ঊর্মিমালা
-মনিকা শকুন্তলা
ঊর্মিমালা তুমি ঠিক সাগরের সফেদ বুদবুদ ফোঁটা ঢেউ
আমার এই স্হবির জীবনটাকে কখনো বুঝতে চায়নি কেউ
নিতে চায়নি স্নেহের ডোরে আবেশে
আমি সত্যি বড় কৃতজ্ঞ এবং বড় বেশি আহ্লাদিত আজ তোমার কাছে
মনে পড়ে বারবার সেদিনের কথা,
হঠাৎ রেল দুর্ঘটনার শিকার হয়ে আমার পা হারানো
আমি অসার শরীরে শুয়ে আছি হসপিটালের শয্যায়
ব্যতিব্যস্ত চিকিৎসক ক্রমাগত সুঁই ফুটিয়ে যাচ্ছিল আর স্যালাইন ব্লাড সবকিছু অতিদ্রুত গতিতে শরীরে প্রেরণ করা হচ্ছিলো
এসব দেখতে না দেখতেই কিছু বুঝে ওঠার আগেই আমাকে ওটিতে নিয়ে যাওয়া হলো
আমি তখন নিজের শরীরের ক্রমান্বয়ে ক্ষয়ে যাওয়া
নিঃশেষ হয়ে যাওয়া একটু একটু করে উপলব্ধি করতে না করতেই এ্যানেসথেসিয়া আমাকে গ্রাস করলো
আমি অসহ্য অস্বাভাবিক যন্ত্রণা থেকে সাময়িক নিদ্রা গেলাম
প্রাসঙ্গিক অস্ত্রের কাটাকুটিতে আর চিকিৎসকের আন্তরিক শ্রমে ধীরে ধীরে সম্বিৎ ফিরে পাই বটে
তবে…তবে…অনেক হালকা বোধ করি
অ…নে…ক
যেন জন্ম থেকে বহন করে বেড়ানো কিছু হারিয়ে গেছে চিরতরে…
হ্যাঁ সত্যিই তাই আমি হাত দুটো পায়ের দুপাশে স্পর্শ করতেই চিরশূন্যতা অনুভব করলাম
ধাক্কা খেলাম নিজের অস্তিত্বের কাছে
নিজেকে সামলানোর শত চেষ্টা করলাম
কিন্তু হার্টবিট সে কথা বলছে না
দ্রুত শ্বাস প্রশ্বাস চলছে
বুকের পাজর ভেঙেচুড়ে অলিন্দ নিলয় সব একাকার হয়ে যাচ্ছে
শিরায় উপশিরায় ক্রমশ জট পাকিয়ে যাচ্ছে যেন
মষ্তিস্ক বলে কিছু আছে কিনা বুঝতে কষ্ট হচ্ছিলো
সমস্ত শরীর যেন আবার অসার হচ্ছিলো
পাথরের চেয়েও ভারী মনে হচ্ছিলো নিজেকে
তখন সেই অবস্হায় সাগরের ঢেউয়ের মতোই চারিদিক ছাপিয়ে তুমি এসে উপস্হিত হয়েছিলে হসপিটালের সেই কক্ষটিতে
কিভাবে কখন কার কাছে খবর পেয়েছিলে জানিনা আমি
তবে এতটুকু শুধু জানি যে তুমি সব জেনেশুনেই এসেছো
আমার প্রেরণাদায়ী হয়ে
আমাকে বেঁচে থাকার সাহস জোগাতে
তুমি অন্য সবার মতো করোনি সেদিন
আমাকে জড়িয়ে ধরে আহাজারি করোনি একটুও
বরং হাস্যোজ্জ্বল মুখে বলেছিলে তুমি বেঁচে আছো হা এটাই আমার সবচেয়ে বড় পাওয়া
আমি আমার দুটো পা তোমাকে উৎসর্গ করলাম আজ থেকে
এতদিন তো নিজের জন্যই শুধু পথ চলেছি
আজ থেকে না হয় দুজনের জন্য চলবো
তুমি শুধু প্রেরণা দিও
সেদিন আমি আবারো বিস্মিত হয়েছিলাম
আমার এই অবস্থায় তুমি কতটা সাহস দিয়েছিলে তুমি তা জানোনা ঊর্মিমালা
তুমি সাহসিকা তুমি বিজয়িনী তুমি তরঙ্গিনী জীবনপাথারে
আজো শুধু চেয়ে চেয়ে তাই দেখি সাগরের দিকে
ঊর্মিমালা নামটি সার্থক তোমার জন্যে
অজস্র শক্তিসঞ্চারিনী হয়ে আগলে রেখেছো আজো আমাকে
তোমার মতো সর্বাঙ্গসুন্দরী প্রেয়সী সহসাই পারতে অন্যত্র যেতে
আমার অঙ্গহীনতা এতটুকু অবদমিত করেনি তোমাকে
বরং নিজের দায়িত্ব ভেবে কর্তব্যবোধে সবটা করে গেছো এখনো শত সহস্র আনন্দরাশি মুখে ধরে রেখে ভালোবেসে যাচ্ছো নিরন্তর।
আমি পরাজিত আমি তৃষ্ণার্ত এবং আমি জন্ম জন্মান্তর ধরে যেন আকাঙ্খিত চাতকের মতো চেয়ে আছি
সফেদ নীল অজস্র শক্তি সঞ্চারিনী ঊর্মিমালার দিকে
তুমি আমার ঊর্মি নিস্তরঙ্গ সমুদ্রে তরঙ্গিনী রুপে…!!!