হৃদয়বৃত্তান্ত-শীর্ষেন্দু মুখােপাধ্যায় -(পর্ব-৮)

 সে বলল, খিটিমিটি বললে কিছুই 

না, যেন দুইপক্ষেরই দোষশুনুন ব্যাচেলরমশাই পরাগ তার বউকে কোজ অত্যন্ত ধীরতের সঙ্গে পেটাচ্ছে । মাকে খুশি রাখতেই নাকি এই চমৎকার ব্যবস্থাআপনারা যদি প্রাইভেটলি ব্যাপারটা না মিটিয়ে নেন তাহলে আমরা কিন্তু পুলিশে রিপাের্ট করব । 

হৃদয়বৃত্তান্ত-শীর্ষেন্দু মুখােপাধ্যায়সেই রাতে পরাগকে টেলিফোন করেছিল তােতনপৰাগ প্রায় হাঁফাতে হাঁফাতে বলল, লিভ আস অ্যালােন, তােকে মাথা ঘামাতে হবে না। 

তােতন মৃদু স্বরে বলল, শােন, তােদের অশান্তিতে আমর কোনও ইন্ধন নেই কিন্তু যদি বলিস তবে আমি মধ্যস্থতা করতে পারিজেদ করিস নাব্যাপারটা কিন্তু চাউড় হয়ে যাচ্ছে। 

যাচ্ছে যাক তাের মধ্যস্থতার দরকার নেইতুই হাঁফাচ্ছিস কেন? কী হয়েছে ? অ্যামি জগিং করিলামএই শীতের রাতে জগিং! তোর মাথা কি খারাপ হল ? আই ওয়াজ টেকিং সর্ট অফ একসারসাইজসে যাই হােক, আমার প্রস্তাবটা একটু ভেবে দেখিস। 

অশাস্তির মুলে তাে তুইতাের মধ্যস্থতা মানব কেন আমরাআমি ! আমি তাে কিছু করিনি। 

হৃদয়বৃত্তান্ত-শীর্ষেন্দু মুখােপাধ্যায়

নেকামি করিস না তােতনশর্মিষ্ঠাকে তুই নষ্ট করেছিস। এই বলে ফোন রেখে দিল পরাগঅনেকক্ষণ অবধি ওর হাঁকানাের কানটা কি হতে পারে সেটাইভাল তােততিনাটে মানুষ কেন পরস্পর এক হাদের তলায় মিলেমিশে থাকতে পারছে না সেটা তার মাথায় ঢুকছে না কিছুতেইআর পরগ হা-ফালি কেন ? রাত সাড়ে আটটায় স্বাভাবিক নিয়মে কারও হাফানাের কথা না। 

পরাগ চাকরিতে আরও উন্নতি করে ফেললমাইন বেড় গেল অনেক বাড়া কাজ এবং ঘোরাঘুরিপ্রায়ই অফ্র এবং ইউরােগ যেতে হচ্ছে তাকেযার একটি সাপ একটি নেউল কি তবে দিন কাটায় কে জানে! তোতন ভরে আর খােজ নেয় না । 

একদিন সাদা দুদেবের বাড়িতে সাপ্তাহিক ব্রিজে, আর কে যেন – করের ফেনা নিয়ে বলে উঠল, ওদের ডিভাের্স হয়ে যাচ্ছে । 

কাদের

পরাগ আর মিঠায় পাকা ধব নয়, শােনা যা

কে যেন বড় চিবােত চিবােতে বলল, স্যাড কিছু করা যায় না ? ডিভাের্স হয়ে যাওয়াই ভালদে আর ভাছু ট্রায়িং টু কি ইচ আদার পরপর, মা– থাক গে, জন বসে কয়। 

. :: হিল বা উঠল, প্রাণনার কোনও কাসের নন বলেই এরকম হলে। : না, নিন না ! ১৪ 

রা ও চিত্রা হলে ফলাই ভাল। 

এখন আর লাভ নেই। 

হৃদয়বৃত্তান্ত-শীর্ষেন্দু মুখােপাধ্যায়

জয়দেব সহ প্রত্যেকেই এই সময়ে বার বার কেন যে তােতনের দিকে তাকাচ্ছিল। তাের তখন শ্বাসরুদ্ধ অবস্থাকারণ সে জানে, পরাগ আর শর্মিষ্ঠার অশান্তিতে তার যে ভূমিকা আছে এটা মাত্তমাসী একটু প্রচারই করে থাকবেন । 

তাসের আসর থেকে উঠে আসা বেহ খারাপ দেখায় বলে তোতন ছিলযতক্ষণ ছিল ততক্ষণ কাঁটা হয়ে ছিল ভয়ে। 

এর কিছুদিন বাদে এক প্রায় মধ্যরাতে কলিং বেলএর আওয়াজে বিস্মিত তো দরজা খুলে দেখল, শর্মিষ্ঠা। 

আজ দরজা খুলল শর্মিষ্ঠা। 

কিন্তু সেই শর্মিষ্ঠাই কি ? সময়ের জল কি পলিমাটির কিছু আস্তরণ ফেলে যায়নি ! এটতাে সেই নিউ জার্সির বসন্তের রাত নয়। 

তবু শর্মিষ্ঠাইচোখ বিস্ময়ে কিছু বিস্ফারিতমুখ সামান্য একটু ফাক হয়ে আছেতােতনের বুকে দহটা আর বাজল না বটে, কিন্তু ঢিবঢিবিয়ে উঠল। আজও । আর আপনি ! কবে এলেন খবর দেননি তাে! | তােতন এই তপ্ত দুপুরে পেটে খিদে নিয়ে কতটা প্রত্যাশামতাে মিষ্টি করে হাসতে পারল তা জানবার উপায় নেই তার নিজেরমানুষ তাে নিজের মুখ দেখতে পায় না। 

খবর দেওয়া যয়ন, আসবার তারিখ ঠিক ছিল না বলেপ্লেনে সীট পাওয়া যাচ্ছিল না। খুব জড় । 

আসুন

হৃদয়বৃত্তান্ত-শীর্ষেন্দু মুখােপাধ্যায়

ঢুকবার আগে তােতন কয়েক সেকেন্ড পঁড়িয়ে বাড়িটা একটু দেখে নিলসুন্দরবন এলাকার পটভূমিতে বাড়িটা কিন্তু খারাপ নয়পাকা বাড়িতবে শ্রীছাঁদ বা স্থাপত্য কিছু নেইসামনে বেশ চওড়া বারান্দা আছে। তার পর উঠোন তাে থাকবেই, রান্নাঘর, গোয়াল, ধানের গােলা ইত্যাদি । 

বাইরে ঘর বলেও কিছু নেইযে ঘরে তাকে বসাল শর্মিষ্ঠা তাও একখানা শোওয়ার ঘরই তবে কাঠের চেয়ার আছে গােটা দুই, আর জলচৌকিতােতন চেয়ারে আর বতন মােড়ায়বাবুঘরে ঢােকেনিবােধহয় ঢুকবেও নাঘরে ছায়া আছে বটে, কিন্তু বাতাস নেইজানালা দরজা ইত্যাদি বেশ ছােটো বলে মােটও খুব। 

শর্মিষ্ঠা তাদের বসতে দিয়েই কও পায়ে ভিতরে গেছে বােধহয় আপ্যায়নের ব্যবস্থা করছে। এ তার বাপের বাড়িমর্যাদাই আলাদাশর্মিষ্ঠানে আরও একটা বাড়ি আছে বটে বেহালায় যতদূর শুনেছে, সেখানে. ওর এক দলা পাকে পরিতােষবাবু জায়গায় বেশ দিলো হয়ে বসেছেনজমিজমা চাষাবাস তো আছেই, উপৰি হিসাব চাকরিটাও রযেছে। 

রতন চাপ ধরে বলল, টাকা কমির। এ খেছেন কিছুই নয়। পরিতোষবাবর আসল কারবার হল সুদের। তার কত পড়েছেকিন্তু এইসান চালাক লোক যে ডাকার আসল তহবিলে হাতই দিতে পারেনি। সনকোসন হড়িকুড়ি আর দুচারশো টাকা নিয়ে গেছেঅঞ্চলে অবশ্য পাঁচশাে জন্যও কাতি হয়গরিব দেশ। 

হৃদয়বৃত্তান্ত-শীর্ষেন্দু মুখােপাধ্যায়

তােতন এনেছিল বটে, ততেমন দিয়ে নয়স্মৃতি । ১০ এনে পড়েছে সবচেয়ে বেশী যেটা মনে পড়ছে সেটা হল, গত তিন বছয়ে পরাণের পতন এবং দৰ। বছরখানেক ধরে একটা নার্ভের অসুখে ভুগছে পরাগ ; তার জন্য মিত্তের চাকরিট। ছাড়তে হয়েছে। কুইনসের বাড়ি বেছে দিয়ে হ্যামিল্টন না:শ এক ছোটো শহব একথা ওয়া••• অ্যাপার্টমেন্ট কিনেছেসেখানেই চলে যাবেপুরো বাড়িতে সে নাকি এখনও আমার গলার আওয়াও আর পায়ের শব্দ শুনতে পায়রাতে ঘুমােতে পারে নাতিনিসপত্র সই প্রায় বিদেয় করেছে বাড়ি থেকেসঙ্গী নেই বলে একটা কুকুর পুষছে আজকালখুব আনপূলার, এখনও অহংকাঅস্থিরতা বেড়েছেবিচেয়ে ভায়ের কথা, স্বাস্থ্যটা গেছে ভে। 

এসব বলবে কি শমিষ্ঠাকে? বলার কোনও মানেই হয় না। শমি: ভিস করবে না

গুণগুন করে রতন কী যেন বলছে ঠিক বুঝতে পারছে না তোতন ; কিছু বলছেরতন? আর বলছিলাম কি, আতাপুর কি আর যাওয়া হয়ে উঠবে দাদা? 

এত মায়া হল তােতনের ওর মুখখানা দেখে! বউড দমে গেছে বুঝতে এখান থেকে তোমাকে নিয়ে যাওয়া তার কর্ম নয় বােধ হয়

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *