হুমায়ন আহমেদ এর হিমুর দ্বিতীয় প্রহর খন্ড-৮

এই কারণেই শুভ বাদল লজ্জিত ভঙ্গিতে হাসল হঠাৎ হাসি থামিয়ে বলল, আঁখির সঙ্গে স্ত্রী নিয়ে কথা বলব সেটাই বুঝতে পারছি নাবােকার মতাে হয়তো কিছু বলবপরে সে এটা নিয়ে হাসাহাসি করবে

হিমুর দ্বিতীয় প্রহর

করুকনা হাসাহাসিতাের যা মনে আসে তুই বলবিদুই একটা কবিতা টলিতা মুখস্ত করে না‘ 

কা কবিতা প্রেমের কবিতা প্রেমের তাে অনেক কবিতা আছে কোনটা মুখস্থ করব সেটা বলাে। 

কোনটা বলব, আমার তাে দুইতিন লাইনের বেশি কোনো কবিতা মনে েি না ” 

এভাবে নয়, এভাবে ঠিক হয় নাকীভাবে হয়? কেমন করে হন? কেমন করে ফুলের কাছে রা গন্ধ আর বাতাস দুই জনে...

এভাবে হয়, এমন ভালাে হয়বাদল বলল, এটা কার কবিতা, তােমার

পাগল হয়েছিস? আমি কবিতা লিখি নাকি? এই কবিতা শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের। 

কতদিন পর তােমাকে দেখছি কি যে অদ্ভুত লাগছেঅদ্ভুত লাগাচ্ছেলাগছে আঁখির সঙ্গে বেশী গল্প হবে তােমাকে নিয়েওকে নিয়ে আবার খালিপায়ে হাঁটতে বের হবিনাতাে” 

অবশ্যই বের হব। আমি পরব হলুদ পাঞ্জাবী, ওকে পাৰ হলুদ শাড়িতারপর ....

সেটা বলতে পারব না। লজ্জা লাগছেহিমুল শােন তােমার জন্যে আমি খুব সুন্দর একটা গিফট এনেছিআন্দাজ করতাে কি?” 

আন্দাজ করতে পারছি না।’‘ 

একটা খুব দামী লীপিং ব্যাগ নিয়ে এসেছিতুমিতাে যেখানে সেখানে রাত | কাটা ব্যাগটা থাকলে সুবিধা ব্যাগের ভেতর ঢুকে পলালে শিপিং লাশের কালার তােমার পছন্দ হবে না মেরন কালার অনেক খুঁজেছিহলুদ পাইনি।’ 

বাদল শ্রীপিং ব্যাগ নিয়ে এল বােঝাই যাচ্ছেঅনেক টাকা দিয়ে কিনেছেহিমুদা পছন্দ হয়েছেঃ খুব পছন্দ হয়েছে‘ 

হিমুর দ্বিতীয় প্রহর খন্ড-৮

ব্যাগটা থাকায় তােমার খুব সুবিধা হবেধর তুমি জঙ্গলে জোছনা দেখতে গিয়েছঅনেক রাত পর্যন্ত জোছনা দেখলে ঘুম পেয়ে গেলেকোন একটাগাছের নিচে ব্যাগ রেখে তার ভেতর ঢুকে গেলে। 

আমারতাে এখনই ব্যাগ নিয়ে জঙ্গলে চলে যেতে ইচ্ছে করছে‘ 

আমারাে ইচ্ছে করছেহিমুদা চল কাছে পিছের কোন একটা ভাঙ্গালে চলে যাই জয়দেবপুরের শালবনে গেলে কেমন হয়। 

বিয়ের আগে তাের কোথাও যাওয়া ঠিক হবে নাবিয়ে হয়ে যাক তারপর | তুই আর আঁখি, হিমু হিমি ...... | আমি বাক্যটা শেষ করার আগেই রণরঙ্গিনী মূর্তিতে ফুপু ঢুকলেনতিনি আমার দিকে তাকিয়ে খরখরে গলায় বললেন, তুই কাদের নিয়ে বাসায়। 

দুইতিন লাইনই বলােএক সেকেণ্ড দাড়াওআমি কাগজ কলম নিয়েআসিলিখে ফেলি। 

বলল গঙার ভঙ্গিতে বলপয়েন্ট আর কাগজ নিয়ে বসেছেআমি কবিতা বলল, সে লিখে মুখস্থ করবে, বাসররাতে তার স্ত্রীকে শােনাবেহাস্যকর একটা বাপার কিন্তু আমার কেন জানি হাস্যকর লাগছে নাবাদল বলল, কই, চুপকরে আজ কেন, বলাে। 

আমি বললাম, লিখে ফেল— 

এভাবে নয়, এভাবে ঠিক হয় নানদীর বুকে বৃষ্টি পড়ে পাহাড় তাকে সয় না। 

এসেছিস? বাদল দুটাকে জোগাড় মরেছিস কোথায়। 

আমি হচকিয়ে গিয়ে বললাম, কেন, ওরা কী করেছেদটাই তাে নেংটো হয়ে ছাদে নাচানাচি করছেতার ফুপাও নাচছে.

বল কীতই এক্ষুণি এই মুহূর্তে এদের নিয়ে বিদেয় হবি‘ 

আমি দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে উঠে দাড়ালামআমার বগলে বাদলের তা মেরুন ব্লৱে স্লিপিং ব্যাগ নাম কি রকম ভাইজান

হিমুর দ্বিতীয় প্রহর খন্ড-৮

আমি ঘুম ঘুম গলায় বললাম, জানি না বলেই জাপার লাগিয়ে দিলামস্লিপিং ব্যাগটা আমি আসলে এনেছি এই দুজনকে উপহার হিসেবে দিয়ে দেবার জন্যেহিমুরা স্লিপিং ব্যাগ নিয়ে পথে হাঁটে নাআমি ঠিক করেছি বাকি রাতটা শ্রীপিং ব্যাগে ঘুমুবসকালে ব্যাগ থেকে বের হয়ে এক কাপ চা খাবতারপর পিতা এবং পুত্রকে ব্যাগটা উপহার দিয়ে চলে যাবআহা এই দুজন আল্লাম করে ঘুমাক

ছেলেটার চেহারা খুব মায়াকাড়াকি নাম ছেলেটার? আচ্ছা নামটা সকালে জানলেও হবেএখন ভাল ঘুম পাচ্ছেসামান্য দুঃশ্চিন্তাও হচ্ছে বাদলাদের বাড়ি থেকে মােফাজ্জল এবং জহিরুলকে নিয়ে আসা হয় নিএরা এতক্ষণে কি কান্ড করছে কে জানে? মনের আনন্দে ছাদ থেকে লাফিয়ে না পড়লেই হয়। 

শ্রীপিং ব্যাগটা আসলেই আরামদায়কঘুমে আমার চোখ জড়িয়ে আসছেভাইজান, ভাইজান। 

ফুটপাতে যারা ঘুমায় দেখা যাচ্ছে তাদের কিছু নীতিমালা আছে । জায়গা বদল করে নাঘুমুবার জায়গা সবারই নির্দিষ্টযে নিউমার্কেটের Eমায় সে যুলি সন্ধ্যাবেলায় বাসাবােতে থাকে সেও হেটে হেটে নিউকে পাশে এসে নিজের জায়গায় ঘুমুবে। 

কাজেই বস্তা ভাইকে খুজে বের করতে আমার অসুবিধা হল নাদেখা গেল। সাত দিন আগে তারা যেখানে দুমুচ্ছিল এখনাে সেখানেই ঘুমুচ্ছেপিতা এলপত্র চটের ভেতরে ঢুকে আরামে নিদ্রা দিচ্ছেআমি তাদের ঘুম ভাঙ্গালামবক্স ভাইয়ের পুত্রের বয়স খুবই কমচার পাঁচ বছর হবেকাচা ঘুম ভাঙ্গায় সেখুবই ভয় পেয়েছেচোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে আমার দিকেআমি বললামএই পারল তার নাম কি

গাবল জবাব দিল নাবাবার কাছে সরে এল বাবা বিরক্ত মুখে বলল, আলাের ন্নি বিষয়া চান কি

হিমুর দ্বিতীয় প্রহর খন্ড-৮

আমি হাসিমুখে বললাম, আমাকে চিনতে পারছেন নাআমি হচ্ছিআপনাদের সহনিদ্রকএকসঙ্গে ঘুমালাম মনে নেইশেষ রাতে জ্বর উঠেগেল আপনি রিকশা ডেকে আমাকে ধরাধরি করে তুলে দিলেন। 

মনে আছেআপনে চান কি? কিছু চাই না। আপনাদের সঙ্গে ঘুমাব অনুমতি চাচ্ছি অনুমতির কি আছে গভমেন্টের জায়গাঘুমাইতে ইচ্ছা হইলে ঘুমাইবেন। 

আমি তাদের পাশে আমার প্লিপিং ব্যাগ বিছালামপিতা এবং পুত্র দুজনেই চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছেব্যাগের জীপার খুলে আমি ভেতরে ঢুকে পড়লামতাদের বিস্ময়ের সীমা রইল না। 

আমি হাই তুলতে তুলতে বললাম এই জিনিশটার নাম শ্রীপিং ব্যাগএর সুবিধা ভেতরে ঢুকে তাপার লাগিয়ে দিলে শীত লাগবে না, মশাকামড়ালে না বছর সময় ভিজতে হবে নাচোর এসে তুলে নিয়ে চলে যেতে পারবে নাচোর যদি নিতে চায় আমাকে শুদ্ধ নিতে হবে। 

তা ভাই তার বিস্ময় সামলাতে পারল নামাণ স্বরে বলল, এই জিনিসটা

আমার ছােলে আফনের এই জিনিসটা একটু হাত দিয়া দুইল্লা দেখতে চায়উই ময়লা হবেহাত যেন না দেয়।’ 

 আচ্ছাছেলের নাম কি সুলায়মান। 

হেলের মা কোথায়?সেইটা ভাইজান এক বিরাট হিস্টরিথাক বাদ দিন, বিরাট হিরি শােনার ইচ্ছা নেই ঘুম পাচ্ছেভাইজান?” 

জিনিসটার ভিতরে কি দুইজন শােয়া যায়? তা যায়বড় করে বানানাে। 

বালিশা আছে?না বালিশ নেইবালিশের দরকার হয় না। 

যদি কিছু মনে না নেন ভাইজান, সুলেমান জিনিশটার ভিতরে কি একটদেখতে চায়তার খুব শখ হইছে| আমি ভেতর থেকে বের হয়ে এলাম পিতা এবং পুত্রের কাছে ব্যাগ বুলিয়ে দিলামতারা হতভম্ব হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছেতাদের হতভম্ব দৃষ্টি দেখে আমার চোখে পানি আসার উপক্রম হল

হিমুর দ্বিতীয় প্রহর খন্ড-৮

হিমুদের চোখে পানি আসতেনেইআমি ওদের পেছনে ফেলে দ্রুত হাঁটছিরাস্তার শেষ মাথায় এলে একবার পেছনে ফিরলামপিতা পুত্র নদনই ব্যাগের ভেতর ঢুকেছে দুজনই মাথা বের করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে কে জানে তারা কি ভাগছে । 

 বাবার উপদেশ আমি অনেক দিন থেকেই মেনে চলছিখােলা প্রান্তরে শােয়া সম্ভব হচ্ছে নাদরজাজানালা খােলা দরে ঘুমুচ্ছিতস্কলের হাতে পড়েছি তিনবারপ্রথমবার সে একটা দামি জিনিসই নিয়ে গেছেওয়াকম্যানসনি কোম্পানীর ওয়াকম্যান আমাকে উপহার দিয়েছিল রূপা কপার উপহার দেয়ার পদ্ধতি খুব সুন্দরগিফট র্যাপে মুড়ে লাল রিবনের মুল লাগিয়ে বিরাট শিল্পকর্ম রূপা গিফট আমার হাতে দিয়ে বলল, নাও, তোমার জন্মদিনের 

ঘুম ভেঙেই দেখি আমার বিছানার পাশের চেয়ারে বাদল বসে আছে। 

আছেআমি চট করে চোখ বন্ধ করে ফেললামসাতসকালে বাদলের আমার কা থাকার কথা নাআজ ২৩ ডিসেম্বরকাল রাতে তার বিয়ে হয়েছেভােরবেলাতেই সে আমার কাছে চলে আসবে কেন? চোখ বন্ধ করে ব্যাপক একটু চিন্তা করা যাক। 

আমি থাকি আগামসি লেনের একটা মেসেমেসের ঠিকানা বাদল জানে শুধু বাদল কেন, আমার পরিচিত কেউই জানে নাবাদলকে সেই তান খুজে বের করতে হয়েছেসেটা তেমন জটিল কিছু নাআগে যেমেসে ছিলামসেই মেসের ম্যানেজার নিতাই কুণ্ডু বর্তমান মেসের ঠিকানা জানেনতাতে যদিও বলা হয়েছে আমার ঠিকানা কাউকে দেবেন নাতার পরেও ভদ্রলোক দিয়েছেনবাদল নিশ্চয়ই এমন কিছু বলেছে বা করেছে যে ঠিকানা না দিয়ে পারে। 

হিমুর দ্বিতীয় প্রহর খন্ড-৮

একবার মেসে ঢুকে পরার পর আমার ঘরে ঢােকা অবিশ্যি খুবই সহজআমি দরজা এবং জানালা সব খােলা রেখে ঘুমাই হিমুকে তাকরতে হয় আমার বাবা আমার জন্যে যে উপদেশনামা লিখে রেখে গেছেন তার সপ্তম উপদেশ হচ্ছে 

আমি বললাম, আজ তাে আমার জন্মদিন না। 

সে নিজের মাথার চুলে বিলি কাটতে কাটতে বলল, তােমার কবে জন্মদিনসেটা তাে আমি জানি নাতুমি আমাকে বলবেও নাকাজেই আমি ধরে নিলামআজই জন্মদিন। 

আচ্ছা। 

আচ্ছা না, বলাে থ্যাংক অ্যাওউপহার পেলে ধন্যবাদ দেয়া সাধারণ ভদ্রতামহাপুরুষরা ভদ্রতা করেন না, তা তাে না। 

ধন্যবাদকী আছে এর মধ্যে 

একটা ওয়াকম্যানতুমি তাে পথে পথেই ঘুরে বেড়াওমাঝে মাঝে এটা কানে দিয়ে ঘুরবেআমার পছন্দের তেরাে টা গান আমি রেকর্ড করে দিয়েছি‘ 

আবারো ধন্যবাদ।’ 

আমি খুব যত্ন করে টেবিলের মাঝামাঝি জায়গায় রূপার উপহার সাজিয়ে রাখলামসাজিয়ে রাখা পর্যন্তইব্যাটারির অভাবে গান শােনা গেল নারূপা মূল যন্ত্র দিয়েছে, ব্যাটারি দেয় নিআমারও কেনা হয় নিমাঝে মাঝে যন্ত্রটাশুধুশুধু কানে দিয়ে বসে থাকতাম কানের ফুটো বন্ধ থাকার জন্যেই বােধহয় শেশো শব্দ হতসেই শব্দও কম ইন্টারেস্টিং ছিল নাযাই হােক এক ব্রাতে চোর (বাবার ভাষায়তস্কর) এসে আমাকে ব্যাটারি কেনার যন্ত্রণা থেকে বাচাল। 

দ্বিতীয় দফায় তস্কর এসে আমার স্যান্ডেলজোড়া নিয়ে গেলহিমুর স্যান্ডেল | থাকার কথা নাখালি পায়ে হাটাহাটি করার কথাতারপরও একজোড়াচামড়ার স্যান্ডেল কিনেছিলামদাম নিয়েছিল দুশাে তেত্রিশ টাকাসাতদিনের মাথায় স্যান্ডেল চলে গেল। 

তৃতীয় দফায় চোরের হাতে আমার বিছানার চাদর এবং বালিশ চলে গেলআমার ঘুমন্ত অবস্থায় চোর কী করে বিছানার চাদর এবং বালিশ নিয়ে গেল সেই রহস্যের সমাধান এখনও হয় নি। 

হিমুর দ্বিতীয় প্রহর খন্ড-৮

চোরবিষয়ক সমস্যা নিয়ে এখন মাথা ঘামাবার কিছু নেইআমার সামনেজটিল সমস্যা বসে আছে বাদলআমি চট করে দ্বিতীয়বার তাকে দেখে নিলামতার চোখেমুখে হতভম্ব ভাবরাতে একফোটাও ঘুমায় নি তাও বােঝা

নিদ্রা জাগরণের যে বাধাধরা নিয়ম আছে, যেমন দিবসে জাগরণ নিশাকালে নিদ্রাএইসব নিয়ম মানিয়া চলার কোনাে আবশ্যকতা নাইকোন রকম নম্বনে নিজেকে বাঁধিও নাখােলা মাঠ বা প্রান্তরে নিদ্রা দিতে চেষ্টা করিবেকোনাে প্রকোষ্ঠে শয়ন করিলে সেই প্রকোষ্ঠের দরজাজানালা সবই খুলিয়া রাখিলে যেন নিদ্রাক্কালে খােলা প্রান্তরের সহিত তােমার নিদ্রাকক্ষের যােগসাধিত হয়

 ত্রিকালে তক্ষর বা ডাকাত আসিয়া তােমার মালামাল নিয়া পলায়ন করিবেএই চিন্তা মাথায় রানি না, কারণ তার আকর্ষণ করিবার মতো কিছু তােমার *নাে থাকবে নাযদি থাকে তবে তাহা হতঙ্কর কর্তনক নিয়া যা ওয়াজ নন্দময় নিশি জাগরণ তার কাছে ছিল দুঃস্বপ্নের যাচ্ছেচোখের নিচে কাতল নিচে এক রাতেই কালি পড়ে গেছে আনন্দময় নিছিচোখেনিচে কালি পড়ে না

 

Read More

হুমায়ন আহমেদ এর হিমুর দ্বিতীয় প্রহর খন্ড-৯

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *