ধামালিতে বাস থামতেই দুই মূতি মা লাফিয়ে নামল। রতন আর বাসু। নেমেহ তােতনকে ডাকাডাকি, দাদু, নামবেন না? নেতাজী সুইটসে গরম সিঙ্গারা, সন্দেশ, ফার্স্ট ক্লাস ভেজিটেবল চপ
বাসের সীটে অনড় বসা তােতন শিউরে উঠল। কুকিং মিডিয়ম, ডিশ, কাপ সবকিছু সম্পর্কেই তার ঘােরতর সন্দেহ আছে। জীবাণু থিকধিক করে এসব দোকান পাটে । আর দোকানের চেহারাও মােটেই সুবিধের নয়। জানালা দিয়ে উটোদি েওই তাে দেখা যাচ্ছে নেতাজী সুইটস ! কি করছে ক্ষুধার্ত জনগণে ‘ বুলি পরা, প্যান্ট পরা, পাজামা পরা, টেরিটন পরা, বন্দর পরা, কালাে,
মােটা নানান কমেৰ জনগণ ! কে কোন রােগে ভুগছে কে জানে? বুকের দোষ, খুজলি, এন, পায়ােরিয়া কত কী থাকতে পারে । আছেই। বালতি জলে খপাত খপাত করে চুবিয়ে এটো কাপপ্লেট নামমাত্র ধুয়ে তুলছে একটা বছর দশবারের ছেলে। তার বেশি করার সময় নেই। জনগন হামলে পড়ছে, বাস বেশীক্ষণ দাঁড়াবে না। মস্ত কড়াইয়ে সিঙ্গারা নাচছে ডুবতেলে। চারদিকে বনস্পতির গন্ধ।
তােতন সুন্দর অভিনয় করণ। চোখ বড় করে তাতে রাজ্যের বিস্ময় ঢেলে বলল, আমার তাে মােটেই খিদে পায়নি! এই তো খেয়ে বেরােলাম।
রতন বলল, সে তো তিন ঘন্টা আগে । মিষ্টি হাসল তােতন, আমার অত ঘন ঘন খিদে পায় না। তােমরা খেয়ে এসাে।
দুজনেই একটু মুখ কাকি করে। তােতনকে ফেলে খাওয়া উচিত হবে কিনা কিংবা কতটা দৃষ্টিকটু দেখাবে! মান্যগণ্য লােক।
তােতন অভয় দিলে,অসময়ে আমি কিছু খাই না। রতন কাচুমাচু হয়ে বলে অনেকটা পথ যে বাতি।
তা হােক। একটু মুড়িটুড়ি এনে দিই না!
মুড়ি নে নাক কোঁচকায় তােতন। একটু ভাবে। তার অভিনয় যতই ভাল হােক, খিদে তেষ্টা তারও আছে। কিন্তু মুড়িও আসবে অবধারিত খবরের কাগজের ঠোঙায়। তাতে লেড পয়জনিং হতে পারে ছাপার কালি থেকে, আর কাগজটা সম্পর্কে তাে স্থায়ী সন্দেহ আছেই । হয়তাে নােংরা আবর্জনায় পড়ে থাকা ময়লা কাগজেই বানিয়েছে। এদেশের লােককে সে বাল্যাধি হাড়ে হাড়ে চো। মথা নেড়ে বসে, দরকার নেই। | বাস ভর্তি জনগণের অর্ধেকেই নেমেছে উর্বশ্বাসে কেয়ে নিতে । তােতন তার জানালার ধারের সীটটায় সেঁটে বসে রইল। কলকাতা থেকে একভাবে বসে আছে। হাঁটু ধরে গেছে, পিঠ ব্যথা করছে। একটু নামলেও হয় কিন্তু ইচ্ছে করছে না একটু বাদে নামতে তাে হবেই। ঘট বেশী দূরে নয় না নামবার আরও একটা কারণ আছে। কারণটা সামনের সীটে বসে আছে। তােতন যেমন জানালা শারে মেয়েটা তেমনি আবার জানালার ধারে নয়। ফলে একটু ঘাড় ঘােরালেই তােতনের সঙ্গে চোখাচোখি । এই চোখাচোখি কলকাতা থেকে এই এতটা অবধি হয়ে হয়ে আসছে। সঙ্গে ক্ষীণ একটু
- াধটু হাসির রেখা। লাে হলেও মেয়েটা ভূলাে করে লয়। ঠোট দুটি একটু পুরু টসটসে, নার জেলি চমক | সতেরো আঠেরের বিখ্যারী যোবন এখন যাকে পায় তাকে
সই চোখেই মেয়েটা এতক্ষণ ছােবল মারকে । পালে তা ঘােমটা-টানা মা। সয়েকবার :থা বলতে হয়েছে তােতনের কিন্তু এতাে খুঁজে পায়নি। গেয়াে মেয়েটা তাে আগ বাড়িয়ে কিছুতেই কথা বলবে না। নিয়ম নেই যে! তবে চোখও কি ক ক কয় না। এ মেয়েটার চোখ কি विराजमारक?
বস ফাকা বাইরে তাকানাের ভান ক, ঘড় সামান্য ঘুরিয়ে মেঘটা এ দেছে ৩’কে সকপট তােতনও বেছে । স” কটা একটু পরেই Ciষ হয়ে যাবে – নেই ; ডানে। দুত ত সাটে জল শুনে না করে চলেছে তারা?
নাজানালার বাইরে থেকে সি ক হন ।
না, আমি পান খাইনা। এক কাপ চাও নয়?
আমার জন্য ভােলাে না। বড় ম্লান হয়ে গেল রতন। এই মান্যগণ্য লােকটিকে ফেলে তারা যে খাবার খাচ্ছে চা গিলছে পান চিবােচ্ছে এটা তার সুবিধের ঠেকছে না। অপরাধ হয়ে যাচ্ছে যে! কিন্তু বেশী চাপাচাপিও করতে পারছে না। ততটা সাহস নেই। মান্যগণ্য লােকদের মেজাজ মর্জি বুঝে চলতে হবে তাে? | মেয়েটা তার মায়ের সঙ্গে নিচু স্বরে কী কথা বলে নিল। তারপরেই মুখ তুলে তীব্র কটাক্ষ । তােতন তাকে দেখছে কিনা। না দেখলে মেয়েটার মন খারাপ হবে নিশ্চিত। অপমান বােধ করবে ; সতেরোর কিশােরী সবসময়েই চায় পুরুষের চোখে যাচাই হতে। তােতন প্রাণপণে এই কর্তবট, সমাধা করছে। তার খারাপও লাগছে না। কিন্তু মার খেয়ে যাচ্ছে বাইরের প্রকৃতি এবং দৃশ্যাবলী । সেসবের দিকে আর তাকাতে পারছে কই।।
ধীরে সুস্থে প্যাসেনজাররা উঠে আসছে বাসে। যতগুলাে নেমেছিল ততগুলাে শেষ অবধি উঠল না। ধমাখালি বােধহয় বেশ গুরুতর জায়গা। অনেকেই নেমে গেছে।
জর্দার গন্ধ ছড়িয়ে তােতনের পাশের লােকটা এসে বসল এবং তােতনের কোলের ওপর দিয়ে মুখ বাড়িয়ে জানালা দিয়ে পিক ফেলল। একরে হবে না আরও কয়েকবার ফেলবে তা বুঝে উঠতে পারছে না তােতন। তবে এ এক জ্বালা।
তার পাশে বসলে শার সামিল হবে বিবেচনা করে রতন আর বাসু বলেছে একেবারে পিছনে লম্বা সীটে। তােতন খানিকটা একা। কথা বলার লােক নেই । মেয়েটা ছিল বলে রাস্তাটা কেটে গেল ।
দুধারে মাছের ভেরি মাঝখান দিয়ে ধামাখালি বাক্স থেকে ঘাট অবধি যে রাস্তা গেছে তা বেশ উদোম, খােলামেলা । আকাশ বহু দুর অবধি দেখা যায় । আনতনে একটু বাইরে তাকিয়েছিল তােতন,মচের চুড়ির শব্দে খেয়াল হল। মেয়েটা পছন্দ করছে না তার এই বাইরে তাকানাে পথ