্যার, এইটুকুই বা কে কলে?”
হিমুর দ্বিতীয় প্রহর খন্ড-৩
এই লােক আমাকে একজন তরুণ–ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেল । খুবই ধারালাে চেহারা। কথাবার্তাও ধারালো । আমি এই তরুণীর কঠিন জেরার ভেতর। পড়ে গেলাম।
“আপনার নাম কী।‘ “ম্যাডাম, আমার নাম হিমু।‘ “আপনার ব্যাপার কি
‘ম্যাডাম আমি খুবই অসুস্থ। আমার এক্ষুনি হাসপাতালে ভর্তি হওয়া দরকার । ভূত দেখে ভয় পেয়ে অসুস্থ হয়ে পারেছি।” ।
‘আপনি অসুস্ত । আপনার চিকিত্সা হওয়া পালাব—আপনি হাসপাতালে ভরতি হতে ট্রানৰ ভাল লহ্ম। নিজ দেশের সীনি সমো সলিল ভাত यणक कलां गाय–याभनाल काटना च्छोक दवा दाद । शममाछाटल नौतन। আপনার কি ধারণা হােটেলের মতো আমরা বিছানা সাজিয়ে বসে আছি। আপনাদের জুর হবে, সর্দি হবে আপনারা এসে বিছানায় শুয়ে পড়বেন।। নার্সকে ডেকে বলবেন, কোলবালিশ দিয়ে যাও। এই আপনার ধারণা?”
“জ্বি না ম্যাডাম।
হিমুর দ্বিতীয় প্রহর খন্ড-৩
“আপনি কি ভেবেছেন উট একটা গল্প বললেই আমরা আপনাকে ভরতি করিয়ে নেব। ভুত দেখে জুর এসে গেছে? রসিকতা করার জায়গা পান না।‘
ম্যাডাম, সত্যি দেখেছি। আপনি চাইলে আমি পুরাে ঘটনা বলতে পারি । “আমি আপনার ঘটনা শুনতে চাচ্ছি না।‘ “ম্যাডাম, আপনি কি ভূত বিশ্বাস কােেন না?” | “আপনি দয়া করে কথা বাড়াবেন না।‘
শেকসপীয়ারের মতাে মানুষও কিন্তু ভূত বিশ্বাস করতেন। তিনি হ্যামলেটে | বলেছেন—There are many things in heaven and Earth. আমার ধারণা তিনি ভূত দেখেছেন। এদিকে আমাদের রবীন্দ্রনাথ তাঁর জীবনস্মৃতিতে উলেখ করেছেন?
নিয়ে এসেছে কে আপনাকে “কেউ নিয়ে আসেনি। আমি নিজে নিজেই চলে এসেছি। আমি আর। বেশীক্ষণ দাড়িয়ে থাকতে পারব না। মাথা ঘুরে পড়ে যাব। |
আপনার হয়েছে কী? ভূত দেখে ভয় পেয়েছি। ভয় থেকে জ্বর এসে গেছে।‘ ভুত দেখেছেন।
“আমার কাছে এসেছেন কেন? আমি তাে আউটডাের পেশেন্ট রেজিস্ট্রেশন। সিপু দিই।‘
কার কাছে যাব তা তো স্যার জানি না।‘ “আম্মা, আপনি বসুন ঐ টুলটায়।‘ ‘টুলে বসতে পারব না। মাথা ঘুরে পড়ে যাব। আমি বরং মাটিতে বসি।‘ “আচ্ছা বসুন। “থ্যাকে দ্য স্যার।
হিমুর দ্বিতীয় প্রহর খন্ড-৩
আমাকে স্যার বলার দরকার নেই। যাদের স্যার বললে কাজ হবে তাদের বললেন।
আপনাকে বলতেও শ্রাজ তালাচ্ছে। আপনি ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন।‘ আমি ব্যবস্থা নিল কী? আমি দুই পয়সার কেরানী। আমার কি সেই ক্ষমতা।
আমি “স্টপকরলাম।
তরুণী ডাক্তার আমাকে যে–লােকটি নিয়ে এসেছিল (নাম রশীদ) তার দিকে কঠিন চোখে তাকালেন। রশীদ বেচারা জোকের মুখে লবণ পড়ার মতাে মিইয়ে গেল।
রশীদ। ‘জি আপা?”
একে এখান থেকে নিয়ে যাও। ফালতু ঝামেলা আমার কাছে আর থানা | নাটালাম এবং প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই মাথা ঘুরে অজ্ঞান হয়ে পলাম। আান যখন ফিরল তখন দেখি আমি হাসপাতালের একটা বিছানায় আমি আমার স্যালাইন দেয়া হচ্ছে। তরুণা – ডাক্তার আমার মুখের উপর আছেন। চোখ মেলতেই তিনি বললেন, হিমু সাহেব, এখন কেমন বােধ করা।
‘এইটক বলে আমি দ্বিতীয়বারের মত অজ্ঞান হারালাম, কিংবা গভীর রায় । হাসপাতালের ততীয় দিনে আমাকে দেখতে এলেন মােজো ফুপা–বানালেন। না। তার হাতে এক প্যাকেট আঙুর। একটা সময় ছিল যখন মৃত্যপথট দেখতে যাবার সময় আর নিয়ে যাওয়া হত। ফলের দোকানি আর নিতি সময় মমতামাখা গলায় বলত–রুগির অবস্থা সিরিয়াস ।
‘এখন আর একশাে টাকা কেজিবরই বরং এই তুলনায় দামি চল।। ‘মেজো কাপা আমার পাশে বসতে বসতে বললেন, অবস্থা কী? ।
আমি জল দিলাম। দেউ নােগী দেখতে এসে যদি দেখে রােগী দিলি। সহ। পা নাচাতে নাচাতে হিন্দি গান গাইছে —তখন সে শকের মতাে পায় । যলি দেখে রোগীর অবস্থা এখন–তখন, শ্বাস যাত্রা–যাত্রা অবস্থা তখন মনে শান্তি। পায় – যাক, কষ্ট করে আসাটা বৃথা যায় নি। কাজেই ফুপার প্রশ্নে আমি। চোখমুখ করুণ করে ফেললাম, শ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে এরকম একটা ভাবও।
হিমুর দ্বিতীয় প্রহর খন্ড-৩
হিমুর সর্দিজুর নদরদি নেশনে প্রাণপ্রিয় হিমু, সর্দি জুরে আস্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। প্রধানমদী গতকাল সন্ধ্যায় তাকে দেখতে যান। কিছুক্ষণ তার শয্যাপাশে থেকে তার আশু আরোগ্য কামনা করেন। মন্ত্রিপরিষদের সময়কজন সালস্য ও প্রধানমন্ত্রীর মা ছিলােন। দ্বিশদিলেন সলমানের আলো ছিলেন বনমন্ত্রী, তেল এ ভলানি মন্ত্রী, ত্রাণ উপমন্ত্রী। হাসপাতাল কতলক্ষ জানাচ্ছেন – হিমু সাহেবের শারীরিক অবস্থা এখন ভাল । হিমু সাহেবের ভালো চাপে হাসপাতালে সালিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। হাসপাতাল কর্তপক্ষ তাদের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছেন তারা যেন হিমু সাহেবয়ে নিল না নেন। হিম সাহেবের সরকার পরিপূর্ণ বিশ্রাম । শ্রাত্র শীরেন্য বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে বুলেটিন প্রতিলিনা দুপুর বারােটায় প্রকাশ করা হবে।
আমি যে হাসপাতালে এই খবর তো আমার কাঁধের দুই ফেরেশতা ছাড়া আর কারােরই দানার কথা না! ধরা যাক খবরটা সবাই জানে, তার পরেও ফুল হাসপাতালে চলে আসবেন এটা হয় না। এত মমতা আমার জন্যে বাদল ছাড়া আর কারােরই নেই। অন্য কোনাে ব্যাপার আছে। ব্যাপারটা কী?
