সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের কর্নেল সমগ্র প্রথম খন্ড এর অংশ -১৬

আপনি চলুন আমার সঙ্গে। আপনার চোখের দৃষ্টি অন্যরকম। হয়তাে আপনিই সেটা আবিষ্কার করতে পারবেন।

কর্নেল সমগ্র ১ম খণ্ড 

কর্নেল একটু হেসে বললেন, ‘চন্দ্রিকার খুনী ব্যর্থ চেষ্টা করছে। ওর ঘরে যেটা খুঁজছে, সেটা বেহাত হয়ে গেছে। চন্দ্রিকা বুদ্ধিমতী মেয়ে ছিল। 

কিন্তু ডকুমেন্টটা কী হতে পারে? ‘একটা সাংকেতিক সূত্র লেখা কাগজ। 

অরিজিৎ ভুরু কুঁচকে বললেন, আপনার হাতের তাস আপনি আগে দেখাতে চান না জানি। কাজেই আর কোনও প্রশ্ন করব না। শুধু একটা রিকোয়েস্ট, ডিস্কোকে বলুন, ইন্দ্রজিৎকে আর যেন উত্ত্যক্ত না করে। সৌরভ নাট্যগােষ্ঠী নিয়েই বেচারার যা কিছু উচ্চাকাঙক্ষা। সব সময় প্রাণনাশের ঝুঁকি থাকলে ওর নাটক করা বন্ধ হয়ে যাবে। তাছাড়া ইতিমধ্যে ওর দলে নাকি ডিস্কোর চর ঢুকেছে। | ‘চন্দ্রিকা বেঁচে নেই। কাজেই ডিস্কো আর ইন্দ্রজিত্ববুর পেছনে লাগবে কেন? কর্নেল নিভে যাওয়া চুরুট জ্বেলে নিয়ে বললেন, তােমাকে জানানাে উচিত, ইন্দ্রজিৎবাবুই বরং ডিস্কোর পেছনে লেগেছে।’ 

অরিজিৎ হেসে উঠলেন। আসলে চন্দ্রিকার সঙ্গে ওর এমােশনাল অ্যাফেয়ার ছিল বলে আমার ধারণা। তাই ডিস্কো বা তার নােক চন্দ্রিকাকে মেরেছে ভেবেই ইন্দ্রজিৎ খাপ্পা। আমি ইন্দ্রজিৎকে বলেছি, তুমি নির্ভয়ে নাটক চালিয়ে যাও। আর যেন কলগার্লদের ছায়া মাড়িও না। দলের কাকেও ডিস্কোর চর সন্দেহ হলে তাড়িয়ে দাও। ব্যস! ফুরিয়ে গেল। ” , “… : ১ 

‘একটা কথা, অরিজিৎ! 

বলুন। ‘কিছুদিন আগে ওলসন হাউসে পুলিশ হানা দিয়েছিল। সত্যিই কি নার্কোটিকস পাওয়া গিয়েছিল কলগার্লদের কাছে? 

অরিজিৎ গম্ভীর হয়ে বললেন, নাহ্। ওটা পাবলিক খাওয়ানাে খবর। জাস্ট আ শশা বিজনেস। 

কর্নেল সমগ্র প্রথম খন্ড এর অংশ -১৬

‘ইন্দ্রজিৎ ব্যানার্জির অনুরােধে তুমিই হানার ব্যবস্থা করেছিলে কি? ‘! অরিজিৎ সিগারেট অ্যাশট্রেতে গুঁজে বললেন, “ইন্দ্রজিতের ধারণা, ডিস্কো ওকেই ওয়ার্নিং দিতে চন্দ্রিকাকে ওর প্রেমিকা এবং চর ভেবে খুন করেছে। ইন্দ্রজিৎ আজ বলছিল, হানা দেওয়াটা ভুল হয়ে গেছে। কিন্তু পরে যা ঘটল, দেখা যাচ্ছে চন্দ্রিকাকে খুনের উদ্দেশ্য ভিন্ন। কাজেই এখন ব্যাপারটা যা দাঁড়াল, তা হচ্ছে ডিস্কো নাম ইন্দ্রজিতের দ্বন্দ্বের সঙ্গে চন্দ্রিকার মার্ডারের কোনও সম্পর্ক নেইদেয়ার ইজ আ থার্ড ম্যান। 

‘দ্যাটস রাইট। কর্নেল চোখ বুজে হেলান দিলেন। ” 

‘আমি চলি কর্নেল ! আমরা থার্ড ম্যানকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি। আপনিও করুন। তবে ডিস্কোকে ব্যাপারটা জানিয়ে দেবেন, ইন্দ্রজিতের সঙ্গে ওর তও শত্রুতার আর কারণ নেই। আমি ইন্দ্রজিৎকে একই কথা বলেছি। 

অরিজিৎ লাহিড়ি চলে যাওয়ার পর বললাম, ডিস্কোকে ফোন করবেন না? ‘কেন? ‘লাহিড়িসায়েব ইন্দ্রজিত্যাবুর সঙ্গে মিটমাট করিয়ে দিতে বলে গেলেন। 

সমস্যা হলাে জয়ত্ত, ডিস্কোর ডামি আছে অনেকগুলাে। যতক্ষণ না আসল ডিস্কোকে পাচ্ছি, ততক্ষণ ইন্দ্রজিত্ববুর সঙ্গে তার মিটমাট করানাের চেষ্টা বৃথা। কর্নেল দাড়িতে হাত বুলিয়ে একটু হাসলেন। ফের বললেন, মানুষের ছায়ার সঙ্গে তাে আর রক্তমাংসের মানুষের মিটমাট করিয়ে দেওয়া যায় না। ডিস্কো এখনও ছায়া। ছায়াটা কার এটাই প্রশ্ন। 

‘ফোনে ডাকুন ডিস্কোকে। বলুন সশরীরে হাজির হতে। 

কর্নেল সমগ্র প্রথম খন্ড এর অংশ -১৬

সে আসবে না। পাঠাবে তার ডামিকে। আপনি নিশ্চিত হচ্ছেন কীভাবে? ‘আমি নিশ্চিত। ভুলে যেও না, স্বয়ং অরিজিৎও স্বীকার করে গেল, ডিস্কো তার কাছে একটা নাম মাত্র। 

‘তাহলে এবার তৃতীয় লােকটিকে খুঁজে বের করাই আপনার প্ল্যান নিশ্চয় ? 

‘হ্যাঁ। কর্নেল চোখ বুজে বললেন। তাকে চিনতে পারলেই কে প্রকৃত ডিস্কো জানা যাবে সম্ভবত। 

‘আমি উঠি কর্নেল। যাবে? আচ্ছা। কর্নেল অন্যমনস্কভাবে কথাটা বললেন।… 

কোথায় যেন পড়েছিলাম, ‘Beware of those thoughts come in night ! রাতের চিন্তা সম্পর্কে সাবধান! বিছানায় শােয়ার পর চিন্তা এসে আমাকে উত্ত্যক্ত করছিল। কোনও রহস্য নিয়ে চিন্তা আমার কাছে নতুন কিছু নয়—অন্তত কর্নেল নীলাদ্রি সরকারের সান্নিধ্যে আসার পর থেকে। কিন্তু সেই সব চিন্তা আলতাে ছুঁয়ে গেছে মাত্র। আজ রাতের চিন্তা মাছির ঝাঁকের মতাে মগজে ভনভন করছিল। অবশেষে মরিয়া হয়ে একটা বােঝাপড়ার জন্য আমার জানা তথ্যগুলাে কাগজে লিখে ফেললাম। |

পটভূমি ১: রাঙাটুলির জনৈক অজয় রায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সামরিক ঘাঁটিতে কন্ট্রাক্টর ছিলেন। কোনও অপরাধে তাঁর জেল হয়। জেলেই তিনি মারা যান। তাঁ স্ত্রী শিশুকন্যা চন্দ্রিকাকে নিয়ে স্বামীর মাসতুতাে দাদা হরনাথ সিংহের কাছে আশ্রয় নেন।হরনাথ চন্দ্রিকার বিয়ে দিয়েছিলেন এম এল এ বটুক চৌধুরীর ছেলে রথীনের সঙ্গে। রথীন কলকাতায় থাকার সময় খুন হয়ে যায়। স্বামীর হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে চন্দ্রিকা জড়িয়ে পড়ে। আইনজীবী অলকবাবুর দ্বারস্থ হয়। তারপর সে কোনও ঘটনাচক্রে ডিস্কোর পায় পড়ে। মামলা থেকে বেঁচে গেলেও কলগার্লের ভূমিকায় তাকে নামতে হয়েছিল। তারপর তার নাট্যপরিচালক ইন্দ্রজিতের সঙ্গে চেনাজানা হয় এবং নাটকে নামার সুযােগ পায়। কিন্তু ডিস্কো নাকি এটা চায়নি। ইন্দ্রজিৎকে হুমকি দেয়। ইন্দ্রজিৎ কর্নেল নীলাদ্রি সরকারের দ্বারস্থ হন তাঁর বন্ধু ডি সি ডি ডি অরিজিৎ লাহিড়ির পরামর্শে। বােঝা যায়, বহুরূপী ডিস্কোর পরিচয় জানতেই ইন্দ্রজিৎ কর্নেলের দ্বারস্থ হন। ইন্দ্রজিৎ বলছিলেন, ‘নিজের হাতে ডিস্কোকে শাস্তি দেবেন। 

কর্নেল সমগ্র প্রথম খন্ড এর অংশ -১৬

পটভূমি ২ : চন্দ্রিকাকে সম্প্রতি কেউ অদ্ভুত ভাষায় উত্ত্যক্ত করছিল। চাই চিচিং ফাঁক’ বলত কি সে? যাইহােক, ইন্দ্রজিতের মুখে কর্নেলের পরিচয় পেয়ে চন্দ্রিকা গতরাতে কর্নেলকে অনুসরণ করে আসে এবং ইচ্ছে করেই (?) পাসটা আমাদের গাড়িতে ফেলে যায়। পার্সের ভেতর অদ্ভুত কোড লেখা একটা চিরকুট পাওয়া গেছে। এর পর চন্দ্রিকা তার ফ্ল্যাটে খুন হয়েছে। ডিস্কো যার হাতে ডুপ্লিকেট চাবি পাঠিয়েছিল, তার নাম স্বপন। সে-ও খুন হয়েছে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, চন্দ্রিকা প্রাইভেট ডিটেকটিভ কে, কে হালদারের দ্বারস্থ হয়েছিল। তাঁকে বলেছিল, তার কোনাে বিপদ (খুন) হলে রাঙাটুলির হরনাথকে খবরটা জানাতে হবে। 

পটভূমি ৩ : রাজনীতি করা লােক রাঙাটুলির বটুক চৌধুরীর ভগ্নিপতি অমরেন্দ্র সিংহরায়কে সম্প্রতি কে বা কারা অদ্ভুতভাবে উত্ত্যক্ত করছে। চাই চিচিং ফাঁক’ (?) লেখা চিরকুট ফেলেছে অমরেন্দ্রর ঘরের দরজায়। অমরেন্দ্র এবং বটুক চৌধুরীর মধ্যে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল। বটুকবাবুও সম্ভবত (?) খুন হয়েছিলেন।

Read More

সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের কর্নেল সমগ্র প্রথম খন্ড এর অংশ -১৭

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *