ধরুন যদি কোনও থার্ড পার্টি এই ঘটনার সুযােগে টাকাটা হাতাতে চায়?
মৃদুলা উঠে দাঁড়িয়েছিলেন। শান্তভাবে বললেন, আমি বােকামি করছি না কর্নেল সায়েব! চিঠিটা পাওয়ার পরে টেলিফোনে কিডন্যাপার ইন্দ্রজিতের মুখ দিয়ে বলিয়েছে, টাকা না দিলে ওরা ওকে মেরে ফেলবে। আমার স্বামীর গলার স্বর
আমি চিনি। বেশ কিছুক্ষণ কথা বলেছি।’
‘আই সি। কর্নেল একটু হাসলেন। ঠিক আছে চলি!’ বলে জোরে পা ফেলে বেরিয়ে এলেন।
গাড়ি স্টার্ট দিয়ে গেটের কাছে গেলে এবার সুশান্তের বয়সী অন্য একটি যুবক গেট খুলে দিল। আর একজনকে গেটের পাশে বসে থাকতে দেখলাম। রাস্তায় পৌঁছে বললাম, ইন্দ্রজিৎবাবুর থিয়েটারের লােকেরা সবাই ওঁর বাড়িতে থাকে নাকি?”
কর্নেল হাসতে হাসতে বললেন, ‘সেটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবে ইন্দ্ৰজিবুর এই বিপদের দিনে ওঁর কাছের মানুষ যারা, তারা ছুটে আসতেই পারে। যাক গে, মহিলাকে কেমন মনে হলাে?
শক্ত মনের মানুষ। স্ট্রং নার্ভ। ভেঙে পড়েননি। ‘ওঁর বাবা অনাথবাবু একেবারে বিপরীত। রাঙাটুলিতে আলাপ হয়েছিল।
‘কাল রাত্রে আপনি বলছিলেন। কিন্তু উনিই যে ইন্দ্রজিৎবাবুর শ্বশুর, এটা আমাকে চমক দেবার জন্যই কি আপনি গােপন রেখেছিলেন?
কর্নেল সেকথার জবাব না দিয়ে বললেন, ‘ভদ্রলােক পরিবেশদূষণ এবং মানুষের ন্যাচারাল হ্যাবিটাট নিয়ে রীতিমতাে আন্দোলন করছে খনি অঞ্চলে। তবে আমাকে একটা অর্কিড প্রজাতির খোঁজ দিয়েছিলেন, সেজন্য আমি কৃতজ্ঞ। কর্নেল
ঠাৎ বললেন, বাঁদিকের রাস্তায় চলাে। শর্টকাট হবে।
কর্নেল সমগ্র প্রথম খন্ড এর অংশ -১৯
‘ওদিকে কোথায় শর্টকাট হবে?’ ‘আমরা সােজা চৌরঙ্গি এলাকায় যাব। জয়া ট্রেডিং এজেন্সির অফিসে। ‘সেখানে কী? ‘অমরেন্দ্রবাবুর ছেলে হেমেন্দ্রর সঙ্গে দেখা করতে চাই।’..
একটা বহুতল বাড়ির দশতলার পুরােটা নিয়ে জয়া ট্রেডিং এজেন্সি। বিশাল কারবার না থাকলে এমন সাজানােগােছানাে অফিস করা যায় না। প্রচুর কর্মচারী আর পিরা বেয়ারা নিয়ে কর্মব্যস্ত একটা আধুনিক প্রতিষ্ঠান। রিসেপশনের কাউন্টারে সুন্দরী যুবতী মােতায়েন। মিঠে হাসিতে মিশিয়ে ফুরফুরে ইংরেজি বলছে। উচ্চারণে আর্কিনি ঢং। অর্থাৎ আনুনাসিক স্বর।
এক মিনিট পরেই একজন বেয়ারা এসে আমাদের নিয়ে গেল মালিকের চোরে।
| হেমেন্দ্রবাবুর বয়স আন্দাজ করলাম চল্লিশ বিয়াল্লিশের বেশি নয়। সপ্রতিভ কঝকে চেহারা। চিবুকে দাড়ি। মুখে পাইপ। কর্নেলকে দেখেই উঠে দাঁড়িয়ে সেক্রেটারিয়েট টেবিলের ওপর দিয়ে হাত বাড়ালেন।
করমর্দনের পর কর্নেল আমার সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিলেন। হেমেন্দ্র একটু হেসে বললেন, “আমি তাে ভেবেছিলাম কর্নেলসায়েব এতক্ষণ রাঙাটুলিতে মামাবাবুর তুসের পেছনে ছুটোছুটি করে বেড়াচ্ছেন।
কর্নেল বললেন, ‘যেতাম। একটু বাধা পড়ে গেল। তাে পরশু রাতে তােমার বা কীভাবে বাড়ি ফিরেছিলেন? | সে এক কেলেংকারি! হেমেন্দ্র হাসলেন। আমি গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে জলে আটকে গেলাম। ইঞ্জিনে জল ঢুকে গাড়ি বিগড়ে গেল। ওই অবস্থায় গাড়ি ফেলে মেখে কাছাকাছি একটা গ্যারাজে গিয়ে তােক ডেকে—সে এক বিশ্রি ঝামেলা। ন ফিরলাম গ্যারাজের একটা গাড়ি নিয়ে। তখন রাত প্রায় একটা। ফিরে দেখি, শালা ঘুমােচ্ছন। জানতাম, আমার অপেক্ষা করবেন না। কিন্তু এই ট্রাজেডির মধ্যে একটা কমেডিও আছে। আমার গাড়ি জলে ডুবেছিল আপনার বাড়ির কাছাকাছি। আসলে শটকাটে আসতে গিয়েই পড়লাম অগাধ জলে।
কর্নেল সমগ্র প্রথম খন্ড এর অংশ -১৯
‘ফি স্কুল স্ট্রিটে নাকি? ‘হ্যা। সি দা ফান। তার ওপর লােডশেডিং সারা এলাকায়। | এই রাস্তাটায় আজকাল এক কোমর জল জমে যায়। কর্নেল চুরুট ধরিয়ে
মে, তুমি কি ওলসন হাউস চেনাে? ওই রাস্তায় বাড়িটা পড়ে।
হেমেন্দ্র একটু গম্ভীর হয়ে গেলেন। ওলসন হাউস! নামটা চেনা মনে হচ্ছে। হা—আজই কাগজে পড়েছি। একটা মার্ডার হয়েছে ওই বাড়িতে। আপনি
‘হ্যা। আমি ইন্টাররেস্টেড। চন্দ্রিকাকে তুমি চিনতে।।
হেমেন্দ্র একটু চুপ করে থেকে আস্তে বললেন, ‘চিনতাম। দ্যাটস আ লং স্টোরি। কিন্তু আমি আজ কাগজ পড়েই জানলাম চন্দ্রিকা ওই বাড়িতে থাকত এবং কলগার্ল হয়ে উঠেছিল। আশ্চর্য লাগছে, চন্দ্রিকা মাঝে মাঝে আমার অফিসেও আসত। চাকরির জন্য বলত। কিন্তু আমি জানতাম, ওর নামে ওর স্বামীকে মার্ডারের চার্জ আছে। তাছাড়া ওকে তাে ছােটবেলা থেকেই চিনি। ওর স্বামী রথীন আমার মামাতাে ভাই ছিল। কিন্তু আমার পক্ষে ওর জন্য কিছু করা সম্ভব ছিল না।
‘তুমি ইন্দ্রজিৎ ব্যানার্জির সঙ্গে ওকে মিশতে বারণ করতে শুনেছি। ‘কে বলল?’ হেমেন্দ্রর চোখ জ্বলে উঠল। ইন্দ্রজিৎ বলল আপনাকে?” ” ইন্দ্রজিৎকে ডিস্কো নামে কোন মাফিয়া ডন কিডন্যাপ করে এক লাখ টাকা চেয়েছে।
কর্নেল সমগ্র প্রথম খন্ড এর অংশ -১৯
হেমেন্দ্র চমকে উঠলেন। বলেন কী! কে ডিস্কো ? ‘বললাম তাে, মাফিয়া ডন। ওলসন হাউসের কলগার্লদের মালিক।
হেমেন্দ্র আবার একটু চুপ করে থেকে বললেন, ইন্দ্রজিতের সঙ্গে আপনার আলাপ আছে মনে হচ্ছে। সে বলেছে আমি চন্দ্রিকাকে ওর সঙ্গে মিশতে বারণ করতাম?’ |
না। ইন্দ্রজিৎবাবুর স্ত্রী। ‘মৃদুলা ? মৃদুলা-“আশ্চর্য তাে! ‘উত্তেজিত হয়াে না প্লিজ। কর্নেল একটু হেসে বললেন, মৃদুলা ভুল বুঝতেই পারেন। কিন্তু ইন্দ্রজিতের সঙ্গে তােমার সম্পর্ক কেমন ছিল, তােমার মুখেই জানতে চাই।।
‘কফি খান, বলছি।
হেমেন্দ্র সুইচ টিপে ঘণ্টা বাজালেন। একজন বেয়ারা এলে তাকে কফি আনতে বললেন। তারপর চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে হাসবার চেষ্টা করলেন। মৃদুলাকে নিশ্চয় ইন্দ্রজিৎ ভুল বুঝিয়েছে। ইন্দ্রজিৎ নাটক করে। নিজেকে শিল্পী বলে। কিন্তু এটা ওর চরিত্রের অন্য দিক। মুখখাশ বলতে পারেন। আপনি কি জানেন ইন্দ্রজিৎ এক সময় ট্রেড ইউনিয়ন করত ধানবাদ এরিয়ায় ? ও ধানবাদেরই ছেলে ।
আমার মামাবাবু বটুক চৌধুরী এম এল এ ছিলেন আপনি তাে জানেন। মামাবাবুও ট্রেড ইউনিয়ন করতেন। সেই সূত্রে ইন্দ্রজিৎ রাঙাটুলিতে মামাবাবুর বাড়ি যাতায়াত করত। তারপর মৃদুলার সঙ্গে কী ভাবে প্রেম-টেম করে ফেলে। মৃদুলার বাবা তখন পাটনা য়ুনিভার্সিটির অধ্যাপক। ইন্দ্রজিৎ মৃদুলাকে নিয়ে কলকাতা চলে আসে।
Read More