ফিহা সমীকরণ-হুমায়ূন আহমেদ -(পর্ব-৮)

লােহার ভারী গেটকোন কলিং বেল নেইমারলা লি বেশ কয়েকবার গেটে ধাক্কা দিলেনসেই শব্দ বাড়ি পর্যন্ত পৌছল কিনা তিনি বুঝতে পারছেন নাআকাশ মেঘলা হয়ে আছে। কিছুক্ষণের মধ্যে বৃষ্টি শুরু হয়ে যেতে পারেঠাণ্ডা ঠাণ্ডা লাগছে

কতক্ষণ এভাবে দাঁড়িয়ে থাকবেন? মারলা লি আবার গেটে ধাক্কা দিতে শুরু করলেনপায়ের শব্দ পাওয়া যাচ্ছে, রােবটের পায়ের শব্দমাটি কাপিয়ে রােবট আসছেকি ধরণের রােবট? এত ভারী রােবটতাে আজকাল তৈরী হয় না। 

ফিহা সমীকরণগেট খুলল নাগেটের একটা জানালা খুলে গেলমুখ বের করল পাঠকতার ইরিডিয়ামের চোখ অন্ধকারে জ্বল জ্বল করছেসে আনন্দিত স্বরে বলল, বই নিয়ে এসেছেন? 

হ্যা‘আমার কাছে দিনদিয়ে চলে যান। 

তােমার কাছে দেয়া যাবে নাবইটি মূল্যবান, আমাকেই পৌছে দিতে হবে ফিহার কাছে। 

আপনি বিনা দ্বিধায় আমার হাতে দিতে পারেনআমি ফিহার একজন ব্যক্তিগত সহকারীআমার নাম পাঠকফিহা আমাকে খুবই পছন্দ করেন। 

‘ফিহা তােমাকে খুব পছন্দ করেন জেনে আনন্দিত হচ্ছি। ফিহা আমাকে তেমন পছন্দ করেন না, তবুও আমাকেই বইটি তার হাতে পৌছে দিতে হবে। 

ফিহা সমীকরণ-(পর্ব-৮)

গেটের জানালা বন্ধ হয়ে গেল। পাঠক ধুপ ধুপ শব্দে ফিরে যাচ্ছেমারলা লি লক্ষ করলেন বৃষ্টির ফোটা পড়তে শুরু করেছে। তাপমাত্রা আরাে নেমে গেছেতিনি গাড়ির ভেতর গিয়ে বসবেন কি না বুঝতে পারছেন না। পাঠক নামের এই রােবটটি কতক্ষণে ফিরবে কে জানেপি আর ধরণের রােবট। এদের কাজকর্মে ঢিলেঢালা ধরণের, তবে এদের লজিক খুব উন্নত। তারচেবড় কথা এরা আশেপাশের জগৎ থেকে জ্ঞান আহরণ করেযতই দিন যায় ততই এদের ক্ষমতা বাড়তে থাকে। 

গেট খুলে গেল। পাঠক বলল, ভেতরে আসুন স্যার। ফিহা লাইব্রেরী ঘরে আপনার জন্য অপেক্ষা করছেন। আপনাকে খুব সাবধানে আসতে হবে। ভেতরে আলাে নেই। ইচ্ছা করলে আপনি আমার হাত ধরতে পারেন।। মারলা লি শান্ত স্বরে বললেন, হাত ধরার প্রয়ােজন নেই গে আগে যাও । 

ফিহা ভুরু কুচকে তাকালেন। মনের বিরক্তি গােপন করার কিছুমাত্র চেষ্টা করলেন না। মারলা লি বললেন, এত রাতে কাউকে বিরক্ত করতে ইচ্ছা করল না ! আমি নিজেই বইটি নিয়ে এসেছি। যদিও জানি অনধিকার চর্চা হয়েছে। আমি একজন মেন্টালিস্ট আপনার বাড়ির এক হাজার গজের ভেতর আমার আসার কথা 

তবু এসেছি। 

ফিহা সমীকরণ-হুমায়ূন আহমেদ -(পর্ব-৮)

একজন রােবটকে দিয়ে বইটি আপনি পাঠাতে পারতেন। ‘তি-না, পারতাম না। এই বই অন্যের হাতে দেয়া সম্ভব না। 

ফিহা হাত বাড়িয়ে বই নিলেন। মারলা লি বললেন, আপনার জন্যে এক প্যাকেট কফি এনেছি। যে কোন কারণেই হােক আগের প্যাকেটটি আপনি ফেলে দিয়েছিলেন। 

ফিহা কফির প্যাকেট হাতে নিলেন। মারলা লি বললেন, বাইরে প্রচন্ড ঠাণ্ডা । লক্ষ করেছেন কিনা জানি না, বৃষ্টি পড়ছে। গরম এক কাপ কফি খেলে আমার জন্যে ভাল হত। 

‘বসুন। কফি দিতে বলি। ‘আপনাকে ধন্যবাদ।। 

মারলা লি বসলেন। ফি বসলেন না দাড়িয়ে রইলেন। বসতে ইচ্ছে করলেও অবশ্যি বসার উপায় নেই। একটিই চেয়ার। মারললি বললেন, আপনি বসবেন না ফিহা ? 

‘বসার প্রয়ােজন কি আছে ? 

‘মুখামুখি বসলে কিছুক্ষণ কথা বলতাম। শত্রুপক্ষের সঙ্গেও তাে মানুষ দু’একবার কথা বলে। তাছাড়া বাড়িতে ঢােকার অনুমতি যখন দিয়েছেন। কথা বলার অনুমতিও দেবেন। 

ফিহা লাইব্রেরী ঘর থেকে বের হয়ে পাঠককে বললেন আরেকটি চেয়ার 

লাইব্রেরী ঘরে দিতে। 

পাঠক বলল, চেয়ার টানাটানি করা আমার জন্যে সম্মান হানিকর। রাধুনী। রােবট কে এই কাজটা করতে বলি? 

‘বল। 

ফিহা সমীকরণ-(পর্ব-৮)

‘আরেকটা কথা স্যার, মনে হচ্ছে এই মানুষটি আপনাকে খুব বিরক্ত করছে। ভদ্রতার কারণে আপনি তাকে চলে যেতে বলতে পারছেন না। আমাকে যদি অনুমতি দেন তাহলে কথার পঁ্যাচে ফেলে লােকটাকে বিদেয় করব। আপনার ভদ্রতাও রক্ষা হবে। | ‘তার প্রয়ােজন দেখছি না। তুমি আড়ি পেতে কথা শুনছিলে এ ব্যাপারটিও আমার অপছন্দের। যাও গেটের কাছে গিয়ে দাড়িয়ে থাক।। 

পাঠক চলে গেল। তার ইরিডিয়াম চোখের উজ্জ্বলতা কিছুটা ম্লান হয়েছে। 

মারলা লি বললেন, আপনার বিশাল লাইব্রেরীতে একটি মাত্র চেয়ার দেখে বিস্মিত হয়েছি। 

ফিহা বললেন, বিস্মিত হবার কিছু নেই। আমি একা মানুষ। 

‘আমিও একা মানুষ ফিহা কিন্তু তাই বলে আমার বসার ঘরে বা আমার লাইব্রেরীতে একটি মাত্র চেয়ার থাকবে তা কল্পনাও করতে পারি না। | ‘আপনি ফিহা নন বলে কল্পনা করতে পারেন না। আমি পারি, এবং আমার কাছে এটিই যুক্তিযুক্ত মনে হয়েছে। আমার লাইব্রেরী ঘর কফি খাবার কিংবা আড্ডা দেবার জায়গা নয়। 

এখানে বসে কথা বলতে যদি আপনি অসুবিধা বােধ করেন তাহলে আমরা অন্য কোথাও বসতে পারি।’ 

‘আপনাকে কি কথা বলতেই হবে?” ‘বলতে পারলে ভাল হত। আপনি না চাইলে বলবেন না। ‘আমি কথা বলতে চাচ্ছি না। ‘বেশ। আমি কফি শেষ করেই বিদেয় হব। 

মারলা লি নিঃশব্দে কফি শেষ করলেন। মাথার টুপি খুলে টেবিলে রেখেছিলেন। টুপী মাথায় দিলেন। শান্ত গলায় বললেন, বিদায় নিচ্ছি। শুভ রাত্রি মহামতি ফিহা। 

শুভরাত্রি।

 

Read More

ফিহা সমীকরণ-হুমায়ূন আহমেদ -(পর্ব-৯)

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *