তুই বিয়ে না করে খুব ভাল আছিস। দিব্যি শরীরে বাতাস লাগিয়ে ঘুরছিস ।। তােকে দেখে হিংসা হয়। স্বাধীনতা কী জিনিস তা কী মার্ম সেটা বােঝে শুধ। বিবাহিত পুরুষরাই। উঠিরে হিমু।

“আচ্ছা ।
বাদলের প্রসঙ্গে যা বলেছি মনে থাকে যেন। মনে পাকবে।‘ “ও আচ্ছা তাের অসুখের ব্যাপারটাই তাে কিছু জানলাম না। কী অসুখ?”
ঠা লেগেছে।” ঠাঞ্জা লাগল কীভাবে? ‘ফুটপাতে চাদর গায়ে শুয়েছিলাম । চোর চাদর নিয়ে গেল।‘
ফুটপাতে ঘুমুচ্ছিলি?”
‘নাে প্রবলেম।”
“শােন হিমু, আমরা চাচ্ছি, ওর একটা বিয়ে দিতে। মােটামুটি নিমরাতি করিয়ে ফেলেছি। এখন তুই যদি ভুং ভাজং দিস তাহলেতাে আর বিয়ে হলে না। সে হদ পাঞ্জাবী পরে হাটা দেবে।।
আমি কেন ভুং ভাজং দেব? ‘তােকে দিতে হবে না। তােকে দেখলেই ওর মধ্যে আপনা–আপনি ভুজং। ভাজং হয়ে যাবে। অনেক কষ্টে তাকে নরম্যাল করেছি, সব জলে যাবে।
আপনি নিশ্চিন্ত হয়ে থাকুন।
“ঘরে ঘুমুতে আর ভাল লাগে না?”
বাদল এয়ারপাের্টে নেমেই বলেছে– হিমুদা কোথায়? আমি মিথ্যা করে। বলেছি, সে কোথায় কেউ জানে না।
ভাল বলেছেন। “মেসের ঠিকানা চাচ্ছিল—তাের আগের মেসের ঠিকানা দিয়ে দিয়েছি।‘ খুবই ভাল করেছেন আগের ঠিকানায় খোঁজ নিতে গিয়ে ঠগ খাবে।‘
খোঁজ নিতে এর মধ্যেই গিয়েছে। ছেলেটাকে নিয়ে কি যে দুশ্চিন্তায় আছি! লিয়েটা দিয়ে দিতে পারলে নিশ্চিন্ত। আমাকে আর চিন্তা করতে হবে না। চিন্তা ছলনা যা করার বৌমা করবে।‘
হিমুর দ্বিতীয় প্রহর খন্ড-৪
‘বিয়ে ঠিকঠাক করে ফেলেছেন?
“শোন হিমু, বাদলের কাছ থেকে দূরে থাকবি। মনে থাকে যেন। “মনে থাকবে।
‘টাকাপয়সা কিছু লাগবে? লাগলে বল, লজ্জা করিস না। ধর, পাঁচশাে টাকা । রেখে দে। অষুধপত্র কেনার ব্যাপার থাকতে পারে।’ | আমি নােটটা রাখলাম। ফুপা চিন্তিত ভঙ্গিতে বের হয়ে গেলেন। ছেলে আমার ফাদে পড়ে যদি আবার ফুটপাতে শয্যা পাতে! কিছুই বলা যায় না । ব্যাধি সব মানুষকে এক চন সুস্থ মানুষের জন্যে।
‘ মান্নান বেশ পছন্দ হল। হাসপাতালের মানুষ গুলির ‘একটা মিল আছে। সবাই রােগী। রােগযন্ত্রণায় কাতর । ব্যাধি সৰ সালে দিয়েছে। একজন সুস্থ মানুষ অপচিত একজন সুস্থ মান কোনো সহমর্মিতা বােধ করবে না, কিন্তু একজন অসুস্থ মানুষ অন্য এ অসুস্থ মানুষের জন্যে করবে।
– তামপাতালে খাওয়া–দাওয়ার ব্যাপারটা নিয়েও ভাবতে হচ্ছে না। নাশতা মাছে৷ ন বেলী মালার আসাই। পুন হার ব্যবস্থাও আছে। জায়গায় টাকা খাওয়ালে স্পেশাল ডায়েটের ব্যবস্থা হয়। ডাক্তারদের অনেক সংস্থা আছে। কলা গলায় তরুণ ডাক্তারদের কাছে অভাবে কথা বলতে পারলে অসধ তাে পাওয়া যায়ই, পৃথ্য কেনার টাকাও পাওয়া যায়।। ‘ রােগ সেরে গেছে, তার পরেও কিছুদিন হাসপাতালে থেকে শরীর সালালান ব্যবস্থাও আছে। খাতাপত্রে নাম থাকবে না কিন্তু বেড থাকবে।
এক–একদিন। এক–এক ওয়ার্ডে গিয়ে ঘুমাতে হবে। ‘ ছেলেমেয়ে নিয়ে গত সাত মাস ধরে হাসপাতালে বাস করছে এমন। একজনের সন্ধান পাওয়া গেল । নাম ইসমাইল মিয়া। স্ত্রীর ক্যানসার হয়েছিল। তাকে হাসপাতালে ভরতি করিয়ে মাসখানিক চিকিৎসা করাল। সেই থেকে ইসমাইল মিয়ার হাসপাতালের সঙ্গে পরিচয়। ধীরে ধীরে পুরাে পরিবার নিয়ে সে হাসপাতালে পার হয়ে গেল। স্ত্রী মরে গেছে। তাতে অসুবিধা হয় নি । বাচ্চারা। হাসপাতালের বারান্দায় ফেলে।
হিমুর দ্বিতীয় প্রহর খন্ড-৪
এক ওয়ার্ড থেকে আরেক ওয়ার্ডে ঘুরে । কেউ কিছু বলে না। ইসমাইল মিয়া দিনে বাইরে কাজ–কর্ম করে (মনে হয় দু‘নম্বরী তাজ। ‘চুরি, ফটকাবাজি) রাতে হাসপাতালে এসে ছেলেমেয়েদের খুঁজে বের। করে। ঘুমানোর একটা ব্যবস্থা করে। ‘ ইসমাইল মিয়ার সঙ্গে পরিচয় হল। অতি ভদ্র । অতি বিনয়ী। হাসিমুখ ছাড়া কথা বলে না। তার মধ্যে দার্শনিক ব্যাপারও আছে। আমি বললাম, হাসপাতালে আর কতদিন থাকবে ।
তলায় পইরা দুইটা পিপিলিকার সত্যু হলে তাও আলাহপাকের বিধান। আজরাইল আলাইহেস সালাম আল্লাহপাকের নির্দেশে দুই পিপিলিকার জান। কবজ করবে।
ও আচ্ছা।
এই জন্যেই ভাইজান কোন কিছু নিয়া চিন্তা করি না । যার চিন্তা করার কথা সেই চিন্তা করতেছে। আমি চিন্তা কইরা কি করব ।
কার চিন্তা করার কথা?
কার আবার আল্লাহপাকের। | ইসমাইল মিয়া খুবই আল্লাহভক্ত। সমস্যা হচ্ছে তার প্রধান কাত চলি । চুরির পক্ষেও সে ভাল যুক্তি দাড় করিয়েছে—
“চুরিতে আসলে কোন দোষ নাই ভাইজান। ভালুক কি করে? পেটে ক্ষিধা। লাগলে মৌমাছির মৌচাক থাইক্যা মধু চুরি করে। এর জন্যে ভালকের লােষ হয়। এখন বলেন মানুষের দোষ হইল ক্যান।‘ ।
বগার মা নামের এক বৃদ্ধার সঙ্গে পরিচয় হল। সে আভ করে। ঝাড় না কাঠি নিয়ে রােগিদের ঝাড়ে। তাতে নাকি অতি দ্রুত রােগ আরোগ্য হয়। হাসপাতালে সর্বাধুনিক চিকিৎসার সাথে সাথে চলে ঝাড়ফুক।
হিমুর দ্বিতীয় প্রহর খন্ড-৪
এই বৃদ্ধা দশটাকার বিনিময়ে আমাকেও একদিন ঝেড়ে গেলেন। আমি দশটাকার বাইরে আরাে পঞ্চাশ টাকা দিয়ে ঝাড়া মন্ত্র খানিকটা শিখে নিলাম ।
ও কালী সাধনা। বিষ্ট কালী মাতা। উত্তর দক্ষিণ, পূর্ব পশ্চিম । ব্লাও নাও – ঈশানে যাও বগার মা‘র সঙ্গে অনেক গল্পগুজব ও করলাম । জানা গেল না বলে তার কোন ছেলে বা মেয়ে নেই। তার তিনবার বিয়ে হয়েছিল। কোন ঘরেই কোন সন্তান হয় নাই । কি করে তার নাম বগার মা হয়ে গেল তিনি নিজেও জানেনা
‘ ইসমাইল দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে বলল, ক্যামনে বলি ভাইজান? আমার হাতে তাে কিছু নাই। ‘তোমার হাতে নেই কেন?” ‘সর তাে ভাইজান আল্লাহপাকের নির্ধারণ। আল্লাহপাক নির্ধারণ করে। নেমেই আনি লাচ্ছা নি হাসপাতালে থাকব – এইজন্যে আছি। যেদিন । নির্ধারণ করবেন আর দরকার নাই – সেইদিন বিদায়।
“তাতো বটেই। “আল্লাহপাকের হুকুম ছাড়াতো ভাইজান কিছুই হওনের উপায় নাই।‘ “তাও ঠিক। সদ নাে পিপিলিকা আল্লাহপাক তার খবর রাখেন। আপনার পাশে
আমি বললাম, মা ঝাড় ফুকে রােগ সারে।
বগার মা অতি চমৎকৃত হয়ে বললেন, কি কও বাবা? ঠিকমত ঝাড়তে পারলে ক্যানসার সালে।
‘আপনি সারিয়েছেন?‘
হিমুর দ্বিতীয় প্রহর খন্ড-৪
“অবশ্যই– ত্রিশ বছর ধইরা ঝাড়তেছি। ত্রিশ বস্থানের ক্যানসার ম্যাসার। কত কিছু ভাল করেছি। একটা কচকা ঝাড়া দশটা পেনিসিলি” ইনজেকশনের সমান। বাপধন তােমারে যে ঝাড়া দিলাম এই ঝাড়ায় দেখবা আই ও দিনে লিনো। সিধা হইয়া দাড়াই।
তিনি অবশ্যই তার পুত্রকে কিছুদিন আমি বসলাম। আমার সামনে পিরিচে ঢাকা একটা চায়ের কাপ । অভাবজানার সামনেও তাই । চা তৈরী করে সে আমাকে নিয়ে এসেছে। আমি তার জেতালে সামান্য হলেও কৌতুহল জাগিয়ে তুলতে পেরেছি।
“হিমু সাহেব।’
হাসপাতালে আমি অনেক কিছুই শিখলাম। হাসপাতালে ব্যাপান, আমার বাবার চোখ এড়িয়ে গিয়েছিল। নয়ত তিনি অবশ্যই তার আর হাসপাতালে রেখে দিতেন। এবং তার বিখ্যাত উপদেশমালার সঙ্গে আলাে উপদেশ যুক্ত হত ।
প্রতি দুই বৎসর অন্য হাসপাতালে সাতদিন থাকিবার ব্যবস্থা করেন। মানুষের জরা–ব্যধি ও শোক তাহাদের পাশে থাকিয়া অনুধাবন করিলার চেষ্টা। করিবে। বাড়ি কী, জীব জগথকে ব্যাধি কেন বার বার আক্রমণ করে তাহ। বয়িলার চেষ্টা করিবে। তবে মনে রাখিও ব্যাধিকে ঘৃণা করিবে না। ব্যাধি। জীবনেরই অংশ। জীবন আছে বলিয়াই ব্যাধি আছে।”
“আপনি কি সিগারেট খান? কেউ লিলে খাই।
‘নিন সিগারেট নিন। ডাক্তাররা সৰ লােশীলের প্রত্ম যে উপাদেশ লেম তা হচ্ছে– সিগারেট ছাড় ন। সেখানে আমি আপনাকে সিগাত্রেট দিচ্ছি, মারণ কি ললনাতাে?” বুঝতে পারছি না।‘
হিমুর দ্বিতীয় প্রহর খন্ড-৪
কারণ আমি নিজে একটা সিগারেট খাব। ছেলেদের সঙ্গে পাল্লা দিতে গিয়ে সিগারেট ধরেছিলাম। ছেলেরা সিগালেট খাবে আমরা মেয়েলা কেন খাব না? এখন এমন অভ্যাস হয়েছে। এর থেকে বেলতে পারছি না। চেষ্টা ও অবশ্যি করছি না।‘
ফারজানা সিগারেট ধরাল। আশ্চর্য সিগারেটটাও তার ঠোটে মানিয়ে গেল। পাতলা ঠোটের কাছে জ্বলন্ত আগুন। বাহ কি সুন্দর। সুন্দরী তরুণীদের ঘিলে যা থাকে সবইকি সুন্দর হয়ে যায়?
“হিমু সাহেব!”
কেমন আছেন হিমু সাহেব? জ্বি ম্যাডাম ভাল আছি।‘
“আপনার বুকে কনজেশন এখনাে আছে। এন্টিবায়ােটিক যা দেয়া হয়েছে— কনটিনিউ করবেন। সেরে যাবে।‘
“থ্যাংক ম্যা ম্যাডাম ।
আপনাকে রিলিজ করে দেয়া হয়েছে আপনি চলে যেতে পারেন।‘ “থ্যাংক যা ম্যাডাম।” প্রতিটি বাক্যে একবার করে ম্যাডাম বলছেন কেন? ম্যাডাম শব্দটা আমার। পছন্দ না। আর বলবেন না। “জি আচ্ছা বলব না।‘
আপনার হাতে কি সময় আছে? সময় থাকলে আমার চেম্বারে আসুন। আপনার সঙ্গে কিছুক্ষণ গল্প করি।‘
“জি আচ্ছা।” ‘আমি তরুণী ডাক্তারের পেছনে পেছনে যাচ্ছি। তার নাম ফারজানা। সুন্দর মানুষকেও সব সময় সুন্দর লাগে না। কখনো খুব সুন্দর লাগে, কখনাে মােটামুটি লাগে। এই তরুণীকে আমি যতবার দেখেছি ততবারই মুগ্ধ হয়েছি। এপ্রন ফেলে। দিয়ে ফারজানা যদি ঝলমলে একটা শাড়ি পরত তাহলে কি হত?
ঠোটে গাঢ় লপাড়, কপালে টিপ। হালকা নীল একটা শাড়ি – কানে ঝুলবে নীল পাথরের তোফ দুল। এই মেয়ে কি বিয়ে বাড়িতে সেজেগুজে যায় না? তখন চারদিকে অবস্থাটা কি হয়? বিষের কনে নিশ্চয়ই মন খারাপ করে ভাবে এই মেয়েটা। কেন এসেছে। আজকের দিনে আমাকে সবচে সুন্দর দেখানাের কথা। এই মেয়েটা সেই জায়গা নিয়ে নিয়েছে। এটা সে পারে না।
হিমুর দ্বিতীয় প্রহর খন্ড-৪
“হিমু সাহেব।
জু।
‘এখন গল্প করুন। আপনার গল্পশুনি। “কি গল্প শুনতে চান?
“আপনি অস্বাভাবিক একটা দৃশ্য দেখে ভয় পেয়েছিলেন । ভয় পেয়ে অসুস্থ বাধিয়েছেন। সেই অস্বাভাবিক দৃশ্যটা কি আমি জানতে চাচ্ছি।‘
“কেন নিতে চাচ্ছেন?
জানতে চাচ্ছি। কারণ এই পৃথিবীতে অস্বাভাবিক কিছুই ঘটে না। পৃথিবী। চলে তার স্বাভাবিক নিয়মে। মানুষ সেইসব নিয়ম একে একে জানতে শুরু | করেছে– এই সময় আপনি যদি অস্বাভাবিক দৃশ্য দেখতে শুরু করেন। তাহলেতাে সমস্যা।”
“মানুষ কি সবকিছু জেনে ফেলেছে?‘
ফারজানা সিগারেটে লম্বা টান দিয়ে বলল, সব কিছু না জানলে ও অনেক। কিছুই জেনেছে। ইউনিভার্স কি ভাবে সৃষ্টি হল তাও জেনে গেছে। আমি চায়ে চুমুক দিতে দিতে হাসিমুখে বললাম, ইউনিভার্স কি ভাবে সৃষ্টি হয়েছে।
‘লা লা থেকে সব কিছুর শুরু। আদিতে ছিল প্রিমলছিল নৈর্য অস্ত্র উচ্চতা কিছুই নেই। সেই এটম বিগ ব্যাং এ ভেঙ্গে গেল। সে এবং টাইম। সেই স্পেস ছড়িয়ে পড়তে লাগল। এক্সপানডিং ৯৯
‘ সমকাের শুরু তাহলে বিগ ব্যাং থেকো’ |
সআরডিয়েল এটম যার ভঙ্গে গেল তৈরী হল পানডিং ইউনিভার্সে।
“বিগ ব্যাং এর আগে সময় ছিল না?‘
“বিগ ব্যাং এর আগে তাহলে কি ছিল?
“সেটা মানুষ কখনাে জানাতে পারবে না। মানুষের সমস্ত বিদ্যা এবং তা শুরুও বিগ ব্যাং এর পর থেকেই।
Read More