গাড়িতে জায়গা হবে না বলে আর কেউ আসেনি। কিন্তু বাড়িতে সবাই অপেক্ষা করছে। মা বাবা দুই বােন আত্মীয়স্বজন।
বাড়ি-ফেরাটা বড় নাটুকে হয়ে গেল। সকলেরই চোখে জল। অনুতাপ। দোষ কবুল । তােতন কেবল ক্লান্ত হল, হাঁফিয়ে উঠল।
মাস খানেক বাদে ইন্টারন্যাশনাল টারমিন্যালে নিজের ঢাউস দুটো স্যুটকেস গলদঘর্মা হয়ে উলি থেকে এক্সরে মেশিনে চাপিয়ে যখন তােতন টিকিটের লাইনে দাড়ল তখন ঠিক তার সামনে মধ্যবয়সী পিছনে ঘুরে বলল, আচ্ছা, ব্যারিকেডের বাইরে আপনি যে একটা ফর্সা মেয়ের সঙ্গে কথা বলছিলেন, সে কি আপনার স্ত্রী?
আজ্ঞে যা। কী নাম বলুন তাে! ক্যালকুলেটর ।
আঁ! সতি ।
তাই বলুন | আসলে আমার একটি ছাত্রী ছিল ঠিক ওরকম দেখতে। তার নাম অবশ্য ছিল— যাই হােক সম্বিতা নয়। এবং অবশ্যই ক্যালকুলেটরও নয়।
তােতন শ্রিত মুখে চুপ করে রইল। ভদ্রলােক হঠাৎ একটু নিচু হয়ে বললেন, আচ্ছা কালকুলেটার কি কাঁদে? না তাে! আপনার ক্যালকুলেটরকে তো আমি কাঁদতে দেখলাম। দেখেছেন? লাকি গাই সত্যিই? ডিষ্টিলি । বেশ ফুপিয়ে ফুঁপিয়ে । আপনি ততক্ষণ ব্যারিকেঙে ঢুকে মালপত্র নিয়ে স্ত। আমি গিয়ে এখন একটু দেখে আসব? একটা বেয়ার ব্যাপার তাে? ধরায় বষ্টি।
বাঃ আপনি বসিক লােক আছেন দেখছি। বাচা গেল । ধাটা ডালই কাটবে । চলুন এঙ্গে ‘স যাক টিকিটটা আমাকে দিন আমি লণ্ডন পর্যন্ত আপনি?
হৃদয়বৃত্তান্ত-শীর্ষেন্দু মুখােপাধ্যায়
দ্রলােক কি গউন্টাকে দিয়ে দু’নম এ িবলনে, দাটে সূটাস তুলে দেখল, টাতে অপনা, অ’ কটা নতুন নাম লে: কল কি?
ক তে ।
শেষে নাকি
জানি না মানে? আমার বউ তাে তার গােটা শাড়ির স্টক আমার ঘাড়ে ফেলে আগাম পাঠিয়ে
থাকত। * দমাস করে হেসে ফেরে তােতন। নাঃ লােটা জ্বালাবে। খুব হ্যাঃ হাঃ করে হাসতে পারে বােধহয়।
লােকটা কাউন্টারে বাের্ডিং টিকিট নিয়ে বলল, নববিবাহিতদের আমার সবসময়ে বিবাহ বিষয়ক কিছু উপদেশ দিতে ইচ্ছে করে।
তা ইচ্ছে করুন। আমি টোটাল নভিস। আহা হা লাউঞ্জে চলুন, একটু বীয়ার নিয়ে বলি। আমার চলে না । আরে ভয় পাচ্ছেন কেন, বউ অতদূর থেকে দেখতে পারে না, আড়ালে পড়ে গেছে। তোতন মনে মনে একটা দীর্ঘ বােরডমের জন্য তৈরি হয়ে বলল, তা হলে দু-এক সিপ।
যথেষ্ট যথেষ্ট। হ্যা, যা বলছিলাম মশাই কোনও কোনও বিয়ে আছে ঠিক যেন রিং-এর মধ্যে দুজন বকসার, এ ওকে দেখছে, ফেইন করছে, সরে যাচ্ছে টুকটাক মারছে। আর একরকম হল মােগলশিখর রণে মরণ আলিঙ্গনে কণ্ঠ পাকড়ি ধরিল আকডি দইনা দুইজনে। আর একরম আছে, যেন ঠিক দুজন টেবিল টেনিস খেলােয়াড় টুকটাক টুকটাক এ মারছে ও কেৱত দিচ্ছে। চাপার তর চাপান ওতর। অ্যাম আই কিয়ার?
আপনি পাকা লােক দেখছি।
শুনুন মশাই ম্যারেজের কোনও পাকা কাঁচা নেই। এক গাড়া পাকা মাথা কাচা মাখা সব মাথাই খুঁয়ে গড়াবে শেষ অবধি । এই যে মুজতবা আমি সাহেব বলেছেন শাদীর পয়লা রাতেই মারবে বেড়াল, সেটাও আমি পরীক্ষা করে দেখেছি।
তােতন চোখ গােল গােল করে বলে, দেখেছেন?
আলবৎ। বাসরঘরে একটা বেড়াল নারকেল দড়ি দিয়ে বাঁধা করিয়ে রেখেছিলাম। ঠিক মােমেট ঝাড়ব। তবে ব্যাটা এমন শুরু করেছি যে, সকলেরর আপত্তিতে ছেড়ে দিতে হল। আর একটা অসুবিধেও ছিল। আমার কাছে তলােয়ার ছিল না। কাটবে কি দিয়ে? হাও হাঃ হাঃ ••• এই বেয়ারা
তােতন শিউরে উঠল বাকি পথটার কথা ভেবে।
হৃদয়বৃত্তান্ত-শীর্ষেন্দু মুখােপাধ্যায়
ক্যালকুলেটর যদি বলতে হয় মশাই তবে আমার বউকে সেভিংস স্কিম-এ টাকা রাখত, এখন এদেশে গ্যাট হয়ে বলেও ওইসব করছে। কি সব বেরিয়েছে না আজকাল– সৰ সত্য অসভা না, ধন, ধনবর্ষা, তারপর জীবনধারা না জীবনহার হাঃ হাঃ হাঃ সেইসব গুহের কিনছে ।।
তােতন সিটিয়ে গেল। বাই দা ওয়ে হঠাৎ ওই জীবনধারার কথায় আমার সেই ছাত্রীটির নাম মনে পড়ে গেল। কোন ছাত্রীটি? ওই যে বল না অনেকটা আপনার বউয়ের মতাে দেখতে। ওঃ হ্যা। তার নাম যতদূর মনে পড়ছে মশােধায়া। ওটা আমার স্ত্রীর বাপের বাড়ির নাম। বাপের বাড়ির নাম? তাহলে ঠিক ধরেছি, এ সেই আমার ছাত্রী যশােধরাই।
তােতন একটু চিন্তায় পড়। সে যতদূর জানে তার স্ত্রী নাম যশােধারা নয়, যশােধরা। তবে খুব নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছেন। আমেরিকায় গিয়েই ডিকশনারিটা দেখে নিতে হবে।
কিন্তু এ লােকটাকে কি করে সহ্য করবে তােতন? এ যে বিভীষিকা | একটা উপায় অবশ্য আছে। বেশী বাের করলে সে চোখ বুজে যশােধরার মুখখানা ভাবে। যুটার একটা পরে, বড় সুন্দর।