ফুপা আমি যে হাসপাতালে এটা জানালেন কীভাবে? পেপারে নিউজ হয়েছে।
হিমুর দ্বিতীয় প্রহর খন্ড-৩
পেপারে নিউজ হবে কেন? তুই কে? হাসপাতাল থেকে আমাকে টেলিফোন
জব নিচ্ছে না কােন অবস্থা কী? আমি ক্ষীণ স্বরে বললাম, ভাল । এখন একটু ভাল । তােকে খুঁজে বের করতে খুবই যন্ত্রণা হয়েছে, কোন ওয়ার্ড, বেড় নাম্বার কী। কত জানে না।।
‘ ‘একবার তাে ভেবেছি ফিরেই চলে যাই। নেহায়েত আঙুর কিনেছি বলে যাই নি। আঙুর খেতে নিষেধ নেই তাে?‘
তােমার নাম্বার ওরা পেল কোথায়?” ‘তুই নিয়েছিল।
আমার মনে পড়ল কোনাে এক সময় হাসপাতালে ভন্নতির চরম তনুশ্রণী ডাক্তার নিয়ে এসেছিলেন। তিনি নিজেই ফিলআপ মুলেছেন এবং আগ ব্ৰাড়িয়ে অসুখের খবর দিয়েছেন।
খুব মিষ্টি গলার একজন মেয়ে ডাক্তার আপনাকে খবর দিয়েছে, তাই না?” ই! তাের সম্পর্কে জানতে চাচ্ছিল। কী জানতে চাচ্ছিল?‘ “তুই কী করিস না–করিস এইসব। তাের হলুদ পাঞ্জাবি, উট থাবার্তা শুনে ভড়কে গেছে আর কি! তুই আর কিছু পারিস বা না পারিস মানুষকে ভড়কাতে পারিস।
হিমুর দ্বিতীয় প্রহর খন্ড-৩
‘ডাক্তাররা এত সহজে ভড়কায় না। তারপর বলুন ফুপা আমাত্র কাছে বেকন এসেছেন।
“তােকে দেখতে এসেছি আর কি। “আমাকে দেখতে হাসপাতালে চলে আসবেন এটা বিশ্বাসযােগ্য না। ঘটনা।
আমি টপাটপ আর মুখে ফেলছি আর ভাবছি—ব্যাপারটা কী? আমি যে। হাসপাতালে, এই গোজ কুপা পেলেন কোথায়? কাউকেই তাে জানানাে হয় নি। আমি বিরাট রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব না নাে গন্তরের কাগজে নিউজ চলে গেছে—
পনার এখন দুশ্চিন্তার কিছু অনেক দুরে । আমার হাত থেকে
কয়েকটা মেয়ে লেখা হয়েছে এর মধ্যে একটাকে তাের ফুপুর পছন্দ হয়েছে। মেয়ের নাম হল চোখ।
* মেয়ের নাম চোখ ‘হ চোখ । আজকালকি নামের কোন ঠিক ঠিকানা আছে। যার যা ইচ্ছা নাম
বাদলের ব্যাপারে তাের সঙ্গে একটু কথা ছিল। ফুপা ইতস্তত করে বললেন,
আমি শান্ত গলায় বললাম, বাদলকে নিয়ে তাে আপনার এখন দড়ি নেই সে কানাডায়। আমার প্রভাববলয় থেকে অনেক সূলে। আমার হাত তাকে লক্ষ করার কোনো দায়িত্বও আপনাকে পালন করতে হচ্ছে না। কানাজাতেও খালি পায়ে হাটা শুরু করেছে?” |
ফাপা চাপা গলায় বললেন, বাদল এখন ঢাকায় ।
এ আচ্ছা।
হিমুর দ্বিতীয় প্রহর খন্ড-৩
মাসখানিক থাকবে । তাের কাছে আমার অনুরােধ এই এক মাস তই ঢাকা দিয়ে থাকবি। ওর সঙ্গে দেখা করবি না।‘
‘ গা ঢাকা দিয়েই তাে আছি। হাসপাতালে লুকিয়ে আছি।‘
হাসপাতালে তাে আর এক মাস থাকবি না, তােকে নাকি আজকালের মধ্যেই ছেড়ে দেবে।‘
“আমাকে বাদলের কাছ থেকে একশাে হাত দূরে থাকতে হবে তাই তাে?‘ চোখ নাম হলে কী ভাবে। আখি না তো?
ও হ্যা, আঁখি। সুন্দর মেয়ে – ফড়ফড়ানি টাইপ। একটা কথা জিজ্বেল কালে তিনটা কথা বলে। বাদালের সঙ্গে মানাবে। একজন কণা বলে যাবে, একজন শুনে যাবে।’
মেয়ে তোমার পছন্দ না?‘ “তাের ফুপর পছন্দ। পুরুষমানুষের কি সংসারে কোনাে say থাকে। পুরঙ্গারা পেপার হেড হিসেবে অবস্থান করে। নামে কর্তা, আসলে ভর্তা।
Read more