উড়ালপঙ্খি-পর্ব-(২২)-হুমায়ুন আহমেদ

ফটোগ্রাফার সার্বক্ষণিকভাবে থাকা দরকার, সেলিব্রিটি কেউ আসল, ঝপাঝপ ছবিতাের বাসায় ক্যামেরা আছে ?

উড়ালপঙ্খিবড় ভাইজানের আছেদিবে না। 

চেষ্টা করতে তাে ক্ষতি নেইচেষ্টা না করেই যদি বলে ফেলিস দিবে নাতাহলে হবে কীভাবে? সব কাজ বাদ দিয়ে বাসায় যা, তাের ভাইকে ভজিয়েভাজিয়ে ক্যামেরা নিয়ে চলে আয়নােরা ম্যাডাম যদি সত্যি আসেন তাহলেঅবশ্যই ছবি তুলতে হবেউনার সঙ্গে তাের পরিচয় কেমন

সামান্য পরিচয়। 

সামান্য পরিচয়ই খাবলাখাবলি করে বড় করতে হবেকখন কী কাজে লাগে কিছুই বলা যায় নাভালাে কথা! তােকে বলতে ভুলে গেছি আমারমামার বাড়ির ত্রিসীমানায় যাবি নাএলাকা আমাদের গ্রুপ মেম্বার সবারজন্যেই আউট অব বাউন্ডতাের জন্যে বিশেষ করে আউট অব বাউন্ড। 

মুহিব অবাক হয়ে বলল, কেন ?

উড়ালপঙ্খি-পর্ব-(২২)-হুমায়ুন আহমেদ

সফিক বিরক্ত হয়ে বলল, সবাই মিলে নির্দোষ একটা মানুষকে সিঁড়ি দিয়ে নেংটো করে দৌড় দেয়াবি আর তার কনসিকোয়েন্স চিন্তা করবি না

ঘটনা কী হয়েছে বলেনথানায় কেইস করেছে

কেইস করলে তাে কোনাে ব্যাপার ছিল নাকেইস টেইস কিছু নাআরজু সাহেবের ব্রেইন ঘটনার পর থেকে শর্ট সার্কিট হয়ে গেছেকাউকে চিনতে টিনতে পারেন নাভ্যাবলার মতাে তাকিয়ে থাকেনআরজু সাহেবের এক মেয়ে আছেযতদূর জানি যুথী নামমেয়ে তােকে পাগলের মতাে খুঁজছে। 

আমাকে খুঁজছে কেন

তােকেই তাে খুঁজবেতুই আরজু সাহেবকে বাড়ি থেকে বের করে নিয়ে এলিনিজের নামও বলে এসেছিসএই সব ক্ষেত্রে সবসময় ফলস্ নাম দিতে হয় যাই হােক, এত দুশ্চিন্তা করার কিছু নেইসামান্য কাপড় খুলতেই যে পাগল হয়ে গেছে তার মধ্যে পাগলামি আগে থেকেই ছিলদুদিন পর আপনা আপনি পাগল হতােএখন দোষ পড়েছে আমাদের ঘাড়েদাড়িয়ে থেকে সময় নষ্ট করিস নাক্যামেরা আনার ব্যবস্থা কর । 

উড়ালপঙ্খি-পর্ব-(২২)-হুমায়ুন আহমেদ

বাড়ির ভেতরের দিকের উঠোনে এবং পা ঝুলিয়ে বসে আছেদুজনের মুখই অসম্ভব গম্ভীরমুহিবকে ঢুকতে দেখে দুজনই একসঙ্গে মুখ তুলে তাকাল এবং মাথা দুলিয়ে দুলিয়ে হাসতে লাগললক্ষণ মােটেই ভালাে নাএই দুবােন যখন একসঙ্গে কারাে দিকে তাকিয়ে হাসে তখন বুঝতে হবে তার কোনাে খারাপ খবর আছেমুহিব বলল, তােদের খবর কী রে

দুজন একসঙ্গে বলল, ভা-লােবিকেলের মার খেয়েছিস ? দুজন একসঙ্গে হাসূচক মাথা নাড়লতাদের মুখের হাসি মুছে গেল না। 

বাড়ির পরিস্থিতি অস্বাভাবিক এটা মুহিব বুঝতে পারছেমুহিবের মন বলছে পঞ্চাশ হাজার টাকার ঘটনা কোনাে একটা ক্লাইমেক্সে পৌছেছেমুহিব বলল, মা কই জানিস

বলল, চলে গেছে । 

মাথা দুলিয়ে হেসেই যাচ্ছেউঠানের শেষ প্রান্তে নতুন কাজের মেয়েটা আনারস কাটছেআসরের নামাজের পর বড়চাচা সিজনাল ফুটস খানআমের সময় আমআনারসের সময় আনারসকাজের মেয়েটা আনারস কাটা বন্ধ করে এক দৃষ্টিতে মুহিবের দিকে তাকিয়ে আছেমুহিবের চোখে চোখ পড়তেই সে অতি দ্রুত চোখ নামিয়ে নিলআনারস কাটায় অতিরিক্ত মনােযােগী হয়ে গেলএর হাসি এবং কাজের মেয়েটির কর্মকাণ্ড পরিষ্কার বুঝিয়ে দিচ্ছে বাড়িতে পঞ্চাশ হাজার টাকার ঘটনা চূড়ান্ত পরিণতির দিকে চলে গেছে

উড়ালপঙ্খি-পর্ব-(২২)-হুমায়ুন আহমেদ

শুধু মাবাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ার ব্যাপারটা বােঝা যাচ্ছে নাবাড়িতে ইন্টারেস্টিং কোনাে ঘটনা ঘটবে আর তিনি থাকবেন না তা হয় নামুহিব কাজের মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বলল, এই মেয়ে তুমি আমাকে কড়া করে এক কাপ চা খাওয়াতে পারবে ? কাজের মেয়েটা ভোতা মুখ করে বলল, আমার হাত বন্ধ । মুহিব নিজের ঘরে ঢুকে গেলতার সারা শরীর কুটকুট করছেশরীর থেকে বাসের কন্ডাকটরদের গায়ের গন্ধের মতাে গন্ধ বের হচ্ছেসারাদিন ঘােরাঘুরির উপর দিয়ে গিয়েছেগায়ে ঘামের আস্তর পড়ে গেছে

সাবান ডলে ডলে ঘামের আস্তর একের পর এক সরাতে হবেএটি একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়াএই প্রক্রিয়ায় যাবার আগে গরম এক কাপ চা খেয়ে নিলে হতােসেটা সম্ভব হচ্ছেনামুহিব গায়ের ঘামে ভেজা শার্ট খুলতে গিয়েও খুলল নাবাথরুমে সাবান নেই এটা মনে ছিল নাসাবান কিনে আনতে হবেসাবান কিনে ফেরার সময় খায়রুলের দোকান থেকে ইসপিশাল নতুন পাত্তির চা খেয়ে আসা যায় । 

মুহিব কখন ফিরেছ

মুহিবের বড়ভাবি দরজা ঠেলে ঘরে ঢুকলেনমুহিব বলল, তিন মিনিট এখনাে পার হয় নি। 

আজ দুপুরবেলা তােমার খোজে একটা মেয়ে এসেছিলহাউমাউ করে কান্না। 

মেয়েটা কে ? আমরা তাে কেউ চিনি নানাম বলল যূথীযূথী নামে কাউকে চেন ? একদিন দেখা হয়েছিল ঘটনাটা কী? একদিন যার সঙ্গে দেখা সে রকম কাঁদবে কেন ? তােমরা জিজ্ঞেস কর নি কেন কাদছে

আমি অনেকবারই জিজ্ঞেস করেছিকিছুই বলে না, শুধু কাঁদেএকটা টেলিফোন নাম্বার দিয়ে গেছেশুধু বলে গেছে তুমি যখনই আস, যত রাতেই আস এই টেলিফোন নাম্বারে টেলিফোন করার জন্যেদেব টেলিফোন নাম্বার

উড়ালপঙ্খি-পর্ব-(২২)-হুমায়ুন আহমেদ

দাওতােমাকে ভূতের মতাে লাগছে কেন ? কোথায় ছিলে ? ঘােরাঘুরির মধ্যে ছিলামভাবি এক কাপ চা খাওয়াতে পারবে? কেন পারব নাচা পাঠিয়ে দিচ্ছিতােমার কাছে ফ্রেশ গায়েমাখা সাবান আছে ? থাকার তাে কথাআমি চা এবং সাবান পাঠিয়ে দিচ্ছি। 

ভাবি থ্যাংক য়ুআমি আমার জীবনের দীর্ঘতম গােসলটা আজ সারবThe longest bath

গােসল সেরে বড়চাচার সঙ্গে দেখা করােউনি তােমাকে খুঁজছিলেনকোনাে বিশেষ ঘটনা ? জানি না তাে

মুহিব বড়চাচার সামনে বসে আছেতিনি খবরের কাগজ পড়ছিলেনহাতের ইশারায় মুহিবকে বসে থাকতে বলেছেনসে বসেই আছেআজকালকার খবরের কাগজে এত মন দিয়ে পড়ার কিছু থাকে নাতােফিকুর রহমান সাহেবের অনেক বিরক্তিকর অভ্যাসের মধ্যে এটি একটিকথা বলার জন্যে ডেকে পাঠিয়ে সামনে বসিয়ে রাখবেন, অন্য কোনাে অর্থহীন কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়বেনসেই কাজ দীর্ঘ হতেই থাকবেকিছুতেই আর শেষ হবে না । মুহিব । 

জি। 

তােমার বিষয়ে একটা অপ্রিয় সিদ্ধান্ত আমরা নিয়েছিবাধ্য হয়ে নিতে হয়েছেশেকসপিয়রের কথায় বলিThave to be cruel only to be kind

কী সিদ্ধান্ত

উড়ালপঙ্খি-পর্ব-(২২)-হুমায়ুন আহমেদ

তুমি এই বাড়িতে আর বাস করবে নাঅন্য কোথাও থাকবেহােটেলে, কিংবা কোনাে বন্ধুর বাড়িতে কিংবা রেলস্টেশনে। 

জি আচ্ছা জানতে চাচ্ছ না কেন

বুঝতে পারছিমনে হচ্ছে চুরি সংক্রান্ত কিছুবড় ভাইজানের টাকাটা বােধহয় আমার ঘরে পাওয়া গেছে। 

| তৌফিকুর রহমান ইজিচেয়ারে সােজা হয়ে বসতে বসতে বিস্মিত গলায়বললেন, আমি অবাক হচ্ছি, তুমি খুবই স্বাভাবিক আচরণ করছতােমার মধ্যে অপরাধবােধ গ্লানিবােধ কিছুই দেখছি না। 

মুহিব বলল, একটু আগে গােসল করেছি তাে চাচা! আমাকে ফ্রেশ লাগছেচেহারায় এই জন্যেই গ্লানিবােধ অপরাধবােধ এইসব জিনিসের ছাপ পড়ছে না| তােমার সঙ্গে আমার কথা শেষ, তুমি এখন যাওযদি সম্ভব হয় তুমি তােমার মায়ের সঙ্গে দেখা করবেসেই বেচারি মনে খুব কষ্ট পেয়েছেকান্নাকাটি করছিলতােমার মুখ দেখতে হবে এই ভয়ে সে বাড়ি ছেড়েই চলে গেছে

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *