সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের কর্নেল সমগ্র প্রথম খন্ড এর অংশ -২১

তাই আমি আমার গাড়ির কাছে চলে গেলাম। দ্যাটস অল। কিন্তু চন্দ্রিকার মূল্যবান কাগজটা কী? 

‘জানি না।

কর্নেল সমগ্র ১ম খণ্ড

চন্দ্রিকাকে কেউ মার্ডার করে সেটা হাতিয়েছে? ‘তা-ও জানি না। আর তােমার সময় নষ্ট করব না। এবার তােমার বাবার কথায় আসা যাক। শুধু একটা প্রশ্ন। তােমার বাবার ঘরের সামনে কে একটা কাগজ ফেলে গেছে। তাতে লেখা আছে চাই চিচিং ফাঁক। 

বাবার মাথা খারাপ হয়ে গেছে। সাইকিক পেশ্যান্ট হয়ে পড়েছেন। ‘চাই চিচিং ফাঁক কথাটা তুমি শুনেছ এর আগে? ‘নেভার। সব বাবার পাগলামি। ‘আচ্ছা, উঠি। কর্নেল উঠে দাঁড়ালেন। একটু হেসে বললেন, চন্দ্রিকার খুনীকে ধরার জন্য তােমার সহযােগিতা ভবিষ্যতেও দরকার হতে পারে, হেমেন। আশা করি, পাব। 

‘সিওর। উঠে দাঁড়ালেন হেমেন্দ্র। তারপর বিদায় অভ্যর্থনার ভঙ্গিতে দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দিলেন আমাদের….. 

গাড়ি স্টার্ট দিয়ে বললাম, হেমেনবাবুর বক্তব্য শুনে খটকা লেগেছে আমার। 

কর্নেল বললেন, কী খটকা ? ‘পরশু রাতে উনিই চন্দ্রিকাকে ফলাে করেছিলেন এবং ওঁর ভয়েই চন্দ্রিকা আমাদের গাড়িতে লিফট নিয়েছিল বলে আমার সন্দেহ হচ্ছে। 

কর্নেল সমগ্র প্রথম খন্ড এর অংশ -২১

আর কিছু? ‘ফ্রি স্কুল স্ট্রিটের চন্দ্রিকা খুন হওয়ার সময় হেমেন্দ্র কাছাকাছি ছিলেন। গাড়ি লে আটকে গিয়েছিল। কর্নেল একটু পরে বললেন, ‘ডিস্কোর পরিচয় না জানা পর্যন্ত হেমেনকে আমি ন সাটিফিকেট দিচ্ছি। 

‘ফিল্মে দেখেছি এই ধরনের বিগ বিজনেসম্যান আড়ালে মাফিয়া ডন হয়। তাদের অনেক ডামি থাকে। 

কর্নেল অট্টহাসি হাসলেন। তারপর বললেন, ‘এ বেলাও আমার বাড়ি তােমার লাঞ্চের নেমন্তন্ন। না ডার্লিং। রহস্যের পাঁকে হাবুডুবু খাচ্ছি। তুমি সঙ্গে থাকলে ভরসা পাই। মাঝে মাঝে আমাকে তুমি জেরায় জেরবার করবে কিন্তু। কোনও খটকা লাগলে বলবে। তাতে আমার দৃষ্টি পরিষ্কার হবে। 

কর্নেলের বাড়ি পৌঁছে গাড়ি পার্কিং জোনে রাখলাম। কর্নেল বললেন, ‘ভেবাে আমার অম্নে ভাগ বসাবে। ষষ্ঠীকে বলা আছে। 

তেতলায় ডােরবেলের সুইচ টিপলে ষষ্ঠী দরজা খুলে দিল। বলল, নালবাজারের নাহিড়িসায়েব ফোং করেছিলেন। আপনাকে ফোং করতে বলেছেন। 

কর্নেল বললেন, করছি ফোং। তুই খাবার রেডি কর। আজ আমি স্নান করব না। জয়ন্ত, তুমিও কোরাে না। বাইরে থেকে ঘেমে তেতে এসে সে-বেলা আর স্নান করা উচিত নয়। নাকি করবে? 

বললাম, “আমি স্নান করেই বেরিয়েছি আজ। | ‘ফাইন। বলে কর্নেল টেলিফোন তুলে ডায়াল করতে থাকলেন। এনগেজড টোন নিশ্চয়। কিছুক্ষণ পরে আবার ডায়াল করলেন। এবার সাড়া পেয়ে বললেন, ‘অরিজিৎ? ….কী? …হা। তারপর ? …বলাে কী! ….হা। লােক রাখার ব্যবস্থা করাই ঠিক। …অবশ্য। রাতেও থাকবে।….থ্যাংকস। ছাড়ছি।

কর্নেল সমগ্র প্রথম খন্ড এর অংশ -২১

ফোন রেখে কর্নেল বললেন, হ্যারি ওলসনের কাজের লােকটাকে ডিস্কোর এক চেলা এসে হুমকি দিয়েছে। সে প্রাণ নিয়ে কেটে পড়েছে। ওলসনকেও শাসিয়ে গেছে, পুলিশের কাছে বেফাঁস কিছু বললে খতম করে ফেলবে। এমনকি আমার নাম করে বলেছে, ওই বুড়াে ঘুঘুকেও কিছু বললে বডি ফেলে দেবে।

ভয়ে ওলসনসায়েব কাঠ। ভাগ্যিস, আজ ডিটেকটিভ ইন্সপেক্টর অশােকবাবু ওলসন হাউসে আবার গিয়েছিলেন। ওলসন তাঁকে জানিয়েছেন। তারপর এখন সারাক্ষণ পুলিশ থাকছে ওলসন হাউসে। 

রাগ হলাে। বললাম, “ডিস্কোর ফোন নাম্বার তাে আপনার জানা। পুলিশকে বলছেন না কেন? ওই নাম্বার কার, সেটা টেলিফোন দফতর থেকে জেনে নিক। 

পুলিশকে সব গােপনাম্বার জানাতে ওঁরা বাধ্য। 

‘সময় হলে বলব। ডিস্কোর সঙ্গে আমার আলাপ-আলােচনা চালিয়ে যাওয়ার দরকার এখনও শেষ হয়নি। যাক্ গে। বাথরুমে গিয়ে আগে একটু জলস্পর্শ করি।’….. 

খেতে বসে বললাম, একটা পয়েন্ট আপনার দৃষ্টি এড়িয়ে যাচ্ছে কিন্তু। কর্নেল তাকালেন। ‘ওলসনসায়েব বলছিলেন, চন্দ্রিকা ডিস্কোকে হুমকি দিয়ে কথা বলত। ‘। বলত। তাতে কী? ‘চন্দ্রিকা ব্ল্যাকমেল করত না তত ডিস্কোকে? 

হয়তাে করত। কিন্তু ব্ল্যাকমেল কিসের ভিত্তিতে করত, সেটা যতক্ষণ না জানা যাচ্ছে ততক্ষণ ব্ল্যাকমেল কথাটা মাথায় রাখা উচিত নয়। 

‘ধরুন, পুলিশকে তার আসল পরিচয় ফাঁস করে দেব বলে হুমকি দিত। 

কর্নেল সমগ্র প্রথম খন্ড এর অংশ -২১

কর্নেল মুর্গির ঠ্যাং কামড়ে ধরে বললেন, তােমার কথায় যুক্তি আছে। কিন্তু ডিস্কো নাকি গভর্নমেন্টের ওপরমহলে প্রভাবশালী লােক। 

‘তাহলে হেমেনবাবুর ডিস্কো হওয়ার চান্স আছে। ‘কেন? 

তার মামা বটুক চৌধুরী ছিলেন এম এল এ। এদিকে হেমেনবাবুর বাবার সঙ্গে তাঁর শ্যালকের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল এবং হেমেনবাবুর সঙ্গে তাঁর বাবার সম্পর্ক নাকি ভাল নয়—আপনিই বলছিলেন। সম্পর্ক খারাপের কারণ হেমেবাবুর সঙ্গে বটুকবাবুর ঘনিষ্ঠতা। এই হলাে আমার থিওরি। অর্থাৎ হেমেনবাবু মামার সাপােটার ছিলেন। এতে তাঁর বাবা ক্ষুব্ধ হতেই পারেন। 

‘সম্পর্ক খারাপ বলতে এমন কিছু খারাপ নয়— কর্নেল ঠ্যাং চিবুতে চিবুতে বললেন, তত খারাপ হলে ছেলের বাড়িতে উঠবেন কেন? আসলে অমরেন্দ্রর সঙ্গে হেমেন্দ্রর সম্ভবত পারিবারিক কোনও বিষয়ে মতান্তর আছে। এটা আমি আঁচ করেছিলাম, হেমেনবাবুর দিদি সুনন্দার কথায়। সুনন্দা বলেছিল, হেমেনের সন্দেহ, 

কর্নেল সমগ্র প্রথম খন্ড এর অংশ -২১

বা সব প্রপার্টি আমাকে এবং সত্যকামকে উইল করে দিয়েছেন। হেমেনের টাকার অভাব নেই। কিন্তু টাকার ওপর ভীষণ লােভ আছে। সুনন্দার ভার্সান এটা। এদিকে সমরেন্দ্রর বক্তব্য হলাে, হেমেন সুনন্দাকে দেখতে পারে না। পারিবারিক দ্বন্দ্ব বলা চলে। এমনটা হয়েই থাকে। ও! তােমাকে বলতে ভুলেছি, সুনন্দা এবং হেমেন এক মায়ের সন্তান নন। সুনন্দার মা মারা যাওয়ার পর অমরেন্দ্র দ্বিতীয় বিয়ে করেন। 

টুক চৌধুরীর বােন তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী এবং হেমেনের মা। 

কর্নেল বরাবর বলেন, খাওয়ার সময় কথা বলা উচিত নয়। কিন্তু আজ তাঁর নিয়মের ব্যতিক্রম দেখে বুঝতে পারছিলাম, সত্যিই তিনি রহস্যে হাবুডুবু খাচ্ছেন। জাঙাটুলির সিংহরায় পরিবারের পুরনাে কাহিনী শােনাচ্ছিলেন।

 

Read More

সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের কর্নেল সমগ্র প্রথম খন্ড এর অংশ -২২

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *