সে মি চোখ মেয়েটির দিকে চেয়ে বলে, ইউ আর এ নাইস গার্ল । ইউ আর এ নাইস টেসম্যান। মাই ড্যাড অ্যান্ড সিস্টার মে কাম টু সি ইউ।।
মেয়েটি চলে গেলে পরাগ চোখ বুজে একটা গভীর খাস ছাড়ল। অনেকদিন বাদে তার মনটা কিন্তু হালকা লাগছে।
ৰঙালীলে,’ তে সম্পর্ক ছিল না পরাগের। পুরোনাে বন্ধুরা এড়িয়ে চলত। একজন দুজন করে ‘ত’ এবার দেখা করে গেল। এর মধ্যেই চ্যানেল ফোর তার ইন্টারভিউ নিয়ে গেল। স্টেট
ইউনিভারসিটিতে পি-এইচ ডি করেছিল তারা দুজন। পরাগ আর অনিরুদ্ধ ! ভীষণ বন্ধুত্ব ছিল তখন। অনিরুদ্ধ এখন বিরাট চাকরি করে বােন্টনে। সে এস বলল, তাের সম্পর্কে একটা অপপ্রচার শুনেছি। বােধহয় সেটা ওই মিটমিটে শয়তানটার কাজ। কী নাম যেন। হােতন না?
পরাগ হতাশায় হাত নেড়ে বলে, ওসব কথা থাক অনিরুদ্ধ। পাস্ট ইজ পাস্ট। | তাের কত ক্ষতি হয়ে গেল রে পরাগ! একটা কথা ফ্র্যাংকলি বলবি? শর্মিষ্ঠা কেমন ছিল? রিয়েল ব্যাড?
হৃদয়বৃত্তান্ত-শীর্ষেন্দু মুখােপাধ্যায়
ও নামটা নিস না আমার সামনে। আমার প্রেশার বেড়ে যায়। এত রাগ!
পরাগ মাথা নাড়ল, না, রাগ নয়। আগে রাগ হত। আজকাল উল্টোটা হয়। নিজের ওপর ঘেন্না থাকে।
যাকগে। চ্যানেল ফোর-এ তাের ইন্টাভিউটা কিন্তু দারুণ হয়েছে। অল্প অল্প দাড়ি আর মাধ্য বাভেঞ্জ প্রায় বেশ যিশু খ্রিষ্টের মতাে দেখাচ্ছিল তােকে। নন্দিতা তাে বলেই ফেলল, এই ইন্টারভিউ দেখে অনেক মেয়ে পরাগদার প্রেমে পড়ে যাবে। বলেছিস বেশ। সেদিন সব বাঙালী বাড়িতে চ্যানেল ফোরই খােলা ছিল। খুব কথা হচ্ছে তােকে নিয়ে ! এ হট সাবজেক্ট ।
দিন পনেরাে বাদে ভাঙচুর মেরামতের পর খানিকটা খুঁড়িয়ে এবং খানিকটা হাঁফিয়ে একটা লিমুজিনে চেপে বাড়ি ফিরে এল পৰাগ ।
অফিস থেকে হাসপাতালে খোঁজ-খবর নেওয়া হয়েছে। তার দুজন কলিগ দেখাও করেছিল তার সঙ্গে। বাড়িতে ফেরার পর বিগ বস টেলিফোন করে তার দ্রুত আরােগ্য কামনা এবং অভিনন্দন জানালেন । মাসে একশাে ডলারের একটা বেইজও পেয়ে গেছে সে। অনন্যা বউদি সাফার্ন থেকে এবং সুচেতা বউদি জার্সি সিটি থেকে ফোন করে জানতে চাইলেন, তারা কয়েকদিনের জন্য এসে ঘরদোর সামলাবেন কিনা। পরাগ বলল, এখনও পারছি। কোনও অসুবিধে নেই।
সবচেয়ে বড় কথা, তার ঘুম হচ্ছে । ঘুমের ওষধ ছাড়াই। এবং সে আর আপন মনে কথা বলে উঠছে না। ফাঁকা বড়িতে যে একটা গা-ছমছমে ভাব ছিল সেটা কপূরের মতাে উবে গেছে ।
কুড়ি দিনের মাথায় নিজেই গাড়ি চালিয়ে অফিসে যাওয়া ক করল পরাগ । পর পর দুটো উইক এন্ডে পুরােনাে চেনা-জানা বাঙালীর বাড়িতে তার নেমন্তন্ন হল। বিশেষ করে অনন্যা বউদির নেমন্তনুটা হল সাংঘাতিক ভাল। | খাওয়ার পর বউদি আর অশােকদা বসলেন তাকে নিয়ে। অশোকদা জিজ্ঞেস করলেন, শর্মিষ্ঠা কি তোমাকে ডিভাের্স দিলে? পরাগ মাথা নেড়ে বলে, না।
আল্টিমেটলি দেবে, নাকি তােমাদের রি-ইউনিয়ন হবে? হলে অবশ্য সবচেয়ে খুশির খবর হবে সেটা।
হৃদয়বৃত্তান্ত-শীর্ষেন্দু মুখােপাধ্যায়
কোনও সম্ভাবনা নেই অশােকদা। | যা, আমরা যা বুনেছি, ইট ওয়াজ টু মাচ। তাহলে ডিভাের্স দিচ্ছে না কেন? কোনও সেটমেটয়নি?
পরাগ মাথা নিচু করে বসে কল কিছুক্ষণ। ভাৰপর মনটা শক্ত করে মুখ তুলল। মৃদু স্বরে বলল, আমি ওকে বিশ হাজার ডলার দিয়েছিলাম ডিভাের্স সেটলমেন্টের জন্য। সেই টাকাটা ওর অ্যাকউন্টে এখনও আমেরিকান এক্সপ্রেসে জমা আছে। কলকাতার মাট ওর নামে ট্রানসফার করে দিয়েছিলাম। তাও দেয়নি?
না। ও মার্কিন কোর্টে ডিভাের্স মামলা করতে চেয়েছিল তাতে ও অবশ্য আরও বেশী পেয়ে যেত আমি অনুৱে বেছিলাম মামাটা দেশে গিয়ে করতে।
তাই বা কেন? ওনলি টু কিপ দি ডিভাের্স সেটলমেন্ট ডাউন?
অশােকদা, তা নয়। প্রথমত মা ডিভাের্স চায়নি। দ্বিতীয় কথা আমার ভয় ছিল, শর্মিষ্ঠা আর তােতনের ব্যাপারটা কোটে উঠবে।
সে তাে এমনিতেই চাউর হয়ে গিয়েছিল কি জানি কেন আমার খুব লজ্জা করত। শর্মিষ্ঠাকে তােতন বিয়ে করছে তাহলে? কিন্তু তার আগে তাে ওর ডিভাের্স দরকার।
হ্যাঁ। ও আড়াই লাখ টাকা চেয়ে পাঠিয়েছিল। তােতনের হাত দিয়ে চেক পাঠিয়ে দিয়েছি। এবার ডিভাের্স দেওয়ার কথা। কিন্তু এসব কথা কেন অশােকদা? এমন চমৎকার লাঞ্চের পর এসব বিদ কথা কেন?
কারণ আছে।
অনন্যা বউদি সুপুরি কাটছিলেন। এখানে ডলারে চার পাঁচটার বেশী পাতাপান পাওয়া যায় না । তবু অনন্যা বউদী পানের অভ্যাস ছাড়েননি। কার্পেটে বসে অনেকক্ষণ পরাগের দিকে এক দৃষ্টে চেয়েছিলেন একটু আগে। এবার বললেন, দাড়িটা কি রাখবে ভেবেছাে?
পরাগ তার মাসখানেকের দাড়িতে একটু হাত বুলিয়ে বলে, থাক । কাটতে ইচ্ছে করছে না। | বেশ দেখায় কিন্তু তােমাকে দাড়ি রাখলে। রাখাে, কেটো না। আর শােনাে, লাঞ্চের প্রশংসা করলেই রেহাই পাচ্ছে না। আজ ডিনারও আছে।
আমি যাবাে। পাগল নাকি? কাল সারাদিন বেড়ানাের প্রােগ্রাম। সন্ধ্যেবেলা ডিনার খেয়ে কাল যাবে। মােটে তাে ঘন্টা খানেকের রাস্তা।
একটা কিছু ষড়যন্ত্র আছে নাকি? আছে। পরাগ উদাস গলায় বলে, পাত্রী? হ্যাঁ। ওরকম লক্ষ্মীছাড়া হয়ে থাকবে কেন?
স্বামী হিসেবে আমার রেকর্ড ভাল নয় বউদি। খুব খারাপ। শর্মিষ্ঠা আমার হাতে মার খেয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছিল। সে বলত আমি ইমপােটেন্টও।
হৃদয়বৃত্তান্ত-শীর্ষেন্দু মুখােপাধ্যায়
শােননা বাপু, এসবই আমার জানা। মাস্তু মাসিম! যতদিন ছিল ততদিন তােমার হাতে রাশ ছিল না। মান্তু মাসী ছিল ভীষণ পজেজিভটাইপ । অশান্তি যে হবে তা আমরা আগেই জানতাম। তােমার দাদাকে জিজ্ঞেস করাে তােমার বিয়ের আগেই আমরা এ নিয়ে আলােচনা করতাম কিনা।
অশােকদা বললেন, শী ইজ রাইট। কিছু মনে কোরাে না, মাস্তু মাসী ওয়াজ ইওর স্টাম্বলিং বুক। অবশ্য দোষ দিই না, একটা মাত্র সন্তান আঁকড়ে ধরে ছিলেন তাে, ওঁর সাইকোলজিটা আমারা বুঝি। এনিওয়ে, শর্মিষ্ঠা আর তােতনও কাজটা ভাল করেনি। ইট ইজ ট্রেচারি।
পরাগের মুখে সাদটে ভাব দেখে অনন্যা বউদী স্বামীকে বললেন, ড্রপ ইট। ওসব আর না-ঘাটাই ভাল : যা হওয়ার হয়েছে। তা বলে তাে আর একটা ছেলের জীবন নষ্ট তে দেওয়া যায় না। | পপ গান হেসে, নষ্ট! নষ্ট.এ, জরাগ্রস্ত কিছুই হতে আর বাকি নেই বউদি। আই অ্যাম এ গনার। এ পিট কেঅ এমন।
মােটেই না। তাই যদি হত তাহলে সেট্রাল পার্কের ঘটনা নিয়ে এত তুলকালাম বাঁধাতে পারতে না। চ্যানেল ফোর প্রোগ্রামটা কী দারুণ হয়েছে।