মা, ও মা। কি খােকা? ‘তুমি কী কর? ‘চা খাচ্ছি।’ ‘তুমি কোথায়?
তুই কোথায় খােকা? তুই কোথায়? এইখানে। “কী করছিস?
খেলছি।’
ও খােকা। খােকা। কি? ‘খােকা। খােকা। কাছে আয়।
আমার ছেলে কাঁদতে শুরু করল। তারপর সব আবার চুপচাপ হয়ে গেল। আমি ঘর থেকে বের হয়ে ডিরেক্টরকে বললাম, আজ আর কাজ করব না। আমাকে বাড়ি পৌঁছে দিন, আমার ভয়ংকর খারাপ লাগছে।’ | সেই রাতে আমি একগাদা ঘুমের অসুধ খেলাম | মরবার জন্যেই খেলাম। ডাক্তাররা আমাকে বাঁচিয়ে তুললেন।
মিসির আলি খাতা বন্ধ করে ডাকলেন, ‘বজলু।
বজলু ছুটে এল। মিসির আলি বললেন, “আমার ঢাকা যাওয়া দরকার। এখন যদি রওনা দিই তাহলে কতক্ষণে ঢাকা পৌছুব!’
বজলু হতভম্ব হয়ে বলল, ‘এখন কী যাইবেন? রাত দশটা বাজে।
র থেকে ঢাকা যাবার কোনাে টেন কি নেই? যেটন শেষব্রাতে ছাড়ে? চল, রওনা দিয়ে দিই।
‘স্যার, আপনের মাথাটা খারাপ। ‘কিছুটা খারাপ তাে বটেই। জ্যোৎস্না রাত আছে। জোৎস্না দেখতে–দেখতে যাব।
অনীশ-পর্ব-(১১)
‘সত্যি যাইবেন? ‘হা, সত্যি যাব। একটি দুঃখী মেয়ের সঙ্গে দেখা করা দরকার। খুব দরকার।
রূপা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
মিসির আলি বললেন, ‘এমন করে তাকাচ্ছ কেন? চিনতে পাচ্ছে না? ‘পারছি।
‘তােমার খাতা ফেরত দিতে এসেছি। সবটা পড়ি নি। অর্ধেকের মতাে পড়েছি।‘ ‘সবটা পড়েন নি কেন?‘
‘সবটা পড়ার প্রয়ােজন বােধ করি নি। আমার যা জানার তা জেনেছি। তুমি শান্ত হয়ে আমার সামনে বস। আমার যা বলার বলব। আমি যখন কথা বলব তখন আমাকে থামাবে না। চুপ করে শুনে যাবে।’
রূপা কিছু বলল না। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। মিসির আলি বললেন, ‘তােমার খা পড়ে প্রথম যে—ব্যাপারটায় আমার খটকা লেগেছে তা হচ্ছে তােমার ছেলের কবর গােরস্তানে কেন হল না? কেন তােমার বাড়িতে হল? তােমার মা এই কাজটি কেন করলেন? যে–মহিলা স্বামীর স্মৃতিচিহ্ন রাখেন না, সেই যদি তাঁর নাতির স্মৃতিচিহ্ন ধরে রাখার চেষ্টা কেন করবেন? রহস্যটা কী? | দ্বিতীয় খটকা—তামার মা ধর্মপ্রাণ মহিলা। তিনি তোমার ছেখবরের কাছে দাঁড়িয়ে কখনাে দোয়া–দরুদ পড়েন না। এর মানে কী? এটা কি হলে কর না? মেয়ে, ভােলানাের চেষ্টা?...
অনীশ-পর্ব-(১১)-হুমায়ূন আহমেদ
‘গােরস্তানে কবর দিতে হলে ডেথ সার্টিফিকেট লাগে। তাঁর কাছে ডেথ সার্টিফিকেট ছিল না। কারণ বাচ্চাটি মরে নি। তুমি তোমার মৃত শিশু দেখ নি।...
‘ব্যাপারটা কি এ–রকম হতে পারে না মাের,মা দেখলেন–––তােমাদের বিয়ে টিকিয়ে রাখতে হলে বাচ্চাটিকে মৃত ঘোষণা করাই সবচেয়ে ভালাে বুদ্ধি? বাচ্চাটি দুরে সরিয়ে দিতে তাঁর খারাপ লাগল না, কারণ তিনিও খুব সম্ভব তােমার স্বামীর মতোই বিশ্বাস করেছেন—এই ২ বধ। তােমার স্বামী নন। তোমার মা মানসিকভাবে অসুস্থ একজন মহিলা। তার পক্ষে এ–রকম মনে করাই স্বাভাবিক।...
এখন আসছি তুমি যে শিশুরা শুনতে পাচ্ছ সে–ক্যাপারটিতে। শিশুর সঙ্গে মায়ের টেলিপ্যাথিক যােগযােগ, মােটামটিভাবে স্বীকৃত। তুমি তারিখ দিয়ে–দিয়ে সব লিখেছ বলে আমার খুব কি হয়েছে। আমি লক্ষ করলাম শুরুতে তুমি শুধু কান্না শুনতে।
‘প্রথম যখন মা–মু আৰু শুনলে, হিসেব করে দেখলাম শিশুটির বয়স তখন এক বছর। এক বছর বয়সী শিশুরা মা ডাকতে শেখে। ,..
‘তােমাৱ, ৰা থেকে তারিখ দেখে হিসেব করে বের করলাম, তোমার ছেলে পুরাে বাকা মূখ খুলছে তখন তার বয়স তিন৷
সত্যি যে তােমার সঙ্গে তোমার ছেলের একধরনের যােগাযােগ হয়েছে। পুরাে ব্যাপারটা পারানরম্যাল সাইকোলজির বিষয়। এবংরহস্যময় জগতের অসাধারণ একটি উদাহরণ। ”
‘আমার ধারণা, একটু চেষ্টা করলেই তুমি তােমার ছেলেকে খুঁজে পাবে। এত বড় একটা কাজ শ্রোমার মা একা করতে পারেন না। তাঁকে কারাে–না––কারাের সাহায্য নিতে হয়েছে। তােমাদের বাড়ির দাব্রোয়ান, কাজের মেয়ে—এদের কাছ থেকে সাহায্য পেতে পার। পুলিশকে খবর দিতে পার। বাংলাদেশের পুলিশের গােয়েন্দা বিভাগ ইচ্ছা করলে অসাধ্য সাধন করতে পারে। তার পরেও যদি কাজ না হয় তুমি তােমার