এমন একটি গাছ যার ডাল, পাতা, গাছের ছাল সব কিছুই উপকারী ।

নিমের উপকারিতা

অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি নিমের রয়েছে নানা রকম উপকারী গুন সহ এইডস, ত্বকের নানা সমস্যা দূর করার গুনাগুন।গুনগুলো কি কি? 

 নিম! খুব পরিচিত ও উপকারী একটি গাছ।এটি এমন একটি গাছ যার ডাল, পাতা, গাছের ছাল সব কিছুই উপকারী । কথিত আছে যে বাড়িতে একটি নিম গাছ থাকলে অনেক রোগ বালাই দূরে চলে যায়। এই ঔষধি গুন সম্পূর্ণ গাছটি বহু বর্ষজীবি এবং একটি চিরহরিত গাছ। এই গাছ উষ্ণ অঞ্চলে বেশি জন্মে।বাংলাদেশের আবাহওয়া নিম গাছ জন্মানোর জন্য খুবই উৎকৃষ্ট।নিম পাতা তেঁতো স্বাদ যুক্ত কিন্তু আর্য়ুবেদীক শাস্ত্রে নিম পাতা, ডাল,ছালের যথাযথ ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে।আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা ও প্রসাধনী সামগ্রিতেও নিম পাতার যথার্থ ব্যবহারের কথা করা হয়।নিম পাতা, ডালই নয় নিম কাঠের আসবাবপত্র খুবই মজবুত হয় এবং সহজে ঘুন ধরে না, পোকা বাসা বাঁধে না। বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র বানাতে নিম কাঠই ব্যবহার করা হয়।বেশ মজবুত ও টেকসই হয় নিম কাঠের আসবাবপত্র। 

 

প্রচুর ঔষধি গুণ সম্পূর্ণ নিমের উপকারিতা আসুন যেনে নেই :

 

১/ ত্বকের যত্নে :

প্রাচীনকাল থেকে ত্বকের যত্নে নিম পাতার ব্যবহার হয়ে আসছে।রূপচর্চায় ও প্রসাদনী ব্যবহারে নিমের ব্যবহার হয়ে আসছে। ত্বকের দাগ দূর করতে নিম খুব ভালো কাজ করে। এছাড়াও এটি ত্বকে ময়েশ্চারাইজার হিসেবেও কাজ করে। নিয়মিত নিমপাতার সাথে কাঁচা হলুদ পেস্ট করে লাগালে ত্বকের উজ্জলতা বৃদ্ধি ও স্কিন টোন ঠিক হয়।তবে অনেকেই হলুদ ব্যবহার করতে চান না।তারা শুধু নিমপাতা বেটে ব্যবহার করতে পারেন এতে ত্বকের ফাঙ্গাস ও ব্যাকটেরিয়া রোধ হয়। তাই ত্বকের যত্নে নিম পাতার ব্যবহার খুবই কার্যকরী। 

 

২/ ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে :

প্রতিদিন সকালে নিমের কচি পাতার রস খালি পেটে খেলে খুবই উপকার পাবে ডায়বেটিস রোগীরা। নিম ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে চমৎকার ভাবে কাজ করে। নিমের পাতা রক্তের সুগার লেভেল কমতে সাহায্য করে। এছাড়াও রক্ত নালীকে প্রসারিত করে রক্ত সংবহন সচল ও ঠিকঠাক রাখে। 

৩/ দাঁতের যত্নে :

সেই প্রাচীনকাল থেকে নিম গাছের ডাল ব্যবহার হয়ে আসছে দাঁতের যত্নে। নিমের পাতা ও ছালের গুড়া কিংবা নিমের ডাল দিয়ে নিয়মিত দাঁত মাজলে দাঁত হবে মজবুত, দাঁতের পচন, রক্তপাত ও মাড়ির ব্যথা কমে যায়। কচি নিম ডাল দিয়ে দাঁত মাজলে দাঁত ভাল থাকে।

৪/ চুলের যত্নে ও খুশকি দূর করতে:

চুলপর যত্নে ও খুশকি দূর করতে নিম পাতার ব্যবহার খুবই কার্যকরী। চুলের খুসকি দূর করতে শ্যাম্পু করার সময় নিমপাতা সিদ্ধ জল দিয়ে চুল ম্যাসেজ করে ভালোভাবে ধুয়ে ফেললে খুসকি দূর হয়ে যাবে। তাছাড়া এখন শেম্পুতেও নিমপর বয়বহার হয়ে থাকে।

 

৫/ উকুন বিনাশে :

নিমের পেস্ট তৈরি করে মাথার তালুতে ম্যাসাজ করে, তারপর মাথা শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেললেএবং কয়েকবার এই পদ্ধতিতে চুল শ্যাম্পু করলে উকুন নাশে ভালো উপকার পাওয়া যায়।

 

৬/ কৃমিনাশক :

বাচ্ছাদের পেটে কৃমি নির্মূল করতে নিমের পাতার জুড়ি নেই। শিশুরাই বেশি কৃমি আক্রান্তের শিকার হয়। 

৭/ ভাইরাসের আক্রমন রোধে :

নিমপাতার রস ভাইরাস নির্মূল করে। চিকেন পক্স, হাম ও অন্য চর্মরোগ হলে নিমপাতা বাটা লাগানো হয়।  এছাড়াও নিমপাতা জলতে সিদ্ধ করে সে জল দিয়ে স্নান করলে ত্বকের জ্বালাপোড়া ও চুলকানি দূর হয়।

 

৮/ বই পত্রের পোকা রোধে   :

অনেক পুরান বইও পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে মিম পাতার জুড়ি হয় না।কয়েকটি নিম পাতা বিয়ের পৃষ্ঠার ভিতর রেকে দিলে পাকা কাটে না বিয়ের পৃষ্ঠ।    

 

৯/ ছত্রাকের ইনফেলকান দূর করতে :

নিমে রয়েছে নিম্বিডল এবং জেডুনিন, যা ফাঙ্গাস ধ্বংস করতে পারে। ছত্রাক আক্রন্ত স্থানে নিম পাতার পেষ্ট   ৩/৪ বার লাগালে বেশ ভালো উপকার পাওয়া যায়।

 

১০/ ব্রণের সমস্যা সমাধান:

ব্রণের সমস্যা দূর করার জন্য নিম খুবই কার্যকরী একটি ভেষজ উপাদান। নিক পাতার পেষ্ট ব্রণের মধ্যে লাগালে ব্রণ তো যাই সাথে ব্রণের জন্য যে জ্বালা পোড়া হয় সেটাও দূর হয়। 

১১/ চোখের চিলকানিতে :

অল্যার্জির জন্য নিম তো খুবই উপকার। তাই চোখেও যদি কোন চুকাকি হয় বা লাল হয়ে যায় নিম পাতা সেদ্ধ করা পানি ঠান্ডা করে লাগালে চুলাকানি দূর হয়। 

১২/ অ্যালার্জি নিরাময় :

অ্যালার্জি নির্মূলে নিম শতভাগ কার্যকর। নিম পাতা সেদ্ধ জল দিয়ে স্নান করলে অ্যালার্জি দূর হয়। এনজিমা, ফোঁড়া বা ত্বকের যে কোন সমস্যা সমাধানে নিম পাতার পেষ্ট বা নিম পাতা দিয়ে সেদ্ধ পানি খুবই উপকারী।

 

১৩/ ঠান্ডা জনিত সমস্যা নিরসনে :

ঠান্ডা বেশি লাগলে বুকে কফ জমে অস্বস্থির সৃষ্টি করে। কয়েক ফোঁটা নিমপাতার রস গরম পানিতে মিশিয়ে  দিনে ৩/৪ বার খেলে বুকের ব্যথা কমে যায়।

১৪/ ক্ষত নিরাময়ে :

নিমে রয়েছে অ্যান্টিমাক্রোবাইয়াল উপাদান ক্ষত নিরাময়ে দ্রুত কাজ করে।তাই ক্ষত স্থানে নিম পাতা বেটে পেষ্ট করে লাগালে উপকার পাওয়া যাবে। 

১৫ / বাতের চিকিৎসায়:

বাতের ব্যথা মারাত্মক হয়।অনেক সময় ব্যথা এতটাই বেশি হয় যে নড়াচড়া করাও সমস্যা হয়ে যায়।   নিমপাতা, নিমের বীজ ও বাকল বাতের ব্যথা সারাতে ওষুধ হিসেবে কাজ করে। বাতের ব্যথায় নিমের তেলের ম্যাসাজও বেশ উপকারী। মোট কথায় বাতের ব্যথা সারাতে ওষুধ হিসেবে কাজ করে নিম। 

১৬/ ম্যালেরিয়া ব্যবহার 

নিম পাতায় রয়েছে গ্যাডোনিন জাতীয় উপাদান  যা ম্যালেরিয়া রেগের মহা ঔষধ হিসাবে বিবেচিত।  

এছাড়াও নিমপাতা সিদ্ধ জল ঠাণ্ডা করে প্রতিদিন ঘরে স্প্রে করলে মশার উপদ্রব কমে যাবে। যাবে নানা রকম পোকার উপদ্রবও কমে।

১৭/ পোকামাকড় কামড়ালে :

যেকোন পোকামাকড় কামড় দিলে নিম পাতার পেষ্ট বা নিম গাছের ছালপর পেষ্ট ক্ষত সৃথানে লাগালে উপকার পাওয়া যায়।      

১৮/ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে :

 রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে  নিমপাতা গুড়া করে এক গ্লাস পানির সঙ্গে মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে পান করলে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। তেঁতো স্বাদের হলেও এটি সবার খাওয়া উচিত। 

১৯/ আঁচিল দূর করে :

আঁচিল হলে এবং তা,চিরতরে দূর করতে প্রতিদিন ১/২ ফোঁটা নিমের তেল আঁচিলে লাগালে চিরতরে দূর হয় কালো আঁচিল।

 

২০/ মানসিক চাপ দূর : 

 মানসিক চাপ দূর করতে নিম পাতার রস খুবই উপকারী। তাই নিয়মত  নিম পাতার রস সেবন করলে মানসিক অবসাদ ও মানসিক অশান্তি দূর হয়।

২১/ এইডসের মহা ঔষধ :

অবিশ্বাস্য মনে হলেও সত্য যে, এইডসের মহা ঔষধ নিম গাছের ছাল। এই ছালের রস এইডস রোগ নিরাময়ে খুবই উপকার। এইডসের ভাইরাস মারতে সক্ষম এর রস । নিমের পাতার চাও এি ভাইরাস মারতে সক্ষম।

 

২২/ অন্যান্য : 

বিভিন্ন প্রসাধনীতে  যেমন – সাবান, শ্যাম্পু, চুলের তেল, হ্যান্ডওয়াশ, ফেসওয়াশ, মুখের মাক্স, স্কীন টেনার ইত্যাদিতে নিম পাতা বা নিমের তেলের ব্যবহার হয়  যা ত্বকের জন্য খুবই উপকার। জন্ম নিয়ন্ত্রণেও খুবই  কার্যকরী।  আলসার, স্কিন ক্যান্সার, টিউমার, রাতকানা রোগ, বমি বমি ভাব, দেহের যে কোন রকমের ইনফেকশান দূর করা সহ আরও নানা রোগের নিরাময়ে নিম পাতা ও নিমের ছালের কোন তুলনা হয় না।

 

★ এত এত উপকারিতা থাকা স্বত্বেও নিমের কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও রয়েছে।যদিও তা খুবই সামান্য। তারপরও এগুলো আমাদের জেনে রাখা আবশ্যক।  যেমন —

১/ মাত্রাতিরিক্ত নিম খাওয়ার ফলেও পেটে জ্বালা হতে পারে। সুতরাং, এটি ব্যবহারের আগে এর পরিমাণের দিকে অবশ্যই খেয়াল রাখা উচিত।

 

২/ ছোট বাচ্চাদের কিডনি ও লিভারে সমস্যা হতে পারে খাওয়ানোর ফলে।তাই ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া খাওয়ানো উচিত না।  

 

৩/ নিম তেল অতিরিক্ত পরিমাণে গ্রহন করলে  শরীরে অসাড়তা অনুভব হতে পারে এবংএতটাই খারাপ হতে পারে যে রোগী  কোমায় যেতে পারে।

 

 নিমের এই গুনাগুনের কথা বিবেচনা করেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ‘ একুশ শতকের বৃক্ষ’  বলে ঘোষনা করেছে। নিমের কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। তাই নিমে গাছের গুনাগুন ও উপকারিতার কথা চিন্তা করে প্রত্যেকের বাসায় একটি করে নিম গাছ লাগানো উচিত। নিমের উপকারিতার শেষ নাই। নিমের পাতার বড়ি বানিয়ে রেখে দিয়েও ব্যবহার করা যায়।নিমের পাতা, ডাল ও ছাল দিয়ে তৈরি হয় নিম তেল, মাজন, চা।  তাই এত উপকারী গাছটি যাতে কাঁটা থেকে সকলেই বিরত থাকি তাই সবাইকেই সচেতন হতে হবে। 

 

লিখেছেন –

ত্রোপা চক্রবর্তী 

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *