কর্নেল ড্রয়িংরুমে ঢুকে বললেন, ‘তােমাকে আশা করছিলাম অরিজিৎ? বিশেষ করে তােমার বন্ধু ইন্দ্রজিত্যাবুর সঙ্গে তােমার অ্যাপয়েন্টমেন্ট আছে জানার পর।
ডিটেকটিভ ডিপার্টমেন্টের ডেপুটি কমিশনার অরিজিৎ লাহিড়ি হাসলেন। হাতে প্রচুর সময় ছিল। তাই অন্তত ষষ্ঠীর সুস্বাদু কফিটা খেয়ে যাই ভেবেছিলাম। এই যে জয়ন্তবাবু! কেমন আছেন মশাই? অনেকদিন দেখাসাক্ষাৎ নেই।।
বললাম, কর্নেলের পাল্লায় পড়লেই আমার সঙ্গে রেগুলার দেখা হবে মিঃ লাহিড়ি!
কর্নেল বসে বললেন, ‘বেলেঘাটার ওখানে ক্যানেলে একটা বডি পাওয়া গেছে তাে? | হ্যাঁ। আমাদের অফিসাররা বলছেন, ডিস্কোসাহেবের লােক কিন্তু আপনি জেনে গেছেন’ কী নাম?
‘স্বপন দাশ। ইয়ং ম্যান। নিউমার্কেটে একটা ভিডিও ক্যাসেটের দোকান আছে। বাড়ি তালতলা এরিয়ায়। ক্রিমিন্যাল তাে বটেই। অরিজিৎ কফিতে চুমুক দিয়ে ফের বললেন, ‘আশ্চর্য ব্যাপার! পকেটে একটা দিশি পিস্তল পাওয়া গেছে। তার মানে, নিরস্ত্র ছিল না। অথচ নিজেই মাথার পিছনে গুলি খেয়ে মারা পড়েছে। পয়েন্ট টোয়েন্টি টু রিভলভারের গুলি। রাত্রে বৃষ্টি পড়েছিল খুব। তাই খালের ধারে গাড়ির টায়ারের দাগ পাওয়া গেছে। দরজা খুলে গড়িয়ে বডি খালে ফেলেছে।
‘তাহলে বলা যায়, ওলসন হাউসের কাছেই কেউ ওত পেতে ছিল! ‘তাই মনে হচ্ছে।
আমি বললাম, “ঠিক এই কথাটাই কর্নেলকে বলছিলাম। কর্নেল বললেন, এটা নাকি আমার নিছক ধারণা।
অরিজিৎ গম্ভীর মুখে বললেন, আমাদেরও নিছক ধারণাই। উই আর নট সিওর।
কর্নেল সমগ্র প্রথম খন্ড এর অংশ -১৫
‘ইন্দ্রজিৎবাবু ডিস্কোর সঙ্গে ডুয়েল লড়তে চান। কর্নেল টুপি খুলে টাকে হাত মুলােতে বুলােতে বললেন। ডিস্কোর পরিচয় তুমিও সম্ভবত জানাে না অরিজৎ!
নাহ্। দ্যাটস্ ওনলি নেম টু মি। ‘কোনও হিন্ট পাওনি তার সম্পর্কে?
শুধু এটুকু জানি, তার নাকি অনেক ডামি আছে। কোনটা রিয়্যাল ডিস্কো, তা মাকি কেউ–ই জানে না।” অরিজিৎ হাসলেন। মাঝেমাঝে আমার মনে হয়, নামটাই একটা গুজব। ভূতের মতাে। হয়তাে অত্যন্ত সাধারণ কিংবা চেনা কেউ এই নাম নিয়ে অদ্ভুত খেলা খেলছে। যাই হােক, ডিস্কো ইজ আ মিস্ট্রি। কিন্তু আপনি ভাবে জানলেন বডি পাওয়ার খবর?
‘ডিস্কো জানিয়েছে। : ‘অাঁ ? হ্যাঁ ডার্লিং! ডিস্কোর সঙ্গে আমার যােগাযােগ হয়েছে। তবে জানি না সেটা
অমি কি না। | অরিজিৎ মুচকি হেসে বললেন, ‘জয়ন্তবাবুদের কাগজে এক ভদ্রলােক আপনার ‘আর্লিং বলা নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করেছেন।
আমি বললাম, ‘পড়েছেন? কর্নেলের ইংরেজি বলাতেও ওঁর আপত্তি! ‘ভিন্নরুচিৰ্হি জনাঃ!’ অরিজিৎ সিগারেট ধরিয়ে বললেন, আমার মতে, ডার্লিং লাটা কর্নেলের একটা টিপিক্যাল ফিচার। এটাই ওঁর বৈশিষ্ট্য। ডার্লিং বলছেন না কর্নেল নীলাদ্রি সরকার, এটা অকল্পনীয়। তাছাড়া ঐতিহাসিক কারণে তাে বটেই, আরও নানা কারণে ইংরেজি বলাটা আমাদের চরিত্রগত বৈশিষ্ট্য। ভারতের মতাে একটা বহুভাষী দেশে ইংরেজি ছাড়া চলে না।
তাছাড়া ফর এক্সজাম্পল, এমকিউজ মি কথাটা বাংলা করলে কী অদ্ভুত শােনাবে ভাবুন। । অরিজিৎ ইংরেজি নিয়ে কিছুক্ষণ বক্তৃতা চালিয়ে গেলেন। ষষ্ঠী আমাদের জন্য কফি আনল। অরিজিৎ বললেন, এই যে ষষ্ঠীর কফি!। এছাড়া কর্নেলকে কল্পনা। করাই তাে অসম্ভব। সেই সমালােচকের অবস্থা সত্যি অনাথের মতাে। আই ফিল পিটি ফর হিম।
কর্নেল বললেন, ‘অনাথ? অনাথ কেন?
কর্নেল সমগ্র প্রথম খন্ড এর অংশ -১৫
‘প্রেসিডেন্সিতে আমার এক বন্ধু ছিল অনাথ নামে। ইন্দ্রজিৎও তাকে চিনত। ইংরেজি শুনলে চটে যেত। কিন্তু উত্তেজনার সময় সে কী সাংঘাতিক ইংরেজি বলত ভাবা যায় না।
‘অরিজিৎ! অনাথরা অনেক সময় পরগাছা হয়ে ওঠে। | অরিজিৎ একচোট হেসে বললেন, ‘ইন্দ্রজিৎ পরগাছা নামে একটা নাটক করেছে। আমাকে দেখতে যেতে বলেছিল। শুনলাম, আপনি দেখে এসেছেন। নাটকে কি অনাথ নামে কোনও চরিত্র আছে? | কর্নেল অন্যমনস্কভাবে বললেন, নাহ্। তবে অনাথ-অনাথ…’বলে হঠাৎ উঠে দাঁড়ালেন কর্নেল। জাদুঘরসদৃশ এই ড্রইংরুমের কোণার দিকে গিয়ে ওঁর ছােট্ট সেক্রেটারিয়েট টেবিলের ড্রয়ার খুললেন। একটা নােটবই বের করতে দেখলাম। পাতা উল্টে কিছু দেখে নিয়ে ফিরে এলেন। ইজিচেয়ারে বসে বললেন, হ্যাঁ।
অনাথবন্ধু রায়। অরিজিৎ তােমাদের সেই বন্ধুর নাম কি অনাথবন্ধু রায় ছিল? | অরিজিৎ একটু ভেবে নিয়ে বললেন, ‘পদবি মনে নেই। তবে অনাথবন্ধু বটে। খুব খেয়ালি ধরনের ছেলে ছিল মনে পড়ছে। ওকে আমরা সবসময় উত্ত্যক্ত করতাম।।
‘রাঙাটুলিতে গিয়ে এই ভদ্রলােকের সঙ্গে আলাপ হয়েছিল। ইনিও খেয়ালি। পরিবেশদূষণ নিয়ে আন্দোলন করে বেড়ান নানা জায়গায়। জানি না ইন্দ্রজিৎবাবুর নাটকের আইডিয়া ইনিই যুগিয়েছিলেন কি না।’
কর্নেল সমগ্র প্রথম খন্ড এর অংশ -১৫
অরিজৎ ঘড়ি দেখে বললেন, যাক, ওসব কথা। যেজন্য এসেছিলাম, বলি। প্রথমত, বেলেঘাটার ক্যানেলে ডিস্কোর লােক স্বপনের ডেডবডি পাওয়ার কথা তাে আপনি জেনেছেন। স্বয়ং ডিস্কোই জানিয়েছে। তবে দ্বিতীয় ঘটনা হলাে, বেলা দুটোর পর ওলসন হাউস থেকে আমরা পুলিশ তুলে নিয়েছিলাম। সন্ধ্যা সাড়ে ছটা নাগাদ হ্যারি ওলসন থানায় ফোন করে জানান, দোতলার একটা মেয়ে ওঁকে এইমাত্র বলে গেল, চন্দ্রিকার ফ্ল্যাটে কেউ ঢুকেছে।
তখনই অশােক গুপ্ত গিয়ে এনকোয়ারি করেন। কিন্তু চন্দ্রিকার ঘর আগের মতােই তালাআঁটা আছে। দোতলার সেই মেয়েটি ওঁকে অবশ্য জোর দিয়ে বলেছে, লােডশেডিংয়ের সময় নাকি লােকটাকে ওপরে উঠতে দেখেছিল। অশােকবাবুর মতে, চন্দ্রিকার কোনও পুরনাে খদ্দের। কারণ লােকটা ডিস্কোর চেলা হলে দোতলার মেয়েটি চিনতে পারত।
“আর কিছু?
নাই। তবে অশােকবাবু আমাকে ঘটনাটা জানানাের পর আমার মনে হচ্ছে, চন্দ্রিকার এমন কোনও ডকুমেন্ট আছে, যা খুনী এখনও হাতাতে পারেনি।
Read More