চলে যায় বসন্তের দিন পর্ব:০১ হুমায়ূন আহমেদ

চলে যায় বসন্তের দিন পর্ব:০১

মাজেদা খালার দুশ্চিন্তা দূর করার জন্যে না, ফুলফুলিয়ার ব্যাপারে কৌতূহলী হয়েই খালার ধানমণ্ডির বাসায় গেলাম। খালু সাহেব আমাকে দেখে প্রথম কিছুক্ষণ এমনভাবে তাকিয়ে থাকলেন যেন চিনতে পারছেন না। তারপর শুকনো গলায় বললেন, কী ব্যাপার?

আমি বললাম, কোনো ব্যাপার না, আপনাদের দেখতে এসেছি।খালু সাহেব ও বলে ন্যাশনাল জিওগ্রাফি ম্যাগাজিনে মুখ ঢেকে ফেললেন। খালু সাহেব আমাকে সহ্যই করতে পারেন না। মাজেদা খালা আমাকে আড়ালে ডেকে নিয়ে ফিসফিস করে বললেন, তোর খালুর সামনে ঐ প্রসঙ্গ তুলবি না।আমি বললাম, Ok.

খালা বললেন, জহিরের কাছ থেকে কায়দা করে ব্যাপারটা আগে জেনে নে। আমি যে ঘটনা জানি এটা যেন জহির টের না পায়।আমি আবারো বললাম, Ok. খালা বিরক্ত গলায় বললেন, Ok ok করিস না তো। তোকে দেখে মনে হচ্ছে তুই ব্যাপারটা হাসি তামাশা হিসেবে নিচ্ছিস। মোটেই হাসি তামাশা না।

অবশ্যই হাসি তামাশা না। জহির কোথায়? এক্ষুণি সাঁড়াশি দিয়ে জহিরের পেট থেকে সব কথা বের করে ফেলব। শুরু হবে সাঁড়াশি আক্রমণ।খালা বললেন, আজ রাতে তুই আমার বাড়িতে থাকিবি।আমি বললাম, কথা বের করে তোমাকে দিয়ে যাই। থাকার দরকার কী? থাকলে সমস্যা কী? বড়লোকের বাড়িতে আমার ঘুম হয় না খালা।কমুনিস্টদের মতো কথা বলবি না। তুই কমুনিষ্ট না। তুই হিমু। তোকে যেখানে ঘুমুতে বলা হবে তুই সেখানেই ঘুমাবি। রাতে কী খাবি?

যা খাওয়াবে তাই খাব ৷নতুন একটা বাবুর্চি রেখেছি, খুব ভালো মোগলাই রাধে। তোর কপাল খারাপ বাবুর্চি ছুটিতে আছে। অসুবিধা নেই পোলাও খা। পোলাও আর ঝাল মুরগির ঝোল, হবে না।? ফ্রিজে ইলিশ মাছ আছে, ইলিশ মাছ ভেজে দিতে বলব।আচ্ছা।গ্রামের বাড়ি থেকে সরবাটা ঘি এনেছি। খেয়ে দেখ ঘি কাকে বলে।ঠিক আছে, খাব সরবাটা ঘি।মাজেদা খালা ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেলে বললেন, ঘর ভরতি খাবার। কেউ খায় না।খায় না কেন?

তোর খালুর ডিসপেপসিয়া হয়েছে— কিছুই হজম হয় না। পানি খেলেও নাকি টক ঢেকুর উঠে। আর জহিরও খাওয়া ছেড়ে দিয়েছে। গত এক মাস ধরে শুধু ডাল ভাত খাচ্ছে। ঐ দিন বলল শুকনা মরিচ। আর রসুন পিষে ভর্তা বানিয়ে দিলে ভর্তা দিয়ে খাবে। আর কিছু খাবে না।বলো কী?

খালা হতাশ গলায় বললেন, আমার দৃঢ় বিশ্বাস ফুলফুলিয়া মেয়েটার সঙ্গে পরিচয় হবার পর জহির এই পাখনা করছে। ঐ মেয়ে যেহেতু শুকনা মরিচের ভর্তা দিয়ে ভাত খাচ্ছে, এর বেশি কিছু খাবার মুরাদ নাই কাজেই জহিরকেও তাই খেতে হবে।তাহলে তো ঘটনা অনেক দূর গড়িয়েছে। তুমি চিন্তা করো না। আমি টেককেয়ার করছি। হয় জহিরের স্ক্রু টাইট দিয়ে দেব আর নয়তো নাট খুলে স্ক্রু বের করে নিয়ে আসব।তুই একটা কাজ করবি?

অবশ্যই করব। কাজ করে ভাত খাব। ফুড ফর ওয়ার্ক।একটা ডিজিটাল রেকর্ডার পকেটে করে নিয়ে যা। জহিরের সঙ্গে কথাবার্তা যা হবে। রেকর্ড করে ফেলবি।মা হয়ে ছেলের গোপন কথা রেকর্ড করা ঠিক হবে? অবশ্যই ঠিক হবে। মা ছেলের ভবিষ্যৎ দেখবে না? সে মাতারির সঙ্গে প্ৰেম করবে। আমি আটকাব না?

তাহলে দাও তোমার ডিজিটাল রেকর্ডার।আসল কথা যখন শুরু হবে তখন কায়দা করে রেড বাটন পুশ করবি। পনেরো মিনিট রেকর্ড হবে।আমি গলা নামিয়ে বললাম, নিজেকে কেমন যেন স্পাই স্পাই লাগছে। খালু সাহেবের তো একটা লাইসেন্স করা পিস্তল আছে। পিস্তলটিও দাও। পকেটে করে নিয়ে যাই। স্পাই যখন হয়েছি পুরোপুরি হই। একটা ম্যাগনিফাইং গ্লাস দাও। স্পাইদের সঙ্গে ম্যাগনিফাইং গ্রাস থাকে।

ফাজলামি করিস না হিমু। তোকে ফাজলামি করার জন্যে ডাকি নি। তোর সব ভালো ফাজলামিটা ভালো না। তুই তোর খালুর সঙ্গে গল্প কর, আমি ডিজিটাল রেকর্ডারটা রেডি করে দেই। ব্যাটারি। আনতে হবে। ব্যাটারি নেই।আমি খালু সাহেবের (রহমতউল্লাহ তালুকদার) সামনে বসে আছি। কতক্ষণ বসে থাকতে হবে বুঝতে পারছি না।

ডিজিটাল ভয়েস রেকর্ডারের ন্যাশনাল জিওগ্রাফি থেকে চোখ তুলছেন না। তিনি হাটুর উপর পা তুলে দিয়েছেন। পায়ের পাতা নাড়ছেন। পাশে বসে থাকা মানুষকে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করার চেষ্টা। চেষ্টা সফল হচ্ছে না। আমি বরং তার কর্মকাণ্ডে মজা পাচ্ছি। আমি তাকিয়ে আছি টিভির দিকে। টিভিতে সিএনএন চলছে। শব্দহীন টিভি। খালু সাহেব ইদানীং শব্দহীন টিভি দেখেন।

হিমু।

জ্বি।

খালু সাহেব ন্যাশনাল জিওগ্রাফি বন্ধ করে আমার দিকে তাকালেন। তার ভুরু কুঁচকে আছে। নাকিও খানিকটা কুঞ্চিত। গরম মাড়ে ছাল পুড়ে ঘা হয়ে যাওয়া নেড়ি কুত্তার দিকে মানুষ এইভাবেই তাকায়।

কী করছি আজকাল?

কিছু করছি না।

কিছু করছি না বাক্যটা যেভাবে বললে তাতে মনে হচ্ছে কিছু না করাটা খুব মহৎ কিছু।খারাপ কিছু করার চেয়ে কিছু না করা তো অবশ্যই মহৎ। চুরি-ডাকাতি তো …আমার সঙ্গে বাজে তর্ক করবে না।জ্বি আচ্ছা।

ব্যক্তিগতভাবে তোমার প্রতি আমার কোনোই বিদ্বেষ নেই। কিন্তু আমি অকৰ্মণ্য অলস মানুষ সারাজীবন অপছন্দ করেছি, আমৃত্যু করব বলে ধারণা। তুমি যদি কিছু মনে না কর, অন্য কোথাও গিয়ে বস। তুমি আমার পাশে বসে আছ বলেই পড়ায় মন দিতে পারছি না। কিছু মনে করছ না তো?

জ্বি না কিছু মনে করছি না।আমি নিশ্চিত তুমি আমার কথায় হার্ট হয়েছ। তোমাকে হার্ট করার জন্যে কথাগুলি বলি নি। আমার নিজের ছেলে জহির যদি তোমার মতো জীবন যাপন করত। তাকেও আমি আমার পাশে বসতে দিতাম না।খালু সাহেব। আবারো ম্যাগাজিন পাঠে মন দিলেন। এই পরিস্থিতিতে নিঃশব্দে উঠে অন্য কোথাও সরে যাওয়া উচিত। সেটি করছি না। মানুষটাকে আরেকটু রাগিয়ে দিতে ইচ্ছা করছে।

রেগে তিনি তেতে থাকবেন, কিন্তু ভদ্রতা ও রুচিবোধের কারণে আমার সঙ্গে কথা বলতে হবে নিচু গলায় প্রায় হাসিমুখে— এই দৃশ্যটি দেখতে ভালো লাগে। আদ্রতা এবং রুচিবোধ থাকারও বিপদ আছে।আমি এখন জহিরের ঘরে। জহির হাত-পা সোজা করে বিছানায় লম্বা হয়ে হয়ে ঘুমুচ্ছে। গাঢ় ঘুম। এক বছর পর জহিরের সঙ্গে দেখা। মানুষের বয়স বাড়ে, এই ছেলের মনে হয়। বয়স কমছে।

চেহারায় বালক বালক ভাব এসে গেছে। ঘুমন্ত জহিরকে দেখে মনে হচ্ছে তার স্কুলে ফাইনাল পরীক্ষা চলছে। সে রাত জেগে পড়ছে। মাঝখানে ক্লান্ত হয়ে কিছুক্ষণ শুয়েছিল, ভেবে রেখেছিল রেস্ট নিয়ে আবার পড়া শুরু করবে। রেস্ট নিতে নিতে ঘুম এসে গেছে। আমি ডাকলাম, এই জহির! এই! জহির স্প্রিং-এর পুতুলের মতো উঠে বসল। কিছুক্ষণ অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে থেকে রোবট টাইপ গলায় বলল, হিমু ভাইজান কটা বাজে?

আমি বললাম, সাড়ে আট।জহির বলল, তোমার নটার মধ্যে আসার কথা। তুমি সাড়ে আটটায় চলে এসেছি। আশ্চর্য তো! আমার নটার মধ্যে আসার কথা না-কি? হুঁ। আমি তোমাকে কল দিয়েছি। সাতটা পাঁচ মিনিটে। তখনই বলে দিয়েছি বাই নাইন তুমি যেন চলে আস। মানুষ টাইমের পরে আসে, তুমি চলে এসেছ আগে।কীভাবে কাল দিলি?

আধ্যাত্মিক উপায়ে কল দিয়েছি। ব্যাপারটা যে সত্যি সত্যি কাজ করবে বুঝতে পারি নি। আমার খুবই অবাক লাগছে।মনে মনে আমাকে ডেকেছিস? হুঁ। কীভাবে ডেকেছি শোন। প্ৰথমে দরজা জানালা বন্ধ করেছি। তারপর বিছানায় শবাসন করে শুয়েছি। হাত-পা সোজা করে সরলরেখার মতো শোয়া। চোখ বন্ধ করে। একমনে বলেছি–হিমু ভাইজান, তুমি যেখানেই থোক রাত নটার মধ্যে চলে আস। পঞ্চাশবারের মতো বলেছি। বলতে বলতে ঘুমিয়ে পড়েছি। ঘুমিয়ে পড়ার কথা না। আমার ঘুম এসে গেছে। টেলিপ্যাথিক উপায়ে তোমার কাছে ম্যাসেজ চলে গেছে। তুমি চলে এসেছ। How Wonderful. টেলিপ্যাথিক ডাকাডাকির বুদ্ধি কি তোর মাথাতেই এসেছে না কেউ দিয়েছে?

জহির গলা নিচু করে বলল, একটা মেয়ের কাছ থেকে এই বুদ্ধি পেয়েছি। এই মেয়েটার বাসায় টেলিফোন নেই। ওর যখন কাউকে ডাকার দরকার পড়ে তখন এভাবে ডাকে। তাতে নাকি কাজ হয়। মেয়েটার কথা আগে বিশ্বাস করি নি। এখন পুরোপুরি বিশ্বাস হচ্ছে।আমি বললাম, মেয়েটার নাম কি ফুলফুলিয়া? বেশ কিছুক্ষণ। হতভম্ব হয়ে থাকার পর জহির প্রায় তোতলাতে তোতলাতে বলল, তুমি কীভাবে জানো? সেটা দিয়ে তোর দরকার নেই। মেয়েটার নাম ফুলফুলিয়া কিনা বল?

হু! মেয়েটার বাবা তাকে ডাকেন ফুল। মা যখন বেঁচে ছিলেন তখন ডাকতেন ফুলিয়া। মেয়েটা করেছে কী দুজনের নাম একত্র করে তার নাম দিয়েছে ফুলফুলিয়া।তুই আমাকে ট্যালিপ্যাথিক পদ্ধতিতে ডেকে এনেছিস কেন? ফুলফুলিয়ার বিষয়ে কথা বলার জন্যে? হু! তুমি এতসব জানো কীভাবে? ভাইজান তুমি খুবই বিস্ময়কর একজন মানুষ।তুই নিজেও কম বিস্ময়কর না। যা হোক এখন ঘটনা। কী বল?

তোমাকে আর নতুন করে কী বলব। তুমি তো মনে হচ্ছে সবই জানো।তা জানি, তবু তোর মুখ থেকে শুনি… জহির চাপা গলায় প্রায় তোতলাতে তোতলাতে বলল–ভাইজান আমি ঠিক করেছি। ফুলফুলিয়াকে বিয়ে করব।ঠিক করে থাকলে করবি।মা মনে হয় রাগ করবে। তাই না?

রাগ অবশ্যই করবে। তোর বাবার পিস্তল দিয়ে ফুলফুলিয়াকে গুলি করার সমূহ সম্ভাবনা।ওকে কেন গুলি করবে? গুলি করলে আমাকে করবে।মাজেদা খালা তোকে কিছুই বলবে না। তুই যদি একটা খুন করে এসে বলিস–মা আমি খুন করে এসেছি। তাহলে খালা বলবেন, ভালো করেছিস। এখন যা গোসল করে আয়–ভাত খা। ইলিশ মাছের ডিম রান্না করেছি।জহির অবাক হয়ে বলল, এত কিছু থাকতে ইলিশ মাছের ডিমের কথা বললে কেন? মনে এসেছে বলেছি। তুই এত অবাক হয়ে তাকিয়ে আছিস কেন?

মাছের ডিম খুবই অপছন্দের খাবার। ফুলফুলিয়ার আরেকটা পছন্দের খাবারের কথা শুনলে তুমি চমকে উঠবে।শুকনা মরিচের সঙ্গে রসুন মিশিয়ে বেটে ভর্তা।জহিরের মুখ হা হয়ে গেল। সত্যিকার বিস্মিত মানুষের মুখ দেখা খুবই আনন্দের ব্যপার। বেশির ভাগ মানুষই বিস্মিত হবার ভান করে, বিস্মিত হয় না। জহির সত্যি সত্যি বিস্মিত। তার হা করে থাকা মুখের দিকে তাকিয়ে আমি খুবই মজা পাচ্ছি।

জহির!

জ্বি ভাইজান?

ফুলফুলিয়া সম্পর্কে তোর পরিকল্পনা কী বল শুনি। খুব গুছিয়ে বলবি। তার আগে এক মিনিটের জন্যে চোখ বন্ধ করা।

কেন?

আমি একটা লাল বোতাম টিপব।

কীসের লাল বোতাম?

কীসের লাল বোতাম তোর জানার দরকার নেই। তোকে চোখ বন্ধ করতে বলছি তুই চোখ বন্ধ করা।জহির বাধ্য ছেলের মতো চোখ বন্ধ করল। আমি ডিজিটাল ভয়েস রেকর্ডারের বোতাম টিপে জহিরের সামনে রাখলাম।এখন ইচ্ছা করলে চোখ মেলতে পারিস। লাজ করলে চোখ মেলার দরকার নেই। ফুলফুলিয়া সম্পর্কে তোর পরিকল্পনা গড়বড় করে বলে যা। ফিসফিস করবি না। উঁচু গলায় বলবি। প্রতিটি শব্দ যেন আলাদা করে বোঝা যায়। টু দ্য পয়েন্ট থাকিবি। ফেনাবি না। রেডি, গেট সেট গো…।

জহির আবার তার বিখ্যাত রোবট গলায় কথা বলা শুরু করল। মনে হচ্ছে প্রতিমন্ত্রীদের মতো লিখিত ভাষণ পড়ছে। ভাইজান, আমি ঠিক করেছি। ফুলফুলিয়াকে বিয়ে করব। আমি জানি সবাই খুব রাগ করবে। কিন্তু আমি মন ঠিক করে ফেলেছি। বিয়ে করব কাজির অফিসে। বিয়েতে তুমি একজন সাক্ষী হবে। আরেকজন সাক্ষীও তুমি জোগাড় করবে। কোত্থেকে করবে। সেটা তুমি জানো। ফুলফুলিয়া সম্পর্কে এই আমার পরিকল্পনা।বিয়ের পরেও কি তুই তোর মাকে জানাবি না?

বিয়ের পর জানাব। কাজি অফিস থেকে টেলিফোন করে জানাব।খালা তোকে ষ্ট্রেট বাড়ি থেকে বের করে দেবে। তুই যাবি কোথায়? সেটা নিয়ে চিন্তা করি নি।চিন্তা না করে ভালোই করেছিস। বেশি চিন্তা-ভাবনা করে কিছু হয় না। তুই একভাবে চিন্তা করে রাখবি ঘটনা ঘটবে অন্যভাবে। চিন্তাহীন জীবনযাপন করা উচিত।ফুলফুলিয়ার একটা ছবি আমার কাছে আছে, দেখবে?

না।ক্লাস সেভেনে পড়ার সময়কার ছবি। এখনকার চেহারার সাথে কোনো মিল নেই।এই সময়ের কোনো ছেলে প্রেমিকার ছবি পকেটে নিয়ে ঘুরে না। ছবি পকেটে নিয়ে ঘুরাটাকে গ্ৰাম্যতা মনে করা হয়। তুই কী মনে করে ঘুরছিস? আমি ছবি পকেটে নিয়ে ঘুরছি না তো। ছবিটা পেজ মার্ক হিসেবে ব্যবহার করছি। আমার অবশ্য অন্য একটা পরিকল্পনাও আছে। খুবই হাস্যকর পরিকল্পনা। বলব?

বল।আমার কম্পিউটারে ফটোশপ আছে। আমি করব কী ফুলফুলিয়ার ছবি ফটোশপে ঢুকাব। আইনস্টাইনের ছবি তার সঙ্গে জুড়ে দিয়ে প্রিন্ট বের করব। ছবিতে দেখা যাবে আইনস্টাইন ফুলির মাথায় হাত রেখে হাসি হাসি মুখে বসে আছেন।রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে ছবি থাকবে না? কবিগুরুর কোলে ফুলফুলিয়া বসে আছে? কবিগুরুর দাড়ির খোঁচা লাগছে ফুলফুলিয়ার গালে।

অবশ্যই থাকবে। কবি নজরুলের সঙ্গে থাকবে। কবি নজরুল হারমোনিয়াম বাজাচ্ছেন— ফুলফুলিয়া গান করছে।।বাংলাদেশের বিখ্যাতদের কেউ থাকবে না? বাংলাদেশের বিখ্যাতরাও থাকবে, তবে কোনো পলিটিক্যাল ফিগার রাখব না। শেখ হাসিনা, বেগম খালেদা জিয়া এরা বাদ। শুধু কবি-সাহিত্যিকরা থাকবেন। আমার আসল ইচ্ছা ফুলিকে চমকে দেয়া। সমস্যা হচ্ছে মেয়েটা চমকায় না। ভাইজান, তুমি ওকে চমকাবার কিছু বুদ্ধি বের কর তো।

তুই কোনো চিন্তা করিস না। চমক কত প্রকার ও কী কী এই মেয়ে এখন টের পাবে। ওকে আমরা ধারাবাহিক চমকের মধ্যে রাখব। চমকাতে চমকাতে ওর চমকা রোগ হয়ে যাবে। তখন দেখবি কারণ ছাড়াই চমকাচ্ছে।থ্যাংক য়্যু।তুই চুপ করে বসে থাক। আমি খালাকে একটা জিনিস হ্যান্ডওভার করে এক্ষুণি আসছি।তুমি কি রাতে থাকবে?

বুঝতে পারছি না। থেকে যেতেও পারি।যদি রাতে থাক তাহলে ফুলির সঙ্গে পরিচয়টা কীভাবে হলো সেটা তোমাকে বলব। খুবই ইন্টারেস্টিং। শুনলে হাসতে হাসতে তোমার দম বন্ধ হয়ে যাবে। আমার যখনই মনে হয়। আমি একা একা হাসি।জহির মুখ টিপে হাসছে। কী সুন্দর সহজ হাসি! তার আনন্দ সারা শরীর দিয়ে আলোর মতো ঠিকরে বের হচ্ছে। ঠিক তখন একটা ঘটনা ঘটল।

টিভির ওপর রাখা জাপানি চিনামাটির বালিকা মূর্তি ধূম করে নিচে পড়ে ভেঙে টুকরা টুকরা হয়ে গেল। দেয়ালে ঝুলানো দুটা ক্যালেন্ডার হঠাৎ পেণ্ডুলাম হয়ে দুলতে শুরু করল। আমরা যে খাটে বসেছিলাম। কেউ মনে হয়। সেই খাট ধরে হাচক টানে ইঞ্চি খানেক সরিয়ে দিল। মাথার ভেতরের মগজও মনে হয় খানিকটা দুলল। জহির ভীত গলায় বলল, ভাইজান কী হচ্ছে?

আমি বললাম, তেমন কিছু না। টাইট হয়ে বসে থাক। ভূমিকম্প হচ্ছে।জহিরের মুখ দ্বিতীয়বারের মতো হা হয়ে গেল। মুখের হা বন্ধ না করেই সে কথা বলল, ভূমিকম্প হচ্ছে মানে কী? আমি হালকা গলায় বললাম, মা বসুন্ধরা সামান্য কেঁপে উঠেছেন। ঢাকা শহর দুলছে।আমরা বসে আছি কেন?

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *