পনেরো মিনিট পর ভাের বেল বাজল। দরজায় বিশালকায় এক কৃষ্ণাঙ্গ বাড়িয়ে, গায়ে চড়ার জ্যাকেট। ‘হাই’ বলে একটা উইশ করল। তারপর বছর কুড়ির একটি দো-আঁশলা মেয়েকে শীরের আড়াল থেকে এগিয়ে দিল তার দিকে। এদের কাছে মেয়েরা কমােভিটি।
চতুর একটু হেসে কৃষ্ণাঙ্গটি গিয়ে তার গাড়ি সটার্ট দেওয়ার পর দরজা বন্ধ করে মেয়েটির দিকে ভাল করে তাকাল পরাগ। অল্প বয়সের একটা লাণ আছেই । কিন্তু এত মেকপ দিয়েছে যে মুখটাকে মুখােশ বলে মনে হচ্ছে ।
বিরক্তির সঙ্গে সে বলে মেকআপ ধুয়ে এলাে।
মেয়েটা সঙ্গে সঙ্গে অনুগতের মতাে ভাই করল । পরনের খাটো লাল শার্ট আর ফেডিং জিন, মাথার চুল পনিটেল করা। মেক আপ তােলার পর মুখে মৃদু মেচেতা দেখা যাচ্ছে। একটু মদের গন্থও আসছে তীব্র সৈন্ট ছাপিয়ে।
কি বলবে মেয়েটিকে পরাগ? কি করবে একে নিয়ে? সারা রাতের মতাে ভাড়া করা মেয়ে মানুষ, কিছু তাে করা চাই। কিন্তু পরাগের শরীর এত মরে গেছে, এত পরিশ্রান্ত সে যে সেক্স-এর প্রশ্নই ওঠে ।
মে আই স্মােক? পরাগ আঁতকে উঠে বলে, ওঃ নে, ডােন্ট । প্রীজ। ইট অঃ রাইট হানি, যে উই ড্রিংক এলিট?
ইটস অঃ রাইট, নাউ হােয়ট আর ইউ গােয়িং টু ডু হানি? উড ইউ প্লে এ বিট অফ মিউজিক? এই ব্যাপার লাইক ইট কোয়ইট। ফিলিং বাের হানি?
হৃদয়বৃত্তান্ত-শীর্ষেন্দু মুখােপাধ্যায়
মেয়েটি তার পাশে এসে গায়ে লেগে বলে ডান হাতে গালটা জড়িয়ে ধরে না নাউ, ইউ আর কোয়ইট এ মন। আই থিংক উই ক্যান মে সাম নি। কিস মি ।
চুম্বন এত জ্বালাময় হতে পারে জানা ছিল না পরগের। মেয়েটা দাঁত বসিয়ে স্থিল ঠোটে । এডলের ভয়ে মুখ সরিয়ে লি পরগ। হাঁফ ধরা গলায় বলে, লুক, আই ডােন্ট ও নেক্স। জাস্ট কিপ মি কম্প্যানি অ্যান্ড উই উইল বি অল রাইট।
মেয়েটা অবাক হয়ে বলে, ন! সে হনি? বাই ক্যান মেক ইট এ প্লেজার। এ রিয়েল প্লেজার।
নাে। বলে উঠে দাঁড়াল পরাগ। তারপর দৃঢ় পায়ে হেঁটে গিয়ে ওয়াল ক্যাবিনেট থেকে একটা হুইস্কির বেতল বের করে এনে মেয়েটার সামনে রেখে বলে, সট ইওরসে। দেন গাে টু স্লিপ।
মেয়েটা কি বুঝল কে জানে। খুব বেশী মগজ বা ভাবাবেগ থাকেও না এদেরবােতলটা তুলে দেখে নিয়ে সহর্ষে বলে উঠল, হাই, ইটস্ ভরিয়েল গুড।
পরাগ একটা চেক কেটে এনে মেয়েটার হাতে দিয়ে বলল, ডােন্ট বদার মি ইন না মনিং। ডােন্ট ইউ লাইক মি সুইটহার্ট? ইউ আর ফইন। জাস্ট ফাইন । নাউ, বি এ গুড গার্ল অ্যান্ডি লীড মি অ্যালােন ।
হৃদয়বৃত্তান্ত-শীর্ষেন্দু মুখােপাধ্যায়
মেয়েটার কোনও বিস্ময় নেই। নানা মতেল চড়িয়ে অভ্যাস হয়ে গেছে। পরাগকে ছেড়ে মেয়েটা তৃষ্ণার্তের মতাে মদ খেল। কিন্তু ভাল প্রশিক্ষণ থাকায় মাতাল হওয়ার আগেই মল। পা থেকে জুতাে বুলে সােফায় গুটিশুটি হয়ে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়ল।
ঘুমন্তু মেয়েটার মুখের দিকে চেয়ে একটু দূরে সিঙ্গেল সােফায় বসে থাকে পরাগ। কে যেন চাপা গলায় বলে উঠল, শয়তান! শয়তান! ইউ মাস্ট ডাই। নিজের মুখে হাত চাপা দিল পাগ। আতঙ্কে।
নিজের কাছ থেকে কি করে পালাতে পরাণ তা বুঝে উঠতে পারছে না। সে কি পাগল হয়ে য?ে কী নাম যেন মেয়েটার রিটা!
পরাগ বড় সােফার সামনে গিয়ে হাঁটু গেড়ে বসে চাপা তীব্র গলায় ডাকে, রিটা! রিটা! ওয়েক
আপ, প্লীজ!
রিটা সাড়া দিল না। তবে ঘুমের মধ্যেই একটা আদুরে শব্দ করল। মেয়েটাকে জোটানাের কোনও মানেই হল না। বরং একটা অচেনা মেয়ের কাছে নানা অসতর্ক মুহুর্তে তার পাগলামীর লক্ষণ ধরা পড়ে যেতে পারে। বাথরুমে ঢুকে ঠান্ডা-গরম শাওয়ার ভাল করে অ্যাডজাস্ট না করেই সে খুলে দিল। বরফ–ঠান্ডা জল তাকে চমকে শিউরে অসাড় করে দিচ্ছিল প্রায়। কোনও রকমে নব অ্যাডজাস্ট করে বহুক্ষণ স্নান করল সে। স্নান করতে করতেই সে এক টুকরাে কবিতা, একটু গানের কলি এবং দু-চারটে অর্থহীন। কথা শুনতে পেল। এ সবই তার মুখ দিয়ে বেরােচ্ছে।
হৃদয়বৃত্তান্ত-শীর্ষেন্দু মুখােপাধ্যায়
সে নয়, তার অভ্যন্তরে যেন আর একটা লােক ঢকে বসে আছে। গা মাথা মুছে লিভিংরুমে এসে দেখতে পেল বাইরে খুব ভােরের একটা ময়ূরকণ্ঠী রং ধরেছে আকাশ এখনও তারা আছে কিন্তু ফিকে হচ্ছে। তার মনে পড়ল,প্রথম আমেরিকায় এসে যে নিউইয়র্কের রবীনবাবুলের বাড়ি কিছুদিন পেয়িং গেস্ট ছিল। থাকত বেসমেন্টে। কাঠেই সেন্ট্রাল পার্ক । রােজ ভােরে রবীনবাবুর ছেলে অমিতাভর বাইকটা নিয়ে সে চলে যেত পার্কে । দৌড়াতো, ফ্রি হ্যন্ড ব্যায়াম করত। কিন্তু তার চেয়ে বড় কথা, সেন্ট্রাল পার্কের সেই আশ্চর্য ভাের । সে মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে যেত । সেন্ট্রাল পাই তাকে শেখায় আমেরিকার প্রেমে পড়তে ।
বহুকাল পর আবার তার সেন্ট্রাল পার্কের ভােরের স্মৃতি মনে পড়ছে। এ কথা ঠিক, সেন্ট্রাল পার্কের ভাের আজও হয়তো ভাগের মতােই সুন্দর আছে । কিন্তু তার যে দেখবার চোখ নেই। একবার কি যাবে পরাগ? দেখে আসবে আগের মতােই ভাল লাগে কিনা?
মেয়েটার দিকে ফের তাকায় নে। ও কি চোর? হলেও খুব ক্ষতির ভয় নেই। রােগের সামান্য কিছু ডলার আছে। নিলে নেবে। দশ ডলারের একখানা নােট সেন্টার টেবিলে মেয়েটার নাকরে ডগায় রেখে দিল সে। সঙ্গে একটা চিরকুট, ইওর টিপস । থ্যাংক ইউ ফর এভরিথিং।