গোলাম মোস্তফা এর জীবনী ও সাহিত্যকর্ম

গোলাম মোস্তফা এর জীবনী

গোলাম মোস্তফা মুসলিম জাগরণের অগ্রদূত ছিলেন। তাঁর অবদান বাংলা সাহিত্যে এক বিরল দৃষ্টান্ত। তিনি ছিলেন একজন বাঙালি লেখক এবং কবি। তাঁর কাব্যের মূল বিষয়বস্তু ছিল ইসলাম এবং প্রেম। তাঁর কাব্যের উল্লেযোগ্য বৈশিষ্ট হলো সহজ ও শিল্পসম্মত প্রকাশভঙ্গি এবং ছন্দোলালিত্য।

গোলাম মোস্তফা

তিনি কয়েকটি পাঠ্যপুস্তকও রচনা করেন এবং সেগুলি বাংলায় খুবই সমাদৃত হয়েছিল। তিনি গীতিকার ও গায়ক হিসেবেও পরিচিত ছিলেন। তাঁর গানের বিষয় ছিল ইসলামি সংস্কৃতি ও দেশপ্রেম। পাকিস্তান আন্দোলনের পটভূমিকায় বহু ইসলামি ও দেশাত্মবোধক গান তিনি রচনা করেন। তাঁর রচিত কয়েকটি দেশাত্মবোধক গান খুব জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল। তাঁর নিজের সুরারোপিত কয়েকটি গানের রেকর্ডও পাওয়া যায়। তাঁর মধ্যে আব্বাসউদ্দীনের সঙ্গে গাওয়া রেকর্ডও রয়েছে। অনুবাদক হিসেবেও তিনি বিশেষ খ্যাতির পরিচয় পাওয়া যায়। আরবী ও উর্দু সাহিত্য হতে বেশ কিছু গ্রন্থ ভাষান্তরিত করে বাংলা সাহিত্যকে তিনি সমৃদ্ধ করেছেন। ব্যক্তিজীবনে তিনি ছিলেন খুবই সহজ-সরল প্রকৃতির মানুষ। 

  • বিশিষ্ট এই কবির জন্ম – ১৮৯৭ সালে।
  •  এই কবির পৈত্রিক নিবাস – মনোহরপুর গ্রাম, শৈলকুপা থানা, ঝিনাইদহ মহকুমা, যশোর জেলা, ব্রিটিশ ভারত (বর্তমান বাংলাদেশ)।
  • বিশিষ্ট এই কবির পিতার নাম – কাজী গোলাম রব্বানী। 
  • অন্যতম এই কবির পিতামহ ছিলেন – কাজী গোলাম সরওয়ার। তিনি সাহিত্যানুরাগী-ফরাসী ও আরবী ভাষায় সুপন্ডিত।
  • তাঁর তিন পুত্রের মাঝে একজন হলেন বিখ্যাত পাপেটনির্মাতা ও চিত্রশিল্পী – মোস্তফা মনোয়ার।
  • সাম্প্রতিককালের অস্কারজয়ী বাংলাদেশী নাফিস বিন জাফর তাঁর – নাতি।
  • বিশিষ্ট এই কবির শিক্ষাজীবন – তাঁর শিক্ষা জীবনের শুরু হয় চার বছর বয়সে নিজগৃহে ও পার্শ্ববর্তী দামুকদিয়া গ্রামের পাঠশালায়। পরে তিনি ফাজিলপুর গ্রামের পাঠশালাতে ভর্তি হন। দু’বছর এই পাঠশালায় বিদ্যা অর্জনের পরে তিনি ভর্তি হলেন শৈলকূপা উচ্চ ইংরেজি স্কুলে। ১৯১৪ সালে এই স্কুল থেকে বিশেষ কৃতিত্বের সাথে তিনি প্রবেশিকা বা ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন। ১৯১৬ সালে তিনি দৌলতপুর বি. এল কলেজ থেকে আই. এ পাশ করেন। তিনি ১৯১৮ সালে কলকাতা রিপন কলেজ থেকে বি. এ পাশ করেন এবং ১৯২২ সালে ডেভিড হেয়ার ট্রেনিং কলেজ থেকে বি. টি ডিগ্রী লাভ করেন।
  • ব্যারাকপুর সরকারি হাই স্কুলের সহকারী শিক্ষক হিসেবে তাঁর শিক্ষকতা জীবনের শুরু হয় – ১৯২০ সালে।

গোলাম মোস্তফা এর জীবনী ও সাহিত্যকর্ম

  • তিনি কলকাতা হেয়ার স্কুলে বদলী হন – ১৯২৪ সালে।
  • বালিগঞ্জ সরকারি ডিমনেষ্ট্রেশন হাই স্কুলে বদলী হন – ১৯৩৫ সালে।
  • তিনি বাঁকুড়া জেলা স্কুলে বদলী হন – ১৯৪০ সালে।
  • তিনি ফরিদপুর জেলা স্কুলের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন – ১৯৪৬ সালে।
  •  পূর্ববঙ্গ সরকারের ভাষা সংস্কার কমিটির সচিব হিসেবে কাজ করেন – ১৯৪৯ সালে।
  • তিনি চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন – ১৯৫০ সালে।
  • তাঁর সাহিত্য প্রতিভার বিকাশ ঘটে – স্কুল জীবনে।
  • তাঁর স্কুল জীবনে প্রকাশিত কবিতার নাম – ‘আর্দ্রিয়ানোপল উদ্ধার’।
  • ’আর্দ্রিয়ানোপল উদ্ধার’ কবিতাটি প্রকাশিত হয় – মাসিক মোহাম্মদী পত্রিকায়।
  • ’রক্তরাগ’ কোন জাতীয় রচনা – কাব্যগ্রন্থ।
  • ’রক্তরাগ’ কাব্যগ্রন্থের রচয়িতা – গোলাম মোস্তফা।
  • তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ – ’রক্তরাগ’।
  • ’রক্তরাগ’ কাব্যগ্রন্থটি প্রকাশিত হয় – ১৯২৪ সালে।
  • ’রক্তরাগ’ প্রকাশিত হলে তাকে অভিনন্দিত করেছিলেন – বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

গোলাম মোস্তফা এর জীবনী ও সাহিত্যকর্ম

  • তাকে অভিনন্দিত করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছিলেন – ”তব নব প্রভাতের রক্তরাগখানি মধ্যাহ্নে জাগায় যেন জ্যোতির্ময়ী বাণী।”
  • ’বনি আদম’ কোন জাতীয় রচনা – মহাকাব্য।
  • ’বনি আদম’ কাব্যগ্রন্থের রচয়িতা – গোলাম মোস্তফা।
  • ১৯৫৮ সালে-’বনি আদম’ কাব্যগ্রন্থটি প্রকাশিত হয় ।
  • ’বনি আদম’ মহাকাব্যটি কোন ছন্দে রচিত – অমিত্রাক্ষর ছন্দে।
  • ’বুলবুলিস্তান’ কোন জাতীয় রচনা – কাব্যগ্রন্থ।
  • ’বুলবুলিস্তান’ কাব্যগ্রন্থের রচয়িতা – গোলাম মোস্তফা।
  • ১৯৪৯ সালে-বুলবুলিস্তান’ কাব্যগ্রন্থাটি প্রকাশিত হয়েছে ।
  • তাঁর মৌলিক কাব্যের মধ্যে রয়েছে – ‘খোশরোজ’ (১৯২৯), ‘কাব্য-কাহিনী’(১৯৩২), ‘সাহারা’ (১৯৩৬), ’হাসনাহেনা’ (১৯৩৮), ‘কিশোর’, ‘গীতি সঞ্চালন’ (১৯৪৬) এবং  ‘তারানা ই পাকিস্তান’ (১৯৫৬)    প্রভৃতি।
  • তাঁর বাল্যকালের কবিতা নাম – ’কবর’।
  • ’মরু দুলাল’ কোন জাতীয় রচনা – গদ্যগ্রন্থ (রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর জীবনীমূলক গ্রন্থ)।
  • ’মরু দুলাল’ গদ্যগ্রন্থটির রচয়িতা – গোলাম মোস্তফা।
  • বিখ্যাত গদ্যগ্রন্থ ‘বিশ্বনবী’ এর লেখক – গোলাম মোস্তফা।
  • ’বিশ্বনবী’ গদ্যগ্রন্থটি প্রকাশিত হয় – ১৯৪২ সালে।
  • বিখ্যাত কবিতা ‘জীবন বিনিময়’ এর লেখক – গোলাম মোস্তফা।
  • ’জীবন বিনিময়’ কবিতাটি কোন কাব্যের অন্তর্গত – ‘বুলবুলিস্তান’।

গোলাম মোস্তফা এর জীবনী ও সাহিত্যকর্ম

  • ”রইব না আর ঘরের কোণে, বাহির হব দূর ভবনে।” – ’তরুণের অভিযান’ কবিতার অংশ।
  • ’তরুণের অভিযান’ এবং ’বনভোজন’ কবিতার লেখক – গোলাম মোস্তফা।
  • তাঁর রচিত উপন্যাসের মধ্যে রয়েছে – ‘রূপের নেশা’, ‘ভাঙাবুক’, এবং ‘এক মন এক প্রাণ’ প্রভৃতি।
  • ’ইসলাম ও কমিউনিজম’ কোন জাতীয় রচনা – গদ্যগ্রন্থ।
  • তাঁর রচিত ‘ইসলাম ও কমিউনিজম’ গদ্যগ্রন্থটি প্রকাশিত হয় – ১৯৪৬ সালে।
  • ’ইসলাম ও জিহাদ’ একটি – গদ্যগ্রন্থ ।
  • তাঁর রচিত ‘ইসলাম ও জিহাদ’ গদ্যগ্রন্থটি প্রকাশিত হয় – ১৯৪৭ সালে।
  •  ’আমার চিন্তাধারা’ কোন জাতীয় রচনা – গদ্যগ্রন্থ।
  •  তাঁর রচিত ’আমার চিন্তাধারা’ গদ্যগ্রন্থটি প্রকাশিত হয় – ১৯৫২ সালে।
  • ’মুসাদ্দাস-ই-হালী’ কোন জাতীয় রচনা – অনুবাদ গ্রন্থ।
  • তাঁর রচিত ’মুসাদ্দাস-ই-হালী’ অনুবাদ গ্রন্থটি প্রকাশিত হয় – ১৯৪১ সালে।
  • ’কালামে ইকবাল’ কোন ধরনের রচনা – অনুবাদ গ্রন্থ।
  • তাঁর রচিত ‘কালামে ইকবাল’ গ্রন্থটি প্রকাশিত হয় – ১৯৫৭ সালে।
  • তিনি আল-কুরআন অনুবাদ করেন – ১৯৫৮ সালে।
  • ’শিকওয়া ও জওয়াব-ই-শিকওয়া’ কোন জাতীয় রচনা – অনুবাদ গ্রন্থ।
  • বিখ্যাত অনুবাদ গ্রন্থ ‘শিকওয়া ও জওয়াব-ই-শিকওয়া’ এর রচয়িতা – গোলাম মোস্তফা।
  • ’শিকওয়া ও জওয়াব-ই-শিকওয়া’ গ্রন্থটি প্রকাশিত হয় – ১৯৬০ সালে।
  • তাঁর রেকর্ডকৃত গানগুলোর প্রথম লাইনগুলি –  ১.“হে খোদা দয়াময় রাহমানুর রাহিম”  ২. “বাদশা তুমি দীন ও দুনিয়ার নিখিলের চির সুন্দর সৃষ্টি” ৩. ”আমার মুহম্মদ রাসুল”  । 
  • যশোর সাহিত্য সংঘ কর্তৃক ’কাব্য সুধাকর’ উপাধি প্রাপ্ত হন – গোলাম মোস্তফা
  • তিনি ‘কাব্য সুধাকর’ উপাধি প্রাপ্ত হন – ১৯৫২ সালে।
  • পাকিস্তান সরকার কর্ত্বক ‘সিতারা-ই-ইমতিয়াজ’ উপাধি লাভ করেন – গোলাম মোস্তফা
  • তিনি ‘সিতারা-ই-ইমতিয়াজ’ উপাধি লাভ করেন – ১৯৬০ সালে।
  • বিশিষ্ট এই কবি মৃত্যুবরণ করেন – ১৩ অক্টোবর, ১৯৬৪ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *