কহেন কবি কালিদাস পর্ব – ২ হুমায়ূন আহমেদ

কহেন কবি কালিদাস পর্ব – ২

বাবা বললেন, ইবলিশ শয়তান যে এই বাড়িতে আছে আমার এই কথাটা তোমরা গুরুত্বের সঙ্গে নাও। এর ক্ষমতা অনেক বেশি বলেই আল্লাহ্পাক স্বয়ং তার বিষয়ে বারবার সাবধান করেছেন। মা ইথেন তুমি কি জান ইবলিশ কে?

জানি। সে শুরুতে আল্লাহ্‌র প্রিয়পাত্র ছিল। একজন বড় ফেরেশতা।তোমার জানায় সামান্য ভুল আছে। ইবলিশ ফেরেশতা না। সে জিন সম্প্রদায়ের। জিন সম্প্রদায় মানব সম্প্রদায়ের কাছাকাছি-এদের জন্ম-মৃত্যু আছে। তবে ইবলিশের মৃত্যু হবে কেয়ামতের সময়। তার আগে না।

ইথেন আবারো বেফাঁস কিছু বলতে যাচ্ছিল, আমি তাকে ইশারায় থামালাম। বাবা বললেন, আমাদের সাবধান থাকতে হবে। আমাদের খুবই সাবধান থাকতে হবে। শয়তান চলে মানুষের শিরায়-শিরায়। তারা মানুষের সবচেয়ে দুর্বল অংশে আঘাত করে! আমাকে শয়তান কিছু করতে পারছে না।

কাজেই সে তোমাদের মাধ্যমে আমার ক্ষতি করতে চেষ্টা করবে। কারণ আমি তোমাদের অত্যন্ত স্নেহ করি। জুলাস মানুষের দুৰ্বল স্থান। কাজেই ইংলিশ আঘাত করবে স্নেহ-ভালবাসার দুর্বল স্থানে।বাবার কথা শেষ হবার আগেই ইথেন বলল, বাবা আমি উঠি? আমার একটা জরুরি কাজ আছে।কী কাজ? টিভিতে x-Fite নামে একটা শো হয়। আমি তার কোনোটাই মিস করি নি। আজকেরটাও করব না। x-File-এ কী দেখায়?

ভূতপ্ৰেত সুপার ন্যাচারাল এইসব হাবিজাবি।হাবিজাবি দেখার দরকার কী?হাবিজাবি আমার ভালো লাগে বাবা! কী করব বলে, আমি মেয়েটাই মনে হয়। হাবিজাবি।বাবা গম্ভীর গলায় বললেন, আচ্ছা যাও।ইথেন তৎক্ষণাৎ উঠে চলে গেল। বাবা আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, ঠিক আছে মা, তুমিও যাও।হাবিজাবির দিকে ইথেন খুবই ঝুঁকে পড়েছিল। সে সিগারেট খাওয়া ধরেছিল। রাতে ঘুমাতে যাবার সময় সে তার ব্যাগ থেকে সিগারেট বের করে প্রথমেই আমার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলত-আপা খাবি? একটা টান দিয়ে দ্যাখ না? এমনভাবে তাকাচ্ছিস কেন?

ছেলেরা যে-জিনিস খেতে পারে মেয়েরাও পারে। তোর ইচ্ছা হলে বাবাকে বলে দে। যা, এখনই গিয়ে বল। আমি কোনোকিছু কেয়ার করি না। বাবা কী করবে, আমাকে মারবে? মারলে মারুক।সে যে কোনো কিছুই কেয়ার করে না তার প্রমাণ কিছুদিনের মধ্যেই পাওয়া গেল। এক রাতে সে তার ব্যাগ থেকে কোকের ক্যানের মতো ক্যান বের করে বলল, আপা এক চুমুক খেয়ে দেখাবি? আমি বললাম, কী? বিয়ার। সামান্য অ্যালকোহল আছে। সেটা না-থাকার মতো।তুই বিয়ার খাচ্ছিস?

হুঁ। অসুবিধা কী? রোজ তো খাচ্ছি না। এক দিন একটু চেখে দেখব। ইউরোপ আমেরিকায় আমার বয়সি মেয়েরা পানি খায় না। বিয়ার খায়।বিয়ার তোকে কে দিয়েছে? দিয়েছে একজন। নাম দিয়ে কী করবি? আমি অবাক হয়ে দেখলাম সে তার বিছানায় পা বুলিয়ে বসেছে। বিয়ারের ক্যানে চুমুক দিচ্ছে, পা দোলাচ্ছে। তার মুখ হাসি-হাসি। আমি মনে-মনে ভাবলাম বাবার কথাই মনে হয় ঠিক। আমাদের দুই বোনের মধ্যে দিয়ে শয়তান কাজ করতে শুরু করেছে।

আমার উচিত ছিল ইথেনের কর্মকাণ্ড বাবাকে জানানো। আমি তা জানালাম না। এখানেও হয়তো শয়তানের কোনো হাত আছে।এর মাসছয়েক পরের কথা। বর্ষাকাল। তুমুল বর্ষণ হচ্ছে। আমরা দুই বোন ছাদে বৃষ্টির পানিতে গোসল সেরে ফিরেছি। ইথেন আমাকে বলল, আপা, আমার যদি কোনো মেয়ে হয় তার নাম কী হওয়া উচিত? কেমিস্ট্রি নাম। প্রপেন নামটা তোর পছন্দ হয়? ছেলে হলেই-বা কী নাম হবে? তুই যা তো, বাবার কাছ থেকে জেনে আয়।আমি বললাম, বিয়ে হোক। ছেলেমেয়ে হোক তখন বাবার কাছ থেকে জানব।আমার এখনই জানা উচিত।এখনই জানা উচিত কেন?

ইথেন বলল, এখনই জানা উচিত। কারণ আমার পেটে বাচ্চা।আমি বললাম, ফাজলামি করিস না।ইথেন বলল, ফাজলামি করছি না। যা বাবাকে গিয়ে বল। এক্ষুনি বল।আমি বললাম, ইথেন সবকিছুর সীমা আছে।ইথেন বলল, সবকিছুর সীমা আছে তোকে কে বলল? মহাকাশের সীমা নেই। মানুষের ভালবাসার সীমা নেই। ঘৃণার সীমা নেই। অহংকারের সীমা নেই।চুপ।

আমি চুপ করব না। আপা আমি নাম চাই। বাবা যদি নাম না দেন তা হলে আমি ইবলিশের কাছে নাম চাইব। সেটা কি ভালো হবে? ইবলিশ নিজের নামের সঙ্গে মিল রেখে যদি নাম দেয় কিবলিশ সেটা ভালো হবে? লোকে হাসবে না? বাবার ঘর অন্ধকার। দরজা-জানালা বন্ধ। ঘরের বাতি নেভানো। তবে জায়নামাজের পাশে মোমবাতি জ্বলছে। ঘরে আগরবাতির গন্ধ। আগরবাতি দেখা যাচ্ছে না। তবে জুলছে নিশ্চয়ই।

তিনি মোমবাতির দিকে পেছন ফিরে তসবি টানছিলেন। আমি তার সামনে বসতেই তিনি আমার দিকে ফিরলেন। পেছন থেকে মোমবাতি এনে দুজনের সামনে রাখতে–রাখতে বললেন, যে জটিল কথাটা বলতে এসেছিস বলে ফেল। কী বলবি সেটা মনে হয় আমি জানি। মোমবাতির আলোতে বলতে অসুবিধা হলে মোমবাতি নিভিয়ে দিই।আমি বললাম, বাতি নেভাতে হবে না। বাবা তসবি টানা বন্ধ করলেন না। আমার দিকে তাকালেনও না। তিনি তাকিয়ে রইলেন মোমবাতির দিকে। আমি কথা শেষ করলাম।

তাঁর চেহারায়, চোখ-মুখের ভঙ্গিতে কোনো পরিবর্তন হল না। তিনি বিড়বিড় করে বললেন, মা, দেখি আতরের শিশিটা এনে দাও তো।নিজের মেয়ে সম্পর্কে এমন ভয়াবহ কথা শোনার পর পৃথিবীর কোনো বাবা বলতে পারেন না-আতারের শিশিট দেখি।গায়ে আন্তর মাখা তিনি সম্প্রতি শুরু করেছেন। এক সুফি মানুষ নাকি মেশকে আম্বর নামের এই শিশি দিয়েছেন। আতরের বৈশিষ্ট্য হল গন্ধ অতি কড়া, তবে কড়া গন্ধে মাথা ধরে না।আমি বললাম, বাবা সত্যি আন্তর এনে দেব?

বাবা বললেন, হুঁ। ইবলিশ শয়তান সুগন্ধি সহ্য করতে পারে না। তার পছন্দ সালফার-পোড়া দুৰ্গন্ধ, সব সময় গায়ে আতর মাখবি।আমি আতরদানি এনে বাবার সামনে রাখলাম। তিনি অনেক আয়োজন করে আন্তর দিলেন। প্রথমে তুলায় আন্তর মাখলেন। সেই তুলা হাতে ঘষলেন, নাকে ঘষলেন, শেষ পর্যায়ে কানোর ভাঁজে রেখে দিলেন।আমি বললাম, তুমি কি ইথেন বিষয়ে কিছু বলবে? নাকি আমি চলে যাব? তুমি আরো চিন্তাভাবনা করবে?

বাবা বললেন, আমার মেয়েটির কোনো দোষ নাইরে মা। সব শয়তান করাচ্ছে। তাকে শয়তানের হাত থেকে বাচাতে হবে। প্রথম যে-কাজটা করতে হবে তার কাছে যেন শয়তান যেতে না পারে তার ব্যবস্থা করা। তাকে পাক-পবিত্র থাকতে হবে। নাপাক শরীর শয়তানের পছন্দ। তার গায়ে সুগন্ধি থাকতে হবে। সে আতর মাখবে বলে মনে হয় না। তাকে সেন্ট মাখতে হবে। তাকে… আমি বাবাকে থামিয়ে দিয়ে বললাম, বাবা তুমি মনে হয় মূল বিষয়টা ধরতে পারছ না। ইথেন বলছে–তার পেটে বাচ্চা। এটার কী করবে? বাবা বললেন, আমার কী করা উচিত?

আমি বললাম, আমি তো বুঝতে পারছি না। বাবা! বিষয়টা আমার জন্য জটিল।বাবা বললেন, যে-ছেলের কারণে ঘটনা ঘটেছে তার সঙ্গে ইথেনের বিবাহ দিয়ে দেব ইনশাল্লাহ। যে-ছেলের কারণে ঘটনা ঘটেছে তার নাম-ঠিকানা এনে দে। আমি তাকে রাজি করব। প্রয়োজনে তার পায়ে ধরব।আমি বললাম, যে-ছেলে এই কাণ্ড ঘটিয়েছে সে তো খারাপ ছেলে। তুমি তার সঙ্গে ইথেনের বিয়ে দেবে?

হ্যাঁ দেব। এতে ইথেনের সম্মান রক্ষা হবে। সম্মান অনেক বড় জিনিসরে মা। তুই ছেলেটার নাম-ঠিকানা এনে দে। আর শোন মা, আজ রাতে আমি কিছু খাব না। উপোস দেব। সারা রাত উপোস নিয়ে আল্লাহপাকের নাম জিগির করব।বাবা মোমবাতি নিভিয়ে ঘর অন্ধকার করে দিলেন। আমি গোলাম ইথেনের কাছে।ইথেন খুবই স্বাভাবিক।

কিটক্যাট চকোলেটের একটা প্যাকেট তার হাতে। সে খাটে বসে পা দোলাচ্ছে। আমি ঘরে ঢুকতেই সে বলল, আজ রাতে HBo-তে ভালো মুভি আছে আপা, দেখবি? Silence of the Lambs. আমি বললাম, মুভি দেখব না। তোর সঙ্গে কথা আছে।মুভি দেখার ফাঁকে-ফাকে কথা বলব। যখন অ্যাড হবে তখন কথা বলব। আপা চকোলেট খাবি?

আমি বললাম, বাবা ছেলেটার নাম-ঠিকানা চাচ্ছে।কোন ছেলেটার? যে-ছেলেটার সঙ্গে কাণ্ড ঘটিয়েছিস।কী কাণ্ড ঘটিয়েছি? আমার সঙ্গে ফাজলামি করিস না। তুই জানিস তুই কী ঘটিয়েছিস।ইথেন হেসে ফেলল। হাসাতে-হাসতে সে বিছানায় গড়িয়ে পড়ে এমন অবস্থা। আমি বললাম, হাসছিস কেন?

ইথেন বলল, তোকে বোকা বানিয়ে খুব মজা পেয়েছি। এই জন্য হাসছি। মন দিয়ে শোন, আমার কিছুই হয় নি। কারো সঙ্গে কিছু ঘটে নি। আমার ভয়ংকর কথা শুনে তুই কী করিস, বাবার কী রিঅ্যাকশান হয় এটা দেখার জন্যই আমি গল্প বানিয়েছি। গল্প বানিয়েছিস? হুঁ। ভালো কথা, আমাদের হুজুর তোর কাছে সব শুনে কী করল, মাথা ঘুরে পড়ে গেল? আমি দীর্ঘনিশ্বাস ফেললাম।

ইথেন বলল, আপা এখন বল, ছবি দেখবি? হ্যাঁ, দেখতে পারি।থ্যাংক য়্যু। ভয়ের ছবি একা দেখে মজা নেই। ভয়ের ছবি সব সময় দুজন মিলে দেখতে হয়। হাসির ছবি দেখতে হয় চার-পাঁচ জন মিলে–ভয়ের ছবি শুধু দুই জন। আমি বললাম, তুই যে মিথ্যামিথ্যি ভয় দেখিয়েছিস এটা বাবাকে বলে আসি?

যা বলে আয়। আনন্দসংবাদ শুনে ট্যাবলেট হুজুর কী করে কে জানে। আমি বাবার ঘরে ঢুকলাম। মোমবাতি জ্বালিয়ে বাবার পাশে বসলাম। দেখলাম বাবার মুখ ছাইবৰ্ণ। কপালে ঘাম। তিনি সামান্য কাঁপছেন। তাঁর ঠোঁট নড়ছে। নিশ্চয়ই কোনো দোয়াদরূদ পড়ছেন। তিনি ইশারায় আমাকে চুপ করে থাকতে বললেন। তিনি বড় কোনো দোয়ার মাঝখানে আছেন। দোয়া শেষ না হওয়া পৰ্যন্ত তিনি কারো কথা শুনবেন না।

আমি অপেক্ষা করে আছি। একসময় তার দোয়া শেষ হল। তিনি আমার দিকে ফিরলেন এবং বললেন, মা, ইবলিশের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। ইবলিশ আমাকে বলেছে-তোমার মেয়ে বিষয়টা অস্বীকার করবে। ভাব করবে। ঠাট্টা। কিন্তু ঘটনা সত্য।ইবলিশের সঙ্গে তোমার কখন কথা হয়েছে? তুমি আমার এখান থেকে যাওয়ার পরেই। ইথেন কি তোমাকে এরকম কিছু বলেছে?

হুঁ।তার কথা বিশ্বাস করবে না।আমি বললাম, তার কথা বিশ্বাস করব না, ইবলিশ শয়তানের কথা বিশ্বাস করব? বাবা বললেন, এই ক্ষেত্রে করবে। শয়তান সব সময় সত্যের সঙ্গে মিথ্যা মিশায়। এমনভাবে মিশায় যে সত্য-মিথ্যা আলাদা করা যায় না।আমি বললাম, মানুষও তো সত্যের সঙ্গে মিথ্যা মিশায়।বাবা বললেন, মানুষের মিশ্রণ ভালো হয় না। মানুষের মিশ্রণ হয় তেল-জলের মিশ্রণ।

কিছুক্ষণ পরেই তেল-জল আলাদা হয়ে যায়। আর শয়তানের মিথ্যা হল দুধপানির মিশ্রণ, আলাদা করা যায় না।আমি বললাম, এক ফোটা লেবুর রস দিলে দুধ-পানি আলাদা হয়ে যায়।বাবা বললেন, সেই লেবুর পানি সবার কাছে থাকে না মা! এই বিষয় নিয়ে তোমার সঙ্গে আর তর্ক করব না। তর্ক করার মতো মানসিক অবস্থা আমার না। তুমি এখন যাও। বোনের সঙ্গে তোমার ছবি দেখার কথা, ছবি দেখ।ছবি দেখার কথাও কি ইবলিশ শয়তান আপনাকে বলেছে? হ্যাঁ।কী ছবি দেখব, সেটা বলেছে? ছবির নাম?

ছবির নাম বলে নাই, শুধু বলেছে ভয়ের ছবি।আমি বাবার সামনে থেকে উঠে গেলাম, বাবা ফুঁ দিয়ে মোমবাতি নিভিয়ে দিলেন।আমরা রাত দুটা পর্যন্ত ছবি দেখলাম। ছবি শেষ করে খেতে গেলাম। খাবার টেবিলে খাবার সাজিয়ে বাবাকে ডাকতে গোলাম, তিনি যদি মত বদলে খেতে আসেন। বাবার ঘরের দরজা বন্ধ। দরজায় অনেকবার ধাক্কা দেবার পরও তিনি দরজা খুললেন না।

ইথেন কিছু খেতে পারছে না। খাবার নাড়াচাড়া করছে।আমি বললাম, কী হল, খাবি না? ইথেন বলল, বমি-বমি আসছে আপা। এখন আমার খাবারের গন্ধ নাকে এলেই বমি আসে।আমি তাকিয়ে আছি। ইথেন খাবার টেবিল থেকে উঠে পড়ল। তবে চলে গেল না। চেয়ার ধরে দাঁড়িয়ে রইল। আমি বললাম, আর কিছু বলবি?

ইথেন বলল, হুঁ। ছবি শুরু হবার আগে যে-ঘটনাকে আমি ঠাট্টা বলেছিলাম তা ঠাট্টা না। ঘটনা সত্যি। আমার পেটে বাচ্চা আছে। ফার্মেসি থেকে প্রোগনেসি টেষ্টের কিট এনে প্রোগনেন্সি টেস্ট করিয়েছি। টেস্ট পজিটিভ। সুন্দর রিং হয়।আমি কিছুই বলছি না, তাকিয়ে আছি। আমার চোখে ভয় না বিস্ময় কী ছিল তা জানি না, তবে ইথেনের চোখে এই প্রথম দেখলাম হতাশা।

ইথেন বলল, আমি জানি তোমরা চাইবে ঐ ছেলের সঙ্গে আমার বিয়ে দিতে। সেটা সম্ভব না।আমি বললাম, সম্ভব না কেন? কেন সম্ভব না সেটা তোমাকে বলব না। সবকিছু ব্যাখ্যা করতে পারব না।এই বলেই ইথেন চলে গেল। হঠাৎ প্রচণ্ড ভয়ে আমি অস্থির হয়ে গেলাম। আমার কাছে মনে হল ভয়াবহ দুঃসময় আমাদের ওপর চেপে বসতে যাচ্ছে।

(প্ৰথম অধ্যায় সমাপ্ত )

মিসির আলি খাতা বন্ধ করলেন। সিগারেট ধরলেন। রান্নাঘরে গেলেন। চুলা ধরিয়ে চায়ের কেটলি বসালেন। রাত বেশি হয় নি। নয়টা দশ। সাড়ে নয়টার দিকে হোটেল থেকে খাবার আসবে। দুই পিস রুটি, ভাজি, কোনোদিন ঘন ডাল! কোনোদিন মুরগির মাংস। তাঁর ঘরে কাজের লোক নেই। হোটেলের সঙ্গে ব্যবস্থা করে রেখেছেন। তিন বেলাই হোটেল থেকে খাবার আসে। খাবার ভালো।

বেশ ভালো। মিসির আলির ধারণা হোটেলওয়ালা তাঁর খাবার আলাদা রান্না করে। তার ধারণার পেছনের কারণ হল রাতের খাবারটা হোটেলের মালিক হারুন বেপারী, হটপটে করে নিজে নিয়ে আসে। খাওয়াদাওয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত সামনে বসে থাকে। মিসির আলির সঙ্গে সে অতি আগ্রহের সঙ্গে নানান বিষয়ে গল্প করে। গল্পের কোনো বিশেষ ধারা নেই। একেক দিন একেকটা! যেমন গতকাল গল্পের বিষয়বস্তু ছিল—সাপের মণি শক্ত না নরম।

 

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *