কাশীনাথ – শেষ – পর্ব – শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

পর্দার সম্মুখে দাঁড়াইয়া বিজয়বাবু মকদ্দমার বিশদ ব্যাখ্যা করিয়া সর্বশেষে নিজের টীকা-টিপ্পনি ও মতামত প্রকাশ করিয়া বলিলেন, কেবল জামাইবাবুর জন্য আমরা এ মকদ্দমা হেরে গেলাম। তখন পর্দার অন্তরালে একগুণ কমলা দশগুণ হইয়া ফুলিতে লাগিল। অনেকক্ষণ পরে ভিতর হইতে কমলা কহিল, আপনি ভিতরে আসুন, অনেক কথা আছে। বিজয়বাবু ভিতরে প্রবেশ করিলেন। দুইজনে বহুক্ষণ মৃদু মৃদু কথা হইল,… Continue reading কাশীনাথ – শেষ – পর্ব – শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

কাশীনাথ – পর্ব -৩ – শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

প্রিয়বাবুর মৃত্যুর পর শ্রাদ্ধশান্তি হইল, উইল দেখিয়া কাশীনাথ কিছুমাত্র দুঃখিত বা বিস্মিত হইল না। জগতে যাহা নিত্য ঘটে, যাহা ঘটা উচিত—তাহাই ঘটিয়াছে; ইহাতে দুঃখই বা কি, আর আশ্চর্য বা কেন! তথাপি দেওয়ান মহাশয় কাশীনাথকে নিভৃতে পাইয়া বলিলেন, জামাইবাবু, কর্তা মহাশয় যে এরূপ উইল করিবেন, তাহা আমি কখনও ভাবি নাই। পূর্বে তিনি একবার উইল করিয়াছিলেন, তাহাতে… Continue reading কাশীনাথ – পর্ব -৩ – শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

কাশীনাথ – পর্ব -২ – শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

জমিদার প্রিয়বাবুর একটিমাত্র সন্তান কমলা। প্রিয়বাবু আরও দুইটি সংসার করিয়াছিলেন। কিন্তু তাহাতে সন্তানাদি হয় নাই। সে সমস্ত গত হইলে, মনের দুঃখে বৃদ্ধাবস্থায় আর একটি সংসার পাতাইলেন—তাহার ফল একটি মাত্র কন্যারত্ন। নিঃসন্তানের সন্তান হইলে পুত্র-কন্যার ভেদ রাখে না। তাই কমলা কর্তার উপর কর্তা, গৃহিণীর উপরও গৃহিণী। তাহার কথা কাটে, কিংবা অমান্য করে, বাড়ির মধ্যে এ ক্ষমতা… Continue reading কাশীনাথ – পর্ব -২ – শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

কাশীনাথ – শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

রাত্রি চারটার সময় স্নানান্তে পূজাহ্নিক সমাপ্ত করিয়া টিকিটি বেশ উঁচু করিয়া বাঁধিয়া কাশীনাথ যখন ধনঞ্জয় ভট্টাচার্যের টোল-ঘরের বারান্দায় বসিয়া দর্শনের সূত্র ও ভাষ্য গুনগুন স্বরে কণ্ঠস্থ করিত, তখন তাহার বাহ্য-জগতের কথা আর মনে থাকিত না। প্রশস্ত ললাট, দীর্ঘাকৃতি কাশীনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় দর্শন-শাস্ত্র-গহনে প্রবেশ করিয়া আপনাকে দিশেহারা করিয়া ফেলিত। তাহাকে তদবস্থ দেখিয়া কত লোক কত কথা বলিত।… Continue reading কাশীনাথ – শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

বলাই–রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

মানুষের জীবনটা পৃথিবীর নানা জীবের ইতিহাসের নানা পরিচ্ছেদের উপসংহারে, এমন একটা কথা আছে। লোকালয়ে মানুষের মধ্যে আমরা নানা জীবজন্তুর প্রচ্ছন্ন পরিচয় পেয়ে থাকি, সে কথা জানা। বস্তুত আমরা মানুষ বলি সেই পদার্থকে যেটা আমাদের ভিতরকার সব জীবজন্তুকে মিলিয়ে এক ক’রে নিয়েছে— আমাদের বাঘ-গোরুকে এক খোঁয়াড়ে দিয়েছে পুরে অহি-নকুলকে এক খাঁচায় ধ’রে রেখেছে। যেমন রাগিনী বলি… Continue reading বলাই–রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

সাত ভাই চম্পা – দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদার

এক রাজার সাত রানি। দেমাকে, বড়োরানিদের মাটিতে পা পড়ে না। ছোটরানি খুব শান্ত। এজন্য রাজা ছোটরানিকে সকলের চাইতে বেশি ভালবাসিতেন।কিন্তু, অনেক দিন পর্যন্ত রাজার ছেলেমেয়ে হয় না। এত বড় রাজ্য, কে ভোগ করিবে? রাজা মনের দুঃখে থাকেন।এইরূপে দিন যায়। কতদিন পরে,-ছোটরানির ছেলে হইবে। রাজার মনে আনন্দ ধরে না; পাইক-পিয়াদা ডাকিয়া, রাজা রাজ্য ঘোষণা করিয়া দিলেন,-… Continue reading সাত ভাই চম্পা – দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদার

আষাঢ়ের এক রাতে – হালিমা খাতুন

একবার দাদার সঙ্গে মাছ ধরতে গিয়ে আবু বিশাল একটা বোয়াল মাছ ধরেছিল। খালি আষাঢ় মাস। ঝরঝর বৃষ্টি পড়ছিল থেকে থেকে। আর বিদ্যুতের ঝলক আকাশের ওপরে সােনার দাগ কেটে পালিয়ে যাচ্ছিল মাঝে মাঝে। যাবায় সময় মেঘের আড়াল থেকে তবলার শব্দ শুনিয়ে দিচ্ছিল। আবুর যে বয়স তাতে তার বর্ষার রাতে মনোবিলে মাছ ধরতে যাবার কথা নয়। কারণ… Continue reading আষাঢ়ের এক রাতে – হালিমা খাতুন

একসূত্রে – শওকত ওসমান

বিকেল থেকে আকাশে মেঘ জমেছিল।এ জনপদের সবাই বেলাবেলি মাঠ থেকে ফিরে এসেছে। গরু ছাগল গোয়ালে বাঁধা। মাঝে মাঝে দমকা বাতাস বইছে। যে-কোনো মুহূর্তে ঝড় শুরু হতে পারে।বহু লোকই জমায়েত হয়েছে খাঁ-বাড়ির বিরাট দহজিলে। অবসর কাটানোর এমন সুযোগ রোজ রোজ পাওয়া যায় না। তাই কেউ তামাক খাচ্ছিল, কেউ গল্পগুজবে রত। কয়েকজন শণ দিয়ে দড়ি তৈরি করছিল।… Continue reading একসূত্রে – শওকত ওসমান

মহাপতঙ্গ – আবু ইসহাক

ছোট এক শহরের ছোট এক বাড়ি। সেই বাড়ির উত্তর দিকের দেওয়ালের ফোকরে থাকত একজোড়া চড়ুই পাখি। একদিন কুড়িয়ে খেতে মাঠে গিয়েছিল ওরা, হঠাৎ কেমন অত শব্দ শুনে ওরা সচকিত হয়ে ওঠে। মাথা তুলে একে অন্যের দিকে তাকায়।দূর থেকে বোঁ-বোঁ শব্দ ভেসে আসছে। চড়ুই দুটো ভয় পায়। ফুড়ুৎ করে ওরা গাছের ডালে গিয়ে বসে। শব্দ ক্রমেই… Continue reading মহাপতঙ্গ – আবু ইসহাক

কাবুলিওয়ালা – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

আমার পাঁচ বছর বয়সের ছোটো মেয়ে মিনি এক দণ্ড কথা না কহিয়া থাকিতে পারে না। পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করিয়া ভাষা শিক্ষা করিতে সে কেবল একটি বৎসর কাল ব্যয় করিয়াছিল, তাহার পর হইতে যতক্ষণ সে জাগিয়া থাকে এক মুহূর্ত মৌর্নভাবে নষ্ট করে না। তাহার মা অনেক সময় ধমক দিয়া তাহার মুখ বন্ধ করিয়া দেয়, কিন্তু আমি তাহা… Continue reading কাবুলিওয়ালা – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর