কাজেই গত রাতটা তার কাছে। মতাে। তা হলে কী তার বিয়ে হয় নি? ।
আমি চোখ বন্ধ রেখেই বললাম, বাদল, তাের বিয়েটা কী কোলে ভেঙে গেছে।
বাদল বলল, ই।
চা খাবি?”
বিয়েটা কী কোনাে কারণে “নিচে চলে যা। রাস্তা পার হলেই দেখবি তােলা উনুনে বাচ্চা একটা চা বানাচ্ছে। ওর নাম মফিজ। মাফিজাকে বলে আয় দুকাপ চা পাঠাতে।
আমার বিয়েটা যে ভেঙে যাবে সেটা কী তুমি আগে থেকেই জানতেন। “আগে থেকে জানব কীভাবে? আমি কী পীর–ফকির নাকি?”
“আমার মনে হয় তুমি জানতে। জানতে বলেই বরযাত্রী হিসেবে তডি বিসেতে যাও নি।
“বরযাত্রী হিসেবে যাই নি কারণ আমাকে ফুপা নিষেধ করে দিয়েছিলেন।
তােমাকে তাে আমি কিছু বলিনি তা হলে তুমি বুঝলে কী করে যে আমার। বিয়ে হয় নি। ‘
‘‘তাের চেহারা দেখে বুঝেছি। মানুষের সমগ্ৰ অতীত তার চেহারায় লেখা।
ব্যস্ততা এখনাে তৈরি হয় নি। আমার আশেপাশের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মামা আমাকে বড়ই বিচলিত করে। | মফিজ আমার জন্য যে চা বানায় তার নাম– ইসপিল, ডানলপাক্তি। এই চায়ের বিশেষত্ব হচ্ছে, ঘন লিকার, প্রচুর দুধ, প্রচুর চিনি। ইসপিসাল চা কালে করে আসে না প্রমাণ সাইজের গ্লাস ভরতি হয়ে আসে। এক গ্রাস ইসপিসাল ভাবলগাত্তি খেলে সকালের নাশতা খেতে হয় না।
বাদল চায়ের গ্লাসে চুমুক দিচ্ছে। তার মুখ থমথম করছে। আমি বললাম, সিগারেট খাবি?
না, সিগারেট তাে খাই না।
চা খেতে শোতেই ঘটা কী বল।‘ | ‘ঘটনা বলে কী হবে?
তা হলে ভাের রাতে এসেছিস কেন?
বাদল চুপ করে রইল । আমি বললাম, কিছু বলতে ইচ্ছে না করলে বলতে হবে না। চা খেয়ে চলে যা।
‘দেখি একটা সিগারেট দাও, নই।‘
আমি সিগালেট দিলাম । বাদল সিগারেট ধরিয়ে শঙ্কার মুখে প্রফেশনাললের মতাে টানছে। নাকে মুখে ভোস জােস করে ধুয়া ছাড়ছে।
হিমুর দ্বিতীয় প্রহর খন্ড-৯
“হিমু লা?”
বলে দিতে পারে।‘
‘ বেশি পারি না–সামান্য পারি। যা, চা‘র কথা বলে আয় ।
বাদল উঠে দাড়াল। বাদলের চেহারা খুব সুন্দর। আজ এই সকালের আলােতে তাকে আরও সুন্দর লাগছে। ক্রীম কালারের এই শার্টটা তাকে খুব মানিয়েছে। যদি বিয়েটা হত তা হলে ভােরবেলায় বাদলকে দেখে আঁখি মেলে। টার মন ভাল হয়ে যেত। যতই মেয়েটা বাদলের কাছাকাছি যেত ততই সে বলিলকে পছন্দ করত। আমার পা এবং ফপুর চরিত্রের ভাল যা আছে তার সবই আছে লাললের মধ্যে। কপা এবং পর অন্ধকার দিকে কিছুই বাদল পায় [ন। বদলের জন্যে আমার মনটা খারাপ হয়ে গেল । যদিও হিমুর মন–খারাপ। হাতে নেই। বাবার উপদেশনামার তৃতীয় উপদেশ হচ্ছে—
জতের কর্মকাণ্ড চক্ষু মেলিসা দেখিয়া যাইবে। কোনােক্রমেই বিচলিত হইবে । নী আনন্দে লিচলিত হইলে না, দুগেও বিচলিত হইবে না। সুখ দুঃ এহসৰ | নতান্তই তুলি মাফিয়া । তুচ্ছ মায়ায় আবদ্ধ পাকিলে জগতের প্রধান মায়ার বক্স লুনিতে পারিবে না ।। শকিল হচ্ছে, উদগতের প্রধান মায়ার স্বরূপ বােঝার জন্যে কোনো
হিমুর দ্বিতীয় প্রহর খন্ড-৯
“বলার মতো কোনাে ঘটনা না । লজায় আমার মাথা কাটা যাচ্ছে। আমরা তাে সবাই গেলাম পনেরােটা গাড়ি, দুটো মাইক্রোবাসে প্রায় একশােজন। বরযাত্রী । আগে থেকে কথা হয়ে আছে রাত আটটায় কাজী চলে আসবে। বিয়ে পড়ানাে হবে। কাবিনের এমাউন্ট নিয়ে যেন ঝামেলা না হয় সেজন্যে সব আগে। থেকেই ঠিকঠাক করা। পাঁচ লক্ষ এক টাকা কাবিন। কাজী চলে এল আটটার আগেই ।
উকিল বাবা কবুল পড়িয়ে মেয়ের সই নিতে যাবে মেয়ের বাবা বললেন, একটু সবুর করুন। নয়টা বেজে গেল । মেয়েপক্ষরা হঠাৎ বলল, আপনাদের খাওয়া হয়ে যাক। দুই, তিন ব্যাচে খাওয়া হবে, সময় লাগবে। তখন বাবা বললেন, বিয়ে হােক, তারপর খাওয়া। বিয়ের আগে কিসের খাওয়া মেয়ের মামা বললেন—একটু সমস্যা আছে। সামান্য দেরি হবে।
কী ব্যাপার তারা কিছুতেই বলতে চায় না। অনেক চাপাচাপির পর যা জানা গেল তা হল–মেয়ের নাকি সকালবেলায় তার মা‘র সঙ্গে খুব গড়া হয়েছে। মেয়ে রাগ করে তার কোন এক বন্ধুর বাড়িতে চলে গেছে। সেম্মান থেকে টেলিফোন করেছিল, বলেছে চলে আসবে। কোথায় আছে, তা কেউ জানে না। বলে তাকে আনার জন্যেও কেউ যেতে পারছে না। ডিতে গিয়ে উঠেছে? কথা কী বলছেন? টেলিফোনে কথা
হিমুর দ্বিতীয় প্রহর খন্ড-৯
‘বাবা রাগ করে বললেন, মেয়ে কী তার প্রেমিকের বাড়িতে গিয়ে, এই কথায় মেয়ের মামা খুব রাগ করে বললেন, এইসব নােংরা কথা আমাদের মেয়ে সেরকম না। মা‘র সঙ্গে ঝগড়া হয়েছে। টেলি হয়েছে। চলে আসবে, একটু অপেক্ষা করুন।
‘ আমরা রাত সাড়ে এগারােটা পর্যন্ত অপেক্ষা করলাম। বাসায় এসে লজ্জায় পড়লাম। বাবা বাসায় ব্যান্ডপাটির ব্যবস্থা করে গিয়েছিলেন। আসলে ল্যান্ড বাজা শুরু হবে। আমাদের ফেরত আসতে দেখে ব্যান্ড লাল হল । উদাম বাজন। পাড়ার লোক ভেউ পড়ল। লজ্জায় আমার স্ত্রী। করছিল....
কী ইচ্ছা করছিল?
ব্রাদল চুপ করে গেল । সে আমার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে অন্য দিতে লাতিয়া আছে। মনে হয় চোখের পানি লালচ্ছে। আমি বললাম, তুই দিন কাছে এসেছিস কেন?
‘এমি এসেছি। মনটা ভাল করার জন্যে এসেছি।” |
মন ভাল হয়েছে?”
মনে হয়েছে তুমি ওদের টেলিস্ফোন নাম্বার চাইতে পার, তাই মনে করে নিয়ে এসেছি।‘
“ভাল করেছিস। “তুমি কী সত্যি মিরপুর পর্যন্ত হেঁটে যাবে?” ‘ই। ঘণ্টা দুএক লাগবে—এটা কোনাে ব্যাপারই না।‘
Read More