পটুয়া নিবারণ – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়

আমাদের নিবারণ কর্মকার ছিলেন আঁকিয়ে মানুষ। লোকে বলত বটে পটুয়া নিবারণ–কিন্তু তাঁর ছবি–টবি কেউ কিছু বুঝত না। সেই অর্থে পট–টট কখনও আঁকেননি নিবারণ কর্মকার। যদিও ঠিক পটুয়া ছিলেন না নিবারণ, তবু তাঁর আঁকার ধরনধারণ ছিল অনেকটা পটুয়াদের মতোই। তুলির টান, রঙের মিশ্রণ–সব কিছুই ছিল সেই পুরোনো ধরনের। শুধু বিষয়বস্তুতেই তাঁর নতুনত্ব কিংবা মতান্তরে নির্বুদ্ধিতা ধরা… Continue reading পটুয়া নিবারণ – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়

জামাই-শ্বশুর – জসীম উদ্দীন

অনেক দিন জামাই শ্বশুর বাড়ীতে আসে না। সেই জন্যে শ্বশুরের বড় নিন্দা, লোকেরা বলে তোমাদের বাড়ী জামাই আসে না কেনো। নিশ্চই ইহার মাঝে কোন গোপন কারন আছে।..কারন যা আছে, শ্বশুর তা ভালোই জানেন। কারন হোল মেয়ে এক বাবার এক সন্তান।তাই শ্বশুর বাড়ীতে শালা, শালী নাই।তাই আনন্দ ফুর্তি করার কেউই নাই।সে জন্যেই জামাই শ্বশুর বাড়ীতে আসে… Continue reading জামাই-শ্বশুর – জসীম উদ্দীন

পিঁপড়ে আর হাতি আর বামুনের চাকর – উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী

এক পিঁপড়ে ছিল আর তার পিঁপড়ী ছিল, আর তাদের দুজনের মধ্যে ভারি ভাব ছিল। একদিন পিঁপড়ী বললে, ‘দেখ পিঁপড়ে, আমি যদি তোমার আগে মরি, তবে কিন্তু তুমি আমাকে গঙ্গায় নিয়ে ফেলবে। কেমন পিঁপড়ে, ফেলবে তো?’ পিঁপড়ে বললে, ‘হ্যাঁ পিঁপড়ী, অবশ্যি ফেলব। আর আমি যদি তোমার আগে মরি, তবে কিন্ত তুমি আমাকে গঙ্গায় নিয়ে ফেলবে। কেমন… Continue reading পিঁপড়ে আর হাতি আর বামুনের চাকর – উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী

হরির হোটেল – সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ

স্টেশনে ট্রেন থামতে-না-থামতেই যাত্রীদের মধ্যে হুলস্থুল বেধে গিয়েছিল। ভিড়ে ঠাসা কামরা। পিছন থেকে প্রচণ্ড চাপ আর তো টের পাচ্ছিলুম। তারপর দেখলুম, কেউ-কেউ আমার কাঁধের ওপর দিয়ে কসরত দেখিয়ে সামনে চলে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে চ্যাঁচিমেচি চলেছে। অবশেষে ঠেলা খেতে-খেতে যখন প্ল্যাটফর্মে পড়লুম, তখন আমার ওপর দিয়ে অসংখ্য জুতো-পরা পা ছুটে যাচ্ছে। অনেক চেষ্টার পর উঠে দাঁড়িয়ে… Continue reading হরির হোটেল – সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ

সাজঘর – হুমায়ূন আহমেদ

কেরোসিনের চুলায় জাম্বো সাইজের এক কেতলি কেরোসিনের চুলায় জাম্বো সাইজের এক কেতলি। মনজু পাশে বসে আছে–একটু পর পর কেতলির মুখ তুলে পানি ফুটছে কিনা তা দেখার চেষ্টা করছে। তার হিসেবমত ইতিমধ্যে পানি ফুটে যাওয়া উচিত। অথচ ফুটছে না। ব্যাপারটা কি? মজনুর বয়স তেরো-চৌদ্দ কিন্তু দেখায় অনেক বেশি। তার মুখ চিমসে গিয়েছে, গালের হাড় উঁচু, মাথার… Continue reading সাজঘর – হুমায়ূন আহমেদ

জীবনবাবুর পায়রা – তারাপদ রায়

সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে হিটারটা জ্বালিয়ে দুকাপ চা করতে বসলাম। চা হয়ে গেল, দাদা পাশের ঘর থেকে প্রতিদিন এর আগেই বেরিয়ে আসে, কোনও কোনও দিন একটু দেরি হয় অবশ্য, তবে এই সময়টা আমি দাদার ঘরে যাই না। দাদা মাথাটা নীচের দিকে পা দুটো উপরদিকে দিয়ে আসন করে, কোনও কারণে গেলে ওই উলটো মাথা রেখেই কথা… Continue reading জীবনবাবুর পায়রা – তারাপদ রায়

টমাটো সস – তারাপদ রায়

অনেকে হয়তো বিশ্বাস করবেন না, কিন্তু কথাটা রীতিমতো সত্যি। আমি প্রথম টমাটো সস দেখি কলকাতা আসার ঢের আগে, কলকাতা থেকে অনেক দূরে এক নিতান্ত পাড়াগেঁয়ে মফসসল শহরে। সে বহুকাল আগে। ঠিক শহর নয়, বলা উচিত গণ্ডগ্রাম। স্থানীয় লোকেরা মুখে বলত টাউন। তখন সবে যুদ্ধের শেষ হয়েছে, ডামাডোলের বাজার। আমাদের শহরে তখনও ইলেকট্রিসিটি আসেনি, রেললাইন নদীর… Continue reading টমাটো সস – তারাপদ রায়

ভাগ্যফল – তারাপদ রায়

রবিবারের সকালবেলা উকিলবাবু তাঁর বাইরের ঘরে বসে মক্কেলদের কাজ সারছিলেন। এমন সময়ে এক জ্যোতিষীঠাকুর এলেন। … মাথায় টিকি, কপালে ফোঁটা, পরিধানে গেরুয়া বা রক্তাম্বর। উকিলবাবু জ্যোতিষীঠাকুরকে দেখে যথাসাধ্য সম্ভ্রম প্রদর্শন করতে ইতস্তত করলেন না। এবং কিছুক্ষণ কথাবার্তা, কুশল বিনিময়ের পরে নিজের ডানহাতটি জ্যোতিষীর হাতে সমর্পণ করলেন। জ্যোতিষী তার নামাবলীর ঝোলা থেকে একটি আতস কাচ বার… Continue reading ভাগ্যফল – তারাপদ রায়

একটা দুটো বেড়াল – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়

চুষিদের বাড়িতে কোনও বেড়াল ছিল না। তবে বেড়ালদের আনাগোনা ছিল। সেসব চোর আর ছোঁচা বেড়ালদের কথা আর বলবার নয়। যতবার মেরে তাড়াও লজ্জা নেই—আবার আসবে। দেওয়ালে বাইবে। জানালায় উঁকিঝুঁকি দেবে। মিহি সুরে ভারী বিনয়ী ডাক ডাকবে। এমনকী শীতের লেপকাঁথা রোদে দিলে তাতে গিয়ে গোল্লা পাকিয়ে শুয়ে রোদ পোয়াবে। খড়ম, ঝাঁটা, ঠাঙার বাড়ি কী খায়নি তারা?… Continue reading একটা দুটো বেড়াল – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়

আইরিশ রসিকতা – তারাপদ রায়

না। আর কাছাকাছি নয়। পথচলতি চুটকি, উদ্ভট শ্লোক অনেক হল। একটু বিদেশ থেকে ঘুরে আসি। আর রসিকতার খোঁজে যদি বাইরেই যেতে হয়, প্রথমে আয়ারল্যান্ডেই যাওয়া উচিত। অবশ্য এই রসিকতাগুলোর উদ্ভব খুব সরলভাবে, হাসাহাসি করতে করতে বা হাসাহাসি করার জন্যে নয়, এগুলি মোটামুটিভাবে অসূয়াপ্রসূত। এই রসিকতাগুলো, অধিকাংশ কেন, প্রায় সর্বাংশেই ইংরেজদের সৃষ্টি। ইংরেজরা আইরিশদের দু’চোখে দেখতে… Continue reading আইরিশ রসিকতা – তারাপদ রায়