সুচেতা তার ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলেন। তারপর আঁচলে চোখ মুছিয়ে দিয়ে বুকে চেপে ধরলেন যশােধরাকে । মৃদুস্বরে বললেন নিজের দোষঘাট অত বড় করে দেখালে জীবনে চলতেই তাে পারবি না। পদে পদে নিজেকে দায়ী করবি কেন? তাের চেয়ে অনেক বেশী দায়ী তাে ওর বাড়ির লোকেরা। ওরা বকাঝকা করেছিল বলেই তাে এরকম হল ?
যদি মরে যায় তা হলে সারাটা জীবন আমি আর একদিনের জন্যও সুখী হতে পারব না বড়মা ।। আচ্ছা,ওকথা এখন থাক। জীবন অনেক লম্বা রে। চুপ করে একটু শাে দেখি। আজ বেরােতে দেবাে না তােকে। তাের বাপজ্যাঠাকে আজ বিকেলেই আমি ওদের বাড়ি পাঠাচ্ছি।
আমিও যাবাে বড়মা। দুর পাগলি, তাের যেতে নেই। একটা কথা বড়মা, ওরা আমাকে অপয়া ভাবছে না তাে। অপয়া! তুই অপয়াওরা কি অত আহাম্মক? কিন্তু আমিও ভাবছি যে ।
তুই শুয়ে পড় তাে। আমি মাথায় একটা হাত বুলিয়ে দিই। চোখ বুজে ঠাকুরদের তার কথা ভাৰ।
লী মেয়ের মতাে শুয়ে পড়ল যশােধরা। চোখ বুজল।বুক কেঁপে একটা দীর্ঘশ্বাস আপনার থেকেই বেরিয়ে গেল তার। বাঁচিয়ে দাও ঠাকুর। এবারের মত বাঁচিয়ে দাও।
তােকে একটা কথা জিজ্ঞেন করব? কী কথা বড়মা? তােতন যদি বেঁচে ওঠে তা হলে ওকে বিয়ে করবি তাে?
বিয়ে! বলে একরাশ বিস্ময় নিয়ে তাকায় যশোধরা, বিয়ের কথা কেন বলছাে বড়মা! আমি তো বিয়ের কথা ভাবিইনি ।।
তাহলে কেন এত কাদছি? নয়। মোটেই না, বড়মা । আমার দেষে একটা লন, এক জখম হল আমি শুধু সেইটেই ভুলতে দ্ধি ।
আর কিছু নr? তার কিছু না তােমার গা ছুঁয়ে বলতে পারি। পাক থাক । বিয়ে যদি আমরা এখানেই দিতে চাই?
এইস যা হ. এরপর আমার বর ইচ্ছেটাই ”ল গেছে। এ জন্মে বিয়ে না করলেও আমার চলবে। বড়মা, গী, কেঁদেছি বলেই কিন্তু ধরে নিও না যে, আমি তােমাদের তােনের প্রেমে পড়ে
গ | ৫, কালকার মেয়েগুলাে পাষাণ টবুগুলাে কি পাথর দিয়ে গড়?
না ; ৮: ‘ কি দিতাম।
তাও বটে।
শােনে বড়মা ওভাবে আমাদের বিচার করতে যেও না। আমরা একটা অন্যরকম। তােমরা ঠিক বুঝবে না। আমাদের হৃদয় আছে বটে, কিন্তু তার সঙ্গে একটা ক্যালকুলেটরও আছে। মালা বদলের সঙ্গে সঙ্গেই আমাদের হৃদয় বদল হয় না।
চুপ কর মূষপুটি! ওসব শুনলেও পাপ হয়। আমি ভাবছিলুম কী ভাবছিলে বড়মা? মাত্র পাঁচ মিনিটের দেখায় একটা অচেনা অজানা ছেলের কাছে নিজেকে বিকিয়ে দিয়ে বসে আছি? তুমি যে কী একটা বােকা মেয়ে আমার! মাও ঠিক তােমার মতােই।
বােকাই রে! আমরা ভীষণ বােকা । হা বােকা মিষ্টি আর ভাল। একটু ঘুমােই বড়মা?
যশােধরা ঘুমিয়ে পড়ল। সুচেতা ওর সুন্দর মুখখানার দিকে চেয়ে ভাবতে লাগলেন, এরা সব কী। ধাতুতে গড়া?
ওস্তাদ মিস্ত্রি যেমন মেরামত গাড়ির বটে চাপড়ে বলে, দেখে নিন স্যার, সব ঠিক আছে। মবিল লিক করছে না, তেলের ফ্লো কমিয়ে দিয়েছি পাক প্লাগ একদম নিউ সেই, ব্যাটারি ফুল চার্জ চাকা, পুরাে রিট্রি, বেক অয়েল গীয়ার অয়েল সব ঠিক আছে। এবার নিয়ে যান আপনার ময়ূরপথ-ঠিক সেরকম ভাবেই ডাক্তার একদিন তােতনের পিঠ চাপড়ে নােটনকে বলল, সব ঠিক আছে আর কোনও ভয় নেই। নাে মেমরি লস, নাে হেমাটোমা, নাে ত্রে ড্যামেজ, নাে ইনফেকশন, এবার ভাইকে নিয়ে যান ।
এক ছায়াময় গভীর গহর থেকে ধীরে ধীরে উঠে এসেছে তােতন। যেন ক্ষীণ পলকা একটা দড়ি বেয়ে। মাঝে মাঝে হড়কে গেছে হাত। মাঝে মাঝে দড়ি চেয়েছে ফেঁসে যেতে। এখনও মুখে ফ্যাকাসে তাৰ । বাঁ হাতে এখনওপ ব্যান্ডেজ। বারেদিন কাথা দিয়ে যে কেটে গেল। বারােটা দিন আয়ু থেকে টোটাল নস।
স্ট্রেচারে উঠতে চাইল না তােতন। না, আমি পারব । নােটন আর রতন একটু ধরে ধরে নামল তাকে।