অশরীরী- মনিকা শকুন্তলা

অশরীরী- মনিকা শকুন্তলা
শিশির:অনামিকা কতদিন মুক্তো আকাশে সাদা মেঘের লুকোচুরি দেখিনি তোমায় নিয়ে…
দেখিনি আকাশ জুড়ে চখাচখির ওড়াউড়ি…
তোমার মনে আছে অনামিকা, আমাদের প্রথম দেখা হয়েছিল এই সবুজ প্রান্তরে। তারপর থেকে প্রতি শুক্রবার নিয়ম করে আমরা চলে আসতাম মুক্ত বাতাসে অক্সিজেন আস্বাদনে।
তুমি প্রাণভরে শ্বাস নিতে আর বলতে আহ্ কি প্রশান্তি!
আবার শ্বাস প্রশ্বাসের মাঝে চোখ বন্ধ করে বলতে আমি যেনো স্বর্গে বাস করছি।
তোমার হাত দুটো দাও শিশির।
আমি স্বর্গীয় পরশ চোখে মাখবো।
আর নয়তো অনন্তকাল ধরে এভাবেই দুচোখ বন্ধ করে রাখবো।
সেসব দিনের কথা মনে আছে অনামিকা?
কই এবার তুমি কিছু তো বলো।
আমি একা আর কতো বলে যাব?
অনামিকা:তুমিই বলোনা শিশির।
আমি কেবল শুনি। শুধুই শুনে যাই।তুমিতো জানোই আমি সেই শুরু থেকেই শুনতে ভালোবাসি…
তোমার মুখের কথা, কথার মাঝে মাঝে আবার তোমার অট্টহাসি, হা হা হা
এসব শুনতে শুনতে অভ‍্যস্ত আমি।
মনে হয় আমার হয়ে তুমি সব কথা বলে দিচ্ছ।
কষ্ট করে আর বলতে হচ্ছে না।
মনের জমানো ভাষাগুলো সব প্রাণ পেয়ে যায় তোমার কথায়। কথার কারুকাজে।
আচ্ছা শিশির আজ আকাশে বলাকার ঝাঁক নেই কেনো?
আজ ধূধূ বাতাসের শব্দ পাচ্ছিনা কেনো?
প্রাণভরে শ্বাস নিতে চাইছি কিন্তু পারছিনা কেনো?
তবে কি আমাদের শ্বাস প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে গেছে?
আর ভেজা নরম মাটির পরশ কেনো পাচ্ছিনা?
পা দুখানি মেলে ধরতে পারছিনা কেনো?
শিশির:অটট্হাসিতে বলছে..অনামিকা এখনো অবুঝ রয়ে গেলে তুমি? ঠিক যখন মানুষ ছিলাম আমরা তখন তুমি এমন ছিলে। এবার যখন অশরীরী আত্মায় ফিরে এলে সেই চেনা নদীর পাড়ে তখনও এমনি করেই হাসালে আমায়।
তবে সুখ একটাই সে কি জানো?
আর কোনো বাধা আসবেনা আমাদের জীবনে।
আর কখনো বেঁচে থাকার জন‍্য প্রাণান্তকর লড়াই করতে হবেনা।
আর কেউ আমাদের সম্পর্ক নিয়ে ঠাট্টা তামাশা বিদ্রূপ করতে পারবেনা।
আমরা যে আজ এসব কিছুর ঊর্ধ্বে চলে গেছি।
ওই যে আমাদের প্রিয় যমুনার তীর তার উন্মাতাল বক্ষেই তো আত্মাহুতি দিয়েছিলাম আমরা।
মনে আছে কি অনামিকা? সেদিনও তোমার হাতটি ধরেই মাঝনদীতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম আমরা।
আজ সব অতীত…
সব দু:স্বপ্ন যেন..চলো এবার চলে যাই এস্হান ছেড়ে
নতুন কোনো প্রেতালয়ের সন্ধানে…

কবিতা
কথোপকথনে:অশরীরী
মনিকা শকুন্তলা

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *