আমি শুনছিলাম না। অস্কোর মূর্তি হেমেন্দ্রের চেহারায় আরােপ করছিলাম। চমৎকার খাপ খাচ্ছিল। এমনকি, চন্দ্রিকার ডিস্কোকে ব্ল্যাকমেল করার থিওরিও মানিয়ে যাচ্ছিল। কারণ
মেন্দ্রের আমদানি রফতানির কারবার আছে। এই সুযােগে নিষিদ্ধ ড্রাগের কারবার চালানাে অসম্ভব নয়। চন্দ্রিকা কি ব্ল্যাকমেল করার ব্যাপারে ইন্দ্রজিতের সাহায্য
য়েছিল ? ইন্দ্রজিতের তদ্বিরেই কিন্তু ওলসন হাউসে পুলিশ হানা দিয়েছিল। অরিজিৎ লাহিড়ি অবশ্য বলছিলেন, নার্কোটিকস পাওয়া যায়নি এবং ওটা পাবিলকখাওয়ানাে ডাে খবর। তার মানে, ডিস্কো এত প্রভাবশালী যে ডি সি ডি ডিরও কিছু করার মত নেই।তাছাড়া হেমেন্দ্র সিংহরায়ের মতাে বড় ব্যবসায়ীরাই তাে ব্রাজনৈতিক দলের ভে মােটা চাঁদা জোগান। অতএব হেমেন্দ্রের ডিস্কো হওয়ার চান্স উড়িয়ে দেওয়া স না। আরও একটা পয়েন্ট।
কর্নেলের কাছে জানা গেল, সুনন্দা বলেছিলেন, হেমন্দ্রের ৫০ টাকার ওপর ভীষণ লােভ। অর্থাৎ ভদ্রলােক অর্থলােলুপ। কাজেই নগদ এক লক্ষ টাকার জন্য ইন্দ্রজিৎকে কিডন্যাপ করার ঘটনা থেকে সন্দেহের কাঁটা হেমেন্দ্রের দিকেই ঘুরে যাচ্ছে। আবার ইন্দ্রজিৎকে কিডন্যাপ করে বুঝিয়ে দেওয়াও হলাে, সাবধান! আমার পিছনে লাগতে এসাে না। …
কর্নেল সমগ্র প্রথম খন্ড এর অংশ -২২
খাওয়ার পর ড্রয়িংরুমে গিয়ে কর্নেল চুরুট টানছিলেন এবং আমি সােফায় লম্বা হয়েছিলাম। আমার থিওরি ওঁকে গেলানাের চেষ্টা করছিলাম। কর্নেল চোখ বুজে ইজিচেয়ারে হেলান দিয়ে দাড়িতে হাত বােলাতে বােলাতে শুনছিলেন এবং মাঝে মাঝে হুঁ দিচ্ছিলেন।
সেই সময় টেলিফোন বাজল। কর্নেল বললেন, ‘জয়ন্ত। ফোন ধরাে।
ফোন তুলে সাড়া দিলাম। মহিলা কন্ঠে কেউ বলল, এটা কি কর্নেল নীলাদ্রি সরকারের ফোন?’
হা। আপনি কে বলছেন? ‘আপনি কি কর্নেল নীলাদ্রি সরকার বলছে?
নাহ। আপনি কে? ‘কর্নেলসায়েব কি নেই? ‘আছেন। কিন্তু আপনি কে বলছেন? ‘প্লিজ! কর্নেলসায়েবকে দিন না! আমি তাঁর সঙ্গেই কথা বলতে চাই।’
মাউথপিসে হাত চাপা দিয়ে কর্নেলকে বললাম, কোনও মহিলা। নাম বলছেন না। আপনার সঙ্গে কথা বলতে চান।
কর্নেল হাত বাড়িয়ে ফোন নিয়ে বললেন, কর্নেল নীলাদ্রি সরকার বলছি। তারপর বেশ কিছুক্ষণ ক্রমাগত হা, হুঁ করে গেলেন। শেষে বললেন, থ্যাংকস। রাখছি। তারপর ফোন রেখে দিলেন।
বললাম, “ডিস্কোর কোনও মেয়ে চেলা নিশ্চয় ?
কর্নেল হাসলেন। ভদ্রভাষায় বলা চলে, ডিস্কোচক্রের প্রাক্তন সদস্যা। এই একটা ব্যাপার আমি বরাবর দেখে আসছি, জয়ন্ত, আমি কোনও রহস্য সমাধানে নামলে জানা-অজানা অনেক নােক আড়াল থেকে আমাকে ক্ল যােগাতে ব্যস্ত হয়ে ওঠে। কিন্তু সমস্যা হলাে, এই সুযােগটা আমার প্রতিপক্ষও নিতে ছাড়ে না এবং ভুল পথে ছােটাতে চায়। চেজিং আফটার আ রেড হেরিং টার্মটা আমার মুখে বহুবার শুনেছ। সােজা বাংলায় বলা চলে আলেয়ার পিছনে দৌড়াননা। কেউ কেউ আলেয়া তৈরি করে রহস্যের অন্ধকারে।
কর্নেল সমগ্র প্রথম খন্ড এর অংশ -২২
‘এই মহিলাও কি আলেয়ার দিকে ছােটাতে চাইছেন আপনাকে? কর্নেল মাথা নাড়ালেন গম্ভীর মুখে। জানি না।
কী বলল, বলতে আপত্তি আছে?
বলল, সে একসময় ওলসন হাউসে থাকত। চন্দ্রিকাকে চিনত। চন্দ্রিকা নাকি ডিস্কোর খুব বিশ্বস্ত ছিল। নার্কোটিকসের কারবার আছে ডিস্কোর। চন্দ্রিকাকে ডিস্কো
ওই কারবারেই নাকি ব্যবহার করত। ক’মাস আগে নার্কোটিকসের একটা পেটি চন্দ্রিকার ঘরে ডিস্কোর লােক এসে দিয়ে যায়। চন্দ্রিকার ঘর থেকে সেটা আশ্চর্যভাবে হারিয়ে যায়। আসলে চন্দ্রিকাই নাকি সেটা হাপিজ করেছিল। সেই নিয়ে ডিস্কোর সঙ্গে চন্দ্রিকার বিবাদ বাধে।
কিন্তু ডিস্কো চন্দ্রিকাকে ঘাঁটাতে সাহস করেনি, পাছে চন্দ্রিকা সব ফাঁস করে দেয়। তাছাড়া ইন্দ্রজিৎ ব্যানার্জির সঙ্গে চন্দ্রিকার চেনাজানা ছিল। ইন্দ্রজিৎবাবুরও নাকি গভর্নমেন্টের ওপরমহলে যােগাযােগ আছে। পুলিশে তাে আছেই, তাছাড়া কোন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীও নাকি ওঁর ঘনিষ্ঠ আত্মীয়। তাই ডিস্কো সাবধানে চন্দ্রিকাকে ট্যাল্ করত। তারপর ডিস্কো মরিয়া হয়ে চন্দ্রিকাকে খতম করেছে বলে মেয়েটির ধারণা। নাম কী মেয়েটির?’
কর্নেল সমগ্র প্রথম খন্ড এর অংশ -২২
নাম বলল না। চন্দ্রিকার সূত্রে ইন্দ্রজিৎবাবুর সঙ্গে তার পরিচয় হয়েছিল। ইন্দ্রজিৎবাবু তাকে ওলসন হাউসের পাপপুরী থেকে-হা, পাপপুরী শব্দটাই বলল মেয়েটি
উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলাম শুনতে শুনতে। দ্রুত বললাম, ইন্দ্রজিৎবাবু ওকে পাপপুরী থেকে উদ্ধার করেছিলেন। এই তাে?
‘হা। এখন সে সৌরভ নাট্যগােষ্ঠীর অভিনেত্রী। ভদ্র জীবনযাপন করছে। ইন্দ্রজিত্ত্বাবুর প্রতি সে কৃতজ্ঞ।
‘আপনার নাম ঠিকানা পেল কোথায় বলল না? ‘ওলসনসায়েব তার চেনা। তাই ওঁকে ফোন করে সব কথা বলেছে। উনি তাকে আমার ফোন নাম্বার এবং নাম ঠিকানা দিয়ে আমার সঙ্গে যােগাযােগ করার পরামর্শ দিয়েছেন।
তা হলে ব্যাপারটা আলেয়া নয় কর্নেল। ‘কেন নয়?
‘ওলসন বলছিলেন, তাঁর সন্দেহ, তাঁর ফোন ডিস্কো ট্যাপ করেছে। কাজেই আজ | তাঁর কাজের লােক এবং তাঁকে ডিস্কোর চেলাদের হুমকি দেওয়ায় বােঝা যাচ্ছে, এই মেয়েটির কথা ডিস্কো জেনে গেছে। আমার ভয় হচ্ছে, মেয়েটির কোনও বিপদ না হয়। ইন্দ্রজিৎবাবু এখন ডিস্কোর কবলে।
কর্নেল সমগ্র প্রথম খন্ড এর অংশ -২২
কর্নেল চোখ বুজে আস্তে বললেন, ‘আমি সেকথা ভাবছি না। ভাবছি, চন্দ্রিকার সঙ্গে আলাপের ব্যাপারটা কেন ইন্দ্রজিৎবাবু বানিয়ে বলেছেন আমাকে? জয়ন্ত, আমি অসত্যভাষীদের পছন্দ করি না। বিশেষ করে আমার সাহায্য যারা চায়, তারা আমাকে কিছু গােপন করলে আমি আর তাদের পাত্তা দিই না।’….
তৃতীয় স্তর কিন্তু পরদিন কর্নেলের অ্যাপার্টমেন্টে গিয়ে অবাক হয়ে দেখলাম, ইন্দ্রজিৎ ব্যানার্জি এক খুষ্ক পােড়খাওয়া চেহারায়, কতকটা ঝড়ে বিধ্বস্ত কাকতাড়ুয়ার মতাে বসে আছেন এবং রহস্যভেদী বৃদ্ধ তাঁকে একটু আধটু নয়, বেশি রকমেরই পাত্তা দিচ্ছেন। হাসিখুশি মুখে তাঁর সঙ্গে বাক্যালাপ করছেন।
সমবেদনাসূচক ভঙ্গি করছেন। আমি থমকে দাঁড়িয়েছি দেখে বললেন, জয়ন্ত। আমারই ভুল। ডিস্কো ইন্দ্রজিৎবাবুকে কিডন্যাপ করতে পারে, এটা কেন আমার মাথায় এল না বুঝতে পারছি না। আসলে বয়স–আমার এই বয়সে বাহাত্তুরে ধরা বলে একটা কথা আছে। স্বীকার করছি, আমাকে বাহাত্তুরে ধরেছে।
বললাম, ইন্দ্রজিৎবাবু! আপনাকে কীভাবে কিডন্যাপ করেছিল ডিস্কো ?’
Read More