ওপরে যত তাচ্ছিল্যই দেখাক তার হতে পারত শাশুড়িকে খুব পছন্দ হয়েছিল যশোর । মহিলা তার মা-জেঠিমার মতােই। স্নেহশীলা হাস্যময়ী। আর যশোধরার বাড়ি থেকে বিয়ে ভেঙে দেওয়ায় দুঃখে নৈরাশ্যে ভদ্রমহিলা কী কাণ্ডই না করলেন ! মাত্র পাঁচ মিনিটে যশোধরাকে এত আপন করে নিয়েছিলেন মহিলা।
যশোধরার ছােট্ট মাথায় এত কিছু হিসেব নিকেশ এটে ওঠে না, রাতে না ঘুমিয়ে সে অঝােরে কাঁদে না কাঁদলে বুকটা হালকা হতেই চায় না। মাঝে মাঝে নিশুত রাতে সে উঠে রান্দায় গিয়ে দাড়ায়। গঙ্গার দিকে চেয়ে থাকে। কোন লাভ হয় না তাতে। ভিতরের বিষাদ যেন অন্ধকার অগিন্তেও ছড়িয়ে পড়ে ।
আমরা ওদের ড়ে ক্ষতি করলাম না।
সুনয়নী অত্যন্ত ক্লান্ত গলায় বলেন, তা করলাম না। তবে ভবিতব্যই সব কিছু ঘটায়। আমাদের হাতে কি কিছু আছে। শুনতে পাচ্ছি ওর মায়ের চেয়ে তােতনের অবস্থাই নাকি বেশি খারাপ। আহা
রে, কী মায়াবী ছেলেটা।
জেঠিমা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন, কলিযুগে ভালদের ওপরেই যেন ঠাকুরের বেশি কোপ ।
সকালবেলায় ফোন বাজছিল। বাবা কাছারিঘরে। ভ্যাঠামশাই বাজারে। শােধৱা গিয়ে ফোন ধরুল।
কাকে চাই? একটি কুচিত গলা বলল, এটা কি জয়নাথ অভয়নাথবাবুদের বাড়ি?
আনকে হয়তো মনে নেই আপনাদের। আমরা সেই পাত্রপক্ষ ওই তােতনের দাদা আমি | দয়া কার কি অয়নাথবাবুকে এতটু দিতে পারেন?
বঙ্গা। কাঁপা গলায় যশােধরা বলে । ভীণ কাপছে বুক । তাহলে জানাথবাবু?
কেন বলুন তাে। কোনও খারাপ অব আছে? আমি যশোধরা । যশােধরা! ও! কী আশ্চর্য । বলুন না কী হয়েছে!
আমি ফোন করছি অন্য কারণে। প্রত্যেকদিন একজন কেউ আমার মা আর তােতনের খবর নিচ্ছেন ফোনে। পরিচয় দিচ্ছেন না।
হা হা আমার জ্যাঠামশাই।
আমারও সেরকমই আন্দাজ ছিল । তাৰে বলবেন তিনি খোজ নিচ্ছেন বলে আমরা বিশেষ কৃতজ্ঞ । শুধু এটুকু বলার জন্যই ফোন করলাম। ঘটনাক্রমে বিয়েটা ভেঙে গেল বটে, ত্তি এই সমবেদনার ব্যাপারটি আমাদের জীষণ ভাল লেগেছে।
আমাদের ওপর আপনাদের রাগ নেই? রাগ! রাগ কেন থাকবে? ছিঃ ছিঃ, কী যে বলেন।
শুনুন, উনি মানে তােতনবাবু কেমন আছেন? বলুন না প্লীজ। এখনও ডিলিরিয়াস। জ্বর এখনও অনেক। আর ইনজুরিও তাে কম নয়। গতকাল নার্সিং হােম-এ শিফট করা হয়েছে।
উঃ! কী হল আপনার?
না, কিছু হয়নি। কী হবে! বলতে বলতেও চোখের জন্য বাঁ হাতে মুছবার চেষ্টা করল যশােধরী। কান্নার গলাতেই বলল, প্লীজ! ফোনটা ছেড়ে দেবেন না। আমার আর একটু কথা আছে।
আচ্ছা আপনি কি কাঁদছেন নাকি? ওঃ সত্যিই আপনারা দারুণ মানুষ। আমি ঠিক এরকম ফ্যামিলি দেখিনি।
আপনি আপনার বাড়ি খবর বলুন। আমরা সবাই ভীষণ অনুতপ্ত।
কেন, এতে আপনাদের তাে কোনও ভূমিকা নেই। এখন আমাদের একটা খারাপ স্পেল চলছে । এরকম মাঝে মাঝে হয়।
আপনার মা? মা অনেকটা ভাল । আউট অফ ডেনজার । তার মানে কি তােতন আউট অফ ডেনজার নন?
না। দুঃখের সঙ্গেই বলতে হচ্ছে উই যেম লুজ হিম ফর এভার। সাইকিয়াট্রিন্ট সেরকমই একটা ভয় দেখিয়ে গেছে। মাথায় একটা সন্দেহজনক হেমাটোমা হয়ে আছে। স্ক্যানি-এর রিপাের্ট পেতে বােঝা যাবে ।
আপনি কি জানেন যে এই ঘটনার জন্য আমিই দায়ী?
কী আশ্চর্য, আপনি কেন দায়ী হবেন? তােতনের তাে উচিত হয়নি এভাবে গিয়ে আপনার সঙ্গে দেখা করা।
উনি আমাকে কিছু বলতে গিয়েছিলেন। | যা জানি । বিয়েটা আপনারা ভেঙে দেওয়ার পর আমরা সবাই ওকে প্রচণ্ড অপমান করেছিলাম। মা ঠাকুরঘরে মাথা বুকে রক্তাক্ত করায় আমাদের কাণ্ডজ্ঞান লােপ পেয়েছিল। ভ্রালেন না শেষ হয় আমার ভাইটা ভীষণ নরম প্রকৃতির একটুতেই কেমন যেন হয়ে যায়। ওই এ অপমান ও সহ) করতে না পেরে কেমন যেন পাগলের মতাে হয়ে যায়। তার ওপর ওপৰু ধাৰণ্য হয়েছিল ওর জন্যই মা ওরকম কাজ করলেন, আপনি কি ভীষণ কাঁদছে।
আপনি বকুল।
আমি কিন্তু সত্যিই আপনাদের মতাে মানুষ বিশেষ দেখিনি। এত দর আজকাল কাই ব; থাকে ।
; অ্যাপনি আমাদের প্রশংসা বন্ধ করুন।
আ আ । কি দয়া করে আপনার নিজের এ ব্যাপারে অপরাধী ভাববেন না। এটা ঠিক হবে না। আপনি যে কেন এত কাঁদহেন ; যশােধরা ঠাকুর আপনার মঙ্গল করবেন ? দয়া লেকের #নও এল হয় না।
কী একটা কথা -… আপনি এসে আবার খবর নেবেন? নেবাে না কেন? নিয়ে দেবাে ;
রােজ দুবেলা?
হা নিশ্চয়ই। আপনিও দরকার মতাে ফোন করতে পারেন। আমাদের ফোনের লাইন জ্যাস্ত আছে।
আমি করব। কিন্তু যদি অন্য কেউ ধরেন। তাতে কি? অন্যরা হয়তাে আমার ওপর চটে আছেন ।
হাসালেন এবার । কেউ চটে নেই। আপনার বাবা আর জ্যাঠমশাই স্বচ্ছন্দে স্নামে ফোন করে খোঁজ নিতে পারেন। কেউ তাদের অপমান করবে না। বরং আমরা কৃতজ্ঞ বােধ করছি।
শ্রীজ! ছাড়বেন না কিন্তু । আপনি বাবার সঙ্গে কথা বলুন। এক্সটেনশন লাইন দিচ্ছি।
ফোনের টেবিলের সঙ্গেই কাছারিঘরের কলিংবেল আছে। সেটা টিপে দিল দাঁড়ানাে। চোখের জন্য লুকোবার সুযােগ পেল না সে। কী লজ্জা!
কী হয়েছে রে? খারাপ কিছু? বাঁচবে না, বড়মা।। কে ফোন করেছিল? নােটন। বলল ডাক্তাররা আশা দিচ্ছে না।