বা শ্রোচ করবেন না। ওসব আপনাদের সমস্যা আপনারা বুঝবেন। তােতন আবার আগের মতে ওপরে নিচে মাথা নেড়ে বলে, বুঝতে পারছি। কে যে এলাম তাই তাে নি না। মনে হলে, সনাকে যদি একবার ব্যাপারটা বুঝিয়ে বলা যায়
ধরা অত্যন্ত চটে গিয়ে ঝালাে গা, ,ে কেন মাকে বকে? কিসের প্রানে এবং গুন শােনার? রাগ করবে না, প্রী: আমি যানি ।
তােতন পিছিয়ে গেল। তারপর দীর্ঘ পদক্ষেপে বানিকটা উদন্তের মতাে ফুটপাথ থেকে রাস্তায় নামল । কলেজ স্ট্রিটের উন্মত্ত গড়িঘােড়র দিকে তুক্ষেপ না করে রাস্তা পেরােতে যচ্ছিল। মর্মভেদী দু, দুটো ব্রেক-এর শব্দ হল। প্রাণঘাতী সে আওয়াজে চোখ বন্ধ করে ফেলেলি যশোধরা। চোখ খুলে দেখল, মাস্তা থেকে নিজের ভুপতিত শরীরটা টেনে তুলল, তােতন। জামায় রক্ত পাজামায় রক্ত। লােক জমে যাচ্ছিল। কিন্তু তােতন কারও দিকে তাকাল না। একটু খুঁড়িয়ে ঘষটে ফের একই রকম বিপজ্জনকভাবে রাস্তা পেরিয়ে গেল পিছন থেকে। পিছন থেকে গাড়ির ড্রাইভাররা অশ্রাব্য গালাগালি দিচ্ছে তাকে।
হৃদয়বৃত্তান্ত-শীর্ষেন্দু মুখােপাধ্যায়
খুব বেশী কি লাগেনি লােকটার? কিন্তু অত রক্ত! আর একটু হলে মরেই যাচ্ছিল তাে!
কথা শুকিয়ে গেল যশােধরার । এ লােকটা বােধহয় শীগগীরই মরবে পথে ঘাটে । এ মাথার ঠিক নেই।
সারাদিন একটু আনমনা রইল যশােধরা । দিন চারেক বাদে হিউস্টন থেকে আবার টেলিফোন এল অলকের। ছােট মামা! সম্বন্ধটা ভেঙে দিয়েছে তাে?
হা। ভাগ্যিস খবরটা দিতে পেরেছিলি। আসলে কি জাননা, ছেলেটা খারাপ ছিল না। চক্করে পড়ে–-এনিওয়ে কাটিয়ে
দিয়ে ভাল করেছে। আমেরিকার পাত্রই যদি চাও তাে অনেক আছে । যশোর। আবার পাত্র অভাব হবে নাকি?
আরে না। আমার একটা মাত্র সন্তানকে বারাে হ্যজার মাইল দূরে পাঠাতে মােটেই রাজি ছিলাম । আসলে পাত্রপক্ষের ঝােলাঝুলিতেই—
বুঝিছি। এখানে আর একটা কান্ড হয়েছে। পরাগ নামে তােতনের যে বন্ধুর বউয়ের সঙ্গে ওর স্কাউল সে এখন বাঙালী সােলইটর হীরে। সেন্ট্রাল পার্কে একটা মেয়েকে বাঁচাতে গিয়ে একাই চার চারটে ব্ল্যাককে ঠেঙিয়ে ঠান্ডা করে দিয়েছে। টিভিতে, খবরের কাগজে খুব পাবলিসিটি হচ্ছে। কোয়াইট এ সেন্ট্রিাইটি।
অ! তা হবে। আর যশাের বিয়ের জন্য হুড়মুড় করাে না। আজকাল বিয়েটাও কিন্তু বিজনেস। খুব সাবধান। ওরে হ্যাঁ রে হাঁ। তাের ভয় নেই। বহােত আচ্ছা । ছাড়ছি।
পাচ । শর্মিষ্ঠা; আহি ৮ে ছেড়ে দেবাে ভেবেছেন? আমার জীবনটা ও যেমন নষ্ট করেছে তেমনি আমি ওকে শেষ করব। এত সহজে ও পার পাবে না আমার কাছে।
তােতন: আর কী করতে চান আপনি? শুনুন, পরাগ কিন্তু আমার খুব বন্ধু ছিল। আজ সম্পর্ক খারাপ হয়েছে বটে, বাট হি ইজ নট দ্যাট ব্যাঙ। আজকাল অবস্থা ভাল নয়। ফিজিক্যালি, মেন্টালি, ফিনান্সিয়ালি ক্রমশঃ গােয়িং ডাউন অ্যান্ড ডাউন; আর কী করার আছে?
শর্মিষ্ঠা: সেটা আপনি বুঝবেন না। আমি জানি আমার ভিতরে কত জ্বালা কত অপমান, কত অসহায় অবস্থায় আমাকে ও ফেলেছিল বসুনতে! আপনে খানিকটা জানেন, সবটা নয়। বিবাহিত জীবনের কোনও সুখই আমাদের মধ্যে ছিল না। ছিল টর্চার অ্যাও...
বেতন: ও ক অনেকবার হয়েছে শর্মিষ্ঠা ।।
শর্মিষ্টা: আমি আরাে অনেক কথা জমিয়ে রেখেছি ভিতরে। তােতন: আমার মনে হয় আপনার এবার একটা ডিসিশন নিয়ে ব্যাপারটা মিটিয়ে ফেলা উচিৎ ।
শর্মিষ্ঠা: ডিসিশান আমার নেওয়াই আছে। আমি ওকে ডিভাের্স দেবাে, তবে আমেরিকায় গিয়ে । ও কী চাইছিল জানেন? এ দেশের কোর্টে যাতে আমি মামলাটা তুলি। তাতে ও অল্পের ওপর দিয়ে বেঁচে যেত। আশি তা করবাে না। আমি আমেরিকান কোট ডিভাের্স চাইবে, উইথ ফুল কমপেনসেশনস ত ‘ডি ট্যামােজেস ।।
হাতন: আবার আমেৰিকা যাবেন?
শর্মিষ্ঠা: আর এবার আপনাদের কারো ঘাড়ে মুখ করে না ব্যাংকে এই ত্রিশ হাজার ডলার যাবে।
তােতন: তিনি হাজার! এ তাে ডি : এf ! ৫০
শর্মিষ্ঠা; আপনার বন্ধু এটা আমাকে ঘুষ দিয়েছিল ডিভাের্সের জন্য । তােতন; আর এই যে আড়াই লাখ পেলেন! আর এই ফ্লাট।
শর্মিষ্ঠা; এগুলাে ও ঘুষ। জুতাে মেরে গরু দান। একজন মেয়ের সর্বস্ব কেড়ে নিয়ে টাকা দিয়ে শুণ্যতা ভরানাের চেষ্টা। এরপর যখন ডিভোর্সের মামলা উঠবে তখন আমি ওকে আরও শেষ করে দেবো।
তােতন: সর্বনাশ! ত্রিশ হাজার ডলার যে অনেক টাকা শর্মিষ্ঠা। একজন মানুষের অনেক দিনের, অনেক কষ্টের সঞ্চয় । এটার কথা তাে আমার জানা ছিল না। পরাগও বলে নি ।
শর্মিষ্ঠা: বলার মুখ ছিল না বলে বলেনি। ওর মা আমার গয়ানা আটকে রেখেছিল, মনে নেই?
তােতন: শর্মিষ্ঠা, আপনি আর একটু ভেবে দেখুন। খরচ চালাতে পারছে বলে বেচারী নিউইয়র্কের বাড়ি বিক্রি করে মফস্বলে চলে এসেছে। এ অবস্থায় কোর্ট যাই সেটলমেন্ট দিক ধাক্কাটা পরাগ সামলাতে পারবে না।
হৃদয়বৃত্তান্ত-শীর্ষেন্দু মুখােপাধ্যায়
শর্মিষ্ঠা: আমি ওকে আরও ধাক্কাই দিতে চাইছি। তােতন: কিন্তু কেন? তাতে কী লাভ? শুধু প্রতিশােধ নিয়ে যাওয়াই কি এখন আপনার কাজ?
শর্মিষ্ঠা; আই অ্যাম ইনজয়িং ইট । আমার অপমানিত আর নির্যাতিত হলে আপনিও বুঝতেন । তােতন: ডিভাের্স হয়ে যাওয়ার পর আর তাে প্রতিশােধ নিতে পারবেন না শর্মিষ্ঠা তখন কী করবেন?
শর্মিষ্ঠা: পারবাে। ওর চোখের সামনে আমি যখন সুখের জীবন কাটাবাে তখনও জ্বলে পুড়ে যাবে না? পুরুষ শাসিত সমাজে একটা উদাহরণ হয়ে থাকবে না ও!
তােতন: আপনার এ কাজে আমিও একজন অ্যাকসেসরি হয়ে থাকছি।
শর্মিষ্ঠা: থাকবেনই তাে । আপনি ছাড়া এখন আর আমার কে আছে? আপনি পাশে না থাকলে আমি কি এতটা করতে পারতাম! ওর মা আর ছেলে মিলে এতদিনে আমাকে পাগলা গারদে পাঠনাের ব্যাবস্থা করত। নয়তাে বাধ্য করত সুইসাইড করতে।